বরানগর মঠ
বরানগর মঠ বা রামকৃষ্ণ মঠ, বরানগর হল রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনস্থ প্রথম মঠ। এটি ১৮৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থাপিত হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসের মৃত্যুর পর তার গৃহস্থ শিষ্যেরা অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিলে স্বামী বিবেকানন্দ (সেই সময় নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে পরিচিত) ও রামকৃষ্ণের অন্যান্য শিষ্যেরা বরানগরে একটি ভাঙা বাড়িতে মঠ স্থাপন করেন।[1][2] ১৮৯৭ সালে বাড়িটি ভেঙে পড়েছিল। ১৯৭৩ সালে বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতির পক্ষ থেকে জায়গাটি সংরক্ষণ করার চেষ্টা শুরু হয়। ২০০১ সালে মঠের জমি বেলুড় মঠের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপরই এখানে মিশনের শাখাকেন্দ্র স্থাপিত হয়। সমগ্র এলাকার পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজ এখনও চলছে।[3]
বরানগর মঠ | |
---|---|
![]() ![]() | |
বিকল্প নাম | রামকৃষ্ণ মঠ, বরানগর |
সাধারণ তথ্য | |
ধরন | ঐতিহ্যবাহী স্থান, সংগ্রহালয়, রামকৃষ্ণ মিশনের শাখাকেন্দ্র |
ঠিকানা | ৪৪বি, প্রামাণিক ঘাট রোড, বরানগর, কলকাতা ৭০০০৩৬ |
দেশ | India |
নির্মাণ শুরু হয়েছে | ১৮৮৬ |
সংস্কারণ করা হয়েছে | 1973 |
স্বত্বাধিকারী | রামকৃষ্ণ মঠ |
ওয়েবসাইট | |
www |
ইতিহাস
সেপ্টেম্বর, ১৮৮৬

১৮৮৬ সালের ১৬ গস্ট রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রয়াত হন। এরপর তার গৃহস্থ ভক্তেরা তার শিষ্যদের কাজকর্মের জন্য অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেন। তার অনেক শিষ্যই ঘরে ফিরে গিয়ে গৃহস্থ জীবনযাপন করার পক্ষপাতী হন। নরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে একদল তরুণ সন্ন্যাসী শিষ্য তখন মঠ স্থাপনের উপযোগিতার কথা অনুভব করেন। তারা বরানগরের একটি ভাঙা বাড়িতে মঠ স্থাপন করেন।[1][2] এই বাড়িটি ছিল অধুনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার টাকি অঞ্চলের জমিদারদের।[3]
বরানগর মঠে সন্ন্যাসীদের জীবনযাপন

দাঁড়িয়ে: (বাম–ডান) স্বামী শিবানন্দ, স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ, রাঁধুনি, দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার, মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (শ্রীম), স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ, এইচ. মুস্তাফি
বসে: (বাম–ডান) স্বামী নিরঞ্জনানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, হুটকো গোপাল, স্বামী অভেদানন্দ।
রামকৃষ্ণের ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ মিত্র এই বাড়ির ভাড়ার খরচ বহন করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।[4] নরেন্দ্রনাথ ও তার গুরুভাইয়েরা[lower-alpha 1] "মাধুকরী" (সন্ন্যাসীদের ভিক্ষাবৃত্তি) করে দিনযাপন করতেন। বরানগর মঠ ছিল রামকৃষ্ণ মঠের প্রথম ভবন।[5] বিবেকানন্দ পরবর্তীকালে মঠের জীবনযাত্রা সম্পর্কে লেখেন:[6]
“ | We underwent a lot of religious practice at the Baranagar Math. We used to get up at 3:00 am and become absorbed in japa and meditation. What a strong spirit of detachment we had in those days! We had no thought even as to whether the world existed or not. | ” |
আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাসগ্রহণ
১৮৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে নরেন্দ্রনাথ ও রামকৃষ্ণের আটজন শিষ্য আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসদীক্ষা নেন।[7]
ধ্বংস
বাড়িটি পোড়ো বাড়ি ছিল। ১৮৯৭ সালে ভেঙে পড়ে। সেই সময় কেউ আর সেটি সারায়নি।[3] ওই সময় বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য ভ্রমণ সেরে ফিরে আসেন।[8]
বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি
১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী রামানন্দের তত্ত্বাবধানে বরানগরের স্থানীয় বাসিন্দারা "বরানগর মঠ সংরক্ষণ সমিতি" নামে একটি সোসাইটি স্থাপন করেন। বরানগর মঠের জমি সংরক্ষণ ও পুনর্গঠন করাই ছিল সমিতির উদ্দেশ্য। সেই সময় মূল মঠ এলাকার আশেপাশে অনেক বাড়ি, দোকান ও বস্তি গড়ে উঠেছিল। মঠে আদি জমির ওপর গড়ে ওঠা একটি বাগানের খানিকটা সমিতির দখলে আসে। এর পর সেখানে স্থানীয় গরিব বস্তিবাসীদের জন্য দাতব্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র ও স্বামী বিবেকানন্দ দাতব্য কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সামাজিক পরিষেবামূলক কাজের পরিধি বৃদ্ধি পায়। গদাধর শিশু বিকাশ কেন্দ্র নামে একটি স্কুলও খোলা হয়। পরে একটি সাধারণ গ্রন্থাগার খুলে নিয়মিত ধর্মীয় বক্তৃতার আয়োজন করা হতে থাকে।[3]
হস্তান্তর
২০০১ সালের অক্টোবর মাসে সমিতির পক্ষ থেকে মঠের জমি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ[lower-alpha 2] স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশন কেন্দ্রকে সম্পত্তির দখল নিতে বলে। এরপরই মঠ ও মিশনের গভর্নিং বডি ও ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এই মঠটি আবার গড়ে তোলা হবে। ২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে এটি বেলুড়ের শাখাকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। স্বামী বামনানন্দকে এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মঠ চত্বরের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের কাজ এখনও চলছে।[3]
সূত্র
টীকা
- Disciples of the same teacher/master are each other's Guru bhai
- Headquarter of Ramakrishna Math and Mission.
পাদটীকা
- Sinha 2012, পৃ. 514
- Sil 1991, পৃ. 168
- "Brief history of Baranagar Math"। Tamakrishna Mission, Baranagar। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩।
- Nikhilananda 1953, পৃ. 39–47
- Prabhananda 2003, পৃ. 232
- Chetananda 1997, পৃ. 38
- Copley 2006, পৃ. 193
- Bharathi 1998, পৃ. 24
তথ্যসূত্র
- Sinha, Debotosh (২০১২)। Social Welfare and Social Work। Concept Publishing Company। আইএসবিএন 978-81-8069-814-9।
- Sil, Narasingha Prosad (১৯৯১)। Rāmakṛṣṇa Paramahaṁsa: A Psychological Profile। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-09478-9।
- Prabhananda, Swami (২০০৩)। Profiles of famous educators: Swami Vivekananda (PDF)। Prospects। XXXIII। Netherlands: Springer.
- Chetananda, Swami (১৯৯৭)। God lived with them: life stories of sixteen monastic disciples of Sri Ramakrishna। St. Louis, Missouri: Vedanta Society of St. Louis। আইএসবিএন 0-916356-80-9।
- Nikhilananda, Swami (১৯৫৩)। Vivekânanda: a biography (PDF)। Ramakrishna-Vivekananda Center। আইএসবিএন 978-0-911206-25-8।
- Bharathi, K. S. (১৯৯৮)। Encyclopaedia of Eminent Thinkers: The political thought of Vivekananda। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 24–। আইএসবিএন 978-81-7022-709-0।
- Copley, Antony R. H. (২০০৬)। A Spiritual Bloomsbury: Hinduism and Homosexuality in the Lives and Writings of Edward Carpenter, E.M. Forster, and Christopher Isherwood। Lexington Books। আইএসবিএন 978-0-7391-1465-0।