গড়াই নদী

গড়াই নদী গঙ্গা তথা পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মধুমতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২৪।[1][2]

গড়াই নদী
কুষ্টিয়ার বড়বাজার ঘাট থেকে তোলা গড়াই নদী
কুষ্টিয়ার বড়বাজার ঘাট থেকে তোলা গড়াই নদী
দেশ বাংলাদেশ
অঞ্চলসমূহ খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ
জেলাসমূহ কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ,, মাগুরা, ফরিদপুর
উৎস পদ্মা নদী
মোহনা মধুমতি নদী
দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার (৫৩ মাইল)
মানচিত্রে গড়াই-মধুমতি সহ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদী

প্রবাহ

গড়াই নদী তীরের দৃশ্য

গড়াই নদীটি কুষ্টিয়া জেলার হতাশহরিপুর ইউনিয়নে প্রবহমান পদ্মা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদীতে পতিত হয়েছে।[1] একসময় গড়াই নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতুর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী পদ্মা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি কুষ্টিয়া জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশপুর নামক স্থানে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে চাদর নামক গ্রাম দিয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী জেলা, মাগুরা জেলা-রাজবাড়ী জেলা এবং মাগুরা জেলা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদী নামে নড়াইলবাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।[3]

গড়াই নদী-মধুমতী নদীর গতিপথ আঁকাবাঁকা ও দীর্ঘ। গড়াই নামে ৮৯ কিমি, মধুমতী নামে ১৩৭ কিমি এবং বলেশ্বর নামে ১৪৬ কিমি অর্থাৎ মোট দৈর্ঘ্য ৩৭২ কিমি। গড়াইয়ের বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে- কুমার নদী, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই, বুড়িশাল ইত্যাদি গড়াইয়ের শাখা। তাছাড়া নবগঙ্গা নদী, চিত্রা, কপোতাক্ষ, সাতক্ষীরার যমুনা, গোলঘেসিয়া, এলেংখালী, আঠারোবাঁকি প্রভৃতি নদী এর সংস্পর্শে এসেছে। এছাড়াও বারাশিয়া, কুমার নদী, চন্দনা প্রভৃতি এই নদীর উপনদী। উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল করে, কিন্তু শুকনো মৌসুমে এ অংশ অনাব্য হয়ে পড়ে। কামারখালী থেকে ভাটির অংশ মোটামুটি নাব্য, সারা বছর এখানে নৌযান চলাচল করতে পারে। নদীটির উৎসমুখ থেকে নড়াইলের গড় প্রস্থ ৪৫০ মিটার। নদীটির মোহনা থেকে উজানে কামারখালী পর্যন্ত অংশ জোয়ার-ভাটা দ্বারা প্রভাবিত হয়।[3] পদ্মার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় নৌপথে পণ্য আদান প্রদানে বিশেষ সহযোগী হিসাবে কাজ করে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক জনপদ। নদীতে প্রচুর পরিমাণ মত্‍স রয়েছে যা এ অঞ্চলের মানুষ আহরনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। মধুমতি নদী তীরবর্তী অঞ্চল খুব উর্বর। তাই ফসল উত্‍পাদনের জন্য অনুকূল।

সাহিত্যে গড়াই নদী

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছেন গড়াই-পদ্মা নদীর তীরে । তার লেখায় বহুবার এ নদী দুটির প্রসঙ্গ এসেছে। গড়াই নদীকে কবি লিখতেন গৌরী নামে। আবার কখনো কখনো গোড়াই নামেও লিখেছেন তার কবিতায়। গড়াইয়ের নদীতীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা তার কবিতায় ফুটে উঠেছে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে:

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩১-৩২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
  2. Masud Hasan Chowdhury (২০১২)। "Gorai-Madhumati River"। Sirajul Islam and Ahmed A. Jamal। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh। ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  3. বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ১১০ ও ১১১; কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.