পশ্চিমবঙ্গ

{{Infobox settlement | name = পশ্চিমবঙ্গ | type = রাজ্য | image_seal = Emblem of West Bengal.png | seal_alt = | image_blank_emblem = | blank_emblem_size = | blank_emblem_type =

| image_skyline =

| image_map = IN-WB.svg | map_alt = | map_caption = ভারতের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান | latd = | longd = | coor_pinpoint = | coordinates_type = | coordinates_display = | coordinates_footnotes = | coordinates_region = | subdivision_type = দেশ | subdivision_name =  ভারত | subdivision_type1 = অঞ্চল | subdivision_name1 = পূর্ব ভারত | established_title = প্রতিষ্ঠা | established_date = ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ | parts_type = জেলা | parts_style = para | p1 = ২৩টি | seat_type = রাজ্যের রাজধানী | seat = কলকাতা | seat1_type = বৃহত্তম শহর /
বৃহত্তম মহানগর অঞ্চল | seat1 = কলকাতা | government_footnotes = | governing_body = পশ্চিমবঙ্গ সরকার | leader_title = রাজ্যপাল | leader_name = [[জগদীপ ধনখর [30 জুলাই 2019 থেকে ]] | leader_title1 = মুখ্যমন্ত্রী | leader_name1 = মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস) | leader_title2 = আইনসভা | leader_name2 = পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা (২৯৫টি* আসনবিশিষ্ট) | leader_title3 = ন্যায়ালয় | leader_name3 = কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয় | unit_pref = Metric | area_footnotes = | area_total_km2 = ৮৮৭৫২ বর্গকিমি. | area_note = | area_rank = ১৪শ | elevation_footnotes = | elevation_m = | population_footnotes = [1] | population_total = ৯১২৭৬১১৫ | population_as_of = ২০১১ | population_rank = ৪র্থ | population_density_km2 = ১,০২৯ | population_note = | timezone1 = ভারতীয় প্রমাণ সময় | utc_offset1 = +০৫:৩০ | iso_code = IN-WB | blank_name_sec1 = মানব উন্নয়ন সূচক | blank_info_sec1 = ০.৬৩৭ (মধ্যম) | blank1_name_sec1 = মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী স্থান | blank1_info_sec1 = ১১শ (২০১৫)[2] | registration_plate = WB | blank_name_sec2 = সাক্ষরতা | blank_info_sec2 = ৭৭.০৮% (২০১১ সালের জনগণনা)[3] | blank1_name_sec2 = সরকারি ভাষা | blank1_info_sec2 = ইংরেজিবাংলা;
তাছাড়া হিন্দি, নেপালি, সাঁওতালি, কুড়মালি রাজবংশী, কামতাপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী;
এছাড়াও কিছু জায়গায় ওঁরাও, মুন্ডা, হো, রাভা, লেপচা ব্যবহৃত হয়।[4][5][6] | website = wb.gov.in | footnotes = ^* ২৯৪ জন নির্বাচিত, ১ জন মনোনীত }} পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য(প্রথম-উত্তর প্রদেশ,দ্বিতীয়- মহারাষ্ট্র, তৃতীয়-বিহার ) । এই রাজ্যের আয়তন । পশ্চিমবঙ্গ বাংলা-ভাষী বাঙালি জাতি অধ্যুষিত বাংলা অঞ্চলের একটি অংশ। এই রাজ্যের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং উত্তর দিকে নেপালভুটান রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, সিক্কিম ও অসম রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরটি হল ভারতের সপ্তম বৃহত্তম মহানগরী৷ ভৌগোলিক দিক থেকে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, গাঙ্গেয় বদ্বীপ, রাঢ় অঞ্চল ও উপকূলীয় সুন্দরবনের অংশবিশেষ এই রাজ্যের অন্তর্গত। বাঙালিরাই এই রাজ্যের প্রধান জাতিগোষ্ঠী এবং রাজ্যের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাঙালি হিন্দু

প্রাচীন বাংলা ছিল একাধিক প্রধান জনপদের কেন্দ্রস্থল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোক এই অঞ্চলটি জয় করেন। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩শ শতাব্দীর পর থেকে ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত একাধিক সুলতান, শক্তিশালী হিন্দু রাজন্যবর্গ ও বারো ভুঁইয়া নামধারী জমিদারেরা এই অঞ্চল শাসন করেন।

দিল্লি সলতনৎ এবং শাহী বাংলার সলতনৎ- এর সময়, ইওরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য প্রদেশ হিসেবে ধরতো [7] মুঘল সাম্রাজ্য আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (সাকুল্য আভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবে বাংলায় যা তখনকার দিনের বিহার , ঝাড়খণ্ড ,ওডিশা , অসম ,ত্রিপুরাবাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল। ,[8][9][10] যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের চেয়ে জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।[11]

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর দীর্ঘকাল কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে থাকার সুবাদে বাংলায় প্রাতিষ্ঠানিক পাশ্চাত্য শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের সূচনা ঘটে। এই ঘটনা পরবর্তীকালে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এই অঞ্চল দ্বিখণ্ডিত হয়। বাংলার পূর্ব ভূখণ্ড নিয়ে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলা (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং অধুনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র) গঠিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিম ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এই সরকারটিই ছিল সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান রাজ্য। ভারতের সাকুল্য আভ্যন্তরীণ উৎপাদনে অবদানের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ।[12] লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও উৎসব-অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। নোবেল পুরস্কার জয়ী বাঙালি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম এই রাজ্যে বিশেষ সমাদৃত ও জনপ্রিয়। কলকাতাকে "ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী" বলেও অভিহিত করা হয়।[13] খেলাধূলার ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি হল, এই রাজ্যের মানুষের মধ্যে জাতীয় স্তরে বিশেষ জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।[14][15][16]

নাম

আরও দেখুন : বঙ্গদেশের নামসমূহ

বঙ্গ বা বাংলা নামের সঠিক উৎসটি অজ্ঞাত। এই নামের উৎস সম্পর্কে একাধিক মতবাদ প্রচলিত। একটি মতে এটি খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে এই অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় উপজাতির ভাষা থেকে এসেছে।[17] সংস্কৃত সাহিত্যে বঙ্গ নামটি অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হলে এই রাজ্যের নামকরণ পশ্চিমবঙ্গ করা হয়েছিল। ইংরেজিতে অবশ্য West Bengal (ওয়েস্ট বেঙ্গল) নামটিই সরকারিভাবে প্রচলিত। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের ইংরেজি নামটি পালটে Paschimbanga রাখার প্রস্তাব দেয়।[18]

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিবর্তন করে বাংলা বিষয়টি ২০১৬ থেকে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলা রাজ্যের বিধানসভায় এই নাম পরিবর্তনের আইন পাস করা হয়। ২০১৬ সালের আগস্টে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে নতুন নাম রাখার প্রস্তাব করা হয় বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল আর হিন্দিতে বাঙাল। রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৮৯ ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন সংসদবিষয়ক ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে দুটি প্রস্তাব গৃহীত হয়- বাংলা অথবা বঙ্গ।[19]

পরবর্তীকালে ভারত সরকার তিনটির পরিবর্তে একটি মাত্র নাম নির্ধারণের পক্ষে পরামর্শ প্রদান করে। এই পরামর্শ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ২০১৮’এর ২৬ জুলাই দুপুরে সকল ভাষার জন্য ‘বাংলা’ নামটিই সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছে। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নামবদলের প্রস্তাব রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর হবে।[20]

ইতিহাস

প্রাচীন যুগ

বৃহত্তর বঙ্গদেশে সভ্যতার সূচনা ঘটে আজ থেকে ৪,০০০ বছর আগে।[21][22] এই সময় দ্রাবিড়, তিব্বতি-বর্মি ও অস্ত্রো-এশীয় জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। বঙ্গ বা বাংলা শব্দের প্রকৃত উৎস অজ্ঞাত। তবে মনে করা হয়, ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ যে দ্রাবিড়-ভাষী বং জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল, তারই নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় বঙ্গ[23] গ্রিক সূত্র থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দ নাগাদ গঙ্গারিডাই নামক একটি অঞ্চলের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সম্ভবত এটি বৈদেশিক সাহিত্যে বাংলার প্রাচীনতম উল্লেখগুলির অন্যতম। মনে করা হয়, এই গঙ্গারিডাই শব্দটি গঙ্গাহৃদ (অর্থাৎ, গঙ্গা যে অঞ্চলের হৃদয়ে প্রবাহিত) শব্দের অপভ্রংশ।[24] খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে বাংলাবিহার অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে মগধ রাজ্য। একাধিক মহাজনপদের সমষ্টি এই মগধ রাজ্য ছিল মহাবীরগৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের অন্যতম।[25] মৌর্য রাজবংশের রাজত্বকালে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি মহামতি অশোকের রাজত্বকালে আফগানিস্তানপারস্যের কিছু অংশও এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রাচীনকালে জাভা, সুমাত্রাশ্যামদেশের (অধুনা থাইল্যান্ড) সঙ্গে বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাবংশ অনুসারে, বিজয় সিংহ নামে বঙ্গ রাজ্যের এক রাজপুত্র লঙ্কা (অধুনা শ্রীলঙ্কা) জয় করেন এবং সেই দেশের নতুন নাম রাখেন সিংহল। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও শ্যামদেশে গিয়ে সেখানে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন।

আদিমধ্য ও মধ্যযুগ

লালজীউ মন্দির, বিষ্ণুপুর।

খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মগধ রাজ্য ছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি একাধিক ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত সমগ্র বঙ্গ অঞ্চলটিকে একত্রিত করে একটি সুসংহত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[26] শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ (অধুনা মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি অঞ্চল)। তার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে বঙ্গের ইতিহাসে এক নৈরাজ্যের অবস্থা সৃষ্টি। ইতিহাসে এই সময়টি "মাৎস্যন্যায়" নামে পরিচিত। এরপর চারশো বছর বৌদ্ধ পাল রাজবংশ এবং তারপর কিছুকাল হিন্দু সেন রাজবংশ চিত্র:BallalDhipi RanganDatta Image4.jpgএই অঞ্চল শাসন করেন। পাল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র (অধুনা পাটনা, বিহার) এবং পরে গৌড় (মালদহ জেলা)। সেন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল নবদ্বীপ (নদিয়া জেলা)। এরপর ভারতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে বঙ্গ অঞ্চলেও ইসলাম ধর্মে প্রসার ঘটে।[27] বকতিয়ার খলজি নামে দিল্লি সুলতানির দাস রাজবংশের এক তুর্কি সেনানায়ক সর্বশেষ সেন রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাস্ত করে বঙ্গের একটি বিরাট অঞ্চল অধিকার করে নেন। এরপর কয়েক শতাব্দী এই অঞ্চল দিল্লি সুলতানির অধীনস্থ সুলতান রাজবংশ অথবা সামন্ত প্রভুদের দ্বারা শাসিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনানায়ক ইসলাম খাঁ বঙ্গ অধিকার করেন। যদিও মুঘল সাম্রাজ্যের রাজদরবার সুবা বাংলার শাসকদের শাসনকার্যের ব্যাপারে আধা-স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন। এই অঞ্চলের শাসনভার ন্যস্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের হাতে। নবাবেরাও দিল্লির মুঘল সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ বিজয়ের পর

ব্রিটিশ শাসন

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাংলার বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী; ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদকল্পে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে বঙ্গ অঞ্চলে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে। এই সব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। অবশেষে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করেন। এর পর সুবা বাংলার রাজস্ব আদায়ের অধিকার কোম্পানির হস্তগত হয়।[28] ১৭৬৫ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি স্থাপিত হয়। ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (অধুনা মধ্যপ্রদেশ) উত্তরে অবস্থিত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মোহনা থেকে হিমালয় ও পাঞ্জাব পর্যন্ত সকল ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে।[29] ১৭৭২ সালে কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষিত হয়।

বাংলার নবজাগরণব্রাহ্মসমাজ-কেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন বাংলার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সূচনা কলকাতার অদূরেই হয়েছিল। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তি স্বহস্তে গ্রহণ করে। ভারত শাসনের জন্য একটি ভাইসরয়ের পদ সৃষ্টি করা হয়।[30] ১৯০৫ সালে ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) অঞ্চলটিকে পূর্ববঙ্গ থেকে পৃথক করা হয়। কিন্তু বঙ্গবিভাগের এই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং ১৯১১ সালে বঙ্গপ্রদেশকে পুনরায় একত্রিত করা হয়।[31] ১৯৪৩ সালে পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।[32]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অনুশীলন সমিতিযুগান্তর দলের মতো বিপ্লবী দলগুলি এখানে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলায় ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১৯২০ সাল থেকে এই রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চক্রান্তে ভারত স্বাধীনতা অর্জন ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা দ্বিধাবিভক্ত হয়। হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গ নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যোগ দেয় (এই অঞ্চলটি পরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয় এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে)।[33]

স্বাধীনোত্তর যুগ

দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এই ব্যাপক অভিবাসনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৫০ সালে দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়। ১৯৫৫ সালে ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিহারের কিছু বাংলা-ভাষী অঞ্চলও এই সময় পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়, ধর্মঘট ও সহিংস মার্ক্সবাদী-নকশালবাদী আন্দোলনের ফলে রাজ্যের শিল্প পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। এর ফলে এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার যুগের সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। সেই সময় নকশালবাদের সাথে কংগ্রেসের চক্রান্তের ফলে রাজ্যের পরিকাঠামোয় গভীর চাপ সৃষ্টি হয়।[34] ১৯৭৪ সালের বসন্ত মহামারীতে রাজ্যে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এরপর তিন দশকেরও বেশি সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শাসনভার পরিচালনা করে।[35]

১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ২০০০ সালে সংস্কারপন্থী নতুন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্বাচনের পর রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছোটোবড়ো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটেছে।[36][37] আবার শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।[38][39]

২০০৬ সালে হুগলির সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তীব্র গণ-অসন্তোষ দেখা যায়। জমি অধিগ্রহণ বিতর্কের প্রেক্ষিতে সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী কারখানা প্রত্যাহার করে নিলে, তা রাজ্য রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।[40] ২০০৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে অশান্তির জেরে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন মারা গেলে রাজ্য রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১০ সালের পৌরনির্বাচনে শাসক বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। অবশেষে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে রাজ্যের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হয়।

ভূগোল ও জলবায়ু

বর্ষাকালে রাজ্যের বহু অংশই বন্যার কবলে পড়ে।

পূর্ব ভারতে হিমালয়ের দক্ষিণে ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে এক সংকীর্ণ অংশে পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত।ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেটি উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরকে স্পর্শ করেছে। রাজ্যের মোট আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল)।[41] রাজ্যের সর্বোত্তরে অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পূর্ব হিমালয়ের একটি অংশ। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু (৩,৬৩৬ মিটার বা ১১,৯২৯ ফুট) এই অঞ্চলে অবস্থিত।[42] এই পার্বত্য অঞ্চলকে দক্ষিণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সংকীর্ণ তরাই অঞ্চল। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চল গাঙ্গেয় বদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলের থেকে। রাজ্যের সর্বদক্ষিণে একটি নাতিদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমিও বিদ্যমান। অন্যদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।

দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কালিম্পঙের কাছে তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষে ৩১ ক জাতীয় সড়ক

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী গঙ্গা রাজ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। এই নদীর একটি শাখা পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; অপর শাখাটি ভাগীরথী ও হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা, তোরষা, জলঢাকা, ফুলহারমহানন্দা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদনদী। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান হল দামোদর, অজয়কংসাবতীগাঙ্গেয় বদ্বীপসুন্দরবন অঞ্চলে অজস্র নদনদী ও খাঁড়ি দেখা যায়। নদীতে বেপরোয়া বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে গঙ্গার দূষণ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সমস্যা।[43] রাজ্যের অন্তত নয়টি জেলায় আর্সেনিক দূষিত ভৌমজলের সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ১০ µg/লিটারের অধিক মাত্রার আর্সেনিক দূষিত জল পান করে ৮৭ লক্ষ মানুষ।[44]

পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এই রাজ্যের প্রধান ঋতু চারটি - শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল। বদ্বীপ অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হলেও, পশ্চিমের উচ্চভূমি অঞ্চলে উত্তর ভারতের মতো শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাজ্যে গ্রীষ্মকালের গড় তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস (১০০° ফারেনহাইট) থেকে ৪৫° সেলসিয়াস (১১৩° ফারেনহাইট)।[45] রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল আর্দ্র দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রবল ঝড়, বজ্রপাতশিলাবৃষ্টি হয় তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।[46] বর্ষাকাল স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ভারত মহাসাগরীয় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি উত্তরপশ্চিম অভিমুখে ধাবিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটায়। রাজ্যে শীতকাল (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) আরামদায়ক। এই সময় রাজ্যের সমভূমি অঞ্চলের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ১৫° সেলসিয়াস (৫৯° ফারেনহাইট)।[45] শীতকালে শুষ্ক শীতল উত্তরে বাতাস বয়। এই বায়ু তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার মাত্রাও কমিয়ে দেয়। যদিও দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। এই সময়ে এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও তুষারপাতও হয়।

জীবজগৎ

নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যানে সূর্যাস্ত
পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রীয় প্রতীক
বিষয় প্রতীক চিত্র পাদটীকা
State animal মেছোবাঘ[47][48] (Prionailurus viverrinus)[49]
State bird ধলাগলা মাছরাঙা (Halcyon smyrnensis)
State flower শিউলি ফুল (Nyctanthes arbor-tristis)
State tree ছাতিম (Alstonia scholaris)[50]
State seal

পশ্চিমবঙ্গ জৈব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপকূলীয় সমভূমি পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য। রাজ্যের ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ১৪ শতাংশ বনভূমি; যা জাতীয় গড় ২৩ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম।[51] রাজ্যের আয়তনের ৪ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা[52] বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।[53]

উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সুন্দরবনের লবনাক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্যভূমি।[54] গাঙ্গেয় সমভূমির পললমৃত্তিকা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে উর্বর করে তুলেছে।[54] রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমির উদ্ভিদপ্রকৃতির সমরূপ।[54] এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী বৃক্ষ হল শাল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি উপকূলীয় ধরনের। এই অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ হল ঝাউ। সুন্দরবন অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৃক্ষ সুন্দরী গাছ। এই গাছ এই অঞ্চলের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় এবং সুন্দরবনের নামকরণও এই গাছের নামেই হয়েছে।[55] উত্তরবঙ্গের উদ্ভিদপ্রকৃতির প্রধান তারতম্যের কারণ এই অঞ্চলের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে ঘন শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বন দেখা যায়।[56] আবার ১০০০ মিটার উচ্চতায় উদ্ভিদের প্রকৃতি উপক্রান্তীয়। ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওক, কনিফার, রডোডেনড্রন প্রভৃতি গাছের নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য দেখা যায়।[56]

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যে মোট ছয়টি জাতীয় উদ্যান আছে[57]সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, বক্সা জাতীয় উদ্যান, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান, সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। রাজ্যের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারতীয় গণ্ডার, এশীয় হাতি, হরিণ, বাইসন, চিতাবাঘ, গৌর ও কুমির উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের পক্ষীজগৎও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। পরিযায়ী পাখিদের শীতকালে এ রাজ্যে আসতে দেখা যায়।[52] সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মতো উচ্চ পার্বত্য বনভূমি অঞ্চলে বার্কিং ডিয়ার, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, টাকিন, সেরো, প্যাঙ্গোলিন, মিনিভেট, কালিজ ফেজান্ট প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর সন্ধান মেলে। বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে গঙ্গা নদী শুশুক, নদী কচ্ছপ, স্বাদুজলের কুমিরলোনা জলের কুমির প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন্যপ্রাণীও দেখা যায়।[58] ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের কাজও করে। এখানে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় মাছ দেখা যায়।[58]

সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় (মহাকরণ)
রাজভবন
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বিচারালয় কলকাতা হাইকোর্ট।

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সংসদীয় পদ্ধতিতে শাসিত হয়। রাজ্যের সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত। পশ্চিমবঙ্গের আইনসভা বিধানসভা নামে পরিচিত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই বিধানসভা গঠিত। বিধানসভার সদস্যরা একজন অধ্যক্ষ ও একজন উপাধ্যক্ষকে নির্বাচিত করেন। অধ্যক্ষ অথবা (অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে) উপাধ্যক্ষ বিধানসভা অধিবেশনে পৌরহিত্য করেন। কলকাতা হাইকোর্ট ও অন্যান্য নিম্ন আদালত নিয়ে রাজ্যের বিচারবিভাগ গঠিত। শাসনবিভাগের কর্তৃত্বভার ন্যস্ত রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার উপর। রাজ্যপাল রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধান হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা সরকারপ্রধান মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন; এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপালই অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। মন্ত্রিসভা বিধানসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা এককক্ষীয়। এই সভার সদস্য সংখ্যা ২৯৫ জন; এঁদের মধ্যে ২৯৪ জন নির্বাচিত এবং একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত। বিধানসভার সদস্যদের বিধায়ক বলা হয়।[59][60] বিধানসভার স্বাভাবিক মেয়াদ পাঁচ বছর; তবে মেয়াদ শেষ হবার আগেও বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন সংস্থাগুলি যথাক্রমে পঞ্চায়েতপুরসভা নামে পরিচিত। এই সকল সংস্থাও নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) থেকে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ৪২ জন ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ১৬ জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন।[61]

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ শক্তি হল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টসর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫টি আসন দখল করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। বিগত ৩৪ বছর এই বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে। এই সরকার ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।[35][62][63] ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ২২৬টি আসন দখল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস-জাতীয় কংগ্রেস জোট বামফ্রন্টকে পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করছে।

প্রশাসনিক বিভাগ

প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি বিভাগ ও ২৩টি জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে।

বর্ধমান বিভাগ মালদা বিভাগ জলপাইগুড়ি বিভাগ প্রেসিডেন্সি বিভাগ মেদিনীপুর বিভাগ
কোড[64] জেলা জেলাসদর[65] প্রতিষ্ঠা[66] মহকুমা আয়তন[67] ২০১১ অনুসারে জনসংখ্যা[67] জনঘনত্ব মানচিত্র
KO কলকাতা জেলা কলকাতা ১৯৪৭ -- ১৮৫ বর্গকিলোমিটার (৭১ বর্গমাইল) ৪,৪৯৬,৬৯৪ ২৪,৩০৬ /কিমি (৬২,৯৫০ /বর্গমাইল)
PN উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা বারাসত ১৯৮৬[68] ৪,০৯৪ বর্গকিলোমিটার (১,৫৮১ বর্গমাইল) ১০,০০৯,৭৮১ ২,৪৪৫ /কিমি (৬,৩৩০ /বর্গমাইল)
PS দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা আলিপুর ১৯৮৬[68] ৯,৯৬০ বর্গকিলোমিটার (৩,৮৫০ বর্গমাইল) ৮,১৬১,৯৬১ ৮১৯ /কিমি (২,১২০ /বর্গমাইল)
HR হাওড়া জেলা হাওড়া ১৯৪৭ ১,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার (৫৬৬ বর্গমাইল) ৪,৮৫০,০২৯ ৩,৩০৬ /কিমি (৮,৫৬০ /বর্গমাইল)
NA নদিয়া জেলা কৃষ্ণনগর ১৯৪৭ ৩,৯২৭ বর্গকিলোমিটার (১,৫১৬ বর্গমাইল) ৫,১৬৭,৬০০ ১,৩১৬ /কিমি (৩,৪১০ /বর্গমাইল)
MU মুর্শিদাবাদ জেলা বহরমপুর ১৯৪৭ ৫,৩২৪ বর্গকিলোমিটার (২,০৫৬ বর্গমাইল) ৭,১০৩,৮০৭ ১,৩৩৪ /কিমি (৩,৪৬০ /বর্গমাইল)
PU পুরুলিয়া জেলা পুরুলিয়া ১৯৫৬[69] ৬,২৫৯ বর্গকিলোমিটার (২,৪১৭ বর্গমাইল) ২,৯৩০,১১৫ ৪৬৮ /কিমি (১,২১০ /বর্গমাইল)
BI বীরভূম জেলা সিউড়ি ১৯৪৭ ৪,৫৪৫ বর্গকিলোমিটার (১,৭৫৫ বর্গমাইল) ৩,৫০২,৪০৪ ৭৭১ /কিমি (২,০০০ /বর্গমাইল)
BN বাঁকুড়া জেলা বাঁকুড়া ১৯৪৭ ৬,৮৮২ বর্গকিলোমিটার (২,৬৫৭ বর্গমাইল) ৩,৫৯৬,৬৭৪ ৫২৩ /কিমি (১,৩৫০ /বর্গমাইল)
BR পূর্ব বর্ধমান জেলা বর্ধমান ২০১৭ ৫,৪২১ বর্গকিলোমিটার (২,০৯৩ বর্গমাইল) ৪,৮৩৫,৫৩২ ৮৯২ /কিমি (২,৩১০ /বর্গমাইল)
পশ্চিম বর্ধমান জেলা আসানসোল ২০১৭ ১,৬০৩ বর্গকিলোমিটার (৬১৯ বর্গমাইল) ২,৮৮২,০৩১ ১,৭৯৮ /কিমি (৪,৬৬০ /বর্গমাইল)
HG হুগলি জেলা চুঁচুড়া ১৯৪৭ ৩,১৪৯ বর্গকিলোমিটার (১,২১৬ বর্গমাইল) ৫,৫১৯,১৪৫ ১,৭৫৩ /কিমি (৪,৫৪০ /বর্গমাইল)
ME পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তমলুক ২০০২[70]
  • তমলুক সদর
  • হলদিয়া
  • এগরা
  • কাঁথি
৪,৭১৩ বর্গকিলোমিটার (১,৮২০ বর্গমাইল) ৫,০৯৫,৮৭৫ ১,০৮১ /কিমি (২,৮০০ /বর্গমাইল)
ME পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মেদিনীপুর ২০০২[70] ৬,৩৪৪ বর্গকিলোমিটার (২,৪৪৯ বর্গমাইল) ৪,৭৭৬,২৯৪ ৭৫৩ /কিমি (১,৯৫০ /বর্গমাইল)
KB কোচবিহার জেলা কোচবিহার ১৯৫০[71] ৩,৩৮৭ বর্গকিলোমিটার (১,৩০৮ বর্গমাইল) ২,৮১৯,০৮৬ ৮৩২ /কিমি (২,১৫০ /বর্গমাইল)
KA কালিম্পং জেলা কালিম্পং ২০১৭[70] ১,০৫৬ কিমি (৪০৮ মা) ২৫১,৬৪০ ২৩৮ /কিমি (৬২০ /বর্গমাইল)
AD আলিপুরদুয়ার জেলা আলিপুরদুয়ার ২০১৪
  • আলিপুরদুয়ার
২,৮৪১ বর্গকিলোমিটার (১,০৯৭ বর্গমাইল) ১,৪৯১,২৫০ ৫২৫ /কিমি (১,৩৬০ /বর্গমাইল)
DA দার্জিলিং জেলা দার্জিলিং ২০১৭ ২,০৯৩ বর্গকিলোমিটার (৮০৮ বর্গমাইল) ১,৫৯৫,১৮৩ ৭৬২ /কিমি (১,৯৭০ /বর্গমাইল)
JA জলপাইগুড়ি জেলা জলপাইগুড়ি ২০১৪ ৩,৩৮৬ বর্গকিলোমিটার (১,৩০৭ বর্গমাইল) ২,৩৮১,৫৯৬ ৭০৩ /কিমি (১,৮২০ /বর্গমাইল)
JH ঝাড়গ্রাম জেলা ঝাড়গ্রাম ২০১৭[71] ৩,০২৪ কিমি (১,১৬৮ মা) ১,১৩৭,১৬৩ ৩৭৬ /কিমি (৯৭০ /বর্গমাইল)
UD উত্তর দিনাজপুর জেলা রায়গঞ্জ ১৯৯২[72] ৩,১৪০ বর্গকিলোমিটার (১,২১০ বর্গমাইল) ৩,০০৭,১৩৪ ৯৫৮ /কিমি (২,৪৮০ /বর্গমাইল)
DD দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বালুরঘাট ১৯৯২[73]
  • বালুরঘাট সদর
  • গঙ্গারামপুর
২,২১৯ বর্গকিলোমিটার (৮৫৭ বর্গমাইল) ১,৬৭৬,২৭৬ ৭৫৫ /কিমি (১,৯৬০ /বর্গমাইল)
MA মালদহ জেলা ইংলিশবাজার ১৯৪৭ ৩,৭৩৩ বর্গকিলোমিটার (১,৪৪১ বর্গমাইল) ৩,৯৮৮,৮৪৫ ১,০৬৯ /কিমি (২,৭৭০ /বর্গমাইল)
মোট ২৩ ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল) ৯১,২৭৬,১১৫ ১,০২৯ /কিমি (২,৬৭০ /বর্গমাইল)

প্রতিটি জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসক বা জেলা কালেক্টরের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি "ভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্যক" (আইএএস) বা "পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন কৃত্যক" (ডব্লিউবিসিএস) কর্তৃক নিযুক্ত হন।[74] প্রতিটি জেলা মহকুমার বিভক্ত। মহকুমার শাসনভার মহকুমা-শাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। মহকুমাগুলি আবার ব্লকে বিভক্ত। ব্লকগুলি গঠিত হয়েছে পঞ্চায়েতপুরসভা নিয়ে।[75]

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর। কলকাতা ভারতের তৃতীয় বৃহৎ মহানগর।[76] এবং বৃহত্তর কলকাতা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরাঞ্চল।[77] উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি রাজ্যের অপর এক অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মহানগর। শিলিগুড়ি করিডোরে অবস্থিত এই শহর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে অবশিষ্ট দেশের সংযোগ রক্ষা করছে। আসানসোলদুর্গাপুর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পতালুকে অবস্থিত অপর দুটি মহানগর।[78] রাজ্যের অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়া, রাণীগঞ্জ, হলদিয়া, জলপাইগুড়ি, খড়গপুর, বর্ধমান, দার্জিলিং, মেদিনীপুর, তমলুক, ইংরেজ বাজারকোচবিহার[78]

অর্থনীতি

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান খাদ্য ও পণ্যফসল যথাক্রমে ধানপাট
মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বর্তমান মূল্যে (৯৩-৯৪ ভিত্তি)[79]

ভারতীয় টাকার কোটির অঙ্কে

বছরমোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন
১৯৯৯-২০০০১৩৫,১৮২
২০০০-২০০১১৪৩,৫৩২
২০০১-২০০২১৫৭,১৩৬
২০০২-২০০৩১৬৮,০৪৭
২০০৩-২০০৪১৮৯,০৯৯
২০০৪-২০০৫২০৮,৫৭৮
২০০৫-২০০৬২৩৬,০৪৪

পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। রাজ্যের প্রধান খাদ্যফসল হল ধান। অন্যান্য খাদ্যফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাল, তৈলবীজ, গম, তামাক, আখআলু। এই অঞ্চলের প্রধান পণ্যফসল হল পাটচা উৎপাদনও বাণিজ্যিকভাবে করা হয়ে থাকে; উত্তরবঙ্গ দার্জিলিং ও অন্যান্য উচ্চ মানের চায়ের জন্য বিখ্যাত।[80] যদিও রাজ্যের মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনে প্রধান অবদানকারী হল চাকুরিক্ষেত্র; এই ক্ষেত্র থেকে রাজ্যের মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনের ৫১ শতাংশ আসে; অন্যদিকে কৃষিক্ষেত্র থেকে আসে ২৭ শতাংশ ও শিল্পক্ষেত্র থেকে আসে ২২ শতাংশ।[81] রাজ্যের শিল্পকেন্দ্রগুলি কলকাতা ও পশ্চিমের খনিজসমৃদ্ধ উচ্চভূমি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত। দুর্গাপুর-আসানসোল কয়লাখনি অঞ্চলে রাজ্যের প্রধান প্রধান ইস্পাতকেন্দ্রগুলি অবস্থিত।[80] ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি, ইলেকট্রনিকস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কেবল, ইস্পাত, চামড়া, বস্ত্র, অলংকার, যুদ্ধজাহাজ, অটোমোবাইল, রেলওয়ে কোচ ও ওয়াগন প্রভৃতি নির্মাণশিল্প রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পরও খাদ্যের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী ছিল। ভারতের সবুজ বিপ্লব পশ্চিমবঙ্গে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় এই রাজ্যের খাদ্য উৎপাদন অপর্যাপ্তই রয়ে যায়। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে রাজ্যে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।[82] ১৯৮০-৮১ সালে ভারতের সামগ্রিক শিল্প উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল ৯.৮ শতাংশ; ১৯৯৭-৯৮ সালে এই অংশ কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। তবে চাকুরিক্ষেত্র জাতীয় হারের তুলনায় অধিক হারে প্রসারিত হয়েছে এই রাজ্যে।

২০০৩-২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থব্যবস্থা। রাজ্যের নিট আভ্যন্তরীন উৎপাদন ২১.৫ মার্কিন ডলার[81] ২০০১-২০০২ সালে রাজ্যের গড় রাজ্য আভ্যন্তরীন উৎপাদন ছিল ৭.৮ শতাংশেরও বেশি — যা জাতীয় জিডিপি বৃদ্ধির হারকেও ছাপিয়ে যায়।[83] রাজ্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই বিনিয়োগ মূলত আসে সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্রে।[81] কলকাতা বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। কলকাতা তথা রাজ্যের সামগ্রিক আর্থিক উন্নতির দৌলতে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) দেশের তৃতীয় দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থব্যবস্থা।[84] যদিও, এই কৃষিভিত্তিক রাজ্যে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে নানারকম বিতর্ক দানা বেঁধেছে।[85] ন্যাসকম-গার্টনার পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছে।[86] পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য আভ্যন্তরিন উৎপাদন বেড়ে ২০০৪ সালে ১২.৭ শতাংশ এবং ২০০৫ সালে ১১.০ শতাংশ হয়।[87] চীনের দৃষ্টান্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পদ্ধতির পরিবর্তে ধনতান্ত্রিক পন্থায় রাজ্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ গ্রহণ করেছিলেন।[88]

শিল্প বাণিজ্য ও উদ্যোগ

এই মন্ত্রকের অধীনে দুটি শাখা হলো শিল্প ও বাণিজ্য এবং রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন।

ক. শিল্প ও বাণিজ্য

পশ্চিমবঙ্গ ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসারে ও নিয়ন্ত্রণে এই মন্ত্রক দায়িত্বপ্রাপ্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল ভারতীয় অর্থনীতির প্রেক্ষিতে এই দফতরের ভূমিকা ও কার্যধারা অবিরত বিস্তৃত হচ্ছে ; প্রাথমিকভাবে এর মধ্যে রয়েছে :-

রাজ্যে শিল্প বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। শিল্পনীতি প্রণয়ন ও তার রূপায়ণ। শিল্প পরিকাঠামোর বিকাশ উৎসাহ ভাতা প্যাকেজের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করা এই দফতরের নিম্নলিখিত নয়টি সক্রিয় সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে :-

 ১) শিল্প অধিকার
 ২) খনি ও খনিজ অধিকার
 ৩) পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম লিমিটেড ( wbidc.com )
 ৪) পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম ( wbiidc.org.in )
 ৫) পশ্চিমবঙ্গ খনিজ উন্নয়ন ও বাণিজ্য নিগম ( wbmdtc.com )
 ৬) বৃহত্তর কলকাতা গ্যাস সরবরাহ নিগম ( gcgscl.org.in )
 ৭) পশ্চিমবঙ্গ ঔষধশিল্প ও ফাইটো রাসায়নিক উন্নয়ন নিগম
 ৮) পশ্চিমবঙ্গ সরকারি মুদ্রণালয় ও লেখ - সামগ্রী কার্যালয়
 ৯) ফার্ম , সোসাইটি ও অ-বাণিজ্যিক নিগম এর নিবন্ধন অফিস

খ. রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন

রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন শাখার দায়িত্ব হলো

রাজ্যে যে সমস্ত শিল্প রুগ্ন হয়ে গেছে অথবা ওই শিল্পের বেহাল দশার জন্য কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সেক্ষেত্রে ওই সব শিল্পের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে শিল্পের রুগ্নতার মোকাবিলা করা রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলির পুনর্গঠনে সমন্বয়কারী সংস্থার ভূমিকা পালন শাখার প্রধান কাজগুলি হলো :-

পশ্চিমবঙ্গ শিল্প নবীকরণ পরিকল্প (২০০১) (ডব্লু বি আই আর এম)- এ বিধিবদ্ধ নির্দিষ্ট কিছু ছাড় ও বিশেষ সুবিধা -র সাহায্যে পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ রূপায়ণ প্রচেষ্টা কে সক্রিয় পথনির্দেশ ও সুসমন্বিত রূপায়ণের মাধ্যমে রাজ্যে বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনাল (এন সি এল টি) - এর হস্তক্ষেপে বা হস্তক্ষেপ ব্যতীত বন্ধ ও রুগ্ন শিল্প ইউনিট গুলি (বৃহৎ / মাঝারি) র পুনরুজ্জীবন ও পুনর্বাসনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

কৃষি[89]

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিকভাবেই কৃষিভিত্তিক রাজ‍্য। যদিও এই রাজ‍্য ভারতের ভৌগলিক এলাকার মাত্র ২.৭% জুড়ে আছে, কিন্তু জনসংখ‍্যার ৮% খাদ‍্যের ক্ষেত্রে এই রাজ‍্যের উপর নির্ভরশীল। ৭১.২৩ লক্ষ কৃষিজীবী পরিবারের ৯৬%-ই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। জোতের গড় আয়তন ০.৭৭ হেক্টর। সর্বোপরি এই রাজ‍্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এবং কৃষি-আবহাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ, ফলত: বিভিন্ন ধরনের খাদ‍্যশস‍্য এখানে উৎপাদন করা সম্ভব। ধান এবং সব্জী উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের মধ‍্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আলু উৎপাদনে এই রাজ‍্য দ্বিতীয় স্থানে আছে (উত্তরপ্রদেশের পরেই)। এছাড়া পাট, আনারস, লিচু, আম এবং খুচরো ফুলের উৎপাদনেও এই রাজ‍্য গুরুত্বপুর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে।

নিট কৃষিক্ষেত্রের পরিমাণ ৫২.০৫ লক্ষ হেক্টর। এই পরিমাণটি মোট ভৌগলিক এলাকার ৬৮% এবং কর্ষণযোগ‍্য জমির ৯২%। এছাড়া কৃষি নিবিড়তার পরিমাণ ৯৮৪%। অবশ‍্য যেহেতু এই রাজ‍্য আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী তাই মাঝে মাঝেই বন‍্যা, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও এই রাজ‍্য চাল, সব্জী ও আলুর উৎপাদন উদ্বৃত্ত হয়, ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানে বিপুল পার্থক‍্য আছে। কৃষির উন্নয়নে প্রধান বাধাগুলি হল রাসায়নিক সার ব‍্যবহারে ভারসাম‍্যের অভাবের দরুন ভূমিস্বাস্থ‍্যের অবনমন, প্রয়োজনীয় উন্নত মানের বীজ পাবার অসুবিধা, জোত যন্ত্রায়ণের অপ্রতুলতা, অসংগঠিত বাজার ইত‍্যাদি।

কৃষির উন্নয়ন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী:

উপরের প্রতিবন্ধকতাগুলিকে মেনে নিয়েও বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের ক্রেত্রে কৃষি এখনো এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা এবং জীবনযাপনের মাধ‍্যম। এজন‍্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিভাগ, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে, ‘‘২০২০ সালের মধ‍্যে দক্ষতা, কৃৎকৌশল, বাজার ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে কৃষকদের আয়ের দ্বিগুণ বৃদ্ধি এই সামগ্রিক উদ্দেশ‍্য নিয়ে কাজ করে চলেছে। এই উদ্দেশ‍্যকে পরিপূর্ণতা দেবার জন‍্য XII এফ ওয়াই পি- রাজ‍্য কৃষি পরিকল্পনায় নিচের লক্ষ‍্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:

১। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতায় পরিমাপযোগ‍্য উন্নয়নকে নিশ্চিত করা।

২। সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপের মাধ‍্যমে উৎপাদনের পার্থক‍্য হ্রাস করা।

৩। কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কৃষিজীবীদের আয় সর্ব্বোচ্চ পরিমাণে নিয়ে যাওয়া।

৪। বিপণনে হস্তক্ষেপ ও রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলির বর্ধিতকরণ।

৫। কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের বৃদ্ধি এবং

৬। আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলির মোকাবিলা করা এবং খরা ও বন‍্যা ব‍্যবস্থাপনের ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

সম্মুখগতি:

উপরের লক্ষ‍্যমাত্রাগুলি পূরণের জন‍্য কৃষি বিভাগ কৃষি সম্পর্কিত অন‍্যান‍্য বিভাগের সঙ্গে যেমন, প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন, মৎস‍্য, কৃষি বিপণন, উদ‍্যানপালন, সমবায়, জলসম্পদ অনুসন্ধান, সেচ ও জলপথ, বন, রেশমশিল্প, খাদ‍্য ও সরবরাহ এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের অধীন ডব্লিউ বি সি এ ডি সি-র সঙ্গে সমণ্বয় রেখে কাজ করে। সাম্প্রতিক কালে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের প্রচেষ্টার প্রতি লক্ষ‍্য রেখে এবং তারা আরও বেশি প্রতিফল পান সেই উদ্দেশ‍্যে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যেমন উন্নততর অনুশীলন, উন্নতমানের কাঁচামাল, বিভিন্ন শস‍্যের উৎপাদন, কৃষি যন্ত্রায়ণে প্রথম পর্যায়ে ভরতুকি প্রদান, জল সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকা ব‍্যবস্থাপনের মাধ‍্যমে সেচ ব‍্যবস্থার উন্নয়ন এবং বিপণনজ্ঞানের প্রয়োগ; এছাড়া তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির কৃষকদের উন্নতি, কৃষিক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন, এফ পি ও এবং এন জিও-গুলির সাহায‍্যে সাকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব আনয়ণ ইত‍্যাদি। এই বিভাগ আই সি টি ভিত্তিক কৃষি সংক্রান্ত পোর্টাল মাটির কথা নিয়ে এসেছে, এই পোর্টাল কৃষকদের তাৎক্ষণিক সমস‍্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গতিশীল ভূমিকা পালন করে।

কৃৃষি বিপনন[90]

কৃষিখামারের উৎপন্ন দ্রব‍্য ও উপকরণ উভয়ের বিপণন ব‍্যবস্থার উন্নতির জন‍্য প্রয়োজন উপযুক্ত নীতি ও আইনপ্রণয়ন সংক্রান্ত কাঠামো এবং শক্তিশালী সরকারি সহায়তা মূলক পরিষেবা। বাজার পরিকাঠামো, বাজার সংক্রান্ত তথ‍্য সরবরাহ এবং কৃষকদের বিপণন বিষয়ে পরামর্শদানে সক্ষম কৃষি সম্প্রসারণ পরিষেবাকে এই ধরনের সরকারি পরিষেবার অর্ন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কৃষিজ উৎপন্নের সহায়কমূল‍্য ও উৎপাদনশীলতা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সর্বস্তরে বিপণনের প্রশিক্ষণ এখন যুগের দাবি। কৃষক গোষ্ঠী থেকে শুরু করে কৃষিজ উৎপন্ন দ্রব‍্যের বিপণনকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নবীন শিক্ষার্থী-সকলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ‍্য। বিগত শতকের সাতের দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মূলতঃ ভূমি সংস্কার, কৃষি প্রকৌশলের বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন, নিবিড় গবেষণা ও সরকারি সংস্থাগুলোর সদর্থক অংশগ্রহণের কারণে। কৃষি বিপণন হচ্চে একটা প্রক্রিয়া যার শুরু বিক্রয়য়োগ‍্য কৃষিখামারের উৎপন্ন দ্রব্য উৎপাদনের সিদ্ধান্তের মধ‍্যে। প্রযুক্তি ও অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা কার্যগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় দিকেরই বাজার কাঠামোর সকল দিক এর মধ‍্যে যুক্ত। কৃষি বিপণন রাজ‍্যের বিষয় হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের দ্বারা উৎপন্ন কৃষিজ পণ‍্যের বিপণন কৌশল নিয়ন্ত্রণ করার জন‍্য দ‍্য ওয়েস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেটিং রেগুলেশন অ‍্যাক্ট, ১৯৭২ প্রণয়ন করে। কৃষিজ উৎপন্নের বিপনন বিষয়ে আলোকপাত করার উদ্দেশ‍্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষি বিপণন বিভাগ তৈরি করে যা এই সমস্ত সকল বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করে। কৃষিজ পণ‍্যের বাণিজ‍্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনীয় বাজার পরিকাঠমো উন্নয়নের জন‍্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ‍্য নিয়ে উক্ত আইন রূপায়নের জন‍্য মুখ‍্যত দায়ী হচ্ছে এই আইনের অধীনে গঠিত বিধিবদ্ধ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্য বিপণন পর্ষদ এবং কৃষি বিপণন অধিকার।

বনাঞ্চল[91]

বাংলা সরকারের অধীনে ১৮৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে বন সংরক্ষণের কাজ চালু করা হয়।পশ্চিমবঙ্গ বেসরকারি বন (সংশোধন) আইন,১৯৫৪-এর সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ ভূস্বত্ত অধিগ্রহণ আইন,১৯৫৩ এবং ১৯৫৫ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপ করা এবং চা বাগানের উদ্ধৃত জমির পুনর্গ্রহণ বিধিবদ্ধ হওয়ার ফলে এই রাজ্যে বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে।উপরের বিষয়গুলির পূর্বেকারদুটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন,যেমন ১৯৫০ সালে কোচবিহার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাজ্যের যথাযথ পুনর্গঠন,বিহারের পূর্বতন মানভূম জেলার কিছু অংশ ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির ফলে পুরুলিয়া জেলা সৃষ্টি হওয়া,বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।এই রাজ্য ২১ ডিগ্রি ২০ মিনিট উত্তর এবং ২৭ ডিগ্রি ৩২ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪ডিগ্রি ৫০ মিনিট এবং ৮৯ ডিগ্রি ৫২ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং ৮৮,৭৪২ বর্গ কিলোমিটার ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।পাঁচটি রাজ্য সিকিম,অসম,বিহার,ঝাড়খণ্ড এবং উড়িষ্যা এবং তিনটি দেশ ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে রয়েছে।উত্তরে সিকিম,উত্তরপূর্বে ভুটান,পূর্বে অসম এবং বাংলাদেশ,পশ্চিমে নেপাল,বিহার এবং ঝাড়খণ্ড এবং দক্ষিণ পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যা অবস্থিত। বর্তমানে এই রাজ্যে নথিভুক্ত মোট বনাঞ্চলের পরিমান হল ১১,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার,যার মধ্যে ৭,০৪৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল সংরক্ষিত বনাঞ্চল,৩৭৭২ বর্গ কিলোমিটার সুরক্ষিত বনাঞ্চল এবং ১০৫৩ বর্গকিলোমিটার শ্রেণীভুক্ত বিহীন সরকারি বনাঞ্চল,যা এই রাজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চলের ১৩.৩৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।বিগত চার দশকে এই রাজ্যে বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক পরিকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক প্রয়োজন অনুসারে সামগ্রিকভাবে বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সুসংহতকরণ এবং বৃহৎ আকারে এই রাজ্যের বনাঞ্চল বিহীন অংশে সামাজিক/খামার/নগর বনাঞ্চলের প্রয়োগ সাধন ঘটেছে।বৃহৎ আকারে বনজ ফসল উৎপাদন ,পরিবেশ-বান্ধব নতুন পর্যটন কেন্দ্র গঠন ,উৎপাদন ও বনজ দ্রব্য বিপণন এবং এই ধরনের সহায়ক কাজকর্মের জন্য ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড আত্মপ্রকাশ করে।বিভিন্ন পর্যায়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর প্রশাসনিক কাজ বন অধিকারের ডেপুটেশনে থাকা অধিকারিকগণদ্বারা পরিচালিত হয়।

খনিজ সম্পদ

পূর্তবিভাগ

পূর্ত বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অন‍্যতম মর্যাদাসম্পন্ন বিভাগ। পূর্ত বিভাগের অধীনস্থ পূর্ত অধিকার ও পূর্ত (সড়ক) অধিকার- এর উপর সমগ্র রাজ‍্যে পরিকল্পনা, জরিপ, নকসা, রাস্তা, সেতু ও ভবন নির্মাণ ও তত্ত্বাবধান, তৎসহ আপৎকালীন বিভিন্ন দায়দায়িত্ব ও ত্রাণ সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব ন‍্যস্ত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে সরাসরি এবং তৎসহ বিভিন্ন আধা সরকারি বা সরকার পরিচালনাধীন সংস্থাগুলিকে মূল কাজ ও মেরামতির কাজে পুর্ত বিভাগ পরিকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। জাতীয় ও রাজ‍্য সড়ক সমূহ সহ বিভিন্ন ভবন ও সেতু নির্মাণের পাশাপাশি পুর্ত বিভাগ স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, অডিটোরিয়াম, বিমানবন্দর, হেলিপ‍্যাড, খাদ‍্যগুদাম, বাস টার্মিনাস, পে আ‍্যণ্ড ইউজ টয়লেট, মোটেল, বিদ‍্যুদায়ন, স‍্যাদিটারি, প্লাম্বিং, শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব‍্যবস্থা, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও চিহ্নিতকরণ, লিফট্, জল সরবরাহ, জেনারেপর, ই.পি.বি.এ.এক্স, তথ‍্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। পূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে যে অত‍্যন্ত গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে- একথা সহজেই অনুমান করা যায়। এই বিভাগের প্রধান হলেন একজন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। নীতিগত সিন্ধান্ত রুপায়ণ ও প্রশাসন বিষয়ে তত্ত্বাবধান করেন বিভাগের সচিব। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক ক্ষেত্রে দেখাশোনা করেন ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ। পুর্ত বিভাগ দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হল সচিবালয় ও পূর্ত অধিকার। এই বিভাগের দুটি অধিকার পূর্ত অধিকার ও পূর্ত (সড়ক) অধিকার। রাজ‍্যে পূর্ত বিভাগের কাজের পরিধি তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল উত্তর অঞ্চল, দক্ষিণ অঞ্চল এবং পশ্তিম অঞ্চল। পূর্ত অধিকারের প্রধান হলেন মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (চিফ ইঞ্জিনিয়ার), সদর, পূর্ত অধিকার। তার অধীনে কাজ করেন মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (পরিকল্পনা), মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ(তড়িৎ), মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (সামাজিক ক্ষেত্র), মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (উত্তরাঞ্চল), মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (পশ্চিমাঞ্চল), মুখ‍্য প্রযুক্তবিদ(দক্ষিণাঞ্চল), এবং মুখ‍্য সরকারি স্থপতি। পূর্ত অধিকারের তিনটি শাখা। এগুলো হল বাস্তু (Civil) শাখা, তড়িৎ (Electrical) শাখা ও স্থাপত‍্য শাখা। পূর্ত (সড়ক) অধিকারের প্রধান হলেন মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (চিফ ইঞ্জিনিয়ার), সদর, পূর্ত (সড়ক) অধিকার। তার অধীনে কাজ করেন মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ, পরিকল্পনা, মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ, জাতীয় সড়ক, মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ, আার.বি.আর.আই, মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (উত্তরাঞ্চল), মুখ‍্য প্রযুক্তবিদ (পশ্চিমাঞ্চল), মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ (দক্ষিণাঞ্চল)। পূর্ত (সড়ক) অধিকারের তিনটি শাখা; এগুলো হচ্ছে বাস্তু শাখা, জাতীয় সড়ক শাখা এবং যন্ত্রবিদ‍্যা শাখা। সদর, আঞ্চলিক মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদের কার্যালয় এবং শাখা কার্যালয়, ভুক্তি কার্যালয়, উপ-ভুক্তি কার্যালয় এবং শাখা কার্যালয় দিয়ে এই বিভাগের গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আঞ্চলিক মুখ‍্য প্রযুক্তিবিদ কোনও একটি বিশেষ অঞ্চলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। আঞ্চলিক প্রযুক্তিবিদ প্রত‍্যেক মন্ডল কার্যালয়ের প্রধান। অন‍্যদিকে নির্বাহী প্রযুক্তিবিদ, সহ প্রযুক্তিবিদ এবং কনিষ্ঠ প্রযুক্তিবিদেরা যথাক্রমে ভুক্তি, উপ-ভুক্তি ও শাখা কার্যালয়গুলির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এই বিভাগের অধীনে চারটি রাষ্ট্রীয় উদ‍্যোগাধীন সংস্থা আছে। এগুলো হল পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগম লিমিটেড, ম‍্যাকিনটোস বার্ন লিমিটেড, ওয়েস্টিংহাউস স‍্যাক্সবি ফার্মার লিমিটেড এবং ব্রিটানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

এই বিভাগ সারা রাজ‍্যে ১৭,২৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথের তত্ত্বাবধান করে থাকে যার মধ‍্যে ১৭৪০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক, ৩৬১২ কিলোমিটার রাজ‍্য সড়ক, ৯৪৯৫ কিলোমিটার জেলার প্রধান সড়কপথ এবং ২৪১৮ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কপথ।

পূর্ত বিভাগের প্রধান লক্ষ‍্য হল সারা রাজ‍্যের আর্থিক কর্মকান্ডকে ত্বরাণ্বিত করা, সামগ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত ব‍্যবস্থাদির উন্নয়ণের মাধ‍্যমে সম্পদ সৃষ্টি এবং বিভিন্ন সেতু, রাস্তা ও সরকারি ভবন নির্মাণ তৎসহ পরিবহন সক্রান্ত ব‍্যবস্থাদির উন্নয়ণের ক্ষেত্রে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে দারিদ্র দূরীকরণ। এছাড়া এই বিভাগ সামাজিক ক্ষেত্রে কিছু সম্প্রসারিত দায়দায়িত্বের ভারও গ্রহণ করে থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বিভাগ বরাদ্দ অর্থরাশির সাহায‍্যে রাস্তা, সেতু, ভবন ও অন‍্যান‍্য নির্মাণকার্যের মাধ‍্যমে রাজ‍্যের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন‍্য যেকোনও দায়িত্বগ্রহণে উজ্জীবিত হয়েছে।[92]

ভূমি ও ভূমি সংস্কার

১৭৯৩ সালের ১নং প্রবিধান অনুসারে প্রণীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন অনুসারে রাজস্ব সংগ্রহের ব‍্যবস্থা সুসংহত করার লক্ষ‍্যে স্থাপিত রাজস্ব পর্ষদ গঠন, যার উদ্দেশ‍্য ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্বার্থ পরিপূরণের জন‍্য জমি থেকে সর্বাধিক রাজস্ব সংগ্রহ - তার মধ‍্যেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর যুক্তিসঙ্গত কারণেই রাজস্ব প্রশাসনের দিক থেকে কল‍্যাণমূলক প্রশাসনের দিকেই গুরুত্ব ঘুরে যায়। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে এই বিভাগটি যা স্বাধীনতার পূর্বে ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগ নামে পরিচিত ছিল, তা উপযোগিতা ও সংস্কার এবং ভূমি ও ভূমি রাজস্ব নামে পরিচিত হওয়ার পর শেষপর্যন্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার নাম গ্রহণ করে যার মধ‍্যে রাজ‍্যের অগ্রাধিকার প্রতিফলিত হয়েছে।

ভূমি সংস্কার স্বাধীন ভারতের একটি ধারণা। স্বাধীন ভারতের যোজনা প্রণেতাগণ কোনও না কোনওভাবে টিকে থাকা জমিদারদের শোষণের জাঁতাকল থেকে কৃষকদের মুক্ত করার আশু প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। স্বাধীন ভারতে সদ‍্য প্রতিষ্ঠিত কৃষিভিত্তিক শিল্পগুলির প্রয়োজন মেটানো, খাদ‍্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা এবং কৃষি উপকরণের সরবরাহ ছিল তখনকার জ্বলন্ত সমস‍্যা। শিল্পে কৃষির উদ্বৃত্ত বিনিয়োগ করার জন‍্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জমি মুষ্টিমেয় ব‍্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে না এবং ন‍্যায‍্যতার নীতি অনুসরণ করে ভূমিহীনদের মধ‍্যে তা বণ্টন করে দেওয়া হবে-এটাই সামাজিক ন্যায়ের দাবি।

ভূমি সংস্কারের অভিমুখে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ভূমি অধিগ্রহণ আইন, ১৯৫৩ প্রণয়ন করা হয়, যার দ্বারা জমিদারি ব‍্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটে। অত:পর জোতের ঊর্ধ্বসীমা, খাস জমি ভূমিহীনদের মধ‍্যে বণ্টন করা, অর্থনৈতিক জোত সৃষ্টি, খাজনা হ্রাস, প্রজা ও বর্গাদারদের উচ্ছেদ বন্ধ করা, প্রজাদের মালিকানা স্বত্ব প্রদান, ছদ্ম স্বত্বভোগী ও অন‍্যান‍্য নিয়মবহির্ভূত ব‍্যবস্থা বন্ধ করার মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়। এই ধরনের জ্বলন্ত সমস‍্যা সমাধানের জন‍্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৫৫ সালে ভূমি সংস্কার আইন প্রণয়ন করে।

উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন

ভারতের ইতিহাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুরা একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছিল । ১৯৪৬-এ এই প্রবনতার সূচনা এবং দেশবিভাগের পর তা বাড়তে বাড়তে প্লাবনের আকার নেয় । ১৯৬৪-তে আবার একবার বাস্তুহারাদের ভীড় দেখা যায় এবং ১৯৭১-এ বিপুল পরিমানে শরণার্থী আসতে থাকেন । ১৯৭১-এর ভিতর হিসাবমতো প্রায় ৫৮ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে আসেন এই ১৯৭১-এর শরণার্থীরা যারা থেকে গিয়েছিলেন তাদের বাদ দিয়ে । ১৯৭৪-এর ভারতের পরিকল্পনা কমিশনে পছিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজ্যে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ । আর আর কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮১-তে এই সংখ্যা হয় ৮০ লক্ষ । তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর চাপ সামলানোর উদ্দেশ্যে জেলা ও মহকুমা উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরগুলি স্থাপিত হয় । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এইসব জেলা ও মহকুমা উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরগুলিকে সুসংহতভাবে গড়ে তোলা গিয়েছে।[93]

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি[94]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ স্থাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংসদ একটি স্বশাসিত সংস্থা যেটি সমিতি আইন দ্বারা রেজিস্ট্রিকৃত এবং এই বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীন, যা সর্বভারতীয় আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুসারে এই বিভাগের কার্যাবলী সাবলীল ভাবে পরিচালনা করার জন্য। এই বিভাগ বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাবিদদের সহায়তায় নিজের কার্যাবলী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করেছে।

গত দু-দশক ধরে এই বিভাগ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপে উৎসাহ প্রদানের জন্য বহু কঠিন পথ অতিক্রম করেছে এবং বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র, কলেজ এবং নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক প্রকল্পের উন্নতিসাধনের পথে সহায়তা প্রদান করেছে।

এই বিভাগের ‘রিমোট সেনসিং এণ্ড জিও-ইনফরমেশন সিস্টেমস্'- এর মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ এবং সংস্থার পরিকল্পনাগুলির উন্নতি সাধন এবং কলাকৌশলের নজরদারির জন্য সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং মূল তথ্যের সরবরাহ করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ক্ষেত্রের কিছু প্রকল্প ভারত সরকারের ‘‘ন্যাশনাল রিমোট সেনসিং সেন্টার এবং ‘‘ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন- এর সঙ্গে অংশীদার হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

এই রাজ্যের বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত সংস্থার সঙ্গে অংশীদার হিসাবে এই বিভাগ বিভিন্ন জরুরী ক্ষে্ত্র যেমন: বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও আবহাওয়া পরিবর্তন, সবুজ প্রযুক্তি, জল সংরক্ষণ, বর্জ্য পদার্থের পরিশোধন, জীব বৈচিত্র্য, উদ্ভাবনী গ্রামীণ প্রযুক্তি, কৃষি উন্নয়ন, মেধাসত্ব অধিকার, - প্রসঙ্গে সেমিনার, কর্মশালা এবং সচেতনতা প্রকল্পগুলির উদ্যোগে সহায়তা দেয়।

জৈবপ্রযুক্তি

২০০৬-২০০৭ সালে জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ খোলার ফলে পশ্চিমবঙ্গে ‘স্টেট অফ আর্ট' ও প্রথাগত জৈবপ্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন জোয়ার এলো যার লক্ষ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।বিভাগের লক্ষ জৈবপ্রযুক্তির উন্নতির বিপণন,পরিপোষণ এবং আরো যা গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্যসাধন করা।যেহেতু জৈবপ্রযুক্তি একটি জ্ঞান-নির্ভর কেন্দ্র,যেখানে উন্নয়ন সম্পূর্ণভাবে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবনের' ওপর নির্ভরশীল, সেই কারণে এই বিভাগ সক্রিয়ভাবে গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা করে, উন্নত মানব সম্পদে প্রেরণা যোগায় এবং জৈবপ্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের পরিকাঠামোগত সুযোগসুবিধা যোগায়।কৃষি, স্বাস্থ্যপরিষেবা, পশু বিজ্ঞান, পরিবেশ এবং শিক্ষা-শিল্প মিলিত উদ্যোগ ইত্যাদিতে জৈবপ্রযুক্তির বৃদ্ধি ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এই বিভাগ উল্লেখযোগ্য কাজ করে।

আ্যসোচাম (অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টি অব ইন্ডিয়া) পশ্চিমবঙ্গকে সম্ভাবনাময় বাণিজ্য বিকাশ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে জৈবপ্রযুক্তি হচ্ছে সম্ভাবনাময় লগ্নির ক্ষেত্র। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় ফেরত এবং সামাজিক বিকাশের বড় সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ভিত্তিক কাজকর্মকে আরো ছড়িয়ে দেওয়া যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা (জেনোমিকস,প্রোটিওমিকস, ডায়গোনসটিকস, দেশীয় ঔষধটির ডি.এন.এ ফিংগারপ্রিন্টিং ইত্যাদি) কৃষি (ফুল চাষ,রেশম চাষ ইত্যাদি),বাংলার জীববৈচিত্রের মানচিত্র তৈরি এবং পরিবেশ সুরক্ষা।

পরিবহন ব্যবস্থা

পশ্চিমবঙ্গে ভূতল সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯২,০২৩ কিলোমিটার (৫৭,১৮০ মাইল)।[95] এর মধ্যে জাতীয় সড়ক ২,৩৭৭ কিলোমিটার (১,৪৭৭ মাইল),[96] এবং রাজ্য সড়ক ২,৩৯৩ কিলোমিটার (১,৪৮৭ মাইল)। রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ১০৩.৬৯ কিলোমিটার (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১৬৬.৯২ মাইল); যা জাতীয় ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ৭৪.৭ কিলোমিটারের (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১২০ মাইল) থেকে বেশি।[97] রাজ্যের সড়কপথে যানবাহনের গড় গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টার (২৫-৩১ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে গতিবেগ ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার (১২-১৬ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। এই মূল কারণ রাস্তার নিম্নমান ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। রাজ্যে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৪১৩৫.১৯ কিলোমিটার (২৫৬৯ মাইল)।[98] ভারতীয় রেলের পূর্ব রেলদক্ষিণ পূর্ব রেল ক্ষেত্রদুটির সদর কলকাতায় অবস্থিত।[99] রাজ্যের উত্তরভাগের রেলপথ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অন্তর্গত। কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল পরিষেবা।[100] উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অংশ দার্জিলিং হিমালয়ান রেল একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।[101]

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার নিকটেই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদমে অবস্থিত। শিলিগুড়ির নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দর রাজ্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর; সাম্প্রতিককালে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হল কোচবিহার বিমানবন্দর। এটি বৃহত্তর অসম-বাংলা সীমান্ত এলাকায় পরিষেবা দেয়।[102]

কলকাতা বন্দর পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদীবন্দর। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কলকাতা ও হলদিয়া ডকের দায়িত্বপ্রাপ্ত।[103] কলকাতা বন্দর থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন পরিষেবা ও ভারত ও বহির্ভারতের বন্দরগুলিতে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন পরিষেবা চালু আছে। রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলে, নৌকা পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর যেখানে আজও ট্রাম গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এই পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি[104]

পশ্চিমবঙ্গের বাস পরিষেবা অপর্যাপ্ত। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগম ও ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি এই পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানিগুলিও বাস চালিয়ে থাকে। শহরের বিশেষ বিশেষ রুটে মিটার ট্যাক্সি ও অটোরিকশা চলে। কম দুরত্বের যাত্রার জন্য রাজ্যের সর্বত্র সাইকেল রিকশা ও কলকাতাতে সাইকেল রিকশা ও হাতে-টানা রিকশা ব্যবহার করা হয়।

জনপরিসংখ্যান

পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০২৮ জন। এই রাজ্য জনঘনত্বের বিচারে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী।[106] ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫৪ শতাংশ বাস করে পশ্চিমবঙ্গে।[107] ২০০১-২০১১ সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৮৪ শতাংশ; যা জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৭.৬৪ শতাংশের থেকে কম।[108] রাজ্যে লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫০ জন মহিলা।[108]

পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ৭৬.২৬%, যা জাতীয় গড় ৭৪.০৪%-এর চেয়ে বেশি।[109] ১৯৯১-১৯৯৫ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, এই রাজ্যের মানুষের গড় আয়ু ৬৩.৪ বছর, যা জাতীয় স্তরে গড় আয়ু ৬১.৭ বছরের থেকে কিছু বেশি।[110] রাজ্যের ৭০ শতাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। ১৯৯৯-২০০০ সালের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের ৩১.৮৫ শতাংশ মানুষ বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে।[82] তফসিলি জাতি ও উপজাতিগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যার যথাক্রমে ২৮.৬ শতাংশ ও ৫.৮ শতাংশ এবং নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যার ১৯.৯ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।[82]

রাজ্যে অপরাধের হার প্রতি এক লক্ষে ৮২.৬; যা জাতীয় হারের অর্ধেক।[111] ভারতের ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই হার চতুর্থ নিম্নতম।[112] যদিও রাজ্যের বিশেষ ও স্থানীয় আইন সংক্রান্ত অপরাধের হার সর্বোচ্চ বলেই জানা যায়।[113] রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের হার ৭.১; উল্লেখ্য এই ক্ষেত্রে জাতীয় হার ১৪.১।[112] পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছিল।[112]

ধর্মবিশ্বাস

পশ্চিমবঙ্গের ধর্মবিশ্বাস (২০১১)[114]

  হিন্দুধর্ম (৭০.৫৪%)
  ইসলাম (২৭.০১%)
  জৈন ধর্ম (০.০৭%)
  শিখ ধর্ম (০.০৭%)
  অন্যান্য ধর্ম (১.০৩%)
  নাস্তিক (০.২৫%)

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধর্মবিশ্বাস। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ৭০.৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস এবং বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্ম। মুসলমানরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ২৭.০১ শতাংশ। শিখ, খ্রিস্ট ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার অবশিষ্ট অংশ।[114] সংখ্যালঘুসঙ্কুল জেলাগুলি হলো- মুর্শিদাবাদ জেলা, উত্তর দিনাজপুর জেলামালদহ জেলা৷

পৌর ও নগরোন্নয়ন ও পৌর বিষয়ক

নগরোন্নয়ন বিভাগ

নগরোন্নয়ন বিভাগ পুর্বে মহানগর উন্নয়ন বিভাগ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই বিভাগের তিনটি শাখা যথা, মেট্রোপলিটন শাখা, টাউন এন্ড কান্ট্রি প্লানিং শাখা এবং আরবান ল‍্যান্ড সিলিং শাখা। প্রতিটি শাখারই পৃথক পৃথক নিজস্ব ইতিহাস আছে।

পঞ্চাশের দশকে সেচ বিভাগ কলকাতার উত্তর-পূর্ব শহরতলিতে সল্টলেক সিটি নামে একটি উপনগরী তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়।

১৯৬১ সালে কলকাতা মহানগরীর একটি সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করার জন‍্য উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে কলকাতা মেট্রোপলিটন প্লানিং অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়। ভারতবর্ষে এটি ছিল এই ধরনের প্রথম সংস্থা। পরবর্তীকালে, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, আসানসোল-দুর্গাপুর, দীঘা, হলদিয়া, শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন ও জিয়াগঞ্জের জন‍্য পৃথক উন্নয়ন সংস্থা এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর-খড়গপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মিরিক, বক্রেশ্বর, বরজোড়া-গঙ্গাজলঘাটি, ফারাক্কা, গঙ্গাসাগর-বকখালি, তারাপীঠ-রামপুরহাট, ফুরফুরা শরীফের জন‍্য পৃথক পরিকল্পনা সংস্থা গঠন করে। এর উদ্দেশ‍্য ছিল সার্বিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় এলাকার জন‍্য জমির সদব‍্যবহার ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা (Land ‍Use and Development Control Plan - LUDCP) রচনা করা।

উপরে বর্ণিত সকল উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সংস্থাই গঠিত হয়েছিল উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের শহর ও গ্রাম পরিকল্পনা শাখা (Town & Country Planning Branch) এর অধীনে।

অন‍্যান‍্য কয়েকটি স্থানীয় এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে উন্নয়ণ ও পরিকল্পনা বিভাগ কাঁচরাপাড়া এলাকা উন্নয়ন পরিকল্প (কল‍্যাণী উপনগরী) ও পাতিপুকুর উপনগরী তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে।

পরবর্তী সময়ে, এই দুটি ক্ষেত্রের কর্মকান্ড গতিলাভ করলে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে কল‍্যাণী এস্টেট অফিস ও পাতিপুকুর এস্টেট অফিস নামে দুটি পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা হয়। পরবর্তীকালে, বৃহদায়তন নগর পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণের স্বার্থে ১৯৬৬ সালে কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার এন্ড স‍্যানিটেশন অথরিটি (KMW & SA) এবং পুনরায় ১৯৭০ সালে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি (KMDA) স্থাপিত হয়। এর উদ্দেশ‍্য ছিল কলকাতা মহানগরী এলাকার নগর সংযুক্তির দ্রুত অবনমনের গতিরোধ করা এবং শহরে বসবাসকারি জনসাধারণের জন‍্য প্রকাশমান শহুরে উচ্চাভিলাষের যথাসম্ভব সুরাহা করা।

১৯১২ সালে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট অ‍্যাক্ট, ১৯১১(K.I.Act) অনুসারে কলকাতা শহরের নগর পরিকাঠামো উন্নয়নের কর্মসূচি হাতে নিয়ে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্ট (KIT) কাজ শুরু করে। পরবর্তীকালে, কলকাতা মহনগরী এলাকায় বিভিন্ন নগরোণ্নয়ন পরিকল্পনার দ্রুত রূপায়ণ ও সংহতির স্বার্থে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্ট (KIT) ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার এন্ড স‍্যানিটেশন অথরিটি (KMW & SA) কে কলকাতা মিউনিসিপ‍্যাল ডেভলপমেন্ট অথরিটি (KMDA) এর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্ববধানে নিয়ে আসা হয়।

আরবান ল‍্যান্ড(সিলিং এন্ড রেগুলেশন) অ‍্যাক্ট, ১৯৭৬ অনুযায়ী কলকাতায় একটি অধিকার ও জেলাগুলিতে মহকুমা কার্যালয়সহ আরবান ল‍্যান্ড সিলিং শাখাকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীকালে, এটি নগরোণ্নয়ন বিভাগের অধীনস্থ হয়।

পৌর বিষয়ক

১৯৯২ সালে ৭৪ তম সংবিধান সংশোধন আইন বলবত করার মধ‍্যে দিয়ে দেশের সমগ্র শাসন পরিচালন ব‍্যবস্থাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে।প্রথম স্তর হল কেন্দ্রীয় সরকার, দ্বিতীয় স্তর হল রাজ‍্য সরকার এবং তৃতীয় স্তর হল স্থানীয় শাসনমূলক সংস্থা। এই বিভাগ সরকারি প্রশাসনে বর্ণিত তৃতীয় স্তরটি তথা রাজ‍্যের শহরাঞ্চলে অবস্থিত শহরের স্থানীয় শাসনমূলক সংস্থাগুলি(পৌর নিগম, পৌরসভা ও প্রঞ্জপিত অঞ্চলসমূহ) পরিচালনা করে থাকে। ১৯৭২ সালে রাজ‍্য সরকার পৌর পরিষেবা বিভাগ স্থাপন করে। পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে পৌর পরিষেবা বিভাগের নামবদল করে নতুন নামকরণ হয় স্থানীয় শাসন ও নগরোন্নয়ন বিভাগ। স্থানীয় শাসন ও নগরোন্নয়ন বিভাগকে দু' ভাগ করে [দ্রষ্টব‍্য: স্বরাষ্ট্র(সংবিধান ও নির্বাচন) বিভাগের আদেশনামা নং ১৬১৩৩-এ আর, তাং ২৯ জুন ১৯৯১] ১৯৯১ সালে বর্তমান পৌরবিষয়ক বিভাগ তৈরি করা হয়। রাজ‍্য সরকারের কার্য নিয়মাবলী অনুসারে এই বিভাগ রাজ‍্য সরকারের ২২১৫,২২১৭,২২১১,৪২১৭,৬২১৭ এবং ৩৬০৩ মুখ‍্য খাতগুলির বাজেট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ভাষাসমূহ

পশ্চিমবঙ্গের ভাষাসমূহ (২০১১) [1].[115]

  বাংলা (৮৬.২২%)
  হিন্দি (৫.২০%)
  সাঁওতালি (২.৬৬%)
  উর্দু (১.৮২%)
  নেপালী (১.২৭%)
  সাদরি (০.৮১%)
  সুরজাপুরী (০.৪৩%)
  অন্যান্য (১.৫৯%)

২০১১ সালের জনগণনার তাৎক্ষণিক ফলাফল অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯১,৩৪৭, ৭৩৬ (ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫%)। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য।[116] জনসংখ্যার সিংহভাগই বাংলাভাষী[117] মাড়োয়ারি, বিহারিওড়িয়া সংখ্যালঘুরা রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে বাস করে। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে শেরপাতিব্বতিদের দেখা যায়। দার্জিলিঙে নেপালি গোর্খা জাতির লোকও প্রচুর সংখ্যায় বাস করে। পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতাল, কোল, রাজবংশীটোটো আদিবাসীরাও বাস করে। রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় চীনা, তামিল, গুজরাতি, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, পাঞ্জাবিপারসি সংখ্যালঘুদেরও খুব অল্প সংখ্যায় বাস করতে দেখা যায়।[118] ভারতের একমাত্র চায়নাটাউনটি পূর্ব কলকাতায় অবস্থিত।[119]

রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ইংরেজি।[4] দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমায় সরকারি ভাষা হল নেপালি[4] ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভাষাগত জনসংখ্যার বৃহত্তম থেকে ক্ষুদ্রতম ক্রম অনুযায়ী ভাষাগুলি হল বাংলা, হিন্দি, সাঁওতালি, উর্দু, নেপালি ও ওড়িয়া[4] রাজ্যের কোনো কোনো অংশে রাজবংশী ও হো ভাষাও প্রচলিত।

সংস্কৃতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এশিয়া থেকে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক ও ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা।
স্বামী বিবেকানন্দ, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বেদান্তযোগ দর্শনের প্রচারক[120]হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলির পর্যায়ে উন্নীত করা ও আন্তঃধর্ম সুসম্পর্ক স্থাপনের একজন উল্লেখযোগ্য প্রবক্তা।[121]

সাহিত্য

বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ ও প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের (দশম-দ্বাদশ শতাব্দী) কবিরা পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের কথ্য ভাষারীতিকে সাহিত্যের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।[122] বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় প্রাচীনতম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (পঞ্চদশ শতাব্দী) কাব্যের রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস ছিলেন অধুনা বাঁকুড়া জেলার ছাতনার বাসিন্দা।[123] মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্য ধারাতেও রাঢ়ের বহু কবির রচনা পাওয়া যায়। মনসামঙ্গল ধারার কবি নারায়ণ দেব পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও আদতে রাঢ়বঙ্গের মানুষ ছিলেন।[124] এই ধারার কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ ছিলেন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের বাসিন্দা।[125] চণ্ডীমঙ্গল ধারার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ছিলেন বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামের অধিবাসী।[126]

এই সাহিত্যের নিদর্শন মঙ্গলকাব্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, ঠাকুরমার ঝুলি, ও গোপাল ভাঁড়ের গল্পগুলি। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের আধুনিকীকরণ সম্পন্ন হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখ সাহিত্যিকের হাত ধরে। মহাশ্বেতা দেবী, সনেট মন্ডল, বেন্সাধর মজুমদার, শ্রী অরবিন্দ, হরি মোহন ব্যানার্জি, সঞ্জীব চৌধুরী ও নলিনী কুমার মুখার্জি প্রমুখ সাহিত্যিক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়কে বিশ্ব ইতিহাসের সেরা কবিদের মধ্যে গন্য করা হয়।

সংগীত ও নৃত্যকলা

রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালে রবীন্দ্রনৃত্য

বাংলা সংগীতের এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী ধারা হল বাউল গান[127] লোকসঙ্গীতের অন্যান্য বিশিষ্ট ধারাগুলি হল গম্ভীরাভাওয়াইয়া। অন্যদিকে বাংলা ধর্মসঙ্গীতের দুটি জনপ্রিয় ধারা হল কীর্তন ও শ্যামাসংগীত। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহর হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিষ্ণুপুরী ঘরানার প্রধান কেন্দ্র। রবীন্দ্রসংগীতনজরুলগীতি অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি সঙ্গীত ধারা। অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ধারাগুলির মধ্যে অতুলপ্রসাদী, দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্তের গানবাংলা আধুনিক গান উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০-এর দশকে বাংলা লোকসঙ্গীত ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সংমিশ্রণে বাংলা গানের এক নতুন যুগের সূত্রপাত ঘটে। এই গান জীবনমুখী গান নামে পরিচিত ছিল। বাংলার নৃত্যকলায় মিলন ঘটেছে আদিবাসী নৃত্য ও ভারতীয় ধ্রুপদি নৃত্যের। পুরুলিয়ার ছৌ নাচ একপ্রকার দুর্লভ মুখোশনৃত্যের উদাহরণ।[128] তাছাড়া গৌড়ীয় নৃত্য একধরনের বাঙালী ঐতিহ্যগত শাস্ত্রীয় নৃত্যকলা যা প্রাচীন বঙ্গের রাজধানী গৌড়ে উৎপন্ন ৷ সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় দ্বারা বৃৃত্তিপ্রদানযোগ্য এই নৃত্যধারাটি শ্রীযুক্তা মহুয়া মুখোপাধ্যায় দ্বারা পুণঃনির্মিত ৷

চলচ্চিত্র

পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রে সুর সংযোজনার সময় সত্যজিৎ রায় ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর

কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রধান কেন্দ্রটি অবস্থিত। এই কারণে এই কেন্দ্রটি হলিউডের অনুকরণে "টলিউড" নামে পরিচিত হয়ে থাকে। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প আর্ট ফিল্ম বা শিল্পগুণান্বিত চলচ্চিত্রে সুসমৃদ্ধ। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ বিশিষ্ট পরিচালকের চলচ্চিত্র বিশ্ববন্দিত। সমসাময়িককালের বিশিষ্ট পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেনঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি এই রাজ্যে অবশ্য হিন্দি সিনেমাও অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পরিচালক ও সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন বাঙালি পরিচালকেরা। সত্যজিৎ রায় তার পথের পাচালি, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা এসব চলচ্চিত্রের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সালে সম্মানসূচক অস্কার পান। তার প্রধান দুই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়শর্মিলা ঠাকুর সমগ্র বিশ্বে নন্দিত তাদের অনবদ্য অভিনয়ের জন্য। শর্মিলা ২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসব কান-এ বিচারকের ভূমিকা পালন করেছেন। তার অভিনীত ও সত্যজিত রায় পরিচালিত অপু ট্রিলজি চলচ্চিত্র সিরিজটি যুক্তরাষ্ট্রের সাইট এন্ড সাউন্ড ম্যাগাজিন কর্তৃক ঘোষিত পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা ১০০ টি চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পায়। সত্যজিত রায় দেবী (শর্মিলা-সৌমিত্র অভিনীত) ও কাঞ্চনজঙ্ঘা চলচ্চিত্রের জন্য বিশ্বের একমাত্র পরিচালক হিসেবে জার্মানির বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে দুবার সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান।

শিল্পকলা

বাংলার চিত্রকলায় কালীঘাটের কালী ঠাকুর

বাংলা ভারতীয় শিল্পকলার আধুনিকতার পথপ্রদর্শক। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলার জনক। বঙ্গীয় শিল্প ঘরানা ইউরোপীয় রিয়্যালিস্ট ঐতিহ্যের বাইরে এমন একটি নিজস্ব ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল যা ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার আর্ট কলেজগুলিতে শেখানো হত। এই ধারার অন্যান্য বিশিষ্ট চিত্রকরেরা হলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকিঙ্কর বেইজযামিনী রায়। স্বাধীনতার পরে কলকাতা গোষ্ঠী ও সোসাইটি অফ কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর শিল্পীরা ভারতীয় শিল্পকলার জগতে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী হন।

উৎসব ও মেলা

দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের দুর্গাপূজা, ২০০৫

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম উৎসব।[129] শরৎকালে আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চারদিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি বহুপ্রচলিত হিন্দু উৎসব হল কালীপূজা। এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে। রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিন্দু উৎসবগুলি হল পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, দশহরা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, মহালয়া, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, রাসযাত্রা, নবদ্বীপের শাক্তরাস, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, নবান্ন, জগদ্ধাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা, শিবরাত্রিচড়ক-গাজন। রথযাত্রা উপলক্ষে হুগলি জেলার মাহেশ ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে বিশেষ মেলা ও জনসমাগম হয়ে থাকে। হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা ও জগদ্ধাত্রী বিসর্জন শোভাযাত্রা বিখ্যাত। মকর সংক্রান্তির দিন বীরভূম জেলার কেন্দুলিতে জয়দেব মেলা উপলক্ষে বাউল সমাগম ঘটে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বীরভূমপুত্র জয়দেবের উদ্দেশ্যে জয়দেব-কেন্দুলি মেলা হয়ে থাকে। পৌষ সংক্রান্তির দিন হুগলি নদীর মোহনার কাছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গঙ্গাসাগরে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলায় সারা ভারত থেকেই পুণ্যার্থী সমাগম হয়। ৪ঠা মাঘ বাঁকুড়ার কেঞ্জেকুড়া গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে এক বিশাল মুড়ি মেলা হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির নিকটে প্রাচীন জল্পেশ্বর শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বিখ্যাত জল্পেশ্বর মেলা। শ্রাবণ সংক্রান্তির সর্পদেবী মনসার পূজা উপলক্ষে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আয়োজিত হয় ঝাঁপান উৎসব। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের ঝাঁপান উৎসব সবচেয়ে বিখ্যাত। বাঁকুড়া জেলার রাইপুর ব্লককের অন্তর্গত মটগোদা গ্রামে ধর্মরাজ পুজো উপলক্ষে মাঘ মাসের শেষ শনিবারে অনুষ্ঠিত হয় শনিমেলা;কোচবিহার শহরের মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত রাসমেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা।[130]

ইসলামি উৎসব মধ্যে ঈদুজ্জোহা, ঈদুলফিতর, মিলাদ-উন-নবি, শবেবরাত ও মহরম বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। খ্রিষ্টান উৎসব বড়দিনগুড ফ্রাইডে; বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা; জৈন উৎসব মহাবীর জয়ন্তী এবং শিখ উৎসব গুরু নানক জয়ন্তীও মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, পঁচিশে বৈশাখ, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি। প্রতি বছর পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনে বিখ্যাত পৌষমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।[130] বইমেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা রাজ্যে একমাত্র তথা বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। আঞ্চলিক বইমেলাগুলি রাজ্যের সকল প্রান্তেই বছরের নানা সময়ে আয়োজিত হয়। এছাড়া সারা বছরই রাজ্য জুড়ে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

শিক্ষা

সেন্ট জোসেফ'স কলেজ, নর্থ পয়েন্ট, দার্জিলিং
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
আইআইএম কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অথবা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনও বিদ্যালয় পরিচালনা করে। প্রধানত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত; তবে সাঁওতালি, নেপালি, হিন্দি ও উর্দু ভাষাতেও পঠনপাঠন করার সুযোগ এ-রাজ্যে অপ্রতুল নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অথবা কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসসি) অথবা কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশন (আইসিএসই) দ্বারা অনুমোদিত। ১০+২+৩ পরিকল্পনায় মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ছাত্রছাত্রীদের দুই বছরের জন্য প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতে হয়। এছাড়াও তারা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অথবা কোনো কেন্দ্রীয় বোর্ড অনুমোদিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে পারে। এই ব্যবস্থায় তাদের কলাবিভাগ, বাণিজ্যবিভাগ অথবা বিজ্ঞানবিভাগের যেকোনো একটি ধারা নির্বাচন করে নিতে হয়। এই পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করার পরই তারা সাধারণ বা পেশাদার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে পারে।

২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আঠারো।[131][132] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহৎ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে প্রায় ২০০টি কলেজ।[133] বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের দুটি প্রসিদ্ধ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।[134] শান্তিনিকেতনে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এক প্রতিষ্ঠান।[135] অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (কলকাতা), বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (বর্ধমান), বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় (বাঁকুড়া), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (মেদিনীপুর), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (রাজা রামমোহনপুর, শিলিগুড়ি), বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় (কল্যাণী, নদিয়া), পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় – আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিসম্পন্ন রাজ্যের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, কলকাতা, রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান, দুর্গাপুর (পূর্বতন আঞ্চলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও অনুসন্ধান সংস্থান, কলকাতা; IISER-K)ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউশন

গণমাধ্যম

২০০৫ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা ৫০৫।[136] এগুলির মধ্যে ৩৮৯টি বাংলা সংবাদপত্র।[136] কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা ভারতে একক-সংস্করণে সর্বাধিক বিক্রিত বাংলা পত্রিকা। এই পত্রিকার দৈনিক গড় বিক্রির পরিমাণ ১,২৩৪,১২২টি কপি।[136] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বাংলা সংবাদপত্রগুলি হল আজকাল, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, জাগো বাংলা, দৈনিক স্টেটসম্যানগণশক্তিদ্য টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটসম্যান, এশিয়ান এজ, হিন্দুস্তান টাইমসদ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি দৈনিকের নাম। এছাড়াও হিন্দি, গুজরাটি, ওড়িয়া, উর্দু ও নেপালি ভাষাতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে থাকে।

দূরদর্শন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারক। এছাড়া কেবল টেলিভিশনের মাধ্যমে মাল্টিসিস্টেম অপারেটরগণ বাংলা, নেপালি, হিন্দি, ইংরেজি সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যানেল সম্প্রচার করে থাকেন। বাংলা ভাষায় সম্প্রচারিত ২৪ ঘণ্টার বাংলা টেলিভিশন সংবাদ-চ্যানেলগুলি হল স্টার আনন্দ, কলকাতা টিভি, ২৪ ঘণ্টা, এনই বাংলা, নিউজ টাইম, চ্যানেল টেন, আর-প্লাস ও তারা নিউজ;[137] ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন বিনোদন-চ্যানেলগুলি হল স্টার জলসা, ইটিভি বাংলা, জি বাংলা, আকাশ বাংলা ইত্যাদি। এছাড়া চ্যানেল এইট টকিজ নামে একটি ২৪ ঘণ্টার চলচ্চিত্র-চ্যানেল এবং তারা মিউজিকসঙ্গীত বাংলা নামে দুটি উল্লেখনীয় ২৪ ঘণ্টার সংগীত-চ্যানেলও দৃষ্ট হয়। আকাশবাণী পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বেতার কেন্দ্র। বেসরকারি এফএম স্টেশন কেবলমাত্র কলকাতা, শিলিগুড়ি ও আসানসোল শহরেই দেখা যায়। বিএসএনএল, ইউনিনর, টাটা ডোকোমো, আইডিয়া সেলুলার, রিলায়েন্স ইনফোকম, টাটা ইন্ডিকম, Jio 4Gরিলায়েন্স জি 4জি, ভোডাফোন এসার, এয়ারসেলএয়ারটেল সেলুলার ফোন পরিষেবা দিয়ে থাকে। সরকারি সংস্থা বিএসএনএল ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ব্রডব্যান্ডডায়াল-আপ অ্যাকসেস ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়।

খেলাধূলা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম বিধাননগরের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বায়ার্ন মিউনিখ-মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচের একটি দৃশ্য। উল্লেখ্য, এই ম্যাচটি ছিল জার্মান গোলকিপার অলিভার কানের বিদায়ী ম্যাচ।

ক্রিকেটফুটবল এই রাজ্যের দুটি জনপ্রিয় খেলা। কলকাতা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।[138] মোহনবাগানইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মতো দেশের প্রথম সারির জাতীয় ক্লাবগুলি রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।[139] খো খো, কবাডি প্রভৃতি দেশীয় খেলাও এখানে খেলা হয়ে থাকে। ক্যালকাটা পোলো ক্লাব বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো ক্লাব বলে পরিগণিত হয়।[140] অন্যদিকে রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব গ্রেট ব্রিটেনের বাইরে এই ধরনের ক্লাবগুলির মধ্যে প্রথম।[141] ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ-এ কলকাতা নাইট রাইডার্স দল এই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

পশ্চিমবঙ্গে একাধিক সুবৃহৎ স্টেডিয়াম অবস্থিত। সারা বিশ্বে যে দুটি মাত্র লক্ষ-আসন বিশিষ্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেনস তার অন্যতম।[142] অন্যদিকে বিধাননগরের বহুমুখী স্টেডিয়াম যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম।[143][144] ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ফুটবল ক্লাব।[145] জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি ও খড়গপুর শহরেও।[146] পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বেরা হলেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক তালিকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অলিম্পিক টেনিস ব্রোঞ্জ পদকজয়ী লিয়েন্ডার পেজ, দাবা আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া প্রমুখ। আবার অতীতের খ্যাতমানা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুটবলার চুনী গোস্বামী, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলেন মান্না, সাঁতারু মিহির সেন, অ্যাথলেট জ্যোতির্ময়ী শিকদার প্রমুখ।[147] পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে প্রচুর সাংস্কৃতিক সংস্থা। কলকাতার জোকায় রয়েছে বাংলার ব্রতচারী সমিতি। ব্রতচারী কেন্দ্রীয় নায়কমন্ডলী, কবি সুকান্তের কিশোর বাহিনী, সব পেয়েছির আসর, মনিমেলা মহাকেন্দ্র ইত্যাদি শিশু কিশোর সংস্থা।

আইপিএল ২০০৮-এর সময় ইডেন গার্ডেন

পর্যটন

পার্বত্য অঞ্চল

দার্জিলিং দার্জিলিং জেলার সদর শহর৷ শহরটি সবুজাবৃত এবং চারদিকে তুষারশৃঙ্গদ্বারা পরিবেষ্টিত৷ মনোরম দৃৃশ্য ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার জন্য এটি অন্যতম৷

দার্জিলিং জেলার ১৪৫৮ মিটার উচ্চতাতে অবস্থিত একটি সুদৃৃশ্য পর্বতস্টেশন(হিলস্টেশন) ও মহকুমা সদর হলো কার্শিয়াং৷

  • লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ রিম্বিক

লাভা, লোলেগাঁও ও রিশপ রিম্বিক হলো কার্শিয়াং মহকুমাতে ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তিনটি পর্যটন গ্রাম৷ গ্রাম তিনটি পাইনগাছ দ্বারা বেষ্টিত, মাঝে মাঝে মেঘের সমাহার একে আরো সুন্দর করে তোলে৷ শান্ত পরিবেশের জন্যও এটি সমাদৃত৷

মিরিক হলো দার্জিলিং জেলার একটি দৃশ্যপট পর্যটনস্থল৷ প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য, আবহাওয়া ও সহজলভ্যতার জন্য এটি পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় স্থান৷ এছাড়া সুমেংদু হ্রদ এখানকার বিশেষ আকর্ষণ৷

সান্দাকফু,এটি পশ্চিমবঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যার উচ্চতা প্রায় ৩৬৩৬ মিটার৷ দার্জিলিং জেলার সিঙ্গলিলা পর্বতশ্রেণীর দার্জিলিং নেপাল সীমান্তে অবস্থিত এই পর্বতটি থেকে মাকালু,কাঞ্চনজংঘা ইত্যাদি পর্বতশৃৃঙ্গ সুদৃৃশ্য৷ এছাড়া এখান থেকে উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ ফালুট অবস্থিত৷

ডুয়ার্স অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল মূলত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, অভয়ারণ্য ও চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত৷ এটি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে বিস্তৃৃত৷ বিখ্যাত কিছু বন্যপ্রাণী বিচরণক্ষেত্রগুলি হলো-

  • গরুমারা জাতীয় উদ্যান
  • জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান
  • বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প
  • চিলাপাতা বনাঞ্চল
  • মহানন্দা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
  • চাপড়ামারি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
  • সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান

ঐতিহ্যপূর্ণ পর্যটন

  • মালদহ টাউন
  • বহরমপুর ও কাশেমবাজার নবাবী প্রাসাদ
  • কোটিবর্ষ প্রত্নস্থল, দক্ষিণ দিনাজপুর
  • শোভাবাজার রাজবাড়ি
  • জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
  • কুমোরটুলি
  • মার্বেল প্যালেস
  • চন্দননগর
  • চুঁচুড়া
  • নাখোদা মসজিদ
  • বেলুরমঠ
  • দক্ষিণেশ্বর
  • কালীঘাট
  • বিষ্ণুপুর মন্দির শহর

উপকুলীয়

  • দীঘা সমুদ্রসৈকত
  • মন্দারমণি সমুদ্রসৈকত
  • উদয়পুর সমুদ্রসৈকত
  • শঙ্করপুর সমুদ্রসৈকত
  • তাজপুর সমুদ্রসৈকত
  • বকখালি
  • জুনপুট
  • সাগরদ্বীপ কপিলমুনি আশ্রম
  • সজনেখালি-ধামাখালি
  • সুন্দরবন অভয়ারণ্য
  • ভগবতপুর অভয়ারণ্য

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. https://www.census2011.co.in/census/state/districtlist/west+bengal.html
  2. Kundu, Tadit (১৭ ডিসেম্বর ২০১৫)। "Why Kerala is like Maldives and Uttar Pradesh, Pakistan"Live Mint। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭
  3. "Sex ratio, 0–6 age population, literates and literacy rate by sex for 2001 and 2011 at a glance for West Bengal and the districts: provisional population totals paper 1 of 2011: West Bengal"। Government of India:Ministry of Home Affairs। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১২
  4. "Report of the Commissioner for linguistic minorities: 47th report (July 2008 to June 2010)" (PDF)। Commissioner for Linguistic Minorities, Ministry of Minority Affairs, Government of India। পৃষ্ঠা 122–126। ১৩ মে ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  5. "বহুভাষিক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১২
  6. "রাজবংশী-কামতাপুরী, কুড়মালি পশ্চিমবঙ্গের সরকারী ভাষা"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  7. Nanda, J. N (2005). Bengal: the unique state। Concept Publishing Company. p. 10.। ২০০৫। আইএসবিএন 978-81-8069-149-2। Bengal [...] was rich in the production and export of grain, salt, fruit, liquors and wines, precious metals and ornaments besides the output of its handlooms in silk and cotton. Europe referred to Bengal as the richest country to trade with.
  8. মুহাম্মদ শাহ আলম (২০১৬)। Poverty From The Wealth of Nations: Integration and Polarization in the Global Economy since 1760স্প্রিঙ্গার সায়েন্স+বিজনেস মিডিয়া। পৃষ্ঠা ৩২। আইএসবিএন 978-0-333-98564-9।
  9. "Which India is claiming to have been colonised?"দ্য ডেইলি স্টার (উপ-সম্পাদকীয়)। ৩১ জুলাই ২০১৫। অজানা প্যারামিটার |lastCHICO= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  10. ম্যাডিসন, অ্যাঙ্গাস (২০০৩)। Development Centre Studies The World Economy Historical Statistics: Historical Statistics। ওইসিডি পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ২৫৯–২৬১। আইএসবিএন 9264104143।
  11. লরেন্স হ্যারিসন, পিটার এল. বার্জার (২০০৬)। Developing cultures: case studies। রৌটলেজ। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9780415952798।
  12. Chakrabarti ও Chakrabarti 2013, পৃ. 265
  13. Dineo, Paul; Mills, James (২০০১)। Soccer in South Asia: empire, nation, diaspora। London: Frank Cass Publishers। পৃষ্ঠা 71। আইএসবিএন 978-0-7146-8170-2।
  14. Bose, Mihir (২০০৬)। The magic of Indian cricket: cricket and society in India। Psychology Press। পৃষ্ঠা 240। আইএসবিএন 978-0-415-35691-6।
  15. Das Sharma, Amitabha (২০০২)। "Football and the big fight in Kolkata" (PDF)Football Studies5 (2): 57। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১২
  16. "Bangldesh: early history, 1000 B.C.–A.D. 1202"Bangladesh: A country study। Washington, D.C.: Library of Congress। ১৯৮৮। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১২Historians believe that Bengal, the area comprising present-day Bangladesh and the Indian state of West Bengal, was settled in about 1000 B.C. by Dravidian-speaking peoples who were later known as the Bang. Their homeland bore various titles that reflected earlier tribal names, such as Vanga, Banga, Bangala, Bangal, and Bengal. অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  17. "West Bengal may be renamed PaschimBanga"The Hindu। Chennai, India। ১৯ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  18. বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম, ২ আগস্ট ২০১৬।
  19. 'পশ্চিমবঙ্গ' বদলে 'বাংলা'-তেই সর্বসম্মতিক্রমে সায় বিধানসভায়
  20. "History of Bangladesh"। Bangladesh Student Association। ২০০৫-১২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  21. "4000-year old settlement unearthed in Bangladesh"। Xinhua। 2006-March। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  22. James Heitzman and Robert L. Worden, সম্পাদক (১৯৮৯)। "Early History, 1000 B.C.-A.D. 1202"। Bangladesh: A country study। Library of Congress।
  23. Chowdhury, AM। "Gangaridai"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৮
  24. Sultana, Sabiha। "Settlement in Bengal (Early Period)"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। ২০০৭-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-০৪
  25. "Shashanka"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  26. "Islam (in Bengal)"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  27. Chaudhury, S; Mohsin, KM। "Sirajuddaula"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  28. Fiske, John। "The Famine of 1770 in Bengal"The Unseen World, and other essays। University of Adelaide Library Electronic Texts Collection। ২০০৬-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  29. (Baxter 1997, পৃ. 30–32)
  30. (Baxter 1997, পৃ. 39–40)
  31. Sen, Amartya (১৯৭৩)। Poverty and Famines। Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-828463-2।
  32. Harun-or-Rashid। "Partition of Bengal, 1947"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  33. (Bennett ও Hindle 1996, পৃ. 63–70)
  34. Biswas, Soutik (২০০৬-০৪-১৬)। "Calcutta's colourless campaign"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  35. Ghosh Roy, Paramasish (২০০৫-০৭-২২)। "Maoist on Rise in West Bengal"VOA Bangla। Voice of America। ২০০৭-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১১
  36. "Maoist Communist Centre (MCC)"Left-wing Extremist group। South Asia Terrorism Portal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-১১
  37. "Several hurt in Singur clash"rediff News। Rediff.com India Limited। ২৮ জানুয়ারি ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-১৫
  38. "Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid"The Telegraph। ১৫ মার্চ ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-১৫
  39. "The Hindu Business Line, 26 November 2006"। ৫ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১১
  40. "Statistical Facts about India"। www.indianmirror.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  41. "National Himalayan Sandakphu-Gurdum Trekking Expedition: 2006"। Youth Hostels Association of India: West Bengal State Branch। ২০০৬-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  42. "Alarming rise in bacterial percentage in Ganga waters"। The Hindu Business Line। ৪ আগস্ট ২০০৬। ২০০৭-০১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৯
  43. "Groundwater Arsenic Contamination Status in West Bengal"Groundwater Arsenic Contamination in West Bengal – India (17 Years Study)। School of Environmental Studies, Jadavpur University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৯
  44. "Climate"West Bengal: Land। Suni System (P) Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৫
  45. "kal Baisakhi"Glossary of Meteorology। American Meteorological Society। ২০০৬-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৫
  46. "Symbols of West Bengal"knowindia.gov.in। ১২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
  47. "Symbols of West Bengal" (PDF)। ১৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৩
  48. "State animals, birds, trees and flowers" (PDF)। Wildlife Institute of India। ৪ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২
  49. "West Bengal" (PDF)। bsienvis.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৬
  50. "Environmental Issues"West Bengal Human Development Report 2004 (PDF)। Development and Planning Department, Government of West Bengal। ২০০৪ [2004]। পৃষ্ঠা 180–182। আইএসবিএন 81-7955-030-3। ২০০৬-০৫-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  51. "West Bengal: General Information"India in Business। Federation of Indian Chambers of Commerce and Industry। ২০০৬-০৮-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৫
  52. Islam, Sadiq (২৯ জুন ২০০১)। "World's largest mangrove forest under threat"CNN Student Bureau। Cable News Network। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-৩১
  53. Mukherji, S.J. (২০০০)। College Botany Vol. III: (chapter on Phytogeography)। Calcutta: New Central Book Agency। পৃষ্ঠা 345–365।
  54. Snedaker, Samuel (২০০৬-০৮-২৯)। "Notes on the Sundarbans"। ২০০৬-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-০২.
  55. "Natural vegetation"West Bengal। Suni System (P) Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-৩১
  56. "West Bengal"Directory of Wildlife Protected Areas in India। Wildlife Institute of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  57. "Problems of Specific Regions"West Bengal Human Development Report 2004 (PDF)। Development and Planning Department, Government of West Bengal। ২০০৪ [2004]। পৃষ্ঠা 200–203। আইএসবিএন 81-7955-030-3। ২০০৬-০৫-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  58. "West Bengal Legislative Assembly"Legislative Bodies in India। National Informatics Centre। ২০১৬-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৮
  59. "Election Database"। Election Commission of India। ২০০৬-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  60. "West Bengal"India Together। Civil Society Information Exchange Pvt. Ltd। ২০০২-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  61. "The CPI(M) has always used violence to achieve its goals"India Together। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  62. "West Bengal: Next time, the volcano"India Together। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ জুন ২১, ২০০৯
  63. "NIC Policy on format of e-mail Address: Appendix (2): Districts Abbreviations as per ISO 3166–2" (PDF) (ইংরেজি ভাষায়)। যোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার। ২০০৪-০৮-১৮। পৃষ্ঠা pp. 5–10। ২০০৮-০৯-১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-২৪
  64. "Districts : West Bengal" (ইংরেজি ভাষায়)। Government of India portal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-২৪
  65. এখানে 'প্রতিষ্ঠা' অর্থ পশ্চিমবঙ্গের জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার বছর। পশ্চিমবঙ্গ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৪টি জেলা নিয়ে ব্রিটিশ ভারতের পূর্বতন বঙ্গ প্রদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  66. "Area, Population, Decennial Growth Rate and Density for 2001 and 2011 at a glance for West Bengal and the Districts" (XLS) (ইংরেজি ভাষায়)। 2011 census of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১৩
  67. "Section 2 of West Bengal Panchayat Act, 1973"। Department of Panchayat and Rural Department, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৯
  68. "India: largest cities and towns and statistics of their population"। World Gazetteer। ২০০৬-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  69. "India: metropolitan areas"। World Gazetteer। ২০১২-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  70. David Christiana (২০০৭-০৯-০১)। "Arsenic Mitigation in West Bengal, India: New Hope for Millions" (PDF)। Southwest Hydrology। পৃষ্ঠা 32। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২০
  71. "Gross State Domestic Product at Current Prices"National Accounts Division: Press release & StatementsMinistry of Statistics and Programme Implementation, Government of India। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৯ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  72. "Economy"West Bengal। Suni System (P) Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৭
  73. "The State Economy" (PDF)Indian States Economy and Business: West BengalIndia Brand Equity Foundation, Confederation of Indian Industry। পৃষ্ঠা 9। ২০০৬-০৯-২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৭
  74. "Basic Information"About West Bengal। West Bengal Industrial Development Corporation। ২০০৬-১১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৭
  75. "Consul General Henry V. Jardine to The Indo-American Chamber of Commerce, 19 October 2005"। ২০০৭-০৯-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-১১
  76. Ray Choudhury, R (২৭ অক্টোবর ২০০৬)। "A new dawn beckons West Bengal"। The Hindu Business Line। ২০০৭-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৯
  77. "West Bengal Industrial Development Corporation Ltd." (PDF)India @ Hannover Messe 2006। Engineering Export Promotion Council (EEPC), India। পৃষ্ঠা 303। ২০০৬-০৯-২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৭
  78. "Statement: Gross state domestic product at current prices"। Directorate of Economics & Statistics of respective State Governments, and for All-India। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০২
  79. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১১-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৫
  80. https://wb.gov.in/portal/web/guest/agriculture
  81. https://wb.gov.in/portal/web/guest/agriculture-marketing
  82. https://wb.gov.in/portal/web/guest/forest
  83. https://wb.gov.in/portal/web/guest/public-works
  84. https://wb.gov.in/portal/web/guest/land-and-land-reforms
  85. https://wb.gov.in/portal/web/guest/science-and-technology-and-biotechnology
  86. "West Bengal: Infrastructure"Public Private Partnerships in India। Dept of Economic Affairs, Ministry of Finance, Government of India। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৭
  87. "List of State-wise National Hoghways in the Country"National Highways। Department of Road Transport and Highways; Ministry of Shipping, Road Transport and Highways; Government of India। ২০০৭-০১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৭
  88. Chattopadhyay, Suhrid Sankar (২০০৬)। "Remarkable Growth"Frontline। Chennai, India: The Hindu। 23 (02)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-৩১ অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  89. "West Bengal"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৭
  90. "Geography : Railway Zones"IRFCA.org। Indian Railways Fan Club। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-৩১
  91. "About Kolkata Metro"। Kolkata Metro। ২০০৭-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০১
  92. "Mountain Railways of India"। UNESCO World Heritage Centre। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-৩০
  93. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৩
  94. "Salient Physical Features"Kolkata Port Trust। Kolkata Port Trust, India। ২০০৭-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৯
  95. "Intra-city train travel"reaching India। Times Internet Limited। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-৩১
  96. "Census Population" (PDF)Census of India। Ministry of Finance India। ২০০৮-১২-১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৮
  97. "Press Release – Provisional Population Results – Census of India 2001"। Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। ২৬ মার্চ ২০০১। ২০০৭-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  98. Population of West Bengal (80,221,171) is 7.81% of India's population (1,027,015,247)
  99. "Table 2(3): Literates and literacy rates by sex : 2011"Provisional population totals paper 1 of 2011 India: series 1। Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  100. "An Indian life: Life expectancy in our nation"India Together। Civil Society Information Exchange Pvt. Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  101. National Crime Records Bureau (২০০৪)। "Crimes in Mega Cities" (PDF)Crime in India-2004 (PDF Format)। Ministry of Home Affairs। পৃষ্ঠা 158। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬
  102. "Human Security" (PDF)West Bengal Human Development Report 2004। Development and Planning Department, Government of West Bengal। ২০০৪। পৃষ্ঠা pp167–172। ২০০৬-১১-০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-২৬ অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |কর্ম= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  103. National Crime Records Bureau (২০০৪)। "General Crime Statistics Snapshots 2004" (PDF)Crime in India-2004 (PDF Format)। Ministry of Home Affairs। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-২৬
  104. "Population by religion community – 2011"Census of India, 2011। The Registrar General & Census Commissioner, India। ২৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  105. "DISTRIBUTION OF THE 22 SCHEDULED LANGUAGES-INDIA/STATES/UNION TERRITORIES - 2011 CENSUS" (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬
  106. Hoddie, Matthew (২০০৬)। Ethnic realignments: a comparative study of government influences on identity। Lexington Books। পৃষ্ঠা 114–115। আইএসবিএন 978-0-7391-1325-7। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  107. Banerjee, Himadri; Gupta, Nilanjana; Mukherjee, Sipra, সম্পাদকগণ (২০০৯)। Calcutta mosaic: essays and interviews on the minority communities of Calcutta। Anthem Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-81-905835-5-8। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১২
  108. Banerjee, Himadri; Gupta, Nilanjana; Mukherjee, Sipra, সম্পাদকগণ (২০০৯)। Calcutta mosaic: essays and interviews on the minority communities of Calcutta। Anthem Press। পৃষ্ঠা 9–10। আইএসবিএন 978-81-905835-5-8। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১২
  109. Georg, Feuerstein (২০০২)। The Yoga Tradition। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 600। আইএসবিএন 3-935001-06-1।
  110. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ন বুক এজেন্সি প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১৪৩
  111. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বড়ু চণ্ডীদাস বিরচিত, ডঃ মিহির চৌধুরী কামিল্যা সম্পাদিত, শিলালিপি, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ.৪
  112. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস, আশুতোষ ভট্টাচার্য, এ মুখার্জি অ্যান্ড কোং প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৯, পৃ. ২৫৪
  113. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস, আশুতোষ ভট্টাচার্য, এ মুখার্জি অ্যান্ড কোং প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৯, পৃ. ২৮৪
  114. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস, আশুতোষ ভট্টাচার্য, এ মুখার্জি অ্যান্ড কোং প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৯, পৃ. ৪০৪
  115. "The Bauls of Bengal"Folk Music। BengalOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  116. "Chau: The Rare Mask Dances"Dances of India। Boloji.com। ২০০৬-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২২
  117. "Durga Puja"Festivals of Bengal। West Bengal Tourism, Government of West Bengal। ২০০৬-১১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৮
  118. "List of festivals of West Bengal"। Festivalsofindia.in।
  119. "UGC recognised Universities in West Bengal with NAAC accreditation status"। Education Observer। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  120. "West Bengal University of Health Sciences"। West Bengal University of Health Sciences। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  121. "List of Affiliated Colleges"। University of Calcutta। ২০০৮-০২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৯
  122. Mitra, P (৩১ আগস্ট ২০০৫)। "Waning interest"Careergraph। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  123. "Visva-Bharati: Facts and Figures at a Glance"। Visva-Bharati Computer Centre। ২০১২-০৯-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-৩১
  124. "General Review"। Registrar of Newspapers for India। ২০০৬-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৯
  125. "Bengali News Channel took 5 months to reach no.1 position"। News Center। সংগ্রহের তারিখ Sep 07, 2006 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  126. Prabhakaran, Shaji (১৮ জানুয়ারি ২০০৩)। "Football in India – A Fact File"। LongLiveSoccer.com। ২০০৬-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  127. "Indian Football Clubs"। Iloveindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  128. "History of Polo"। Hurlingham Polo Association। ২০০৬-০৪-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-৩০
  129. "Royal Calcutta Golf Club"। Encyclopaedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-৩০
  130. "India – Eden Gardens (Kolkata)"। Cricket Web। ২০০৭-০৫-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  131. "100 000+ Stadiums"। World Stadiums। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  132. "The Asian Football Stadiums (30.000+ capacity)"। Gunther Lades। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  133. Raju, Mukherji (১৪ মার্চ ২০০৫)। "Seven Years? Head Start"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬
  134. "Sports & Adventure"। West Bengal Tourism। ২০০৬-১১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২২
  135. "Famous Indian Football Players"। Iloveindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.