গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম হিন্দু বৈষ্ণবধর্মের একটি উপসম্প্রদায়। খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে পূর্ব ভারতে চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ – ১৫৩৪) এই ধর্মান্দোলনের সূত্রপাত করেন। এই কারণে এই ধর্ম চৈতন্য বৈষ্ণবধর্ম নামেও পরিচিত। "গৌড়ীয়" শব্দটির উৎস বঙ্গের প্রাচীন নাম "গৌড়" শব্দটি থেকে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের দার্শনিক ভিত্তি ভগবদ্গীতা, ভাগবত পুরাণ, অন্যান্য পৌরাণিক ধর্মশাস্ত্র এবং ঈশোপনিষদ, গোপাল তাপনী উপনিষদকলি-সন্তারণ উপনিষদ প্রভৃতি উপনিষদ গ্রন্থ।

তিরুপতির গৌড়ীয় বৈষ্ণব মন্দির

গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মোপাসনার কেন্দ্রীয় বিষয় হল রাধাকৃষ্ণ এবং তাদের বিভিন্ন দৈব অবতারকে স্বয়ং ভগবান বা সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে পূজা করা। এই ধর্মের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হল ভক্তি। এই ধর্মে পূজার এক বিশিষ্ট অঙ্গ হল হরে কৃষ্ণ মন্ত্র সহ রাধাকৃষ্ণের নানান পবিত্র নাম জপ এবং কীর্তন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ধর্মের আদিগুরু ব্রহ্মা। সেই কারণে এই সম্প্রদায়কে ব্রহ্মা-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ও বলা হয়। এই ধর্ম মূলত একেশ্বরবাদী; কারণ এই ধর্মে বিষ্ণুর বিভিন্ন রূপকে একক সর্বোচ্চ ঈশ্বর আদিপুরুষ-এর রূপভেদ মনে করা হয়। বর্তমানে নবদ্বীপ হলো এই গৌড়ীয় বৈষ্ঞ সমাজের মূল শিকর, এখানেই রয়েছে গৌরের প্রধান পার্শদ প্রভু নিত্যানন্দের বংশধরেরা তাছারা গৌড়ীয় মঠ এবং (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) - ইস্কন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম পালন করেন

দার্শনিক তত্ত্ব

জীবাত্মা

গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন মতে, চৈতন্য প্রকৃতি থেকে উৎসারিত নয়, বরং তা আত্মার লক্ষণ।[1] প্রত্যেক জীব তার বর্তমান দেহ থেকে পৃথক। আত্মা অমর, অপরিবর্তনশীল ও অবিনশ্বর। শুধু তাই নয়, আত্মা অনাদি ও অনন্ত।[2] মায়ায় আচ্ছন্ন জীব পৃথিবীতে বারবার জন্মগ্রহণ করে কর্মের ও জাগতিক কামনাবাসনার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যান্য জীবের সঙ্গে জীবনধারণ করে। সংসারের এই ধারণাটি অবশ্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের মৌলিক চিন্তাধারা নয়, সমগ্র হিন্দুধর্মেই এই ধারণাটি পরিব্যপ্ত হয়ে আছে।

সংসারের এই প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি লাভ করার নাম মোক্ষ। বিভিন্ন যোগের মাধ্যমেই সংসার থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। যদিও গৌড়ীয় বৈষ্ণবমতে ভক্তি বা ঈশ্বরের প্রতি শুদ্ধাপ্রেমই মানবজীবনের পবিত্রতম অবস্থা। তাই জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তিলাভ করার পরিবর্তে এই পথটিকেই গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ বলে মনে করেন।

সর্বোচ্চ ঈশ্বর

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. Consciousness the Symptom of the Soul by Stephen Knapp
  2. "Bhagavad Gita 2.20"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.