আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যান

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন (পূর্বনাম ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন)[1][2] কলকাতার অদূরে হাওড়ার শিবপুরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান। ২৭৩ একর আয়তনবিশিষ্ট এই উদ্যানে বর্তমানে মোট ১৪০০ প্রজাতির প্রায় ১৭,০০০টি গাছ রয়েছে।[3] এই উদ্যান শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও পরিচিত।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
অবস্থানশিবপুর, হাওড়া,  ভারত
নিকটবর্তী শহরকলকাতা, হাওড়া
আয়তন১০৯ হেক্টর (২৭০ একর)
নির্মিত নভেম্বর ১৭৮৭ (1787-11-02)
নকশাকারীকর্নেল রবার্ট কিড, উইলিয়াম রক্সবার্গ
পরিচালিতবোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া
ওয়েবসাইটhttp://bsi.gov.in
মহাবটবৃক্ষ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুর
উদ্যানের পুকুরে পদ্ম পাতা

১৭৮৭ সালে কর্নেল রবার্ট কিড নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সেনা আধিকারিক এই উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্যান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশ থেকে গাছপালা সংগ্রহ করে এনে সেগুলির পরীক্ষানিরীক্ষা।[4] এই উদ্দেশ্যে কলকাতার অদূরে হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে কিছু জলাজমি ক্রয় করে এই উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা এই উদ্যানটি গড়ে তুলেছিলেন বলে লোকমুখে এটি কোম্পানির বাগান নামে পরিচিত লাভ করে।[3] জোসেফ ডালটন হুকার এই উদ্যানটি সম্পর্কে লেখেন-

Amongst its greatest triumphs may be considered the introduction of the tea-plant from China ... the establishment of the tea-trade in the Himalaya and Assam is almost entirely the work of the superintendents of the gardens of Calcutta and Seharunpore (Saharanpur).[5]

রবার্ট কিড ১৭৮৭ সাল থেকে ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাম্মানিক সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলেন। ১৭৯৩ সালে উদ্ভিদবিদ উইলিয়াম রক্সবার্গ উদ্যানের সুপারিনটেনডেন্ট হলে, উদ্যানের নীতিপ্রণয়নে একটি বড়োসড়ো পরিবর্তন আনা হয়। রক্সবার্গ সমগ্র ভারতবর্ষ থেকে নানা প্রজাতির গাছ কিনে এনে এই উদ্যানে একটি বড়ো হার্বেরিয়াম গড়ে তোলেন।[6] হুকার উদ্যানের প্রথম কুড়ি বছরের ইতিহাস, বিশেষত যে সময় নাথানিয়েল ওয়ালিচ এর সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলেন, সেই সময়টি সম্পর্কে লিখেছেন,

... contributed more useful and ornamental tropical plants to the public and private gardens of the world than any other establishment before or since. ... I here allude to the great Indian herbarium, chiefly formed by the staff of the Botanic Gardens under the direction of Dr. Wallich, and distributed in 1829 to the principal museums of Europe.[7]

২,৫০০,০০০ শুষ্ক গাছের এই সংগ্রহ বর্তমানে বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে সেন্ট্রাল ন্যাশানাল হার্বেরিয়াম নামে পরিচিত।

মূল উদ্যানটির আয়তন ছিল ৩০০ একর। প্রতিষ্ঠার অল্পকাল পরে ২৭ একর জমি একটি খ্রিষ্টান কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দান করা হয়। এই কলেজটিই বর্তমানে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত।[3] ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া এই উদ্যানটি সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন বলে জানা যায়। সেই সময় এই উদ্যানের নাম ছিল রয়্যাল ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন। স্বাধীনতার পর ১৯৬৩ সালে এই উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন। ২০০৯ সালের ২৫ জুন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তার নামানুসারে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন

বোটানিক্যাল গার্ডেনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য বস্তু হল মহাবটবৃক্ষ নামে একটি ২৫০ বছরের প্রাচীন বটগাছ। গাছটির পরিধি ৩৩০ মিটার। বর্তমানে এই সুবিশাল বটগাছটি দেড় একর জমির উপর শত শত ঝুরি নিয়ে বিরাজমান।[3] এই বটগাছটি ছাড়াও বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে মেহগনি, সাল, সেগুন, বট, অশ্বত্থ, শিমূল, পিয়াল ও নানা প্রজাতির পাম গাছ। রয়েছে দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, তেজপাতা, রবার ও নানা প্রকার ঔষধি বৃক্ষও। উদ্যানের মধ্যে যাতায়াতের জন্য রয়েছে ১৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তাও।[3]

স্বাধীনতার পর বোটানিক্যাল গার্ডেন ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের অধীনে বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫ সদস্যের একটি পরিচালক পর্ষদ নিয়মিত উদ্যানের কাজকর্ম দেখাশোনা করছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক প্রতিনিধিও নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক সভায় যোগ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে উদ্ভিদ গবেষক সহ প্রায় ৪০০ কর্মী চাকরিসূত্রে এই উদ্যানের সঙ্গে যুক্ত।[3]

তথ্যসূত্র

  1. http://news.webindia123.com/news/Articles/India/20090624/1282180.html
  2. http://www.thestatesman.net/page.news.php?clid=22&theme=&usrsess=1&id=258973%5B%5D
  3. ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলার ঐতিহ্য কলকাতার অহংকার, পল্লব মিত্র, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ৭৪-৭৭
  4. "Oxford dictionary of national biography"। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  5. Joseph Dalton Hooker, Himalayan Journals, or Notes of a Naturalist ..., Kew (1854), vol. I, p. 5.
  6. Roxburgh, W (1814) Hortus Bengalensis or a catalogue of the plants growing in the Honourable East India Company's botanic garden at Calcutta. Mission Press : Serampore. 105pp.
  7. Joseph Dalton Hooker, Himalayan Journals, or Notes of a Naturalist ..., Kew (1854), vol. I, p. 4.

বহিঃসংযোগ

[1]

  1. (s-o-u-@-V)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.