কলকাতা বন্দর

কলকাতা বন্দর কলকাতা শহরে অবস্থিত একটি নদীবন্দর। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বন্দরটির গোড়াপত্তন করেছিলেন। বর্তমানে ভারতের চালু বন্দরগুলির মধ্যে এই বন্দরটি প্রাচীনতম। ২০১৫ সালের হিসাবে কলকাতা বন্দর বিশ্বের ৮৫ তম ব্যস্ত বন্দর (বাল্ক পণ্যের হিসাবে)।

কলকাতা বন্দর
কলকাতা বন্দরের নেতাজি সুভাষ ডকে কন্টেইনার
অবস্থান
দেশ ভারত
অবস্থানখিদিরপুর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
স্থানাঙ্ক২২.২৩° উত্তর ৮৮.২৪° পূর্ব / 22.23; 88.24
বিস্তারিত
চালু১৮৭০
পরিচালনা করেকলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ
মালিককলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাহাজ মন্ত্রক, ভারত সরকার
পোতাশ্রয়ের প্রকারনদী বন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর
উপলব্ধ নোঙরের স্থানকলকাতা-২৮ টি
হলদিয়া-১২ টি
জেটি৮৬
পোতাশ্রয়ের গভীরতাকলকাতা ৬ মিটার (২০ ফু)
হলদিয়া ৮ মিটার (২৬ ফু)
পরিসংখ্যান
জলযানের আগমন৩,৬২৩ (২০১৮-২০১৯) [1][2][3]
বার্ষিক কার্গো টন৬৩.৭ মিলিওন টন (২০১৮-২০১৯)[1][4][5][2]
বার্ষিক কন্টেইনারের আয়তন৮,৩০,০০০ টিইইউ (২০১৮-২০১৯)[6][7][8][9]
যাত্রী গমনাগমন৩৯,৫৫২
বার্ষিক আয়১,৮৬৭.৬৯ কোটি (US$২৫৯.৮৮ মিলিয়ন) (২০১৪-২০১৫)
মোট আয়-৬৮ কোটি (US$৯.৪৬ মিলিয়ন) (২০১৪-২০১৫)
প্রধান আমদানি দ্রব্যযন্ত্রপাতি, খনিজ তেল, রাসায়নিক সার, কাঁচা সুত, ইস্পাত, অটোমোবাইল প্রভৃতি
প্রধান রপ্তানি দ্রব্যপাট ও পাট জাতদ্রব্য, সুতির বস্ত্র, চর্ম, লৌহ খনিজ, কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লাইস ওস প্রভৃতি
ডক ও জেটি৩ টি (খিদিরপুর ডক, নেতাজি সুভাষ ডক ও হলদিয়া ডক), বজবজ তরল পণ্য জেটি
কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডক

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা বন্দর ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বন্দর। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে পশ্চাদভূমি হ্রাসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এই বন্দরের সাময়িক অবনতি ঘটে। তবে বিংশ শতাব্দীর সূচনায় পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও পরিকাঠামোগত উন্নতির ফলে বর্তমানে কলকাতা বন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মালবাহী বন্দরে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে কলকাতা বন্দরের দুটি পৃথক ডক ব্যবস্থা রয়েছে- কলকাতায় কলকাতা ডক ও হলদিয়ায় হলদিয়া ডক চত্বর নামে একটি গভীর জলের ডক রয়েছে।

ইতিহাস

১৮৫২ সালের কলকাতা বন্দরের দৃশ্য

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট হতে বাণিজ্য সনদ লাভের পরই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা বন্দরের গোড়াপত্তন ঘটায়। ভারত শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হলে, ১৮৭০ সালে সরকার বন্দর কমিশন গঠন করে।

আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে কলকাতা বন্দরের উন্নতি মুগল বন্দর হুগলি অথবা পশ্চিম উপকূলীয় সুরাট বন্দরের অবনতি ব্যতীত অসম্ভব ছিল। কলকাতার উত্থানের সাথে জড়িত ছিল ভারত মহাসাগর এলাকায় বিদ্যমান আন্ত-এশীয় বাণিজ্য কাঠামোয় বড় ধরনের ভাঙন এবং পূর্ব ভারতে ইংরেজদের উত্থান। ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলার শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রাক্কালে ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক কাঠামোটি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত। পরবর্তীকালে এর পুনরুত্থানের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায় যখন চূড়ান্তভাবে ইউরোপমুখী হওয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় বৈদেশিক বাণিজ্য চীনের সাথে নতুনভাবে শুরু হয়। পরিশেষে, ভারতীয় আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্রিটিশদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রাধান্য পেতে শুরু করে, আর এটি আবর্তিত হতে শুরু করে কলকাতা বা বম্বের মতো বন্দরগুলিকে কেন্দ্র করে। অবশ্য বন্দর শহর হিসেবে  কলকাতার উত্থানের পেছনে নৌ-গুরুত্ব স্পষ্ট প্রতীয়মান, কেননা ষোল শতক থেকেই গঙ্গার ভাগীরথী- হুগলি প্রবাহ বরাবর এর ভাটির দিকে বাণিজ্য বসতি ক্রমশ গড়ে উঠছিল। কালক্রমে, গঙ্গার এককালের প্রধান শাখা হুগলি ক্রমশ বড় জাহাজের জন্য অকার্যকর হয়ে পড়ছিল এর পলিজনিত সমস্যার কারণে। কেননা নদীর পানির বিরাট অংশ প্রবাহিত হতো পূর্বমুখী শাখা নদীগুলি দিয়ে। সে সাথে হুগলির অাঁকা বাঁকা গতিপথ ছিল বড় বড় জাহাজ চলাচলের জন্য কঠিন। উপরন্তু, উজানের দিকে হুগলী ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়ায় নৌ চলাচল আরও অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে। ষোল শতকের প্রথম দিকে বাংলার এ অঞ্চলের সাথে ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ স্থাপনকারী পর্তুগিজদের আগমণের পূর্ব থেকেই হুগলি নদীর উজানে বাণিজ্য বসতি থেকে গৃহীত শুল্ক গঙ্গার নৌ ব্যবস্থায় পরিবর্তন সূচিত করে। সরস্বতী ও ভাগীরথী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত সমৃদ্ধশালী সাঁতগাও বন্দরটি সমুদ্রগামী মালবাহী জাহাজের জন্য ক্রমশ অপ্রবেশযোগ্য হয়ে পড়ছিল। ষোল শতকের শেষের দিকে পর্তুগিজদের বড় বড় জাহাজগুলি বেতরে (Betor) এসে থেমে যেত। বেতর ছিল কলকাতার উপকণ্ঠস্থ একটি স্থান। সাঁতগাও থেকে ছোট জাহাজে করে পণ্যসামগ্রী ভেতরে এনে বড় বড় জাহাজগুলিতে বোঝাই করা হতো। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা তাদের বাণিজ্যকুঠি সাঁতগাও থেকে সরিয়ে কয়েক মাইল ভাটিতে হুগলিতে স্থানান্তরিত করে। শীঘ্রই সাঁতগাও-এর পরিবর্তে হুগলি এ অঞ্চলের সমুদ্র নির্গম পথ হিসেবে জায়গা করে নেয়। সমগ্র সতেরো শতকে হুগলি তার গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ রাখে। অল্প কয়েক দশক পরে ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুগলদের দ্বারা পর্তুগিজগণ এ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরে ওলন্দাজ ও ইংরেজগণ এখানে তাদের বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। অধিকন্তু, হুগলির বাণিজ্য আরও ভাটির দিকে, বিশেষ করে সুতানুটি ও গোবিন্দপুর পর্যন্ত, ছোট বাণিজ্য কেন্দ্র ও বসতিগুলির বৃহত্তর কর্মকান্ডের পরিধিকে পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করে। পরবর্তীকালে এ সুতানটি ও গোবিন্দপুরই ইংরেজ কোম্পানির বন্দর শহর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে। সাঁতগাও থেকে সুতানটিতে শেঠ ও বসাকদের অভিবাসন কলকাতার উত্থানের পটভূমি হিসেবে কাজ করেছে। কলকাতায় বসতি স্থাপনের পূর্ব থেকেই ইংরেজগণ জানত যে, ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল উপযোগী স্থানগুলির মধ্যে কলকাতা ছিল গোবিন্দপুর থেকে গার্ডেন রীচ পর্যন্ত পূর্ব তীর বরাবর সবচেয়ে গভীর জলরাশির এলাকা’ এবং এ অঞ্চলে অতি সহজে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম ছিল। আঠারো শতকে বন্দর শহর হিসেবে কলকাতার উত্থান অনেকাংশেই সহজতর হয়েছিল ইংরেজদের দ্বারা ভারতীয় নৌ-বাণিজ্যের দিক পরিবর্তনের কারণে। মুগল ভারত সাফাভি ইরান এবং অটোম্যান তুরস্কের রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে পশ্চিম-এশীয় বাণিজ্যবলয়কে আরও প্রাচ্যাভিমুখে সম্প্রসারিত করে। ভারতীয় বাণিজ্যের উদ্দিষ্ট স্থান হিসেবে ইউরোপের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে সমগ্র আঠারো শতক। একই সাথে কলকাতা ভিত্তিক ব্যক্তি মালিকানাধীন ইংরেজ নৌ-বাণিজ্যেও উল্লেখযোগ্য উত্থান পরিলক্ষিত যা এ নব-প্রতিষ্ঠিত বন্দর শহরটিকে ব্যস্ত বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যর ভর দুপুর তখন কলকাতার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য একটি ভিন্ন আঙ্গিকে আরও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। অবশ্য এ বাণিজ্য বেশিরভাগটাই ব্রিটেনের সাথে সংযোজিত ছিল। এ বাণিজ্যের ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি উদ্বৃত্ত তৈরি করতে থাকে, যা ছিল মাদ্রাজ ও বোম্বের তুলনায় অনেক বেশি। কলকাতার বিশাল রপ্তানি সামগ্রী, প্রধানত কৃষি ও আধাপ্রস্ত্তত পণ্যসামগ্রী একটি সুবিধাজনক বাণিজ্যিক ভারসাম্য তৈরি করে। প্রায়শই ‘হোম চার্জ’ হিসেবে সংগৃহীত রাজনৈতিক কর ছাড়াও ব্রিটিশ মালিকানাধীন কোম্পানির সঞ্চয় ও বাণিজ্যিক লাভ এবং ব্রিটিশ ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানির ‘সার্ভিস চার্জ’ হিসেবে অফিসীয় ও ব্যক্তিগতভাবে ব্রিটেনে প্রেরিত অর্থের দ্বারা বাণিজ্যিক সমতাবিধান করা হতো। আর এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, ঔপনিবেশিক শাসনের শুরু থেকেই শোষণমুখী রপ্তানি প্রক্রিয়া কলকাতা বন্দরকে ব্রিটিশদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তারপরও বন্দরের পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৮৭০ সালে কলকাতা বন্দর কমিশন গঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যদিও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সমাপ্তির ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক প্রবল গতিবেগ। এতে অবশ্য কলকাতার সামুদ্রিক বাণিজ্যে বাস্তবিক ক্ষেত্রে একটি সঙ্গতিপূর্ণ প্রসার ঘটালেও অপরিকল্পিত জেটি ও ডক নির্মাণের ফলে বন্দরের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে একরকম সেকেলে ভাবই থেকে যায়। ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট কর্তৃক পরিচালিত কোম্পানির নৌ দফতরের অধীনে বন্দর প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্রগামী জাহাজগুলিতে পাইলট সার্ভিস প্রদান করা। নদীর নাব্যতা সম্পর্কে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়মিতভাবে নদী জরিপের কাজও পরিচালনা করত। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্দরের ডকিং সুবিধাদির অভাব বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কেননা জাহাজগুলিকে মেরামতের জন্য বোম্বে নেওয়া হতো। ১৭৯০ সালে বাঁকশাল ঘাটের নিকটে প্রথম ডক নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যেই ১৭৮১ সালে একটি ভাসমান ডক নির্মাণের জন্য কর্নেল ওয়াটসনকে বন্দরের দক্ষিণ সীমানায় একটি জায়গা প্রদান করা হয়। ওয়াটসন খিদিরপুরে একটি মেরিন ইয়ার্ড স্থাপন করেছিলেন এবং ১৭৮১ সালে ভাসমান ডক নির্মাণের কাজও শুরু করেছিলেন, কিন্তু গোকুল ঘোষালের পরিবারের সাথে আইনগত দ্বন্দ্ব শুরু হলে তাকে বাধ্য হয়ে এ প্রকল্প বন্ধ করতে হয়। ওয়াটসন পরবর্তীকালে শিপইয়ার্ডের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং ব্যবসা থেকে তার অবসর গ্রহণের পূর্বে এখান থেকে অল্প কয়েকটি জাহাজ নির্মিত হয়েছিল। ওয়াটসনের পরে কলকাতায় জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবে সেগুলির কোনোটিই বোম্বের পারসি এন্টারপ্রাইজের জাহাজ নির্মাণ কর্মকান্ডের সাথে তুলনীয় ছিল না। যাহোক, উনিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ পোতসমূহের জন্য ভারতীয় পোতসমূহকে স্থান ছেড়ে দিতে হয়। ১৮২০-এর দশকে কলকাতা ও ডায়মন্ড হারবারে ভাসমান ডক নির্মাণের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয় নি। ১৮৪২ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কলকাতা বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলে এ বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। কিন্তু কলকাতা বন্দরের আধুনিকীকরণের বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায় ১৮৬০-এর দশকে মাতলাতে নতুন একটি বন্দর প্রতিষ্ঠার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টায়। উদ্যোগ গ্রহণকারীদের একটি বিকল্প চিন্তা থেকে পোর্ট ক্যানিং স্কিম প্রণয়ন করা হয়। কেননা ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের ধারণা ছিল নদীর পলিজনিত সমস্যা অকালেই কলকাতা বন্দরের মৃত্যু টেনে আনবে, ঠিক যেভাবে তিনশ বছর আগে এ হুগলির তীরবর্তী সাঁতগাও বন্দরটির মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে কলকাতা ব্রিটিশদের কাছে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে, একে ছেড়ে যাওয়া তত সহজ ছিল না। কলকাতা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার পোর্ট ট্রাস্ট গঠনে সক্রিয় হয়, যা কিনা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যকে একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করে। কলকাতা কর্পোরেশনের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে প্রথমদিককার পরীক্ষামূলক রিভার ট্রাস্টটি ব্যর্থ হওয়ার পর ১৮৭০ সালের অক্টোবর মাস থেকে যখন পোর্ট ট্রাস্ট তার কাজ শুরু করে তখন কলকাতা বন্দরে জেটির সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি ও মাল খালাসের জন্য ঘাট ছিল একটি, যেখানে ৫২টি জাহাজ নোঙ্গর করতে পারত এবং তার মোট ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪৮,০০০ টন। ১৮৭১-৭২ সালের মধ্যে জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬টিতে, আর সেখানে জাহাজ নোঙ্গর করতে পারত ১৪৩টি এবং মাল ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে দাড়ায় ২২২,০০০ টনে। জাহাজ ঘাটের দৈর্ঘ্যও বৃদ্ধি পায় লক্ষ্যণীয়ভাবে। এ ঘাটে প্রধানত পণ্যসামগ্রী যেমন, শষ্য, বীজ এবং কাঁচামাল ও আধ্যপ্রস্ত্তত পাটজাত দ্রব্য ওঠানামা করত। ১৮৮৬ সালে বজবজ পেট্রোলিয়াম ঘাটটি চালু হয়। আসাম ও উত্তর বাংলা থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া চা রপ্তানির কারণে ১৮৭০-এর দশকে স্ট্রান্ড ব্যাংক দ্বীপে একটি গুদাম ঘর নির্মাণ করতে হয়। উনিশ শতকের শেষ ভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৮৯২ সালে খিদিরপুরে ডক নির্মাণ। এটি ছিল কলকাতার বণিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগতভাবে দাবির ফল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব বিশ বছরে কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর ক্রমোন্নতি পরিলক্ষিত হয়। উপকূলীয় বাণিজ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ঘটে, বিশেষ করে কয়লা রপ্তানিতে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলা ও আসাম সরকার কলকাতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ঘটালেও তা তেমন ফলপ্রসূ হয় নি। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে মহামন্দার প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও এ অঞ্চলে আধুনিক শিল্পকারখানার উন্নয়নের সাথে সাথে কলকাতা বন্দরেরও আধুনিক রূপায়ন ঘটতে থাকে। তারপরও মহামন্দা শুরুর আগে থেকেই গার্ডেন রিচ-এর কিং জর্জ ডক ১৯২৯ সাল থেকে চালু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা তুলনামূলকভাবে কলকাতা বন্দর উন্নয়নে স্থবিরতার জন্য চিহ্নিত, তা ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি কিছু সময়ের জন্য বাণিজ্যিক পুনরুদ্ধারে কাজে বিঘ্ন ঘটায়। ভারতের স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ধারাসমূহ পুনর্জীবীত হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সূতিকাগার হিসেবে কলকাতার গুরুত্ব যেমন ছিল, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ শাসনের অবসানে এর ক্রমাবনতিও ঘটে। 

কলকাতা বন্দর একটি বাণিজ্যিক বন্দর তথা পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানি সেনাবাহিনী এই সময় দুই বার বন্দরের উপর বোমাবর্ষণ করে। পূর্বতন বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৯৭৫ সাল অবধি বন্দরের দায়িত্বে রত ছিল। এরপর ১৯৬৩ সালের প্রধান বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হলে, কলকাতার বর্তমান পোর্ট ট্রাস্ট বা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়।

ডক ব্যবস্থা

কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকে একটি পন্যবাহী জাহাজের মাল খালাসের দৃশ্য

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট দুটি পৃথক ডকসমষ্টির দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছে: কলকাতা ডক ব্যবস্থাহলদিয়া ডক চত্বর। কলকাতা ডক ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে খিদিরপুর ডক, নেতাজি সুভাষ ডক, বজবজ নদী মুরিং ও ডায়মন্ড হারবার নোঙরখানা। বজবজ ডক চত্বরে রয়েছে ইমপাউন্ডেড ডক, তিনটি তৈল জেটি, তিনটি বজরা জেটি ও হলদিয়া নোঙরখানা।

বন্দর চ্যানেল

কলকাতা বন্দরের প্রবেশ পথ বা চ্যানেল হুগলি নদীতে একটি জাহাজ

কলকাতা বন্দরে ২০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল বা প্রবেশ পথ রয়েছে। এটি হুগলি নদীর মোহনা থেকে শুরু হয়ে কলকাতা শহরের কাছে কলকাতা ডক পর্যন্ত বিস্তৃত। চ্যানেলটি গড়ে ৭ মিটার (২৩ ফু) গভীর। তবে মোহনার কাছে এই চ্যানেল ৯ থেকে ১০ মিটার গভীর। হলদিয়া বন্দর চ্যানেলটি ৭.৫ মিটার (২৫ ফু) এর বেশি গভীর। বঙ্গোপসাগর এর স্যান্ড হেডেন থেকে চ্যানেলটি প্রায় ২০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই চ্যানেল অনেকগুলি ডুবোচর রয়েছে ও চ্যানেলটি ঘনঘন বাঁকযুক্ত ফলে জাহাজ চলাচলে অসুবেধা হয়।

আমদানি-রপ্তানি

কলকাতা বন্দরের প্রধান আমদানি দ্রব্য হল কোক কয়লা, যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল প্রভৃতি। বন্দর থেকে রপ্তানি করা হয় পাটজাত দ্রব্য, কয়লা, পেট্রোরাসায়নিক দ্রব্য, চা, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ আকরিক, ফ্লাই অ্যাস প্রভৃতি।বন্দরটির হলদিয়া ডক ব্যবহার করা হয় বাল্ক জাতীয় পণ্য আমদানি রপ্তানিতে এবং সামান্য কিছু কন্টেইনার পণ্য পরিবহন করে। কলকাতা ডক ব্যবস্থা প্রধানত ব্যবহার করা হয় কন্টেইনার পরিবহনে। এছাড়াও কলকাতা ডক ব্যবস্থা বাল্ক পণ্য পরিবহন করে। ২০১৫-২০১৬ সালে কলকাতা বন্দর ৫০.১৯ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৬,৬২৮৯১ টিইউএস কন্টেইনার পরিবহন করেছে। এর মধ্যে কলকাতা ডক ব্যবস্থা ১৬ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৫ লক্ষের বেশি কন্টেইনার এবং হলদিয়া ডক ৩৪ মিলিয়ন টন পণ্য ও ১ লক্ষের বেশি কন্টেইনার পরিবহন করেছে।

বছর কার্গো কন্টেইনার (টিইউএস)
২০১৫-২০১৬৫০.১৯ মিলিয়ন টন৬,৬২,৮৯১
২০১৪-২০১৫৪৬ মিলিয়ন টন৬,৩০,০০০
২০১৩-২০১৪৪১ মিলিয়ন টন৬ ,০০,০০০
২০১২-২০১৩৩৯ মিলিয়ন টন
২০১৮-২০১৯৬৩.৭ মিলিয়ন টন৮,৩০,০০০

নতুন বন্দর ও জেটি

বর্তমান কলকাতা বন্দর বা কলকাতা- হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্দরের পণ্য আমদানি রপ্তানি কমেছে।এই কারনে পশ্চিমবঙ্গে সাগরদ্বীপে ১০.৫ মিটার গভীরতার সাগর বন্দর গড়া হচ্ছে যেখানে কলকাতা বন্দর এর গভীরতা ৬ মিটার (২০ ফু) ও হলদিয়া বন্দরের গভীরতা ৮ মিটার (২৬ ফু) ।প্রস্তাবিত সাগর বন্দর প্রকল্পটিকে আর্থিকদিক থেকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে ৫১৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বন্দরটির উন্নয়নে গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় জাহাজ চলাচল মন্ত্রক যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে সরকারের এই অনুমোদন তারই একটি অঙ্গ। এই প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজে যুক্ত করা হয়েছে ভোর সাগর পোর্ট লিমিটেড অর্থাৎ বিএসপিএল’কে। সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়ণে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশীদারত্বের মাত্রা হবে যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ।

বন্দরের নতুন করে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই পিপিপি মডেলে চারটি বার্জ জেটি তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বার্জ জেটিগুলি বেশ বড় মাপের তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর। এই জেটিগুলির মাধ্যমে বাল্ক জাতীয় এবং লিকুইড জাতীয় কার্গো পরিবহন করা যাবে।হলদিয়া বন্দরের পাশেই হলদি নদী ও হুগলী নদীর পাড় বরাবর নতুন চারটি বার্জ জেটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। এগুলিকেই বলা হচ্ছে আউটার টার্মিনাল। ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় আউটার টার্মিনাল তৈরি হতে চলেছে। এই টার্মিনালটি তৈরি হবে হলদিয়া ভবনের ঠিক বিপরীতে। পাশাপাশি শালুকখালিতে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লিকুইড কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের বার্জ তৈরি হচ্ছে। ৪১৩ কোটি টাকার আউটার টার্মিনালের কাজ পেতে টেন্ডারে যোগ দিয়েছে দু’টি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বার্জ জেটি আর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংক্রিয় ফ্লোটিং ক্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর দক্ষিণ ভারতের বোথরা শিপিং এজেন্সি বরাত পেয়েছে।

ট্রান্সলোডিং

যে সব বড় জাহাজ নাব্যতার অভাবে কলকাতা বা হলদিয়া বন্দর অবধি পৌঁছতে পারবে না, তাদের জন্য গভীর সমুদ্রেই পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করে দেয় ট্রান্সলোডিং অপারেশন। পিপিপি মডেল অনুসরণ করে এই কাজে কেওপিটি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জিন্দল আইটিএফ। ২৫০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে তারা। জিন্দল আইটিএফ-এরই এমভি যুগলরাজ এবং এমভি ভিগনরাজ নামে দু’টি ট্রান্সলোডার এখন কাজ সামলাচ্ছে। এরা একসঙ্গে অনেকগুলো ক্রেনের সাহায্যে বড় জাহাজ থেকে নির্বিঘ্নে পণ্য খালাস করতে পারে এবং সেই পণ্য ওই সব ক্রেনের সাহায্যেই ছোট জাহাজে তুলেও দিতে পারে। ২০১৩ থেকে এখনও অবধি ১৭টি বড় জাহাজে ট্রান্সলোডিং চালানো হয়েছে। পণ্য নেমেছে ১২ লক্ষ ১৭ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ট্রান্সলোডিং-এর কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে তিনটি এলাকায়— স্যান্ডহেডস, কণিকা স্যান্ড [10] এবং সাগরে— ট্রান্সলোডিং চলছে। ফলে ২০১৪-১৫তেই কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে পণ্য আমদানির পরিমাণ ১২ শতাংশ বাড়েছে। সে বার ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ২৯ হাজার টন পণ্য খালাস করেছিল কেওপিটি। ২০২০-র মধ্যে বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫ শতাংশ ছোঁবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।মনে করা হচ্ছে ২০১৯-২০২০ সালে শুধুমাত্র ট্রান্স লোডিং এর মাধ্যমে কলকাতা বন্দর ২.৫ কোটি বা ২৫ মিলিয়ন টন পণ্য খালাস করবে।[11]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Kolkata: KoPT creates record, registers 11.6% growth in carg .."। timesofindia.indiatimes.com। 03 April 2019। সংগ্রহের তারিখ 04 April 2019 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Kolkata Port Trust - Cargo Statistics"। Kolkata Port Trust। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৭
  3. http://www.kolkataporttrust.gov.in/index1.php?layout=2&lang=1&level=1&sublinkid=83&lid=124
  4. "KoPT gets highest ever cargo growth this year http://www.millenniumpost.in/kolkata/kopt-gets-highest-ever-cargo-growth-this-year-347511"http://www.millenniumpost.in। ৩ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৯ |title=, |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  5. file:///C:/Data/Users/DefApps/APPDATA/LOCAL/Packages/UCMobileLimited.UC_6n7f2ndsr2206/LocalState/Download/80345301.pdf
  6. "Containers handled at major ports up 8% at 9.876 million TEUs in FY19"। Business Line। ৩ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৯
  7. https://web.archive.org/web/20130812155911/http://c/। ১২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে [file:///C:/Data/Users/DefApps/APPDATA/LOCAL/Packages/UCMobileLimited.UC_6n7f2ndsr2206/LocalState/Download/22520712.pdf মূল] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  8. "containervolume of Kolkata Port in 2015-2016"। ১৫ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  9. "India's major ports see 6.7 percent growth in container volumes"। JOC.co। ৭ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫
  10. "কণিকা স্যান্ডে-জিন্দাল- বন্দর চুক্তি"। সংগ্রহের তারিখ ২৪-০১-২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  11. "মাঝদরিয়ায় 'ডাউনলোড'ই এখন নতুন ভরসা বন্দরের"। আনন্দবাজার প্রত্রিকা। 14 ডিসেম্বের 2017। সংগ্রহের তারিখ 26 October 2017 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • কলকাতা: এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস, অতুল সুর, জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৮১
  • কলকাতা: একাল ও সেকাল, রথীন মিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯১
  • ইতিহাসে খিদিরপুর, সমর দত্ত, দে বুক স্টোর, কলকাতা, ২০০৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.