ব্রহ্মা
ব্রহ্মা (সংস্কৃত: ब्रह्मा; Brahmā) হিন্দুধর্মে সৃষ্টির দেবতা। বিষ্ণু ও শিবের সঙ্গে তিনি ত্রিমূর্তিতে বিরাজমান। তিনি অবশ্য হিন্দু বেদান্ত দর্শনের সর্বোচ্চ দিব্যসত্ত্বা ব্রহ্মের সমরূপ নন। বরং বৈদিক দেবতা প্রজাপতিকে ব্রহ্মার সমরূপ বলা চলে। বিদ্যাদেবী সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী।
ব্রহ্মা | |
---|---|
সর্বোচ্চ সত্ত্বা, সৃষ্টি, বেদ ও ধর্মের দেবতা | |
![]() ব্রহ্মা, পাহাড়ি শিল্পকলা, আনু. ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ, ভারত | |
দেবনাগরী | ब्रह्मा |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Brahmā |
অন্তর্ভুক্তি | পরব্রহ্ম (ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম), ত্রিমূর্তি, দেব |
আবাস | সত্যলোক, ব্রহ্মলোক |
মন্ত্র | ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ |
অস্ত্র | শূলফর্শ (কুঠার), ব্রহ্মাস্ত্র, ব্রহ্মশীর্ষাস্ত্র, ব্রহ্মাণ্ডাস্ত্র |
প্রতীক | বেদ |
সহোদর | লক্ষ্মী |
বাহন | হংসকুমার বা হংসরাজ (হংস) |
উৎসব | শ্রীবরী ব্রহ্মোৎসবম্, কার্তিক পূর্ণিমা |
সঙ্গী | সরস্বতী |
নাম
সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে, মূল বিশেষ্য প্রাতিপদিক ব্রহ্মন্ শব্দটি থেকে দুটি পৃথক বিশেষ্য সৃষ্টি হয়েছে। একটি ক্লীব বিশেষ্য ব্রহ্মন্ (bráhman); এই শব্দের কর্তৃপদমূলক একবচন রূপটি হল ব্রহ্ম (সংস্কৃত: ब्रह्म)। এই বিশেষ্যটির একটি সাধারণ ও বিমূর্ত অর্থ রয়েছে।
এর বিপরীতে রয়েছে পুং বিশেষ্য ব্রহ্মন্ (brahmán)। এই শব্দের কর্তৃপদমূলক একবচন রূপটিই হল ব্রহ্মা (সংস্কৃত: ब्रह्मा)। এই শব্দটি ব্যক্তিনাম ও হিন্দু সৃষ্টিদেবতার নাম হিসেবে ব্যবহৃত। এঁকে নিয়েই আমাদের বর্তমান নিবন্ধ।
ব্রহ্মা মালয় ভাষায় বেরাহমা ও থাই ভাষায় ফ্রা ফ্রোম নামে পরিচিত। বাংলা ভাষায় লোকমুখে তাকে বহরম বা বিরিঞ্চি-ও বলা হয়ে থাকে।
ধ্যানমন্ত্র
- ব্রহ্মা কমণ্ডলুধরশ্চতুর্বক্রশ্চতুর্ভুজঃ।
- কদাচিৎরক্তকমলে হংসারূঢ়ঃ কদাচন।।
- বর্ণেন রক্তগৌরাঙ্গঃ প্রাংশুস্তুঙ্গাঙ্গ উন্নতঃ
- কমণ্ডলুর্বামকরে স্রুবো হস্তে তু দক্ষিণে।
- দক্ষিণাধস্তথা মালা বামাধশ্চ তথা স্রুবঃ।
- আজ্যস্থালী বামপার্শ্বে বেদাঃ সর্বেহগ্রত স্থিতাঃ।।
- সাবিত্রী বামপার্শ্বস্থা দক্ষিণস্থা সরস্বতী।
- সর্বে চ ঋষয়োহ্যগ্রে কুর্যাদেভিশ্চ চিন্তনম।।
অর্থঃ ব্রহ্মা কমণ্ডলুধারী, তার চারটি মুখ। তিনি কখনও লাল পদ্মে, কখনও শ্বেতহংসের উপর আসীন। তার গায়ের রং লাল গৌরবর্ণ। তিনি লম্বা এবং উন্নত অঙ্গধারী। তার উপরের বামহাতে কমণ্ডলু, ডানহাতে স্রুব। নিচের বামহাতে স্রুব এবং ডানহাতে জপমালা। তার বামপাশে আজ্যস্থালী এবং সম্মুখে বেদসকল এবং ঋষিগণ। ব্রহ্মার বামপাশে সাবিত্রী এবং ডানপাশে সরস্বতী দেবী বিরাজিতা। ঋষিগণ এভাবেই ব্রহ্মার ধ্যান করেন।
পৌরাণিক উপাখ্যান
সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। মনুস্মৃতি গ্রন্থে এই প্রজাপতিদের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন মারীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। সপ্তর্ষি নামে পরিচিত সাত মহান ঋষির স্রষ্টা ব্রহ্মা। এঁরা তাকে বিশ্বসৃষ্টির কাজে সহায়তা করেন। তার এই পুত্রগণ তার শরীর থেকে জাত হননি, হয়েছেন তার মন থেকে। এই কারণে তাদের মানসপুত্র বলা হয়।
বেদ ও পুরাণ শাস্ত্র অনুসারে, ব্রহ্মা দেবতাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ বেশি করেন। নশ্বরদের ক্ষেত্রে তার হস্তক্ষেপের ঘটনা অপেক্ষাকৃত কম। তিনি সোমের উপর চাপ সৃষ্টি করে তারকাকে তার স্বামী বৃহস্পতির নিকট ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। তাকে ধর্ম ও অত্রির পিতারূপেও কল্পনা করা হয়।
ব্রহ্মার মন্দির
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিঅভিধানে ব্রহ্মা শব্দটি খুঁজুন। |
- The Brahma-Samhita - Prayers of Lord Brahma at the start of creation (Brahmasamhita.com)
- Brahma's Prayers for Creative Energy from the Bhagavata Purana (vedabase.net)
- কার্লি-এ ব্রহ্মা (ইংরেজি)