সীতা
সীতা (দেবনাগরী: सीता


সীতা | |
---|---|
![]() সীতা তার ছেলে লবের সাথে | |
দেবনাগরী | सीता |
অন্তর্ভুক্তি | লক্ষ্মীর অবতার |
সঙ্গী | রাম |
‘অদ্ভুত রামায়ণ’ থেকে জানা যায়, সীতা নাকি রাবণ ও মন্দদরীর কন্যা। আবার অন্যত্র বলে রাবণ তার ভ্রাতুষ্পুত্র নলকুবেরের স্ত্রী রম্ভাকে বলপূর্বক ধর্ষণ করেন। এই ধর্ষণের ফলে রাবণের ঔরসে রম্ভার গর্ভে সীতার জন্ম হয়। তাঁর জন্মের আগে গণকরা জনিয়েছিলেন, তিনি নাকি রাবণের ধ্বংসের কারণ হবেন। তাই রাবণ তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ‘আনন্দ রামায়ণ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজা পদ্মাক্ষের কন্যা পদ্মাই নাকি পরবর্তী জন্মে সীতা হন। রাবণ পদ্মার শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি আগুনে আত্মঘাতী হন। পরজন্মে তিনিই সীতা হিসবে অবতীর্ণা হন এবং রাবণের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ান। আর একটি প্রচলিত ধারণা এই— সীতা পূর্বজন্মে ছিলেন বেদবতী নামে এক পুণ্যবতী নারী। রাবণ তাঁর শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি রাবণকে অভিশাপ দেন যে, তিনি পরবর্তী জন্মে রাবণকে হত্যা করবেন। ‘রামায়ণ’-এর কিছু অন্য লিখন জানায়, রাবণ নাকি প্রকৃত সীতাকে হরণ করেননি। যাকে রাবণ হরণ করেছিলেন, সে মায়াসীতা। দেবী পার্বতী আসল সীতাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং রাম-রাবণের যুদ্ধের পরে আসল সীতা প্রকট হন। মায়াসীতা নাকি পরে দ্রৌপদী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।[4]
নামকরণ
রামায়ণে সীতা বহু নামে উল্লেখিতা হয়েছেন। তবে তিনি মুলতঃ সীতা নামেই পরিচিতা। জনকের কন্যা বলে সীতাকে জানকী বলা হয়। মিথিলা রাজ্যের কন্যা হওয়ায় তিনি মৈথিলি নামেও পরিচিতা। এছাড়া তিনি রাম-এর স্ত্রী হওয়ায় তাঁকে রমাও বলা হয়ে থাকে।
জীবনী
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, বৈশাখ মাসের শুক্লানবমী তিথিটিকে সীতানবমী বলা হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এই যে এ দিনেই সীতা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উত্তর ভারতে সীতান বমী একটি অন্যতম প্রধান উৎসব। রামায়ণ অনুসারে, সীতা ভূদেবী পৃথিবীর কন্যা ও রাজর্ষি জনকের পালিতা কন্যা। রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গেলে সীতা তাঁর সঙ্গী হন। সীতা মাতাকে হিন্দুদের দেবী মা লক্ষীর অবতার বলা হয়ে থাকে। তাই তিনি রাবণ কর্তৃক হরণ হওয়ার আগেই বৈকুণ্ঠে চলে যান এবং ছায়া সীতা রেখে যান। পরে রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গেলে রাম ও রাবণের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। কিষ্কিন্ধ্যার বানরদের সহায়তায় রাম রাবণকে পরাজিত ও নিহত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। শ্রী রামচন্দ্র রাবনের ভাই বিভীষণ কে লঙ্কার রাজা করেন। এবং নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন। সীতা উদ্ধারের পর সীতার অগ্নিপরীক্ষা হয়। সেই সময় অগ্নিদেব ছায়াসীতা লুকিয়ে আসল সীতাকে প্রকট করেন বলে কথিত আছে।
শ্রীরাম রাজা হওয়ার পর মাতা সীতার নামে অযোধ্যায় লোকনিন্দা শুরু হয়। সেই লোক নিন্দা থেকে সীতাকে রক্ষা করতে রাজগুরুর আদেশে শ্রীরাম লক্ষণকে মাতা সীতাকে তপবনে রেখে আসার আদেশ দেন। কারণ, সীতা মাতা গর্ভবতী ছিলেন। মহর্ষি বাল্মীকির তপোবনে সীতা লব ও কুশ নামে দুই যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
পরে রাম সীতাকে দ্বিতীয়বার অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে মর্মাহতা সীতা জননী পৃথিবীর কোলে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ভূগর্ভ থেকে উত্থিতা হয়ে ভূদেবী পৃথিবী সীতাকে নিয়ে পাতালে প্রবেশ করেন।
রামায়ণের বিভিন্ন পাঠান্তরে সীতার সম্পর্কিত নানা উপাখ্যানের সন্ধান মেলে।
রামায়ণে সীতা
সীতার পিতা ছিলেন রাজা জনক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জমি চাষ করার সময় লাঙলের আঘাতে ভূমি বিদীর্ণ করে সীতার জন্ম হয়।
অযোধ্যার রাজকুমার রাম তার ভাই লক্ষ্মণ কে নিয়ে বিশ্বামিত্র মুনির সাথে উপস্থিত হন মিথিলায়। মিথিলার রাজসভায় শিব প্রদত্ত ধনুক ভেঙ্গে সীতাকে জয় করেন রাম।
সীতাকে বিবাহের পর, রাম ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গমন করলে, চিত্রকূট পর্বতে অবস্থান করেন। সেখানে স্বর্ণমৃগ রূপী মারীচ ছল করে রামলক্ষ্মণকে দূরে নিয়ে যান, আর রাবণ সীতাকে হরণ করে।
রামলক্ষ্মণ বানরসেনা ও ভল্লুকসেনার সাহায্যে রাবনবধ ও সীতা উদ্ধার করলেও, প্রজার প্রশ্ন নিরসন করতে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিলে স্বয়ং অগ্নিদেব সীতাকে রক্ষা করে। এরপর সীতাকে নিয়ে রাম ফেরেন অযোধ্যায়। সীতা কোশলদেশের সম্রাজ্ঞী হন। রামের ঔরসে সীতার গর্ভসঞ্চার হয়। কিন্তু প্রজাদের মধ্যে সীতাকে নিয়ে বক্রোক্তি শুনে রাম তাকে ত্যাগ করেন। সন্তানসম্ভবা সীতা আশ্রয় নেন বাল্মীকি মুনির আশ্রমে। ওখানেই সীতা কুশ ও লব নামে দুই পুত্রসন্তান প্রসব করেন। পরবর্তীতে লব ও কুশ রামের অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে রাখেন। ফলে রামের সাথে যুদ্ধ হয় তাদের। কিন্তু রাম পরাস্ত হন। পরে বাল্মীকির সাহায্যে লব কুশ কোশল দেশে ফেরেন সীতাকে নিয়ে। রাম পুনরায় সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে অভিমানী ও অপমানিতা সীতা তার মা জগদ্ধাত্রী ধরিত্রীকে আবাহন করেন। দেবী জগদ্ধাত্রী সিংহাসনে উপস্থিত হন ও সীতাকে নিয়ে পাতালপ্রবেশ করেন।
আরো দেখুন
তথ্যছক
- Sutherland, Sally J.। "Sita and Draupadi, Aggressive Behavior and Female Role-Models in the Sanskrit Epics" (PDF)। University of California, Berkeley। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২।
- Swami Parmeshwaranand (২০০১-০১-০১)। Encyclopaedic Dictionaries of Puranas। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 1210–1220। আইএসবিএন 978-81-7625-226-3। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১২।
- "Sita, Hindu Deity and incarnation of Lakshmi"। Michigan State University। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১২।
- http://ebela.in/lifestyle/some-interesting-facts-about-sita-dgtl-1.428258
আরো পড়ুন
- Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious traditions (আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৩৭৯-৫) by David Kinsley
- The Ramayana (2001) by Ramesh Menon