পদ্মা নদী

পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী। হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গানদীর প্রধান শাখা এবং বাংলাদেশের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাজশাহী এই পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত। পদ্মার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,৫৭১ ফুট (৪৭৯ মিটার) এবং গড় গভীরতা ৯৬৮ফুট (২৯৫ মিটার)। বাংলাদেশে নদীটির দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার[1], গড় প্রস্থ ১০ কিলোমিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক পদ্মা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ৩২।[2]

পদ্মা নদী
পদ্মা
পদ্মা নদীতে নৌকা চলাচল।
পদ্মা নদীতে নৌকা চলাচল।
দেশ বাংলাদেশ
জেলাসমূহ নবাবগঞ্জ রাজশাহী নাটোর পাবনা কুষ্টিয়া, মাদারিপুর শরিয়তপুর ফরিদপুর রাজবাড়ি চাঁদপুর
উৎস গঙ্গা
 - অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোহনা মেঘনা নদী
দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল)
Padma river

রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয় বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা।[3]

গতিপ্রকৃতি

বাংলাদেশে প্রধান নদীসমূহ

হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদী রাজশাহী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এখান থেকে নদীটি পদ্মা নাম ধারণ করেছে। গঙ্গার অন্য শাখাটি ভাগীরথী নামে ভারতে হুগলীর দিকে প্রবাহিত হয়। উৎপত্তিস্থল হতে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরো পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সবশেষে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়।[4]

দৈর্ঘ্য

পদ্মা নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য
পদ্মা নদীতে খেয়া পারাপারের দৃশ্য

পদ্মা বাংলাদেশের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী, এর দৈর্ঘ্য ৩৬৬ কিলোমিটার।[3]

উপনদী এবং শাখানদী

পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে সূর্যাস্ত

পদ্মার প্রধান উপনদী মহানন্দা এবং পুনর্ভবা । মহানন্দা উপনদীটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এবং পুনর্ভবা বাংলাদেশভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার বিভিন্ন শাখানদীর মধ্যে গড়াই, বড়াল আড়িয়াল খাঁ, কুমার, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব ইত্যাদি অন্যতম। আবার পদ্মার বিভিন্ন প্রশাখা নদীসমূহ হলো- মধুমতী, পশুর, কপোতাক্ষ ইত্যাদি। এই নদীগুলো কুষ্টিয়া,রাজবাড়ী,যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর বরিশাল, পটুয়াখালি ইত্যাদি জেলার উপর দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে।[4]

সাহিত্যে পদ্মা নদী

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিখ্যাত উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি এই নদীর তীরের মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করেই লেখা। পদ্মার নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নানাভাবে প্রভাবিত করেছে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। তার বিখ্যাত কিছু গানে পদ্মার হারানো ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে।[5] প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাক রচিত "পদ্মার পলিদ্বীপ" উপন্যাসটির উপজীব্য পদ্মার পাড়ের সাধারন মানুষের জীবনযাত্রা। [6] এই নদীর রূপ দেখে কবি তালহা আজিজ বলেছেন, "পদ্মার তীরেতে বসবাস আমার,

মুগ্ধ আমি রূপ দেখে তার।

এর তীরেই আছে কত শত স্মৃতি।

রাতে জোনাকিরা দেয় জ্যোতি;

মনে হয়, যেন স্বর্গের ছায়া!

কি অপরূপ তার মায়া! "

তথ্যসূত্র

  1. চৌধুরী, মাসুদ হাসান। "পদ্মা নদী"বাংলাপিডিয়া
  2. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী"। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
  3. Hossain ML, Mahmud J, Islam J, Khokon ZH and Islam S (eds.) (2005) Padma, Tatthyakosh Vol. 1 and 2, Dhaka, Bangladesh, p. 182 (in Bengali).
  4. বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ৭১ ও ৭২; কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪
  5. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা: ড. সৌমিত্র শেখর;পৃষ্ঠা ২৬১ ও ২৬২; অগ্নি পাবলিকেশন্স; প্রথম সংস্করণঃ ২০০৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.