লক্ষ্মী

লক্ষ্মী (সংস্কৃত: लक्ष्मी) হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর পত্নী। তার অপর নাম মহালক্ষ্মী[1] জৈন স্মারকগুলিতেও লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।

লক্ষ্মী
লক্ষ্মী রাজা রবি বর্মার আঁকা চিত্র
দেবনাগরীलक्ष्मी
সংস্কৃত লিপ্যন্তরlakṣmī
অন্তর্ভুক্তিমহাশক্তি, ত্রিদেবী
আবাসবৈকুণ্ঠ
মন্ত্রওঁ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ
গায়ত্রী মন্ত্র : ওঁ মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রীয়ৈ ধীমহি তন্নোঃ শ্রী প্রচোদয়াৎ।
প্রনাম মন্ত্র : ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্ব্বত পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে।।
বাহনহাতি, পেঁচা
লক্ষ্মীপূজা

লক্ষ্মী ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী। তিনি বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস। বিষ্ণু রামকৃষ্ণ রূপে অবতার গ্রহণ করলে, লক্ষ্মী সীতারাধা রূপে তাদের সঙ্গিনী হন।[2][3][4] কৃষ্ণের দুই স্ত্রী রুক্মিণীসত্যভামাও লক্ষ্মীর অবতার রূপে কল্পিত হন।[5]

লক্ষ্মীর পূজা অধিকাংশ হিন্দুর গৃহেই অনুষ্ঠিত হয়। দীপাবলিকোজাগরী পূর্ণিমার দিন তার বিশেষ পূজা হয়। এটি কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামে খ্যাত। বাঙালি হিন্দুরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন।

ধ্যানমন্ত্র

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

অর্থঃ দক্ষিণহস্তে পাশ, অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।

পৌরাণিক ও লৌকিক গল্প

ব্রতকথা

লক্ষ্মীকে নিয়ে বাংলার জনসমাজে বিভিন্ন জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। এই গল্পগুলি পাঁচালির আকারে লক্ষ্মীপূজার দিন পাঠ করা হয়। একে লক্ষ্মীর পাঁচালি বলে। লক্ষ্মীর ব্রতকথাগুলির মধ্যে "বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা" সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও "বারোমাসের পাঁচালি"-তেও লক্ষ্মীকে নিয়ে অনেক লৌকিক গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা

পেচকবাহিনী লক্ষ্মী

বাঙালি হিন্দুরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর সাপ্তাহিক পূজা করে থাকেন। এই পূজা সাধারণত বাড়ির সধবা স্ত্রীলোকেরাই করে থাকেন। "বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা"-য় এই বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীব্রত ও পূজা প্রচলন সম্পর্কে একটি যে লৌকিক গল্পটি রয়েছে, তা এইরকম: এক দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এই সব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন।. কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন। অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। লক্ষ্মী তাকে লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল। একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় শ্রীনগরের এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করল। ফলে লক্ষ্মী তার উপর কুপিত হলেন। সেও সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তী নগরে ভিক্ষা করতে লাগল। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে সে অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইল। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এইভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হল।[6]

পাদটীকা

  1. Das, Subhamoy। "Lakshmi: Goddess of Wealth & Beauty!"। Hinduism.about.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৯
  2. Encyclopaedia of Hindu Gods and Goddesses; by Suresh Chandra
  3. "Radha - Goddess Radha, Sri Radharani, Radha-Krishna, Radhika"। Festivalsinindia.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৯
  4. Radha in Hinduism, the favourite mistress of the god Krishna, and an incarnation of Lakshmi. In devotional religion she represents the longing of the human soul for God: The Oxford Dictionary of Phrase and Fable (2006); Elizabeth Knowles |
  5. Essential Hinduism; by Steven Rosen (2006); p. 136
  6. "শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা ও পাঁচালী", মেয়েদের ব্রতকথা, কালীকিশোর বিদ্যাবিনোদ সম্পাদিত, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, ২০১১, পৃ. ১৮৬-৯১

লক্ষীর অপর নাম অনিন্দিতা

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.