কার্তিক (দেবতা)

কার্তিকেয় বা কার্তিক হিন্দু যুদ্ধদেবতা। তিনি শিবদুর্গার সন্তান। কার্তিক বৈদিক দেবতা নন; তিনি পৌরাণিক দেবতাপ্রাচীন ভারতে সর্বত্র কার্তিক পূজা প্রচলিত ছিল। উত্তর ভারতে ইনি এক প্রাচীন দেবতা রূপে পরিগণিত হন। অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর মতো কার্তিকও একাধিক নামে অভিহিত হন। যথা – কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, স্কন্দ, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুলেয়, ক্রৌঞ্চারতি, শরজ, তারকারি, শক্তিপাণি, বিশাখ, ষড়ানন, গুহ, ষান্মাতুর, কুমার, সৌরসেন, দেবসেনাপতি ইত্যাদি।

কার্তিকেয়
বিজয় ও কুণ্ডলিনী
দুর্গোৎসবে পূজিত কার্তিকেয় মূর্তি
সংস্কৃত লিপ্যন্তরKārttikeya
তামিল লিপিமுருகன்
অন্তর্ভুক্তিদেব
আবাসকৈলাস
অস্ত্রধনুক ও বাণ
বাহনময়ূর

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের পূজা অধিক জনপ্রিয়। তামিলমালয়ালম ভাষায় কার্তিক মুরুগান বা মায়ূরী কন্দসামী (তামিল:முருகன், মালয়ালম:മുരുകന്‍) নামে এবং কন্নড়তেলুগু ভাষায় তিনি সুব্রহ্মণ্যম (কন্নড়:ಸುಬ್ರಹ್ಮಣ್ಯ, তেলুগু:సుబ్రమణ్య స్వామి‍) নামে পরিচিত। তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী মুরুগান তামিলদেশের (তামিলনাড়ু) রক্ষাকর্তা।[1] দক্ষিণ ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়ামরিশাস – যেখানে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান সেখানেই মুরুগানের পূজা প্রচলিত। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাংশে কার্তিকেয়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত কথারাগম (সিংহলি ভাষায় "কথারাগম দেবালয়") মন্দিরে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পশ্চিমবঙ্গে কার্তিক পূজা

বাংলায় কার্তিক সংক্রান্তির সাংবাৎসরিক কার্তিক পূজার আয়োজন করা হয়।পূর্বের তুলনায় এখন কার্তিক জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া কাটোয়া অঞ্চলের কার্তিক পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। এছাড়া বাংলার গণিকা সমাজে কার্তিক পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। দুর্গাপূজা সময়ও কার্তিকের পূজা করা হয়।কলকাতাতে তার মন্দির আছে।[2]

কার্তিক ঠাকুরের সাথে ছয় সংখ্যা জড়িয়ে আছে৷ সেজন্য হয়ত স্ত্রী ষষ্ঠীর সাথে তার মিল৷তিনি বাচ্চা বড় না হওয়া অব্দি তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন ৷তার কৃপা পেলে পুত্রলাভ , ধনলাভ হয় ৷সেজন্য বিয়ে হয়েছে কিন্তুু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা হয় ।যা প্রজাপতি বিস্কুট সিনেমাতে ও দেখানো হয়েছে।[3] সুঠাম গড়নের ল্যাংটো কাটোয়ার কার্তিক লড়াই খুব বিখ্যাত। কাটোয়ার কার্তিক পুজো বিখ্যাত বলেই এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কার্তিক লড়াই বলে । কার্তিক পুজোর দিন পথে কাটোয়ায় এক বড়সড় মিছিল নামে । সব পুজো-মণ্ডপের দলবল তাদের ঠাকুর নিযে বেরোয় শোভাযাত্রায়। চলে লড়াই কার ঠাকুর আগে যাবে।এ যুদ্ধ রীতিমতো লাঠিসোটা, এমনকী তরোয়াল নিয়েও চলে। হালিশহরের'জ্যাংড়া কার্তিক' ও 'ধুমো কার্তিক' পূজা ও খুব বিখ্যাত।[4] এভাবেই যুদ্ধ আর সন্তান উৎপাদন- দুইয়ের অনুষঙ্গেই কার্তিককে স্মরণ করে বাঙালি।তাকে নিয়ে আছে ছড়া -

"কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, 
একবার আসেন মায়ের সাথে, 
একবার আসেন একলা।"[5]

পাল বাড়ির ঐতিহাসিক তিন কার্তিক

বর্ধমান(পশ্চিম বর্ধমান) জেলায় গৌরবাজার ( পান্ডবেশ্বর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে) নামে এক গ্রামে বিগত ১৬৬ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে বলে অনুমান। এই পুজোর বিশেষত্ত হল তিনটি কার্তিক, বড় কার্তিক, মেজো কার্তিক, ছোটো কার্তিক। অনেকের কাছে বিষয়টা অদ্ভূত এবং কৌতূহলের, যে পুজো হলে তো একটি কার্তিক এর হবে এখানে একই ঠাকুরের তিনটি মূর্তি কেনো?,উত্তর লুকিয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। বিঘা বিঘা জমি,বর্ধমান রাজাদের তত্ত্বাবধানে পাল দের জমিদারি তখন রমরমা। সারা গ্রাম থেকে আশে পাশের গ্রামে পালে দের জমিদারি ছিল বিশেষ। জানা যায় আনুমানিক ১৮৫৩ সাল নাগাদ জমিদার জয় নারায়ণ পাল, শ্যামপাল, লক্ষী নারায়ণ পাল এর কোনো সন্তান জন্ম না হওয়ায়, তারা চরম চিন্তায় ছিলেন। অনেক উপায় অবলম্বন করেও কোনও সুরাহা হয় নি। তখন এক রাত্রে স্বপন আদেশে জয় নারায়ণ পাল দেখেন যে নিস্বারথ কার্তিক পুজো করতে হবে তাদের তিন ভাই কে। তবেই তাদের শুন্য কোল আলো হবে। তাই তারা তিন ভাই মিলে অভিনব ভাবে মন্দির তৈরি করে একসাথে তিনটি কার্তিক পূজা করা শুরু করেন। এবং তারপরে আনুমানিক ১৮৫৭ সালে লক্ষী নারায়ণ পালের এক পুত্র সন্তান লাভ হয় ধজাধারি পাল, এবং আরো দুই ভাই এর একটি করে কন্যা সন্তান লাভ হয়। সেই সৌভাগ্যবসত পরম্পরা অনুযায়ী পুজো করে আসছেন বংশধরেরা এবং এই সন্তান না হওয়ার অন্ধকার এই বংশকে আর এসে ঘিরে ধরেনি। এই পুজো আজও বর্তমান।

দক্ষিণ ভারত

মুরুগান

দক্ষিণ ভারতে তিনি খুব জনপ্রিয়।সেখানে তার অসংখ্য মন্দির আছে।তবে তামিলনাড়ুর ৬ টি মন্দির খুব পবিত্র।[6] সেগুলি হল-

১।স্বামীমালাই মুরুগান মন্দির

২। পালানী মুরুগান মন্দির

৩।থিরুচেন্দুর মুরুগান মন্দির

৪।থিরুপ্পারামকুমারাম মুরুগান মন্দির

৫।থিরুথানি মুরুগান মন্দির

৬।পাঝামুদিরচোলাই মুরুগান মন্দির ।

তথ্যসূত্র

  1. Cage of Freedom By Andrew C. Willford
  2. "Temple ties in culture cauldron"www.telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৪
  3. "কার্তিক পুজোর কড়চা"Chalo Kolkata (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৮-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৪
  4. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা:১৯৩-১৯৬
  5. "কার্তিক বৃত্তান্ত"Ichchhamoti (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৪
  6. Clothey, Fred W. (১৯৭২-০৬-০১)। "Pilgrimage Centers in the Tamil Cultus of Murukan"Journal of the American Academy of Religion (ইংরেজি ভাষায়)। XL (1): 79–95। doi:10.1093/jaarel/XL.1.79আইএসএসএন 0002-7189

পাদটীকা

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.