প্রসব

শিশুর জন্ম, যা প্রসব বেদনা ও প্রসব নামেও পরিচিত, সেটি হলো একজন নারীর জরায়ু থেকে এক বা একধিক বাচ্চা বের হয়ে আসার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার অবসান হওয়া।[1] ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে।[2] প্রায় ১৫ মিলিয়ন গর্ভকালের ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্মগ্রহণ করেছে,[3] যখন ৩ থেকে ১২% ৪২ সপ্তাহের পরে জন্মগ্রহণ করেছে।[4] উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ প্রসব ঘটে হাসপাতালে,[5][6] যেখানে উন্নয়নশীল বিশ্বে বেশিরভাগ শিশু জন্মদানের ঘটনা ঘটে বাড়িতে প্রথাগত ধাত্রীদের সহযোগিতায়।[7]

এই নিবন্ধটি মানবসন্তানের জন্ম সম্পর্কে। অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের জন্মের জন্য, জন্ম দেখুন।
সন্তান প্রসব
নবজাতক শিশু এবং মা
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ
সমার্থকশব্দজন্ম
বিশিষ্টতাObstetrics, midwifery

শিশু জন্মদানের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো যোনিপথে প্রসব।[8] এখানে প্রসব বেদনার তিনটি পর্যায় থাকে: পানি ভাঙা ও গর্ভাশয় খুলে যাওয়া, নিম্নগমন ও শিশুর জন্ম এবং গর্ভফুল বের হয়ে আসা।[9] প্রথম পর্যায় সাধারণত বারো থেকে আঠারো ঘন্টা, দ্বিতীয় পর্যায় বিশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা, এবং তৃতীয় পর্যায়টি পাঁচ থেকে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।[10] প্রথম পর্যায়টি শুরু হয় খিঁচুনিযুক্ত পেট ব্যথা বা পিঠ ব্যথা দিয়ে যা প্রায় আধা মিনিট স্থায়ী হয় এবং তা দশ থেকে ত্রিশ মিনিট পরপর চলতে থাকে।[9] খিঁচুনিযুক্ত ব্যথা তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং সময়ের সাথে সাথে তা ঘন ঘন হতে থাকে।[10] দ্বিতীয় পর্যায়ে, সংকোচনের সাথে সাথে চাপ দেখা দিতে পারে।[10] তৃতীয় পর্যায়ে সাধারণত বিলম্বে নাড়ী আটকানোর সুপারিশ করা হয়।[11] ব্যথা কমাতে বেশ কিছু উপায় কাজে লাগতে পারে যেমন শিথিলায়ন কৌশল, আফিমজাত ব্যথানাশক ওষুধ,এবং স্পাইনাল ব্লকসমূহ।[10]

বেশিরভাগ শিশুর জন্মের সময়ে প্রথমে মাথা বের হয়ে আসে; তবে 4% শিশুর জন্মের সময় প্রথমে পা অথবা নিতম্ব বের হয়ে আসে যা ব্রিচনামে পরিচিত।[10][12] প্রসব বেদনার সময় একজন মহিলা সাধারণত তার ইচ্ছামত পানাহার বা চলাফেরা করতে পারেন, প্রথম পর্যায়ে বা মাথা বের হয়ে আসার সময় চাপ প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয় না এবং এনিমা ব্যবহারের সুপারিশ করা হয় না।[13] যোনিমুখকেটে দেয়া যা, এপিসিওটমি নামে পরিচিত, যদিও সাধারণত করা হয় কিন্তু তা করার দরকার হয় না।[10] ২০১২ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন প্রসব ঘটেছিল সিজারিয়ান সেকশন নামের একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে।[14] যমজশিশুদের ক্ষেত্রে, শিশুর মধ্যে সংকটের লক্ষণ থাকলে কিংবা ব্রিচ পজিশনের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান সেকশনের জন্য সুপারিশ করা হতে পারে।[10] প্রসবের এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে আরোগ্য লাভ করতে অনেক সময় লাগতে পারে।[10]

প্রতিবছর গর্ভধারণ ও শিশুজন্মের জটিলতার কারণে প্রায় ৫০০,০০০ মাতৃমৃত্যু ঘটে, ৭ মিলিয়ন মহিলা দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক সমস্যায় ভোগেন এবং ৫০ মিলিয়ন মহিলা প্রসব পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য হানিকর ফলাফলে ভোগেন।[15] এসবের বেশিরভাগ ঘটে থাকে উন্নয়নশীল বিশ্বে।[15] সুনির্দিষ্ট জটিলতাসমূহের মধ্যে রয়েছে বাধাপ্রাপ্ত প্রসব, প্রসবোত্তর রক্তপাত, এক্লাম্পসিয়া, ও প্রসবোত্তর সংক্রমণ।[15] শিশুর জটিলতাসমূহের মধ্যে রয়েছে বার্থ অ্যাস্ফিক্সিয়া।[16]

চিত্রশালা
  • মাতৃগর্ভে পরিণত শিশুর অবস্থান।
  • ১৯ শতকের গোড়ার দিকে এ ধরনের খেলনার মাধ্যমে সফল প্রসব প্রক্রিয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
  • নাবজাতকের মস্তিষ্ক নির্গমনের ধাপসমূহ।
  • সাধারণভাবে প্রসবের ধারাবাহিক ধাপসমূহের চিত্র।
  • ৩০ মিনিট বয়সী একটি নবজাতক। নার্স তার যত্ন নিচ্ছেন।
  • বাবার কাছে ওয়ার্মিং ট্রেতে অবস্থানরত এক নবজাতক।

তথ্যসূত্র
  1. Martin, Elizabeth। Concise Colour Medical Dictionary (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 375। আইএসবিএন 9780199687992।
  2. "The World Factbook"। www.cia.gov (ইংরেজি ভাষায়)। জুলাই ১১, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৬।
  3. "Preterm birth Fact sheet N°363"। WHO (ইংরেজি ভাষায়)। নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৬।
  4. Buck, Germaine M.; Platt, Robert W. (২০১১)। Reproductive and perinatal epidemiology (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন 9780199857746।
  5. Co-Operation, Organisation for Economic; Development (২০০৯)। Doing better for children (ইংরেজি ভাষায়)। Paris: OECD। পৃষ্ঠা 105। আইএসবিএন 9789264059344।
  6. Olsen, O; Clausen, JA (১২ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Planned hospital birth versus planned home birth."। The Cochrane database of systematic reviews (ইংরেজি ভাষায়) (9): CD000352। PMID 22972043।
  7. Fossard, Esta de; Bailey, Michael (২০১৬)। Communication for Behavior Change: Volume lll: Using Entertainment–Education for Distance Education (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9789351507581। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬।
  8. Memon, HU; Handa, VL (মে ২০১৩)। "Vaginal childbirth and pelvic floor disorders."। Women's health (London, England) (ইংরেজি ভাষায়)। 9 (3): 265–77; quiz 276–7। PMID 23638782।
  9. "Birth"। The Columbia Electronic Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়) (6 সংস্করণ)। Columbia University Press। 2016। সংগ্রহের তারিখ 2016-07-30 from Encyclopedia.com। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  10. "Pregnancy Labor and Birth"। Women's Health (ইংরেজি ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০। ২৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬।
  11. McDonald, SJ; Middleton, P; Dowswell, T; Morris, PS (১১ জুলাই ২০১৩)। "Effect of timing of umbilical cord clamping of term infants on maternal and neonatal outcomes."। The Cochrane database of systematic reviews (ইংরেজি ভাষায়) (7): CD004074। PMID 23843134।
  12. Hofmeyr, GJ; Hannah, M; Lawrie, TA (২১ জুলাই ২০১৫)। "Planned caesarean section for term breech delivery."। The Cochrane database of systematic reviews (ইংরেজি ভাষায়) (7): CD000166। PMID 26196961।
  13. Childbirth: Labour, Delivery and Immediate Postpartum Care (ইংরেজি ভাষায়)। World Health Organization। ২০১৫। পৃষ্ঠা Chapter D। আইএসবিএন 978-92-4-154935-6। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬।
  14. Molina, G; Weiser, TG; Lipsitz, SR; Esquivel, MM; Uribe-Leitz, T; Azad, T; Shah, N; Semrau, K; Berry, WR; Gawande, AA; Haynes, AB (১ ডিসেম্বর ২০১৫)। "Relationship Between Cesarean Delivery Rate and Maternal and Neonatal Mortality"। JAMA (ইংরেজি ভাষায়)। 314 (21): 2263–70। doi:10.1001/jama.2015.15553। PMID 26624825।
  15. Education material for teachers of midwifery : midwifery education modules (PDF) (ইংরেজি ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Geneva [Switzerland]: World Health Organisation। ২০০৮। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-92-4-154666-9।
  16. Martin, Richard J.; Fanaroff, Avroy A.; Walsh, Michele C.। Fanaroff and Martin's Neonatal-Perinatal Medicine: Diseases of the Fetus and Infant (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 9780323295376।

বহিঃসংযোগ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.