সিলেট বিভাগ

সিলেট বিভাগ (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐ ꠛꠤꠜꠣꠉ) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল, যা সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জহবিগঞ্জ — এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত।

সিলেট বিভাগ
ꠍꠤꠟꠐ ꠛꠤꠜꠣꠉ
বিভাগ
ডাকনাম: শ্রীহট্ট, জালালাবাদ
সিলেট বিভাগের মানচিত্র, লাল রঙে চিহ্নিত
দেশ বাংলাদেশ
রাজধানীসিলেট
আয়তন
  বিভাগ১২৫৯৫.৯৫ কিমি (৪৯১২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  বিভাগ৯৮,০৭,০০০
  পৌর এলাকা১০,২৭,০৯১
  গ্রামীণ৭২,৩৪,৫২৩
আইএসও ৩১৬৬ কোডBD-G
ওয়েবসাইটwww.sylhetdiv.gov.bd

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব থেকেই (অর্থাৎ পাকিস্তান আমল থেকেই) সাবেক সিলেট জেলা ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। পরবর্তীকালে সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কার্যক্রমের সূত্রে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট চারটি জেলা নিয়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ বিভাগ সিলেট গঠিত হয়।[2] এই বিভাগের মোট আয়তন ১২,৫৯৫.৯৫ বর্গ কিলোমিটার[3][4] সিলেট বিভাগ শিল্প শিল্পদ্রব্য (সার, সিমেন্ট, সিলেট পাল্পস এন্ড পেপার মিলস,ছাতক, বিদ্যুৎ), প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ (গ্যাস, তেল, পাথর, চুনাপাথর) ইত্যাদিতে ভরপুর। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ বিভাগের ভূমিকা অপরিসীম।

ভৌগোলিক অবস্থান

সিলেট বিভাগের পূর্বে ভারতের আসাম, উত্তরে মেঘালয় রাজ্য (খাসিয়া ও জয়ন্তীয়া পাহাড়), দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য, আর পশ্চিমে বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগ। সিলেটের আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে এই অঞ্চলের প্রাচীন সীমানার যে উল্লেখ পাওয়া যায় সে অনুসারে তৎকালীন শ্রীহট্টমণ্ডল বর্তমান সিলেট বিভাগের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় ছিল, এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান সরাইল বা সতরখণ্ডল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত), জোয়ানশাহী (বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত), ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, করিমগঞ্জ, কাছাড় জেলা ও বদরপুরের অনেকাংশ শ্রীহট্টের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[5][6] প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থ কামাখ্যা তন্ত্র অনুযায়ী প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমাই প্রাচীন শ্রীহট্ট ছিল অর্থাৎ শ্রীহট্ট ছিল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত। যোগিনী তন্ত্রে শ্রীহট্টের সীমার বিবরণ এরকম:

পূর্ব্বে স্বর্ণ নদীশ্চৈব দক্ষিণে চন্দ্রশেখর
লোহিত পশ্চিমে ভাগে উত্তরেচ নীলাচল
এতন্মধ্যে মহাদেব শ্রীহট্ট নামো নামতা[7]

অতপর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তি সময়ে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক রুপরেখার বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিলেট বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ ত্রিপুরা রাজ্যের আধিকার্ভুক্ত এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক অংশ হারিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশিষ্টাংশে শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজ্য জয়ন্তীয়া, লাউড় ও গৌড় বিস্তৃত ছিল[5][7]

নামকরণ

প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলের (সিলেট বিভাগ) বিভিন্ন নামের উল্লেখ আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতী দেবির কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে 'শ্রী হস্ত' হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম "সিরিওট" বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে "সিরটে", এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম "সিরটে" এবং "সিসটে" এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে। অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম "শিলিচতল" উল্লেখ করেছেন[8]। তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন বিন বখতিয়ার খলজি দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে "শ্রীহট্ট" নামের পরিবর্তে "সিলাহেট", "সিলহেট" ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন।

আর ইসলামের ভিত্তিতে হযরত শাহ্ জালাল (রা.) যখন সিলেটে আসেন তখন তাঁর শত্রুরা তাঁকে পাথর বা শিল দ্বারা আগলে ধরে ধরে, তখন হযরত শাহ্ জালাল (রা.) আল্লাহ্‌ তায়ালার উসিলায় বলেন "শিলা হাট" (অর্থ্যাৎ "পাথর সরে যা")। এই থেকেই নাম করণ করা হয় "শিলা হাট"। আস্তে আস্তে বানানকে সহজ করতে করতে "শিলহাট", "সিলহেট", ""সিলেট"" নাম করণ করা হয়। [7][9][10]

ভূপ্রকৃতি

আখ্‌তা ঝরণা, জাফলং

সিলেট বিভাগের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণদিকে উঁচু উঁচু পর্বত শ্রেণীর পাহাড়ী অঞ্চল। মেঘালয়া, খাসিয়া, জয়ন্তীয়া, ত্রিপুরার পাহাড়ের মাঝামাঝি বিস্তীর্ণ এলাকাটিই হচ্ছে সিলেট বিভাগ বা প্রাচীন শ্রীহট্ট। ইহা পূর্ব দিক হতে ত্রিবেণীর আকারে পশ্চিম দিকে বাংলাদেশর মানচিত্রে যুক্ত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সীমা ভূমি বেশির ভাগ সমতল প্রান্তর। স্থানে স্থানে জঙ্গল ও বালুকাময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিলা রয়েছে।

জাফলং-এ নদীর মনোরম দৃশ্য

অভ্যন্তরে বহুতর নদী প্রবাহিত। পাহাড়, নদী ও হাওরে ঘেরা সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক ভূমি (প্রাকৃতিক লীলাভূমি) বলে ধারণা করা হয়। সিলেট বিভাগের অভ্যন্তরের পাহাড় গুলোয় বিস্তৃত চায়ের বাগান। এই বিভাগের দক্ষিণ সীমায় ত্রিপুরার পাহাড় গুলো উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত হয়ে সাতটি পাহাড় শ্রেণী সিলেট বিভাগের ভূমিতে ক্রমশ প্রসারিত হয়েছে। সিলেট বিভাগ ২৩° ২৭’ দ্রাঘিমায় অবস্থান উত্তর ও দক্ষিণের সবুজ শ্যামল অরণ্য[3][11]। উত্তর পূর্ব সীমায় খাসিয়া ও জয়ন্তীয়া পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতি কন্যা সিলেটের জাফলং এর অবস্থান। ডাউকি পাহাড় হতে বিরতিহীন ধারায় প্রবাহিত মনোমুগ্ধকর ঝরণা বা জলপ্রপাত জাফলং এর অনেক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি। সিলেট শহর হতে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইহা অবস্থিত। [12]

জলাশয়

সিলেট বিভাগ উত্তর ও দক্ষিণ হতে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। অভ্যন্তরীণ সীমানার ভূমি বেশির ভাগ সমতল। বৈশাখ হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় । বৃহৎ জলপাতের কারণে পাহাড় হতে ঢল নেমে ক্ষুদ্র নদী গুলোর ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে প্রতি বছরই মৌসুমি বন্যায় কবলিত হয় বেশীর ভাগ নিম্নাঞ্চল।[7][13]

সিলেটের ঐতিহাসিক 'সুরমা' নদী

পূর্ব দিকে বরাক ও সুরমা নদী পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হচ্ছে । বরাক নদী মণিপুরের আঙ্গামীনাগা পর্বতে সৃষ্ট। এই নদী দক্ষিণ দিকে মণিপুরে ১৮০ মাইল প্রবাহিত হয়ে কাছাড় জেলায় প্রবেশ করে । অতপর কাছাড় জেলা ভেদ করে বদরপুরের কাছ দিয়ে শ্রীহট্ট জেলায় প্রবেশ করে দুই শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। উত্তর দিকে প্রবাহিত শাখা "সুরমা নামে খ্যাত এবং দক্ষিণ দিগে প্রবাহিত শাখাই বরাক বা কুশিয়ারা নামে খ্যাত[14]

  • দক্ষিণ শাখা বরাক বা কুশিয়ারা নদীর দৈর্ঘ্য্য প্রায় ১২০ মাইল।
  • উত্তরে প্রবাহিত শাখা সুরমা হরুটিকরের নিকট মুল বরাক হতে বিভক্ত হয়ে উত্তর পশ্চিম ও পশ্চিম দিগে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত গিয়েছে, তত্পর দক্ষিণমুখী হয়ে দিরাই উপজেলা দিয়ে মারকুলীর নিকট বিবিয়ানায় যুক্ত হয়েছে। সুরমার দ্বিতীয় আরেকটি শাখা রয়েছে, যাহা চরণার চর, শ্যামের চর হয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ময়মনসিংহে প্রবেশ করে আজমিরিগঞ্জের নিকট ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে।[15]
  • এছাড়া ত্রিপুরার পর্বতের সঙ্খলং পাহাড় থেকে প্রায় ১০০ মাইল দৈর্ঘ্য্য প্রশ্চিম দিগে প্রবাহিত জলপাত মণু নাম ধারণ করে কৈলাশহর, তীরপাশা, কদমহাটা, মৌলবীবাজার, আখাইল কুড়া ইত্যাদি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারাতে পতিত হয়েছ।
    বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওর
    ত্রিপুরার পর্বতান্তর্গত জম্পাই নামের আরেক পাহাড় হতে উত্পন্ন অন্য জলপাত উত্তর দিগে প্রবাহিত হয়ে লঙ্গাই নাম ধরে লঙ্গাই স্টেশন পর্যন্ত এসেছে এবং তথা হতে পশ্চিম দক্ষিণ দিকে হাকালুকি হাওরের মধ্য দিয়ে জুড়ী নদীর সহিত মিলিত হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জএর নিকটে কুশিয়ারায় পতিত হয়েছে। জুড়ীর সম্মিলন পর্যন্ত লঙ্গাইর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ মাইল। উক্ত নদী গুলো ছাড়া সিলেট বিভাগের অভ্যন্তরে ছোট ছোট আরো বহু নদ-নদী রয়েছে[7][15]

নদী ছাড়া 'জলাশয় হিসেবে' সিলেট বিভাগে প্রায় ৪৬টি হাওর রয়েছে। বড় বড় হাওর গুলো একেকটিতে দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোর ফসলের আবাদ হয়। সিলেটের হাওর গুলোতে হেমন্ত কালে অনেকাংশে জল জমাট থাকে। জল জমাট অংশ গুলো বিল হিসেবে খ্যাত এবং ঐ বিল হতে রুই, কাতলা, বোয়াল, ঘাগট ইত্যাদি জাতীয় মাছ পাওয়া যায়। হাওর গুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ; হাকালুকি হাওর, জাওয়া হাওর, টাঙ্গুয়া হাওর, শণির হাওর, টগার হাওর, ডেকার হাওর, ঘুঙ্গি জুরির হাওর, মইয়ার হাওর, শউলার হাওর, বানাইয়ার হাওর, দেখার হাওর, জিলকার হাওর ইত্যাদি[7]

ইতিহাস

সিলেটের ইতিহাস কয়েকটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে; যেমন; প্রাচীন অধিবাসী বিবরণ, ঐতিহাসিক বিবরণ, প্রাচীন রাজ্য সমুহ, আর্য যুগ, মুসলমান শাসিত আমল, মোগল আমল, ব্রিটিস আমল, পাকিস্তানে অর্ন্তভুক্তি, মুক্তি যুদ্ধ ও বাংলাদেশ। সিলেট বলতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশের সিলেট বিভাগ বোঝানো হয় যদিও ঐতিহাসিক সিলেট অঞ্চলের কিছু অংশ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ ধেকে ভারতের আসাম রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়ে আছে।

বর্ণিত আছে যে, পৌরাণিক যুগে এই অঞ্চল প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঐ যুগে সিলেটের লাউড় পর্বতে কামরূপ রাজ্যের উপরাজধানী ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।[7]। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পর জয়ন্তীয়া, লাউড় ও গৌড় নামে তিনটি স্বতন্ত্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রাচীন গৌড় রাজ্যই বর্তমান (বিভাগীয় শহর) সিলেট অঞ্চল বলে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।[13] দশম শতাব্দিতে এ অঞ্চলের কিছু অংশ বিক্রমপুরের চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হয় বলে জানা যায়। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল মুসলমানদের দ্বারা অধিকৃত হয় এবং ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে আউলিয়া শাহ জালাল (রহ:) দ্বারা গৌড় রাজ্য বিজিত হলে, দিল্লীর সুলতানদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন আউলিয়া শাহ জালালের নামের সাথে মিল রেখে গৌড় নামের পরিবর্তে এই শহরের নামকরণ করা হয় জালালাবাদ[3]

অতঃপর ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে শক্তিশালী মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে এ অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানার অনেক পরিবর্তন ঘটে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে সিলেট বিভাগ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধিক্ষেভুক্ত হয়৤ ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় (সাবেক) সিলেট জেলা যার সাড়ে তিন থানা ১৯৪৭ থেকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত৤ সেসময় সিলেট জেলার আয়তন ছিল ৫,৪৪০ বর্গমাইল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চল ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অঙ্গীভূত ছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের মাধ্যমে এই অঞ্চল নবসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানাভুক্ত হয়ে কালক্রমে বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত; যদিও এর কিছু অংশ যথা করিমগঞ্জ, পাথারকান্দি, বদরপুর ইত্যাদি অঞ্চল সিলেট থেকে বিচ্যূত হয়ে আসাম তথা স্বাধীন ভারতের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে।[5][16][17][18]

প্রশাসন

১৯৯৫ সালে সিলেটকে বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ বিভাগ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এর আগে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ছিল। সিলেট বিভাগে ৪টি জেলা (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ) রয়েছে। এই বিভাগে মোট উপজেলা বা থানার সংখ্যা হলো ৩৮টি। তদুপরি এখানে রয়েছে ৩৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১০,২২৪টি গ্রাম এবং ১৮টি পৌরসভা।[3]

জেলাসমূহ

উপজেলাসমূহ

  • সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা নিম্নরূপ:
  1. সিলেট সদর উপজেলা
  2. বিশ্বনাথ উপজেলা
  3. ওসমানীনগর উপজেলা
  4. দক্ষিণ সুরমা উপজেলা
  5. বালাগঞ্জ উপজেলা
  6. ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা
  7. কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা
  8. গোয়াইনঘাট উপজেলা
  9. জৈন্তাপুর উপজেলা
  10. কানাইঘাট উপজেলা
  11. জকিগঞ্জ উপজেলা
  12. বিয়ানীবাজার উপজেলা
  13. গোলাপগঞ্জ উপজেলা
  • মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলা নিম্নরূপ:
  1. জুড়ী উপজেলা
  2. বড়লেখা উপজেলা
  3. কুলাউড়া উপজেলা
  4. রাজনগর উপজেলা
  5. মৌলভীবাজার সদর উপজেলা
  6. শ্রীমঙ্গল উপজেলা
  7. কমলগঞ্জ উপজেলা
  • সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলা নিম্নরূপ:
  1. ধর্মপাশা উপজেলা
  2. তাহিরপুর উপজেলা
  3. জামালগঞ্জ উপজেলা
  4. দিরাই উপজেলা
  5. শাল্লা উপজেলা
  6. জগন্নাথপুর উপজেলা
  7. দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা
  8. সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা
  9. বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা
  10. ছাতক উপজেলা
  11. দোয়ারাবাজার উপজেলা
  • হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলা নিম্নরূপ:
  1. নবীগঞ্জ উপজেলা
  2. বাহুবল উপজেলা
  3. আজমিরিগঞ্জ উপজেলা
  4. বানিয়াচং উপজেলা
  5. হবিগঞ্জ সদর উপজেলা
  6. লাখাই উপজেলা
  7. চুনারুঘাট উপজেলা
  8. শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা
  9. মাধবপুর উপজেলা

পৌরসভাসমূহ

  • সিলেট জেলার ৪টি পৌরসভা নিম্নরূপ:
  1. কানাইঘাট পৌরসভা
  2. জকিগঞ্জ পৌরসভা
  3. বিয়ানীবাজার পৌরসভা
  4. গোলাপগঞ্জ পৌরসভা
  • মৌলভীবাজার জেলার ৫টি পৌরসভা নিম্নরূপ:
  1. মৌলভীবাজার পৌরসভা
  2. বড়লেখা পৌরসভা
  3. কুলাউড়া পৌরসভা
  4. শ্রীমঙ্গল পৌরসভা
  5. কমলগঞ্জ পৌরসভা
  • সুনামগঞ্জ জেলার ৪টি পৌরসভা নিম্নরূপ:
  1. দিরাই পৌরসভা
  2. জগন্নাথপুর পৌরসভা
  3. সুনামগঞ্জ পৌরসভা
  4. ছাতক পৌরসভা
  • হবিগঞ্জ জেলার ৬টি পৌরসভা নিম্নরূপ:
  1. হবিগঞ্জ পৌরসভা
  2. নবীগঞ্জ পৌরসভা
  3. আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা
  4. চুনারুঘাট পৌরসভা
  5. শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা
  6. মাধবপুর পৌরসভা

অর্থনীতি

বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশ লন্ডনের ব্রিক লেন অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। জায়গাটি বাংলা টাউন নামে খ্যাত
মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত চা-কন্যা স্থাপত্য

সিলেট বিভাগ একটি প্রবাসী অধ্যুসিত জনপদ। যুক্ররাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র,অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় দেশসমুহ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেট বিভাগের মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই বিভাগের প্রধান উত্স। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সিলেট জেলা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ২৩% এ জেলা অবদান রাখছে।[19] এছাড়া পাহাড়ে ও প্রান্তরে বেড়ে ওঠা কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন; চা, ধান, মাছ, কমলা, লেবু, আনারস, বাশঁ, আম, ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষের অনন্য অবলম্বন। সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে তিনটিই (মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সিলেট) চা উৎপাদনকারী জেলা।[20]

সংস্কৃতি

বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব দিগন্তে হাওর বাওর ও পাহাড় টিলায় বিস্তৃত সিলেট বিভাগে শিল্প সংস্কৃতির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে বলে সৈয়দ মোস্তফা কামাল অভিমত প্রকাশ করেন।[21] পূর্ব কালে গারো, খাসীয়া, জয়ন্তীয়া, নাগা, কুকি প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসীদের প্রাচীন কাব্য, ভাষা, ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-উপচার, জীবনধারার প্রভাব বাঙালি সংস্কৃতিতে পড়েছে।[22] অতীত দিনে উপাসনায় 'নির্বাণ সঙ্গীত' প্রধান উপকরণ ছিল।কথিত আছে, বহ্মযুদ্ধের পরই মণিপুরিরা শ্রীহট্ট ও কাছাড়ে আগমন করে এবং ঈশ্বর আরাধানার নিমিত্তে লাই নামে একপ্রকার নৃত্য পরিবেশন করতো। যা এই অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতির মধ্যে ধরা হয়।[7][22][23] পরবর্তিতে আর্য জাতি সহ আরব, তুর্কী, ফার্সি প্রভৃতি ঔপনিবেশিকদের আগমনের মধ্য দিয়ে প্রাচীন সংস্কৃতিতে সম্মিলিত হয় ঔপভাষিক সংস্কৃত। রচিত হয় বিভিন্ন শাস্ত্রীয় গ্রন্থ সহ পুথিঁ, লোকসঙ্গীত, প্রবাদ প্রবচন, কিচ্ছা, ধাঁধাঁ ইত্যাদি। সুলতানী আমলে মরমীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। মরমী ভাবধারা জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে এবং এই ভাবধারাই অকৃত্রিম সহজাত ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে উঠে। সৈয়দ মোস্তফা কামালের মতে পরবর্তিতে (আনুমানিক ১৬৫০খ্রিঃ) চৈতন্যবাদ ও জগন্মোহনী ভাবধারার সংমিশ্রণে বাউল মতবাদের জন্ম হওয়ায় বৈঞ্চব পদাবলীতে মরমীবাদ সাহিত্যের প্রভাব পড়ে। যার ফলে সিলেটকে মরমীবাদের আধ্যাতিক রাজধানী ও আউল-বাউলের চারণভূমি বলে আখ্যায়িত করা হয়।[7][21][24][25] পনের'শ শতকের মহাভারত কাব্যের প্রথম অনুবাদক মহাকবি সঞ্চয় জন্ম হয় এ অঞ্চলে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর চন্দ্রিকা গ্রন্থের প্রণেতা রাজমন্ত্রী পণ্ডিত কুবেরাচার্য এবং চতুর্দশ শতাব্দীর লাউড় রাজ্যে স্বাধীন নৃপতি দিব্যসিংহ বা কৃঞ্চদাস রচনা করেন অদ্বৈত্য বাল্যলীলা[7] শিতালং শাহ রচনা করেন রাগ বাউল কিয়ামতনামা' ও কবি প্যারিচরণ দাসের রচনা, পদ্য পুস্তক (১ম, ২য়, ও ৩য় ভাগ) ভারতশ্ব্রী ইত্যাদি, দেওয়ান হাসন রাজার হাসন উদাশ। এছাড়া সিলেটের স্বতন্ত্র নাগরি ভাষায় সৈয়দ শাহনুর রচনা করেন নুর নসিয়ত

ভাষা

১৯ শতকের মাঝামাঝিতে সিলেটের সাদেক আলী রচিত "হালতুন্নবী" নামক নাগরী বইয়ের প্রচ্ছদ

সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন কাল থেকে বহু ভাষাভাষী জাতি, বর্ণ নিয়ে বেড়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রান্তবর্তি এই জনপদ। সিলেটে প্রাপ্ত তাম্রশাসন, শিলালিপি, কাহিনী, গাঁথা ইত্যাদি এই অঞ্চলের ভাষা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন বলে ধারণা করা হয়।[3] এই অঞ্চলে প্রাচীন কাল থেকে অস্ট্রেলীয়, মঙ্গোলীয় প্রভৃতি সম্প্রদায়ের বসবাস, যার ফলে ভাষার বেলায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য। বলা হয়, আর্যদের দ্বারা যখন ভারতের মূল ভূখণ্ড অধিকৃত হয়, বৌদ্ধরা তখন স্থান পরিবর্তন করে সিলেটে এসে বসবাস শুরু করে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আসাদ্দর আলী সহ আরো অনেক গুনী জনেরা লিখেন খ্রিস্টের জন্মের অনেক পূর্বে সিলেট বৌদ্ধদের তীর্থে পরিণত হয়ে ছিল। যার ফলে সপ্তম শতাব্দীতে রচিত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের চর্যাপদে সিলেটের মানুষের কথ্য ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে বলে জানা যায়।[26][27] ডঃ আহমদ শরিফ সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রটি আজও অক্ষুন্ন আছে। উদাহরণ স্বরুপঃ- চর্যাপদে ব্যবহূত হাকম (সেতু) উভাও (দাঁড়াও) মাত (কথা) ইত্যাদি।[18] অতঃপর খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দিতে সিলেটে সংস্কৃত মিশ্রিত বাংলা লিপির বিকল্প লিপি হিসেবে সিলেটি নাগরী নামে একটি লিপি বা বর্ণমালার উদ্ভাবন হয়। সিলেটি নাগরী লিপি এবং এ লিপিতে রচিত সাহিত্যকে (সিলেটি) বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন স্বরুপ গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য, সিলেটি নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এযাবৎ ডক্টরেট করেছে ডঃ গোলাম কাদির, ডঃ আব্দুল মছব্বির ভুঁইয়া ও ডঃ মোহাম্মদ সাদিক।[3] সুলতানী আমলে সিলেটের মরমী কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে নাগরী লিপির ব্যবহার যদিও খুব বেশি ছিল। বর্তমানে তা একেবারে হাড়িয়ে যায়নি। এ লিপিতে রচিত হালতুন নবী পুথিঁকেই সিলেটের শ্রেষ্ঠ কাব্য সমুহের অন্যতম মনে করা হয়।[3]

সৈয়দ মোস্তফা কামলের মতে সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা সাহিত্য চর্চায় বাংলাদেশের পথিকৃৎ। এ বিভাগের অধিবাসীরা বাংলা ভাষা ও সিলেটি নাগরী ভাষা সহ মোট সাতটি ভাষায় সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য রেখেছেন। পনের’শ শতাব্দি শুরু থেকে এ যাবৎ সিলেটবাসীরা যে সমস্ত ভাষায় সাহিত্য রচনা করে গেছেন, সেগুলো হলো-(১) সংস্কৃত (২) বাংলা (৩) সিলেটি নাগরী (৪) আরবী (৫) ফার্সী (৬) উর্দু ও (৭) ইংরেজি।[3] উদাহরণ স্বরুপ বিভিন্ন ভাষায় রচিত সিলেট গীতিকায় অন্তর্ভুক্ত সিলেট অঞ্চলের লোক সাহিত্যকে বুঝানো হয়। বলা হয় প্রাচীন সাহিত্যে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব থাকায়, রচনা ভঙ্গি এরুপ ছিলঃ-

আরবি ও ফার্সি প্রভাবে রচিত কাব্যউর্দু প্রভাবে রচিত গীতনাগরী ভাষায় রচিত সিলেটি গীত 'বন্দনা'

বঙ্গদেশ শ্রীহট্ট নিকট নবগ্রাম
সর্বারাধ্য অদ্বৈতাচার্যের প্রিয়ধাম।
চৌদ্দশত নবতি শকাব্দ পরিণামে
লীলাগ্রন্থ সাঙ্গ কৈল শ্রীলাউড় ধামে।
(অদ্বৈত্য প্রকাশ গ্রন্থ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সূত্রে)

স্বরুপ নামজে দীপ্ত নুর
কিয়াম রুকুএ দেখ ছজুদ জহুর।
হে ছুরতে রুকু খাড়া করিবে কিয়াম
দ্বাল রুপে বসে দেখ ছুরত 'ক্বাউদ' ।
(সুফী শিতালং শাহ - সিলেটের মরমী মানস' সূত্রে)

আয় খোদায়ে পাক, দরিয়া ক্যায়সে হোঙ্গে পার হাম
মওজ হ্যায় দরিয়া মে হরদম আওর বেইয়ার হ্যায় হাম
(মাওলানা আঞ্জব আলী- কাব্য গ্রন্থ 'শওক')

পয়লা বন্দনা করি মালিক ছতত্তার
দুছরা বন্দনা করি নবী মছতফার
পুবেতে বন্দনা করি আসামর পা'ড়
দহ্মিণে বন্দনা করি জিলা ত্রিপুরার ।
(সিলেটের মরমী মানস' গ্রন্থ সূত্র')

প্রখ্যাত সাহিত্য গবেষক অধ্যাপক আসদ্দর আলী, সৈয়দ মুর্তাজা আলী প্রমুখ গণের মতে মধ্য যুগে সিলেটি নাগরী, আরবী ও ফার্সী ভাষা ছিল সিলেটের অধিবাসীর অন্যতম অবলম্বন। উল্লেখিত ভাষায় রচিত কাব্য গ্রন্থ, ধর্মীয় কিতাব, গীত-গাঁথা, ডাক-ডিঠান ইত্যাদি সিলেটের সাহিত্য ভাণ্ডারকে সম্মৃদ্ধ করেছে। বলা হয়, আধুনা যুগে যদিও ঐ সব ভাষার একক প্রচলন নাই, তবে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে আরবী, ফার্সী উর্দু ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রণ রয়েছে।[3][18] বর্তমান যুগে সিলেটের অধিবাসী সকলেই বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করছেন এবং আঞ্চলিক ভাবে প্রায় সকলেই সিলেটি ভাষায় কথা বলেন।

সিলেটি লিপির পরিচিতি

এটি হলো খুবই স্বরল প্রকারের লিপি । এর অক্ষর সংখ্যা বাংলা লিপির থেকেও কম। তাছাড়া এই লিপিতে ছিল না কোনো যুক্তাক্ষরও।[28] নাগরী লিপিতে বর্ণমালার সংখ্যা সাধারণভাবে ৩২টি, "ং" (অনুস্বার)-কে "০" হিসেবে ধরে এর সংখ্যা ৩৩টি; এর মধ্যে স্বরবর্ণ ৫টি, ব্যঞ্জণবর্ণ ২৮টি।

স্বরবর্ণ

নাগরী লিপিতে স্বরবর্ণ সংখ্যা ছিল ৫টি। তবে বিভিন্ন গ্রন্থে আরো ক'টি স্বরবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়।

বর্ণ কার বাংলা লিপ্যন্তর রোমান লিপ্যন্তর আইপিএ
a /a/
i /i/
u /u/
e /e/
o /o/
N/A ôi /ɔi/

ব্যঞ্জণবর্ণ

নাগরী লিপিতে ২৭টি ব্যঞ্জণবর্ণ রয়েছে।

বর্ণ বাংলা লিপ্যন্তর রোমান লিপ্যন্তর আইপিএ
/xɔ/
khô /xɔ/
/gɔ/
ghô /gɔ/
/sɔ/
chô /sɔ/
/zɔ/
jhô /zɔ/
ṭô /ʈɔ/
ṭhô /ʈɔ/
ḍô /ɖɔ/
ḍhô /ɖɔ/
/t̪ɔ/
thô /t̪ɔ/
/d̪ɔ/
dhô /d̪ɔ/
/nɔ/
/ɸɔ/
phô /fɔ/
/bɔ/
bhô /bɔ/
/mɔ/
/ɾɔ/
/lɔ/
ড় ṛô /ɽɔ/
shô /ʃɔ/
/ɦɔ/

শিক্ষা

বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণরাই এককভাবে হিন্দু সমাজের শিক্ষা গুরু হিসেবে বিবেচিত হতেন। ভাটেরায় প্রাপ্ত তাম্রফলকের বিশেষ বিবরণে রাজকীয় শিক্ষা প্রসার ও যজ্ঞ উপলক্ষে মিথিলা ও কৌনুজ হতে সিলেট অঞ্চলে ব্রাহ্মণ আনয়নের উল্লেখ পাওয়া যায়।[7] তখনকার সময়ে সিলেট অঞ্চলের পঞ্চখণ্ড, রাজনগর, গোলাপগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে টোল ও চতুষ্পাঠীতে ছাত্ররা গুরুগৃহে শিক্ষা নিত। উল্লেখিত টোল জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করে সিলেট হতে যারা ভারতবর্ষে সুনাম অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমনি। উপমহাদেশের বিখ্যাত জ্ঞানপীঠ নবদ্বীপ পর্যন্ত রঘুনাথ শিরোমনি প্রসিদ্ধ ছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় [7]। শিক্ষা বিষয়ে তত্কালে নবদ্বীপে সিলেটিদের নিয়ে একটি প্রবাদবাক্য প্রচলিত ছিল বলে বলা হয়, শ্রীহট্টে মধ্যমা নাস্তি অর্থ সিলেটের লোক হয় উত্তম, নয় অধম, মধ্যম নেই। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের পিতা জগন্নাথ সহ আরো অসংখ্য পণ্ডিতজনের এই অঞ্চলে জন্ম হয়।[18] অতপর হিন্দু বৌদ্ধ যুগের পরে মুসলিম যুগেও সিলেট অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটে। সুফী, দরবেশ ও মাশায়েখগণ যখন সিলেট আসেন তখন ভক্ত অনুরুক্তদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দিতে খানকা প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীকালে ঐ খানকাগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হয় বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। তখন শুধু সংস্কৃত নয় উর্দু, পারসী ও আরবী ভাষায় বিদ্বান হয়েছেন অনেক। বিদ্বানদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষা প্রসারের কাজে করে স্থাপনা, সাহিত্য চর্চাসহ বিভিন্নভাবে জায়গা জমি দিয়ে সহযোগিতা দান করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মধ্যযুগের মহাকবি সৈয়দ সুলতান, সৈয়দ মুসা, শেখ চান্দ, সৈয়দ শাহনুর, কবি প্যারিচরণ, গীরিশ চন্দ্র নাগ, গৌরিশংকর, লীলা নাগ, সৈয়দ মুর্তাজা আলী, অধ্যাপক আসাদ্দর আলী, অধ্যাপক আজফর আলী, দেওয়ান হাসন রাজা, শেখ ভানু, শিতালং শাহ, আসিম শাহ, রাধা মাধব দত্ত, রাধা রমন দত্ত, শাহ মোহাম্মদ ইসকন্দর মিয়া, ডঃ সুন্দরী মোহন, এম এ জি ওসমানী, গজনফর আলী, চৌধুরী গোলাম আকবর।[3][7][18][29] উল্লেখিত ব্যক্তিদের যাদের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। এসবের মধ্যে, রাজনগর এম ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৬৬ইং) সিলেট মিশনারী এস ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৮৭ ইং) সুনামগঞ্জ জুবিলী হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৮৭ইং) মৌলভীবাজার হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯১ইং) সুনামগঞ্জ দশরথ এম ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯৬ইং) হবিগঞ্জ হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯৭ইং) সিলেট গার্লস স্কুল (স্থাপিতঃ ১৯০৩ইং) পাইল গাও ব্রজনাথ হাই স্কুল, জগন্নাথপুর (স্থাপিতঃ ১৯১৯ইং) ইত্যাদি। ১৮৬৭ সালে সিলেট বিভাগে স্কুলের সংখ্যা ছিল ২৮টি এবং ১৯০৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯টিতে। যার মধ্যে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলায় ১৩টি মাধ্যমিক, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি মাধ্যমিক, হবিগঞ্জ জেলায় ১৮টি মাধ্যমিক এবং সিলেট জেলায় ১৫টি মাধ্যমিক স্কুল ছিল । ১৮৬৫ সালে এই বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েট ছিলেন মোহাম্মদ দাইম এবং জয় গোবিন্দ।[30] এছাড়া সিলেট বিভাগে রয়েছে অগনিত মকতব ও মাদরাসা। এর মাঝে অন্যতম হলো ; মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া,আংগুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসা, দরগা মাদরাসা, নয়াসড়ক মাদরাসা, মাযাহিরুল উলুম আকুনি মাদরাসা, প্রাচীন ঝিংগাবাড়ি মাদরাসা, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা,রশিদিয়া দাখিল মাদরাসা,জানিয়া ইসলামিয়া দরুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদ্রাসা,ওসমানিনগর জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া,জামেয়া আজহারুল উলুম বালিকা মাদ্রাসা ইত্যাদি।

বর্তমানে (২০১১ সাল) জেলাওয়ারী সিলেট বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

জেলার নাম হাইস্কুল ামাদ্রাসা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ডিগ্রি কলেজ
সিলেট জেলা জুনিয়র হাইস্কুল - ৩৭ টি
মাধ্যমিক হাইস্কুল (সরকারী) - ৬ টি
বেসরকারী মাধ্যমিক হাইস্কুল - ২৮৫ টি
দাখিল ৮৭টি
আলিম- ২৩টি
ফাজিল - ১০টি
কামিল - ৮টি
সরকারী - ২টি
বেসরকারী ২০টি
সরকারী- ২টি
বেসরকারী -১৮টি
অনার্স (সরকারী) - ১টি
মাষ্টার্স (সরকারী) - ১টি
মাষ্টার্স বেসরকারী - ১টি
মৌলভীবাজার জেলা জুনিয়র হাইস্কুল - ৫১টি
মাধ্যমিক হাইস্কুল (সরকারী) - ৩টি
বেসরকারী মাধ্যমিক হাইস্কুল - ১৩০টি
দাখিল - ৫১টি
আলিম - ১০টি
ফাজিল - ৯টি
কামিল - ১টি
বেসরকারী ৮টি সরকারী- ২টি
বেসরকারী - ৯টি
মাষ্টার্স (বেসরকারী) - ১টি
হবিগঞ্জ জেলা নিম্নমাধ্যমিক - ৩২টি
মাধ্যমিক (সরকারী) - ৬টি
বেসরকারী মাধ্যমিক হাইস্কুল - ১০৪টি
দাখিল - ৪৯টি
আলিম - ৮টি
ফাজিল - ৬টি
কামিল - ১টি
বেসরকারী ৮টি সরকারী- ২টি
বেসরকারী - ৭টি
অনার্স সরকারী - ১টি
সুনামগঞ্জ জেলা নিম্নমাধ্যমিক (বেসরকারী) - ৩২টি
মাধ্যমিক হাইস্কুল (সরকারী) - ৫টি
বেসরকারী মাধ্যমিক হাইস্কুল - ১৫৬টি
দাখিল - ৬৬টি
আলিম - ১৫টি
ফাজিল - ৩টি
কামিল - ১টি
সরকারী - ১টি
বেসরকারী ১৪টি
সরকারী- ১২টি

বেসরকারী -৮টি

অনার্স (সরকারী) - ৫টি

মাষ্টার্স (সরকারী) - ১টি

এছাড়া সিলেট বিভাগে রয়েছে ২টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় (১টি কৃষি)। ১টি সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ৪টি বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। ৪টি মেডিকেল কলেজ। ৩টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। ১টি ইমাম ট্রেনিং একাডেমী।[3]

নদ-নদী

সিলেট বিভাগে ৩৭টি নদ-নদী

  • সুরমা
  • পিয়াইন গাং
  • সারি গোয়াইন
  • বাগরা গাং
  • নওয়া গাং
  • শেওলা
  • ধামালিয়া
  • মনাই
  • বড়দাল
  • জুরি
  • মনু্‌
  • ধলাই
  • লংলা
  • কারাঙ্গি
  • খোয়াই
  • সুতাং
  • কুশিয়ারা
  • মাধবপুর
  • মহাসিং
  • খাজাঞ্জি
  • ভট্টখাল
  • কালনী
  • জামালপুর
  • বরাবা নদী
  • লভা, হরি
  • বোগাপানি
  • ধরিয়ানা
  • ধোয়াই
  • যদুকাটা
  • ধলা-ধলাই গাং
  • গোপলা-লঙ্গল
  • মোগাই-চলতি
  • রক্তি
  • পৈন্দা
  • ভেড়া মোহনা
  • ধনু বৌলাই
  • বৌলাই[31]

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা

হবিগঞ্জ জেলা

  • অমৃত মন্দির
  • আজমিরীবাবার মাজার
  • আলিয়া খাসিয়াপুঞ্জী
  • কমলারাণীর সাগরদীঘি
  • শংকরপাশা শাহী মসজিদ
  • ইমাম চা বাগান
  • তেলিয়াপাড়া চা বাগান
  • নাগুরা ফার্ম
  • পুরাতন সার্কিট হাউজ ভবন
  • প্যালেস রিসোর্ট
  • ফ্রুটস ভ্যালী
  • বাওয়ানী চা বাগান
  • বাঘাসুরা রাজবাড়ী
  • বানিয়াচং রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ
  • বায়েজিদ শাহের মাজার
  • বাহুবল জামে মসজিদ
  • বিথঙ্গল আখড়া
  • বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড
  • মশাজানের দিঘী
  • মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ, তেলিয়াপাড়া
  • রঘুনন্দন চা বাগান
  • রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড
  • রুপাইছড়া রাবার বাগান
  • রেমা ক্যালেঙ্গা বন্য প্রানী অভয়ারণ্য
  • লক্ষীবাওর জলাবন
  • শচী অঙ্গন ধাম মন্দির
  • শাহ ইছাক চিশতি (রঃ) এর মাজার
  • শাহ মজলিশ আমীন (রাঃ) এর মাজার
  • শাহ সোলেমান ফতেহগাজী র: মাজার
  • শাহজীবাজার রাবার বাগান
  • শেখ ভানু শাহের মাজার
  • শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া
  • সাতগাঁও রাবার বাগান
  • সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
  • সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর মাজার
  • সুরমা চা বাগান।
  • হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড

মৌলভীবাজার জেলা

কৃতী ব্যক্তিত্ব

নাম বর্ণনা
রাজা গিরিশচন্দ্র রায় (১৮৪৫ - ১৯০৮)প্রতিষ্ঠাতা মুরারিচাঁদ কলেজ (সংক্ষেপে: এমসি কলেজ) সিলেট
হাসন রাজা ( ১৮৫৪ - ১৯২২) বাংলাদেশের একজন মরমী কবি এবং বাউল শিল্পী। তাঁর প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা।
আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী

(১৯০৭-১৯৭১) একজন খ্যাতিমান আলেম, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক লেখক ও হাদিস বিশারদ।

আব্দুস সামাদ আজাদ
জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, ১৯৭১
মেজর জেনারেল এম এ রব মেজর জেনারেল এম এ রব, মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য।
শাহ আবদুল করিম (১৯১৬ - ২০০৯) বাংলা বাউলগানের একজন কিংবদন্তি শিল্পী।
হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী সাবেক স্পীকার, সাবেক পররাস্ট্র মন্ত্রী ও সাবেক পররাস্ট্র সচিব এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
সাইফুর রহমান সাইফুর রহমান সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক., সাহিত্যিক ও সমালোচক।
সৈয়দ মোস্তফা কামাল বাংলাদেশি লেখক, ঔপন্যাসিক, গবেষক, ঐতিহাসিক।
এম মোখলেসুর রহমান চৌধুরী এম মোখলেসুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সাবেক প্রেস সচিব, পেশাদার সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ ওভারসিস করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন-ওকাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট।
শাহ এ এম এস কিবরিয়া শাহ এ এম এস কিবরিয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী, সাবেক পররাস্ট্র সচিব ও এসকাপের সাবেক নির্বাহী সচিব এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
আগা মোহাম্মদ বেগ সিলেটে ব্রিটিশ বিরুধী আন্দলোনের সংগঠক ও নেতৃত্বদাতা।
সিরাজুল হোসেন খান সিরাজুল হোসেন খান সাবেক তথ্য মন্ত্রী, সাবেক শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, পেশাদার সাংবাদিক ও স্রমিক নেতা।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। ।
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এনামুল হক মোস্তফা শহীদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং আইনজীবী।
বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতি সৈয়দ মোদাসসের হোসেন বিচারপতি সৈয়দ মোদাসসের হোসেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি।
বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান, (১৬ জুন ২০০২ - ১৫ জুন ২০০৫)
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি।
খান বাহাদুর এহিয়া চৌধুরী (১৮৫১-১৯২৫)।
মৌলভী আবদুল করিম (১৮৬৩-১৯৪৩) একাধারে শিক্ষক, শিক্ষাব্রতী, সমাজসেবী ও দানশীল।।
গোবিন্দ চন্দ্র দেব (১৯০৭-১৯৭১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনবিদ্যার একজন অধ্যাপক ছিলেন।
রাধারমণ দত্ত (১৮৩৩ - ১৯১৫) বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক।।
নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রী।
হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২ - ১৯৮৭)।
সুহাসিনী দাস (জন্ম ১লা ভাদ্র ১৩২২ (বঙ্গাব্ধ) - মৃত্যু মে ২৫, ২০০৯) বাংলাদেশী নারী সংগঠক যিনি বৃটিশ বিরোধী এবং ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনের পূর্ব বাংলায় বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেন।
শিতালং শাহ (গিতিকার)।
গজনফর আলী খান (১৮৭২-১৯৫৯)।
আরকুম শাহ (১৮৭৭-১৯৪১)।
দুর্বিন শাহ দুর্বিন শাহ বাংলাদেশের একজন মরমী গীতিকবি, বাংলা লোক সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার, বাউলসাধক।।
শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৫-১৫৩৩) ((১৪৮৫-১৫৩৩)) একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক।।
রামকানাই দাশ[32] একুশে পদকপ্রাপ্ত শাস্ত্রীয় ও লোকসংগীতশিল্পী
সুষমা দাস[33] একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীতশিল্পী
মো:আব্দুল লতিফ চৌধুরী (ফুলতলী) (১৯১৩-২০১৬) একজন খ্যাতিমান আলেম, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক লেখক ও হাদিস বিশারদ।
রফিক উদ্দিন আহমেদ (বিজ্ঞানী) নাসাঅ্যাপোলো ১১ চন্দ্র অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাঙালি বিজ্ঞানী।
  • সঞ্জয়,মহাভারত সর্বপ্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. "বাংলাদেশের জেলাসমূহ"। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৩
  2. বাংলাদেশের ডায়েরী, "বাংলাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পরিচিতি, ৫০ পৃষ্ঠা, সংস্করণ: আগস্ট ২০০২।
  3. সিলেট বিভাগের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক রুপরেখা সৈয়দ মোস্তফা কামাল; প্রকাশক: শেখ ফারুক আহমদ, পলাশ সেবা ট্রাস্ট, সিলেট। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১১; পৃ. ১০।
  4. বাংলাপিডিয়ায় সিলেট বিভাগের নিবন্ধ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে
  5. সিলেট গীতিকাঃ সমাজ ও সংস্কৃতি, ডঃ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ; প্রস্তাবনা ২, পৃষ্ঠা ১৫-১৬; প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০০৫।
  6. Ancient India" Ramesh Chandra Majumdar, Chapter 3, p267, Motilal Banarsidass Publishers, Eighth Edition: Delhi, 1977
  7. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, দ্বিতীয় ভাগ, প্রথম খণ্ড, প্রথম অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪।
  8. Journal of The Royal Asiatic Society, part 1, 1st January 1920 (Six Countries Mentioned By Yuan Chwang.)
  9. বিলেতে সিলেটবাসী, ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক মতিয়ার রহমান চৌধুরী (ইউ,কে)।
  10. সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মোহাম্মদ হান্নান মিয়া (ইউ,কে) সম্পাদিত (স্মরণিকা পুস্তক)নবীগঞ্জের ডাক
  11. Bangladesh By Mikey Leung, Belinda Meggitt, published by Bradt travel guides LTD, Bucks, England, 1st Edition published september 2009, p 171.
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১১
  13. A Statistical Account of Sylhet, W. W. Hunter, p60.
  14. The Brahmaputra basin water resources By Vijay P. Singh, Nayan Sharma, C. Shekhar P. Ojha, p162 -163
  15. Rivers and riverine landscape in North East India, By Sutapa Sengupta p40
  16. সিলেটের দুইশত বছরের আন্দোলন, তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশক: ওসমান গণি, আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রকাশকাল: ১৯৯৫।
  17. সিলেটের ইতিহাস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ আগস্ট ২০১১ তারিখে, সিলেটইনফো.কম।
  18. সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত: প্রাচীন ইতিহাসে সিলেট বিভাগ নিবন্ধ, মোহাম্মদ মুমিনুল হক, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১; পৃষ্ঠা ১৫।
  19. সিলেট বিভাগের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক রুপরেখা, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক- শেখ ফারুক আহমদ, পলাশ সেবা ট্রাস্ট সিলেট, প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃঃ ১০
  20. "চায়ের ডাটাবেজ"। BTRI। ১২ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৮
  21. সিলেটের মরমী মানস সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশ কাল ২০০৯
  22. বাংলাদেশের লোকসাহিত্য ও লোকঐতিহ্য 'ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী', প্রাকাশক - সাঈদ বারী প্রধান নির্বাহী, সুচিপত্র ঢাকা, প্রকাশকাল ২০০৫ ইংরেজী।
  23. "সিলেট জেলা তথ্য বাতায়ন"। ১৫ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১১
  24. "সুনামগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১১
  25. সিলেটের মরমী মানস সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশ কাল ২০০৯
  26. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১১
  27. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ওয়েব সাইটসুনামগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন "ভাষা ও সংস্কৃতি"
  28. "হজরত শাহ্‌ জালাল ও সিলেটের ইতিহাস", সৈয়দ মুর্তাজা আলী; উৎস প্রকাশন, ঢাকা; জুলাই ২০০৩; আইএসবিএন ৯৮৪-৮৮৯-০০০-৮ ISBN বৈধ নয়; পৃষ্ঠা ১৪৮ (২০০)। পরিদর্শনের তারিখ: ০৬ মে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
  29. 'নবিগঞ্জের ডাক'শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হাবিবুর রাহমান প্রবন্ধ
  30. 'নবিগঞ্জের ডাক' শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মরহুম প্রফেসর হাবিবুর রাহমান প্রবন্ধ
  31. বৃহত্তর সিলেট জেলার ৩৬টি নদী
  32. Ram Kanai Das' rendition of folk songs
  33. "একুশে পদক পাচ্ছেন সুনামগঞ্জের সুষমা দাস"sunamkantha.com। ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.