হালিশহর, পশ্চিমবঙ্গ

হালিশহর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। হাবেলীশহর (অট্টালিকা-বহুল নগরী) কথাটির অপভ্রংশে হালিশহর নামটি এসেছে। 'আইন-ই-আকবরী'তে সরকার-সাতগাঁর অন্তর্গত পরগনার মধ্যে হাবেলীশহরের নাম পাওয়া যায়।

হালিশহর, পশ্চিমবঙ্গ
স্থানাঙ্ক: ২২.৯৫° উত্তর ৮৮.৪২° পূর্ব / 22.95; 88.42
জনসংখ্যা (২০০১)
  মোট১,২৪,৪৭৯

পঞ্চদর শতকের মধ্যভাগে গাঙ্গুলীবংশীয় বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরীদের আদিপুরুষ 'পাঁচু শক্তি খান' হাবেলীশহর পরগনার কর্তৃত্ব লাভ করে 'হালিশহর সমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন।[1]

ইতিহাস

হালিশহর গঙ্গাতীরবর্তী প্রাচীন জনপদ। অতীত নাম ছিল কুমারহট্ট (একসময় এখানে কুম্ভকারদের অর্থাৎ কুমারদের বিরাট হাট বসত, গঙ্গার ঘাট থেকে হাঁড়ি-কলসী নৌকায় করে চালান হত। তাই 'কুমারহাট' থেকে 'কুমারহট্ট' নাম হয়েছিল।) কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীচণ্ডীমঙ্গল কাব্যে হালিশহর নামটি প্রথম পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের বিদ্যাচর্চার ফলে কুমারহট্ট-পণ্ডিতসমাজ একসময় নদীয়া জেলার নবদ্বীপের সমতুল্য খ্যাতি অর্জন করেছিল। হালিশহরে 'চৈতন্য ডোবা' নামক জলাশয়ের ধারে বাস করতেন চৈতন্য মহাপ্রভুর দীক্ষাগুরু ঈশ্বর পুরী; এই জায়গার সামনের একটি মাঠে বর্তমানে গৌর-নিতাই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। এইসময় চৈতন্যদেবের প্রভাবে এখানে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম বেশ বিস্তারলাভ করেছিল। অষ্টাদশ শতকের প্রখ্যাত শ্যামাসংগীতকার, সাধক রামপ্রসাদ সেনের বসতবাটিও ছিল হালিশহরে।[2]

এখানে বারুইপাড়ার শুভচণ্ডীতলায় বটগাছের নিচে শাচণ্ডীর শিলার পাশে একটি প্রাচীন (সম্ভবত সেনবংশীয় রাজাদের আমলে নির্মিত) গণেশমূর্তি (দুই ফুট দীর্ঘ, পদ্মাসনে আসীন, পাথরের পালিশযুক্ত) পূজিত হয়, যেটি পাশের শাপুকুর খননকালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। বারুইপাড়ায় পানের বরোজ রক্ষায় 'পবনদেব'এর পূজা করা হয়।

বিভিন্ন নামে শক্তিপূজা (কালী), মনসা-শীতলা, চড়কপূজা ও বৃক্ষপূজার চল বহুকালের। এখানে প্রাচীন পরিত্যক্ত মন্দিরের মধ্যে 'পঞ্চরত্ন' ও চারচালা বাংলা মন্দিরই বেশী। হালিশহরে বিভিন্ন শিবমন্দিরও অনুপম পৌরাণিক বিষয়ের কারুকাজে ভরা। এখানে কালিকাতলার 'জ্যাংড়া কার্তিক (দেবতা)' ও জেলেপাড়ার 'ধুমো কার্তিক (দেবতা)' পূজা বিখ্যাত।[1]

ভৌগোলিক উপাত্ত

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৯৫° উত্তর ৮৮.৪২° পূর্ব / 22.95; 88.42[3] সমূদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৫ মিটার (৪৯ ফুট)।

জনসংখ্যার উপাত্ত

ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে হালিশহর (পশ্চিমবঙ্গ) শহরের জনসংখ্যা হল ১২৪,৪৭৯ জন।[4] এর মধ্যে পুরুষ ৫৪% এবং নারী ৪৬%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৭৬%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮১% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭০%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে হালিশহর (পশ্চিমবঙ্গ) এর সাক্ষরতার হার বেশি।

এই শহরের জনসংখ্যার ১০% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী। হালিশহরের অধিবাসীরা এই শহরের ইতিহাস অনুসন্ধান ও পারস্পরিক সংস্কৃতি চর্চার জন্য facebook এ 'Halisahar the city of dreams' গ্রুপে যুক্ত আছেন।

তথ্যসূত্র

  1. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা:১৯৩-১৯৬
  2. নারায়ন সান্যাল (১৯৯০)। রূপমঞ্জরী (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৪০৬।
  3. "Halisahar"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬
  4. "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.