ন্যায়
ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দু'রকমের প্রমা ও অপ্রমা। ভারতীয় দর্শনে বৈধ জ্ঞানকে প্রমা বলা হয় যা অনুভব ও স্মৃতি দ্বারা গঠিত হয় ।আর অপ্রমা ~ সমস্যা ,ভ্রম ও যুক্তি দ্বারা গঠিত হয় । ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞানের ধারণা নির্মাণ এর ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে ন্যায় তত্ত্বের কথা আলোচনা করব । ন্যায় তত্বের উদ্ভাবক ঋষি গৌতম ।বাস্তব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক চিন্তা এই দুটি এই তত্ত্বের ভিত্তি। বাস্তবতার নিরিখে ক্ষেত্রে বহুবস্তু বাদী বাস্তবতাকে স্বীকার করে ।বাস্তবতার আধার হিসেবে যে বস্তুগুলোকে এখানে ধরা হয়েছে তা হলো পৃথিবী, অপ, তেজ, বায়ু ,আকাশ, কাল, দিক ,আত্মা, মন। এই তত্ত্ব মতে জ্ঞানের উৎস গুলি হল উপলব্ধি ,অনুমান ,তুলনা ও পরীক্ষণ ।আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি দ্বারা তাৎক্ষণিক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে উপলব্ধি বলে ।উপলব্ধি দুই প্রকার একটি লৌকিক অপরটি অলৌকিক ।বাক্য ও মানস বা মন দ্বারা যে উপলব্ধি অর্জিত হয় তাকে লৌকিক উপলব্ধি বলে ।নির্বিকল্প ,সবিকল্প এবং প্রত্যয় অভিজ্ঞতা দ্বারা লৌকিক উপলব্ধি অর্জিত হয়। প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া নির্বিকল্প এবং প্রত্যক্ষ সংযোগ দ্বারা সবিকল্প অর্জিত হয় ।কোন বিষয়ের ভাষাগত অর্থ উদ্ধারকে প্রত্যয়াভিজ্ঞা বলে ।আর সাধারণভাবে অপ্রচলিত মাধ্যম দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে অলৌকিক উপলব্ধি বলে। সামান্য লক্ষণ ,জন লক্ষণ ও যোগজা দ্বারা এটি অর্জিত হয় ।জ্ঞান অর্জনের পর যে বিশেষ বোধ অর্জিত হয় তাকে অনুমান বলে। কারণ অনু শব্দের অর্থ হচ্ছে আগে এবং মান শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। গৌতম এর মতে অনুমান তিন রকমের পুরাভাত, শেষাভাত, সময়তদ্রষ্টা । তুলনা বা সামান্যীকরণ পদ্ধতিতে পুরাভাত, বাতিলকরণ প্রক্রিয়ায় শেষাভাত, অন্তরের সমর্থনে সময়তদ্রষ্টা অর্জিত হয় ।এই দর্শন মতে নিজের উপলব্ধিকে স্বার্থ এবং অপরের উপলব্ধিকে পরার্থ বলা হয়। তুলনা পর্বের শেষে সাক্ষ্য বা শব্দ যেটা আসলে verbal knowledge তা অর্জিত হয়। এটি দু'রকমের দ্রষ্টা ও অদ্রষ্টা ।এই দর্শন মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো ~ অনুমান ,যুক্তি তর্ক প্রভৃতি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন, সৃজনশীল চিন্তন, সঠিক বোধের দ্বারা মূল্যবোধ অর্জন করা ,বাস্তব বস্তুর সঙ্গে জ্ঞানকে একত্রিত করা, যথার্থ জ্ঞান ও বাস্তবোচিত জ্ঞানকে একত্রিত করা। ন্যায় তত্ত্বমতে পাঠক্রম সব সময় জীবনের মূল্যবোধ এবং বাস্তব ধারণা নির্ভর হওয়া প্রয়োজন। বস্তু ও ইন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত উপলব্ধি দ্বারাই পৃথিবীকে জানা সম্ভব। এই দর্শন মতে শিক্ষক যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করবেন তা মূলত বক্তৃতা পদ্ধতি ,আলোচনামূলক পদ্ধতি এবং সংশ্লেষ ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত।