জগদীশ চন্দ্র বসু

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু [2] CSI CIE FRS[3][4][5] (/bs/;[6], ইংরেজি: /dʒɔɡodiʃ tʃɔndro bosu/; ৩০ নভেম্বর, ১৮৫৮২৩নভেম্বর, ১৯৩৭) একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম দিকের একজন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা।[7] তার গবেষণার ফলে উদ্ভিদবিজ্ঞান শাখা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা হয় তার হাত ধরে।[8] ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে।[9]

জগদীশ চন্দ্র বসু

Kt, CSI, CIE, FRS
উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্র বিষয়ে বক্তৃতারত বসু (প্যারিস, ১৯২৬)
জন্ম(১৮৫৮-১১-৩০)৩০ নভেম্বর ১৮৫৮
বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশে)
মৃত্যু২৩ নভেম্বর ১৯৩৭(1937-11-23) (বয়স ৭৮)
গিরিডি, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
বাসস্থানকলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয়
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান, জৈবপদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, বাংলা সাহিত্য, বাংলা কল্পবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাক্তন ছাত্রহেয়ার স্কুল
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ,
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্রাইস্ট কলেজ, কেমব্রিজ,
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়[1]
শিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাবৃন্দজন উইলিয়াম স্ট্রাট
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দসত্যেন্দ্রনাথ বসু
মেঘনাদ সাহা
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ
শিশির কুমার মিত্র
দেবেন্দ্র মোহন বসু
পরিচিতির কারণমিলিমিটার তরঙ্গ
বেতার
ক্রেসকোগ্রাফ
উদ্ভিদবিজ্ঞান
উল্লেখযোগ্য
পুরস্কার
সিআইই (১৯০৩)
সিএসএই (১৯১১)
নাইট ব্যাচেলর (১৯১৭)
স্ত্রী/স্বামীঅবলা বসু
স্বাক্ষর

জীবনী

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, রয়্যাল ইন্সটিটিউট, লন্ডন, ১৮৯৭ সন।

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অঞ্চলের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল। [10] তার পিতা ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।[11] এর পূর্বে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভগবান চন্দ্রই এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।[12]:৩-১০

ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও ভগবান চন্দ্র নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করাননি। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে তার নিজস্ব যুক্তি ছিল। তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার আগে এদেশীয় ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা আয়ত্ত করা উচিত। বাংলা স্কুলে পড়ার ব্যাপারটি জগদীশ চন্দ্রের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতেও সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ বাংলা ভাষায় রচিত জগদীশের বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলো। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তার পুত্র দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক।[13] জগদীশ চন্দ্রের পরবর্তী জীবনে তার প্রথম বাংলা স্কুলের অধ্যয় গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ফেলেছিল।[পাদটীকা 1]

জগদীশ কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে পড়াশোনা করে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।[11] এই কলেজে ইউজিন ল্যাফন্ট নামক একজন খ্রিষ্টান যাজক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ওপর তার আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[10][12]:৩-১০ এরপর তিনি আইসিএস পরীক্ষায় বসার জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ভগবান চন্দ্র এতে রাজী হননি কারণ তিনি চেয়েছিলেন তার পুত্র একজন বিদ্বান হোন।[14]

বাবার ইচ্ছা ও তার আগ্রহে তিনি ১৮৮০ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান, কিন্তু অসুস্থতার কারণে বেশিদিন এই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। তার ভগ্নীপতি আনন্দমোহন বসুর আনুকুল্যে জগদীশ চন্দ্র প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন[1]। কেম্ব্রিজে জন উইলিয়াম স্ট্রাট, ৩য় ব্যারন রেলি, মাইকেল ফস্টার, জেমস ডেওয়ার, ফ্রান্সিস ডারউইন, ফ্রান্সিস মেটল্যান্ড বালফুর, সিডনি ভাইনসের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানসাধকেরা তার শিক্ষক ছিলেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান

জগদীশ চন্দ্র বসু

১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জগদীশ চন্দ্র ভারতে ফিরে আসেন। তৎকালীন ভারতের গভর্নর-জেনারেল জর্জ রবিনসন, প্রথম মার্কুইস অব রিপন অনুরোধে স্যার অ্যালফ্রেড ক্রফট বসুকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক নিযুক্ত করেন। কলেজের অধ্যক্ষ চার্লস হেনরি টনি এই নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। শুধু যে তাকে গবেষণার জন্য কোন রকম সুবিধা দেওয়া হত না তাই নয়, তিনি ইউরোপীয় অধ্যাপকদের অর্ধেক বেতনেরও কম অর্থ লাভ করতেন।[12]:১১-১৩[15] এর প্রতিবাদে বসু বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন এবং তিন বছর অবৈতনিক ভাবেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান।[12]:১১-১৩[16] দীর্ঘকাল ধরে এই প্রতিবাদের ফলে তার বেতন ইউরোপীয়দের সমতুল্য করা হয়।[11] প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণার কোন রকম উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় ২৪-বর্গফুট (২.২ মি) একটি ছোট ঘরে তাকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে হত। পদে পদে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার বিজ্ঞান সাধনার প্রতি আগ্রহ ভগিনী নিবেদিতাকে বিস্মিত করেছিল।[পাদটীকা 2] কলেজে যোগ দেওয়ার এক দশকের মধ্যে তিনি বেতার গবেষণার একজন দিকপাল হিসেবে উঠে আসেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রী প্রদান করে। এই গবেষণাগুলো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বিচার করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৪ ঘণ্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পেতেন তখন তিনি এই গবেষণার কাজ করতেন। তার উপর প্রেসিডেন্সি কলেজে কোন উন্নতমানের গবেষণাগার ছিলনা, অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি। সফল বক্তৃতা শেষে ১৮৯৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সস্ত্রীক দেশে ফিরে এসেছিলেন।

বিবাহ

১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে অবলার বিয়ে হয়। অবলা ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা। বিয়ের আগে অবলা বসু কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাইলেও তাকে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি, কারণ সেখানে তখন মেয়েদের পড়ানো নিষেধ ছিল। ১৮৮২ সালে বঙ্গ সরকারের বৃত্তি নিয়ে অবলা মাদ্রাজে যান পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করলেও অসুস্থতার কারণে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন। তাদের বিয়ের সময় জগদীশচন্দ্র বসু আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে আবার তিনি তখন কলেজ থেকে বেতন নিতেন না। এছাড়া জগদীশের বাবার কিছু ঋণ ছিল যার কারণে তার পরিবারকে পথে বসতে হয়। এর মধ্য থেকে অবলা ও জগদীশ অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসেন এবং সব ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ হন। সব ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কিছুদিন মাত্র বসুর পিতা-মাতা জীবিত ছিলেন।

গবেষণা কর্ম

অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি ও প্রেরণ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বাঙালী বিজ্ঞানীদের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু

জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞনী হের্‌ৎস প্রতক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।

উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের সাদৃশ্য

বক্তৃতাসমূহ

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে বক্তৃতা, লিভারপুল

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে তার বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন ইলেকট্রিক ওয়েভ্‌স"। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে করা পরীক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি বক্তৃতা করেন যা ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত করে। অশীতিপর বৃদ্ধ বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বক্তৃতা শোনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে এসে জগদীশের স্ত্রী অবলা বসুকে তার স্বামীর সফলতার জন্য অভিবাদন জানান। জগদীশ এবং অবলা দু’জনকেই তিনি তার বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এই বিষয়ের উপর বিখ্যাত সাময়িকী "টাইম্‌স"-এ একটি রিপোর্ট ছাপা হয় যাতে বলা হয়, "এ বছর ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বিদ্যুৎ-তরঙ্গ সম্পর্কে অধ্যাপক বসুর বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, কেমব্রিজের এম.এ. এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ সাইন্স এই বিজ্ঞানী বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন সম্পর্কে যে মৌলিক গবেষণা করেছেন, তার প্রতি ইউরোপীয় বিজ্ঞানী মহলে আগ্রহ জন্মেছে। রয়্যাল সোসাইটি বিদ্যুৎরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয়ের গবেষণাপত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।" এই বক্তৃতা বিষয়ে পারসন্‌স ম্যাগাজিন লিখেছিল:

রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা

লিভারপুলে বক্তৃতার পর তার আরও সাফল্য আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা দেয়ার নিমন্ত্রণ। এই বক্তৃতাটি আনুষ্ঠানিকভাবে "ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স" নামে সুপরিচিত ছিল। এই ডিসকোর্সগুলোতে আমন্ত্রিত হতেন একেবারে প্রথম সারির কোন আবিষ্কারক। সে হিসেবে এটি জগদীশচন্দ্রের জন্য একটি দুর্লভ সম্মাননা ছিল। ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখে প্রদত্ত তার এই বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন দ্য পোলারাইজেশন অফ ইলেকট্রিক রেইস" তথা বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন। এই বক্তৃতার সফলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। বায়ুতে উপস্থিত বেশ কিছু বিরল গ্যাসের আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড র‌্যালে তার বক্তৃতা শুনে এবং পরীক্ষাগুলো দেখে এতোটাই বিস্মিত হয়েছিলেন তার কাছে সবকিছু অলৌকিক মনে হয়েছিল। তিনি এ সম্পর্কে বলেছিলেন, "এমন নির্ভুল পরীক্ষা এর আগে কখনও দেখিনি- এ যেন মায়াজাল"। এই বক্তৃতার সূত্র ধরেই বিজ্ঞানী জেমস ডিউয়ার-এর সাথে জগদীশচন্দ্রের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। ডিউয়ার গ্যাসের তরলীকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। এই বক্তৃতা সম্বন্ধে "স্পেক্টেটর" পত্রিকায় লিখা হয়েছিল, "একজন খাঁটি বাঙালি লন্ডনে সমাগত, চমৎকৃত ইউরোপীয় বিজ্ঞানীমণ্ডলীর সামনে দাঁড়িয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত দুরূহ বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন- এ দৃশ্য অভিনব।"

এই বক্তৃতার পর ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ আসে এবং তিনি সেখানে কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সবখানেই বিশেষ প্রশংসিত হন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক কর্ন তার বন্ধু হয়ে যায় এবং তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত বিজ্ঞান সমিতি Société de Physique-এর সদস্য মনোনীত হন।

সুখ্যাতি

বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্রের সফলতার কথা কর্মজীবন অংশেই উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান গবেষণায়ও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন যার জন্য তার সুখ্যাতি তখনই ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছেন:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋষিতুল্য বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে বলেছেন:

ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড তাদের ৫০ পাউন্ডের নোটে নতুন কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির মুখ যুক্ত করার জন্য নমিনেশন দিয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটের হিসাবে গত ২৬ নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ১,৭৫,০০০ নমিনেশন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে তারা ১,১৪,০০০ নমিনেশন প্রকাশ করে যেখানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে সেরা তালিকায় রাখা হয়েছে। মুলত তারবিহীন প্রযুক্তিতে তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটার কল্যাণেই আজকে আমরা ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ খুব সহজে ব্যবহার করতে পারছি। যদিও আমরা আধুনিক রেডিও-র জনক হিসেবে জি.মার্কনিকে বিবেচনা করে থাকি ১৯০১ সালে তার আবিষ্কারের জন্য, কিন্তু তার কয়েক বছর আগেই স্যার জগদীশচন্দ্র বসু তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তাই, যদি নির্বাচিত হয় তাহলে ২০২০ সালে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ৫০ পাউন্ডের নোটে দেখা যাবে এ মহান বিজ্ঞানীর নাম। [17]

সম্মাননা

  • নাইটহুড, ১৯১৬
  • রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২০
  • ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, ১৯২৮
  • ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৭
  • লিগ অফ ন্যাশন্‌স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য
  • ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষাঠাতা ফেলো। এর বর্তমান নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি।

মৃত্যু

১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন। ১৯৫৮ সালে জগদীশ চন্দ্রের শততম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার "JBNSTS" নামে একটি বৃত্তি প্রদান আরম্ভ করেন।

রচনাবলী

বাংলা ভাষায়

  • অব্যক্ত

ইংরেজি ভাষা

  • Responses in the Living and Non-living (১৯০২)
  • Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (১৯০৬)
  • Comparative Electrophysiology (১৯০৭)
  • Physiology of the Asent of Sap (১৯২৩)
  • Physiology of Photosynthesis (১৯২৪)
  • Nervous Mechanism of Plants (১৯২৫)
  • Collected Physical Papers (১৯২৭)
  • Motor Mechanism of Plants (১৯২৮)
  • Growth and Tropic Movement in Plants (১৯২৯)

পাদটীকা

  1. At that time, sending children to English schools was an aristocratic status symbol. In the vernacular school, to which I was sent, the son of the Muslim attendant of my father sat on my right side, and the son of a fisherman sat on my left. They were my playmates. I listened spellbound to their stories of birds, animals and aquatic creatures. Perhaps these stories created in my mind a keen interest in investigating the workings of Nature. When I returned home from school accompanied by my school fellows, my mother welcomed and fed all of us without discrimination. Although she an orthodox old fashioned lady, she never considered herself guilty of impiety by treating these ‘untouchables’ as her own children. It was because of my childhood friendship with them that I could never feel that there were ‘creatures’ who might be labelled ‘low-caste’, I never realised that there existed a ‘problem’ common to the two communities, Hindus and Muslims.[12]:৩-১০
  2. "I was horrified to find the way in which a great worker could be subjected to continuous annoyance and petty difficulties ... The college routine was made as arduous as possible for him, so that he could not have the time he needed for investigation." After his daily grind, he carried out his research far into the night, in a small room in his college.[12]:১১-১৩

তথ্যসূত্র

  1. "Bose, Jagadis Chandra (BS881JC)"A Cambridge Alumni Databaseকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
  2. Page 3597 of Issue 30022. The London Gazette. (17 April 1917). Retrieved 1 September 2010.
  3. Page 9359 of Issue 28559. The London Gazette. (8 December 1911). Retrieved 1 September 2010.
  4. Page 4 of Issue 27511. The London Gazette. (30 December 1902). Retrieved 1 September 2010.
  5. Saha, M. N. (১৯৪০)। "Sir Jagadis Chunder Bose. 1858–1937"। Obituary Notices of Fellows of the Royal Society3 (8): 2–12। doi:10.1098/rsbm.1940.0001
  6. "Bose". Random House Webster's Unabridged Dictionary.
  7. A versatile genius ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে, Frontline 21 (24), 2004.
  8. Chatterjee, Santimay and Chatterjee, Enakshi, Satyendranath Bose, 2002 reprint, p. 5, National Book Trust, আইএসবিএন ৮১-২৩৭-০৪৯২-৫
  9. Sen, A. K. (১৯৯৭)। "Sir J.C. Bose and radio science"। Microwave Symposium Digest2 (8–13): 557–560। doi:10.1109/MWSYM.1997.602854আইএসবিএন 0-7803-3814-6।
  10. Murshed, Md Mahbub। "Bose, (Sir) Jagadish Chandra"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৭
  11. Mahanti, Subodh। "Acharya Jagadis Chandra Bose"Biographies of Scientists। Vigyan Prasar, Department of Science and Technology, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৭
  12. Mukherji, Visvapriya, Jagadish Chandra Bose, second edition, 1994, Builders of Modern India series, Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India, আইএসবিএন ৮১-২৩০-০০৪৭-২.
  13. "Jagadish Chandra Bose"। FamousScientists.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৭
  14. "Pursuit and Promotion of Science : The Indian Experience" (PDF)। Indian National Science Academy। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-০১
  15. Gangopadhyay, Sunil, Protham Alo, 2002 edition, p. 377, Ananda Publishers Pvt. Ltd. আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৩৬২-৭
  16. "Jagadish Chandra Bose" (PDF)Pursuit and Promotion of Science: The Indian Experience (Chapter 2)। Indian National Science Academy। ২০০১। পৃষ্ঠা 22–25। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৭
  17. "Sir Jagadish Chandra Bose to Feature in 50-Pound Note"

আরো পড়ুন

  • Geddes, Patrick (১৯২০)। The Life and Work of Sir Jagadis C. Bose। London: Longmans। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
  • Pearson G.L., Brattain W.H. (১৯৫৫)। "History of Semiconductor Research"। Proc. IRE43 (12): 1794–1806। doi:10.1109/JRPROC.1955.278042
  • J.M. Payne & P.R. Jewell, "The Upgrade of the NRAO 8-beam Receiver," in Multi-feed Systems for Radio Telescopes, D.T. Emerson & J.M. Payne, Eds. San Francisco: ASP Conference Series, 1995, vol. 75, p. 144
  • Fleming, J. A. (1908). The principles of electric wave telegraphy. London: New York and.
  • Yogananda, Paramhansa (১৯৪৬)। "India's Great Scientist, J.C. Bose"। Autobiography of a Yogi (1st সংস্করণ)। New York: Philosophical Library। পৃষ্ঠা 65–74।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.