মাগুরা জেলা

মাগুরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি খুলনা বিভাগের একটি জেলা।[2] ঢাকা থেকে মাগুরার দূরত্ব ১৭৬ কিলোমিটার। বাস যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। বাসে মাগুরা থেকে ঢাকা যেতে ৫ ঘন্টা সময় লাগে। মাগুরায় কোনও ট্রেন যোগাযোগ নেই। অদূর ভবিষ্যতে ট্রেন যোগাযোগ চালু হবে এই জেলায়।

মাগুরা
জেলা
বাংলাদেশে মাগুরা জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°২৪′ উত্তর ৮৯°২৪′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
আয়তন
  মোট১০৪৮.৬১ কিমি (৪০৪.৮৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৯,১৮,৪১৯
  জনঘনত্ব৮৮০/কিমি (২৩০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৫০.৬%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭৬০০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ৫৫
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ইতিহাস

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম মাগুরা। ১৭৮৬ সালে বৃটিশ আমলে বাংলা প্রদেশের প্রথম গঠিত জেলা যশোর। কিন্তু একজন জেলা কর্মকর্তার পক্ষে এ বৃহৎ জেলার আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মুলত মগ জলদস্যুদের হাত থেকে এ জেলার উত্তরাঞ্চলের জন সাধারণকে রক্ষা করার জন্যই ১৮৪৫ সালে যশোর জেলার প্রথম মহকুমা করা হয় মাগুরাকে। মহকুমা গঠন করার পর প্রথম মহকুমা অফিসার হিসেবে আসেন মিঃ ককবার্গ। মহকুমা হবার আগে মাগুরা অঞ্চল ভূষণা ও মহম্মদপুর নামেই সুবিখ্যাত ছিল। পাল রাজত্বের সময় এ অঞ্চলের উত্তর ও উত্তর পূর্ব অংশ শ্রীপুর ও রাজাপুর নামে পরিচিত ছিলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব অংশ ভূষনা। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসাবে মাগুরাকে ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত করা হয়। প্রথম ডেপুটি কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি অরবিন্দু করকে। মাগুরা জেলা মোট ৪টি থানা নিয়ে গঠিত। যথা মাগুরা সদর , শ্রীপুর , শালিখা, ও মহম্মদপুর যা ২টি সংসদীয় যথা মাগুরা-১ (জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা)মাগুরা-২ (জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা) নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত।

বিখ্যাত বিদ্যালয়সমূহ

প্রাথমিক বিদ্যালয়

এ জেলায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু আছে নামকরা। এগুলো হলো :-

  • মাগুরা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় (সরকারি)
  • মাগুরা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • মহম্মদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

উচ্চ/মাধ্যমিক বিদ্যালয়

  • মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
  • মাগুরা সরকারি বলিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • কালেক্টর কলেজিয়েট স্কুল (এমপিওভুক্ত)
  • মাগুরা পুলিশ লাইন‌ উচ্চ বিদ্যালয়
  • মাগুরা আব্দুল গনি একাডেমি (বেসরকারি)
  • মাগুরা দুধমল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বেসরকারি)

নামকরণ

মাগুরার নামকরণ করা হয় মুঘল যুগে। এর নামকরণ কিভাবে হয়েছে তা স্থিরভাবে বলা দুস্কর। কিংবদন্তী থেকে জানা যায় এক কালে সুন্দরবনের কাছাকাছি এই অঞ্চলে মগ জল দস্যুদের দারুণ উৎপাত ছিল। কুমার নদীনবগঙ্গার তীরে অবস্থিত বর্তমান মাগুরা শহরে ছিল তাদের আখড়া। নদী পথে তারা বর্গীদের মতো দস্যুপনা করতো। তাদের নামেই মগরা থেকে মাগুরা হয়েছে। নেত্রকোণাতে ও দেখা যায় সেখানে মগরা নামে একটি নদী ও রয়েছে। বাংলাদেশে মাগুরা নামে আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, তবে জেলার মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় মাগুরা এখন শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। তবে কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে মুঘল নবাব মুর্শিদকুলী খার আমলে মগদের অগ্রযাত্রাকে যেখানে প্রতিহত করে ঘুরিয়ে দেওয়া হত সেই স্থানটির নাম রাখা হত মগ-ঘুরা। মগ-ঘুরাই পরবর্তীতে মাগুরা হয়েছে। মাগুরা তথা যশোর- ফরিদপুর এলাকায় মগ- দস্যুদের অত্যাচার ও লুষ্ঠনের কাহিনী আজও ইতিহাসের এক বেদনাময় অধ্যায়। "ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে" প্রচলিত এই ছড়াটিও সে সময়ের প্রকৃত চিত্রই তুলে ধরেছে। মুহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায় ও যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য মগ-বর্গী দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। বলা চলে দস্যুদের এই দুই রাজাই প্রতিহত ও পরাজিত করেন। বহু মগ বর্গী সীতারামের কাছে আত্মসমর্পন করে এবং সেনাবাহিনী ও রাজ কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান। আজকের মাগুরা শহরে তাদের নিবাসের ব্যবস্থাও করা হয়।[3]

১৮৫৬-৬০ সালের হাজরাপুরে নীলকুঠিকে কেন্দ্র করে নীল অভ্যুত্থান হয়। বরই, আমতলা নাহাটি ব্যপক নীল চাষের নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে জনগণ প্রায় ১৬টি ফ্রন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করেছিল। এসব যুদ্ধ মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। লুৎফুন্নাহার হেলেনার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পরবর্তীতে তার করুণ মৃত্যু জনগণ গর্বভরে স্মরণ করে।

বাবুখালী ঘোড়দৌড় মেলা

মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালীতে ১৬ই মাঘ ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।আনুমানিক ১৮৯৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে আসছে।এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৩ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।এখানে জারিগান, সারিগানসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

ভৌগোলিক সীমানা

১০৪৮ বর্গ কিমি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট মাগুরা জেলা উত্তরে রাজবাড়ী জেলা, দক্ষিণে যশোরনড়াইল জেলা, পূর্বে ফরিদপুর জেলা এবং পশ্চিমে ঝিনাইদহ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

মাগুরা জেলায় ৪টি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হলো:

জলবায়ু

মাগুরা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ °সে (°ফা) গড় ২৩٫৪
(৭৪)
২৭٫৭
(৮২)
৩৩٫৩
(৯২)
৩৫٫৬
(৯৬)
৩৪٫৮
(৯৫)
৩২٫৪
(৯০)
৩১٫৪
(৮৯)
৩১٫৪
(৮৯)
৩২٫২
(৯০)
৩১٫৪
(৮৯)
২৮٫৯
(৮৪)
২৫٫৫
(৭৮)
৩০٫৬৭
(৮৭٫৩)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ১৬٫৪
(৬২)
২০٫২
(৬৮)
২৬٫০
(৭৯)
২৯٫২
(৮৫)
২৯٫৬
(৮৫)
২৮٫৯
(৮৪)
২৮٫৪
(৮৩)
২৮٫৬
(৮৩)
২৮٫৮
(৮৪)
২৭٫৩
(৮১)
২৩٫২
(৭৪)
১৮٫৭
(৬৬)
২৫٫৪৪
(৭৭٫৮)
সর্বনিম্ন °সে (°ফা) গড় ৯٫৪
(৪৯)
১২٫৮
(৫৫)
১৮٫৭
(৬৬)
২২٫৯
(৭৩)
২৪٫৫
(৭৬)
২৫٫৫
(৭৮)
২৫٫৫
(৭৮)
২৫٫৮
(৭৮)
২৫٫৬
(৭৮)
২৩٫৩
(৭৪)
১৭٫৫
(৬৪)
১২٫০
(৫৪)
২০٫২৯
(৬৮٫৬)
গড় অধঃক্ষেপণ মিমি (ইঞ্চি) ১১
(০٫৪৩)
১৯
(০٫৭৫)
৪০
(১٫৫৭)
৮৫
(৩٫৩৫)
১৮৩
(৭٫২)
৩২৩
(১২٫৭২)
৩০২
(১১٫৮৯)
২৮৮
(১১٫৩৪)
২৪২
(৯٫৫৩)
১৫৬
(৬٫১৪)
২৫
(০٫৯৮)

(০٫২৮)
১,৬৮১
(৬৬٫১৮)
গড় আর্দ্রতা (%) ৪৫ ৩৫ ৩২ ৪৮ ৬৬ ৭৪ ৭৫ ৭৪ ৭১ ৬৬ ৪৭ ৪৪ ৫৬٫৪
উৎস: জাতীয় পত্রিকাসমূহ

জনসংখ্যা

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৪১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ: ৫০.৫৬%, মহিলা: ৪৯.৪৪%।

ঐতিহ্যবাহী বাবুখালী ঘোড়দৌড় মেলা

মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালীতে ১৬ই মাঘ ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।আনুমানিক ১৮৯৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে আসছে।এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৩ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।এখানে জারিগান, সারিগানসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

পত্রিকা ও সাময়িকী

  • দৈনিক খেদমত (চলমান)
  • সাপ্তাহিক অঙ্গীকার (বিলুপ্ত)
  • গ্রামীণ বাংলা (বিলুপ্ত)
  • হিন্দু মুসলমান সম্মিলনী পত্রিকা-১৮৭৬
  • সাপ্তাহিক আনন্দ ১৯২৯
  • নবগঙ্গা ১৯৪১
  • সাপ্তাহিক বাংলার ডাক ১৯৭২ (বিলুপ্ত)
  • সাপ্তাহিক রূপসী বাংলা ১৯৭২ (বিলুপ্ত)
  • সাপ্তাহিক মাগুরা বার্তা ১৯৮৫ (বিলুপ্ত)
  • সাপ্তাহিক গণসংবাদ (বিলুপ্ত)এবং
  • পাক্ষিক নবকাল ১৯৭২ (বিলুপ্ত)
  • দৈনিক মাগুরা ২০১৫ (বিলুপ্ত)
  • মাগুরা বৃত্তান্ত সাপ্তাহিক (বিলুপ্ত)

নদ-নদী

জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে গড়াই নদী, নবগঙ্গা নদী, ফটকি নদী, আলমখালি নদী, মধুমতি নদী, মুচিখালি নদী, মরাকুমার নদ, কুমার নদ, চিত্রা নদী, ভৈরব নদী, সিরাজপুর হাওর নদী, বেগবতী নদী[4][5]

চিত্তাকর্ষক স্থান

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

আরোও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে মাগুরা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৫ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪
  2. আবু নাসের মঞ্জু (২০১২)। "মাগুরা জেলা"। সিরাজুল ইসলাম এবং আহমেদ এ. জামাল। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (দ্বিতীয় সংস্করণ)। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ
  3. http://www.jessore.info/index.php?option=content&value=556
  4. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
  5. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৬

বহিসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.