বরাক নদী
বরাক নদী (সিলেটি: ꠛꠞꠣꠇ ꠉꠣꠋ, অসমীয়া: বৰাক নদী) হচ্ছে ভারতের আসাম রাজ্যের মহিপুর ও কাছাড় জেলায় সুরমা নদীর উজান প্রবাহপথের নাম। এই নদীটি প্রায় ৫৬৪ কিলোমিটার (৩৫০ মা) লম্বা এবং ভারতের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং আসামের মধ্যে গিয়ে বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বরাক নদী হচ্ছে দক্ষিণ আসমের একটি প্রধান নদী এবং সুরমা-মেঘনা নদী ব্যবস্থার অংশ। এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে মণিপুর রাজ্যের পাহাড়ে।[1] বদরপুরের কাছে এটি সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিলেটের সমভূমিতে এসে দুটি শাখায় আবার মিলিত হয়ে মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়েছে। এই মিলিত ধারা সাধারণভাবে বরাক নদী হলেও স্থানভেদে এটি কালনী, ভেড়ামোহনা, বলেশ্বর ও মেঘনা নামে পরিচিত।[2] এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এরব অববাহিকা প্রায় ৮,৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩,৪০,০০০ মা২) জায়গা জুড়ে রয়েছে। বারাকের অববাহিকা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
বরাক নদী ꠛꠞꠣꠇ ꠉꠣꠋ বৰাক নদী | |
বরবক্র (ꠛꠞꠛꠇ꠆ꠞ) কুয়াই (ꠈꠥꠀꠁ) [1] | |
দেশসমূহ | ভারত, বাংলাদেশ |
---|---|
রাজ্যসমূহ | মণিপুর, মিজোরাম, অসম |
উপনদী | |
- বাঁদিকে | সনি নদী (তুইরাল), ধলেশ্বরী নদী, কাটাখাল নদী |
- ডানদিকে | জিরি নদী, চিরি নদী, মধুরা নদী, জাতিঙ্গা নদী |
নগর | শিলচর |
উৎস | বরাইল রেঞ্জ [1] |
মোহনা | |
- স্থানাঙ্ক | ২৪°৫২′৩৪″ উত্তর ৯২°২৯′২১″ পূর্ব |
দৈর্ঘ্য | ৫৬৪ কিলোমিটার (৩৫০ মাইল) |
গতিপথ
ভারতের মণিপুর রাজ্যের লিয়াই কুলেন গ্রাম এই নদীর উৎপত্তি। এখানে স্থানীয় জনসংখ্যার অধিকাংশই পাউমানি নাগা উপজাতি। এখানে নদীটি ভৌরী নামে পরিচিত। এর উৎসের কাছে, নদীতে অনেক ঝরনার জল এসে পড়ে, যার মধ্যে আছে গুমতি, হাওড়া, কগনি, সেনাই বুড়ি, হরি মঙ্গল, কাকরাই, কুরুলিয়া, বালুঝুরি, শোনাইছড়ি ও দুরদুরিয়া। এটি মণিপুরের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে নাগাল্যান্ডে ঢোকে, এবং তারপর দক্ষিণ পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আসাম রাজ্যে ঢোকে। এখান থেকে এটি বাংলাদেশের দিকে চলে যায় এবং ভাঙ্গা বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

নাগাল্যান্ড রাজ্যে, বরাক দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ প্রবাহিত ঝরনার সাথে মিশে দ্রুত দক্ষিণমুখী হয় এবং আসাম ও মণিপুরে প্রবাহিত হয়ে, পশ্চিমমুখী হয়ে চান্ডেল জেলার কাছ দিয়ে সুন্দরবনের গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে গয়ে পড়ে। জলজ জীব বৈচিত্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নদীগুলির মধ্যে অন্যতম, এখানে নিওন টেট্রা সহ ২,০০০ প্রজাতির মাছ আছে। অন্যান্য প্রাণীগুলির মধ্যে আছে বরাক নদীর কুমির, বা সিয়ামিজ কুমির (একটি বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির কুমির), শুশু ডলফিন, মসৃণ চামড়ার ভোঁদড়, এবং কালো মকর বা এক ধরনের কুমির। বারাকের প্রধান উপনদীগুলি সবাই ভারতে এবং সেগুলি হল জিরি, লায়ং, লঙ্গাই, মধুরা, তুইরিয়াল, রুকনি এবং কাটাখাল। বরাক নদীতে টিপাইমুখ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর উৎস থেকে শুরু করে, নাগাল্যান্ড সীমান্তে সুরমা নদী ও বরাক নদীতে বিভক্ত হওয়া পর্যন্ত, বরাক নদী ৫৬৪ কিলোমিটার (৩৫০ মা) লম্বা।[3] নদীর সম্পূর্ণ উপত্যকা বন্যপ্রাণীতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ, এর মধ্যে আছে : ১. ভারজী অরণ্য (অতিবৃষ্টি অরণ্য), ২. লস লামজাও (প্লাবিত তৃণভূমি এবং সাভানা), ৩. বিশাল বদ্বীপ অ্যাভৌরিতে টাইডাল (ম্যানগ্রোভ) অরণ্য , ৪. উদ্ভিদ ও গাছপালা (ভারতে ও পশ্চিম কম্বোডিয়ার উপরিভাগ সমতল মালভূমিতে), ৫. বিশাল গ্রীষ্মপ্রধান জলাভূমির অরণ্য।
আরো দেখুন
- ভারতের নদীর তালিকা
- বাংলাদেশের নদীর তালিকা
তথ্যসূত্র
- Statistical Account of Manipur। পৃষ্ঠা 7।
- ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৬৩।
- "Barak and others"। nrsc.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। Water Resources Information System of India। ২৭ অক্টোবর ২০১৫। ৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
- "Barak Basin"। National Institute of Hydrology, Roorkee, India। ১৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।