রামকৃষ্ণ মিশন

রামকৃষ্ণ মিশন হল একটি ভারতীয় ধর্মীয় সংগঠন। এই সংগঠন রামকৃষ্ণ আন্দোলন বা বেদান্ত আন্দোলন নামক বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা।[1] এটি একটি জনকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ১৮৯৭ সালের ১ মে রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণকার্য, গ্রামোন্নয়ন, আদিবাসী কল্যাণ, বুনিয়াদি ও উচ্চশিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকরেছে। এটি শতাধিক সংঘবদ্ধ সন্ন্যাসী ও সহস্রাধিক গৃহস্থ শিষ্যের একটি যৌথ উদ্যোগ। রামকৃষ্ণ মিশন কর্মযোগের ভিত্তিতে কাজকর্ম চালায়।[2]

রামকৃষ্ণ মিশন
প্রতীকচিহ্ন
সংক্ষেপেআর.কে.এম.
নীতিবাক্যআত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ — "আত্মার মোক্ষ ও জগতের কল্যাণের নিমিত্ত"
গঠিত মে ১৮৯৭ (1897-05-01) কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
প্রতিষ্ঠাতাস্বামী বিবেকানন্দ
ধরণধর্মীয় সংগঠন
আইনি অবস্থাপ্রতিষ্ঠান
উদ্দেশ্যশিক্ষাবিস্তার, মানবসেবা, ধর্মীয় গবেষণা, আধ্যাত্মিকতা ইত‍্যাদি
সদরদপ্তরবেলুড় মঠ, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
অবস্থান
  • প্রায় ২০০ শাখাকেন্দ্র
স্থানাঙ্ক২২.৩৭° উত্তর ৮৮.২১° পূর্ব / 22.37; 88.21
এলাকাগত সেবা
বিশ্বব্যাপী
সংঘাধ্যক্ষ
স্বামী স্মরণান্দজী
অনুমোদননব্য বেদান্ত
ওয়েবসাইটbelurmath.org

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়া জেলায় অবস্থিত বেলুর মঠে অবস্থিত। এই সংগঠন প্রাচীন হিন্দু দর্শন বেদান্তের অনুগামী। এটি সন্ন্যাসী সংগঠন রামকৃষ্ণ মঠ কর্তৃক অনুমোদিত। রামকৃষ্ণ মঠের সদস্যরা রামকৃষ্ণ মিশনেরও সদস্য।[1]

বিবরণ

রামকৃষ্ণ মন্দির, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ, চেন্নাই

১৯শ শতাব্দীর সন্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস কর্তৃক অনুপ্রাণিত এবং তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় ও সামাজিক রামকৃষ্ণ আন্দোলনের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য দুটি প্রধান সংগঠন হল রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন।[3] এই দুটিকে রামকৃষ্ণ সংঘও বলা হয়ে থাকে। রামকৃষ্ণ মঠ হল একটি সন্ন্যাসী সংঘ। ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ প্রধানত আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ ও সংঘের শিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করে।[3]

১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[4] এটি একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন। এটির কাজ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বণ্টন ও শিক্ষাবিস্তার। দুটি সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ই বেলুড় মঠ। ১৯০৯ সালে রামকৃষ্ণ মিশন ১৮৬০ সালের একুশ সংখ্যক আইন অনুসারে বৈধ স্বীকৃতি লাভ করে। একটি পরিচালন পরিষদ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালনা করে। রামকৃষ্ণ মিশন ও তার শাখাকেন্দ্রগুলির পৃথক আইনি সত্ত্বা থাকলেও এগুলি রামকৃষ্ণ মঠের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মঠের নির্বাচিত অছি পরিষদ মিশনের পরিচালন পরিষদ হিসেবে কাজ করে।[3] বেদান্ত সোসাইটিগুলি সংঘের আমেরিকান শাখার অঙ্গ। এগুলি সামাজিক কল্যাণের পরিবর্তে কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই কাজ করে।[3]

ইতিহাস

বিশ্বধর্ম মহাসভায় স্বামী বিবেকানন্দ

রামকৃষ্ণ মিশন : ১৮৬৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মিশন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মানবসেবার মাহাত্ন্য ঘোষণা, শিক্ষার্থীর জন্য অন্ন-বস্ন্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা ও হিন্দুধর্ম প্রচার করা ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের মূল কাজ।[5]


রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শাখাকেন্দ্র

আগরতলা

রামকৃষ্ণ মিশন, আগরতলা

২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শাখাকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন মিশনের সহ-সংঘাধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। এটি স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে পালিত হয়। আগরতলা শাখার অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দের প্রচেষ্টায় আগরতলায় মিশনের শাখাকেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ

নিচে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষগণের তালিকা দেওয়া হল:

  1. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৯৭–১৯০১) (সাধারণ অধ্যক্ষ)

১৯০১ সালের পর ‘সাধারণ অধ্যক্ষ’ শব্দবন্ধটি পরিত্যক্ত হয় এবং ‘অধ্যক্ষ’ শব্দটি গৃহীত হয়।

  1. স্বামী ব্রহ্মানন্দ (১৯০১-১৯২২)
  2. স্বামী শিবানন্দ (১৯২২-১৯৩৪)
  3. স্বামী অখণ্ডানন্দ (১৯৩৪-১৯৩৭)
  4. স্বামী বিজ্ঞানানন্দ (১৯৩৭-১৯৩৮)
  5. স্বামী শুদ্ধানন্দ (১৯৩৮-১৯৩৮)
  6. স্বামী বিরজানন্দ (১৯৩৮-১৯৫১)
  7. স্বামী শঙ্করানন্দ (১৯৫১-১৯৬২)
  8. স্বামী বিশুদ্ধানন্দ (১৯৬২-১৯৬২)
  9. স্বামী মাধবানন্দ (১৯৬২-১৯৬৫)
  10. স্বামী বীরেশ্বরানন্দ (১৯৬৬-১৯৮৫)
  11. স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৯৮৫-১৯৮৮)
  12. স্বামী ভূতেশানন্দ (১৯৮৯-১৯৯৮)
  13. স্বামী রঙ্গনাথানন্দ (১৯৯৮-২০০৫)
  14. স্বামী গহনানন্দ (২০০৫-২০০৭)
  15. স্বামী আত্মস্থানন্দ (২০০৭–২০১৭)
  16. স্বামী স্মরণানন্দ (২০১৭–)

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Belur Math (official site)
  2. Agarwal, Satya P. (১৯৯৮)। The social role of the Gītā : how and why। New Delhi: Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 243। আইএসবিএন 978-81-208-1524-7। ওসিএলসি 68037824
  3. Carl T. Jackson। "Preface"। Vedanta for West। পৃষ্ঠা xii–xiii।
  4. Jeffery D. Long, Historical Dictionary of Hinduism, p.247
  5. বাংলাদেশ বিষয়বলী, বাংলাদেশ বিষয়বলী (দিকদর্শন)। বাংলাদেশের জনগন : উৎপত্তি এবং নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। জানুয়ারি ২০১৮: বাংলাদেশ বিষয়বলী। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:New Religious Movements

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.