ডেভিড হেয়ার

ডেভিড হেয়ার (১৭৭৫ - ১ লা জুন, ১৮৪২) একজন লোকহিতৈষী স্কটিশ ঘড়ি-নির্মাতা ও ভারতপ্রেমীক শিক্ষাব্রতী ছিলেন।

ডেভিড হেয়ার
জন্ম১৭৭৫
মৃত্যু১ লা জুন, ১৮৪২
আন্দোলনলোকহিতৈষী

প্রারম্ভিক জীবন

১৭৭৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড হেয়ার। ১৮০০ সালে ভারতবর্ষ আসেন ঘড়ি নির্মাতার কাজ নিয়ে নিছকই ভাগ্যান্বেষণে।[1]

কৃতিত্ব

তিনি অনুভব করেন ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। এব্যাপারে সাধারণ ক্রেতাদের সাথেও আলাপ করতেন। রাজা রামমোহন রায়ের সাথে কলকাতায় তার সাক্ষাত হয় ১৮১৪ সালে। রামমোহন প্রতিষ্ঠিত আত্মীয় সভার সাথে যুক্ত হন এবং জনহিতকর কাজ, শিক্ষার উন্নতির জন্যে প্রচেষ্টা কর‍তে থাকেন। তার নিজের ঘড়ির ব্যবসার ক্ষতি করেও অর্থ, সময় এবং নিরলস শ্রম দান করতে থাকেন শিক্ষার উন্নতিকল্পে। 'আত্মীয় সভা'তে কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইস্টকে তার এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে হাইড ইস্ট ও কতিপয় ভদ্রলোকদের সক্রিয় সহযোগিতায় ১৮১৭ সালের ২০ জানুয়ারি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই বছরই তিনি ইংরেজি এবং বাংলা পুস্তক মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য ‘কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজসেবায় সার্বক্ষণিকভাবে আত্মনিয়োগের জন্য ডেভিড হেয়ার ১৮২০ সালে তার ব্যবসার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন তার সহকারী গ্রে'র ওপর। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা দুজন হেয়ার স্ট্রীটের একটি বাড়িতে একসঙ্গে অবস্থান করতেন। ইতিপূর্বে তিনি ব্যবসা করে কলকাতায় বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন। ওই সম্পত্তির কিছু অংশ তিনি হিন্দু কলেজকে দান করেন বাকিটা সংস্কৃত কলেজের নিকট নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর সঙ্গে ডেভিড হেয়ারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়। ইয়ং বেঙ্গলের একজন হিতৈষী হিসেবে হেয়ার তাদের সংগঠন ‘Society for the Promotion of General Knowledge (১৮৩৮)-এর পৃষ্ঠপোষক হন। নিষ্ঠুর শ্রম আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এ আইনের আওতায় সে সময়ে ভারতীয় শ্রমিকদের দাস হিসেবে ইউরোপের উপনিবেশগুলিতে পাঠানো হতো। উপনিবেশিক আমলের উৎপীড়নমূলক, অমানবিক আইনের সংস্কার সাধনের জন্য তিনি জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেন। দেশীয় সংবাদপত্রের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্যও সংগ্রাম করেন। নতুন স্কুল এবং অন্যান্য জ্ঞানচর্চামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দানের কারণে হেয়ার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে কলকাতার শেরিফ পদের জন্য মনোনীত করে এবং ১৮৪০ সালে মাসিক ১০০০ রূপি বেতনে উক্ত পদে নিয়োগ দিয়ে তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করেছিল।[1]

ডেভিড হেয়ারের সমাধি, কলেজ স্কোয়ার, কলকাতা

মৃত্যু

অমানুষিক শ্রম, ইত্যাদির কারনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হেয়ার। যদিও জনহিতকর কাজে তার বিরাম ছিলনা।কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৪২ সালের ১ জুন মারা যান নি:স্বার্থ, মানবতাবাদী এই ভারতপ্রেমিক। যদিও তার ভারতপ্রীতির কারনে খৃষ্টান কবরখানায় তাকে স্থান দেওয়া নিয়ে তীব্র সমস্যা হয়। রাধাকান্ত দেব বাহাদুর, বাবু প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখেরা তার শবানুগমন করেন।[2]

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ। "ডেভিড হেয়ার"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  2. গৌতম বসুমল্লিক (১৮ জুন ২০১৬)। "ডেভিড হেয়ার ও তার কবর"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.