অরণ্যকাণ্ড
রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন। গোদাবরী নদীর তীরে পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন তারা। একদিন রাবণের ভগিনী সুর্পনখা সেই বনে ভ্রমণ করতে করতে রাম ও লক্ষ্মণের সাক্ষাৎ পেলেন। সুর্পনখা সুন্দরী রমণীর ছদ্মবেশে রাম ও লক্ষ্মণকে প্রলুব্ধ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। তখন ক্রোধে অন্ধ হয়ে সীতাকে ভক্ষণ করতে গেলে লক্ষ্মণ খড়্গাঘাতে সুর্পনখার নাসিকা ও কর্ণ ছেদন করলেন। সুর্পনখার অপর রাক্ষস ভ্রাতা খর এই সংবাদ পেয়ে সসৈন্যে রাম ও লক্ষ্মণকে আক্রমণ করলেন। কিন্তু রাম সসৈন্যেই বধ করলেন খরকে।[1]

রাবণ এই সংবাদ পেয়ে ভগিনীর অপমানের প্রতিশোধ কল্পে সীতাকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করলেন। এই কাজে তাকে সাহায্য করলেন মারীচ নামে এক মায়াবী রাক্ষস। মারীচ স্বর্ণমৃগের ছদ্মবেশ ধরে সীতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। হরিণটির রূপে মোহিত হয়ে তিনি রামের নিকট হরিণটি প্রার্থনা করে বসলেন। হরিণটিকে ধরতে গেলেন রাম। খানিকবাদে তিনি শুনতে পেলেন, রাম আর্তচিৎকার করছেন। আসলে মায়াবী মারীচ রামের কণ্ঠ নকল করে আর্তনাদ করেছিল। ভীত হয়ে সীতা লক্ষ্মণকে রামের সন্ধানে যেতে অণুরোধ করলেন। রাম যে অপরাজেয় সে কথা লক্ষ্মণ সীতাকে বারংবার বোঝাতে চাইলেন। কিন্তু সীতা সে কথায় কর্ণপাত করলেন না। অবশেষে কুটিরের চারিদিকে একটি গণ্ডী কেটে সীতাকে সেই গণ্ডীর বাইরে যেতে নিষেধ করে লক্ষ্মণ গেলেন রামের সন্ধানে। রাবণ এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তিনি ঋষির ছদ্মবেশে এসে সীতার নিকট ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন। রাবণের ছলনা বুঝতে পেরে সীতা গণ্ডীর বাইরে এসে তাকে ভিক্ষা দিতে গেলে দোষ্ট রাবণ বলপূর্বক সীতাকে অপহরণ করে নিজ রথে তুলে নিলেন।[1][2]
জটায়ু নামে একটি শকুন জাতীয় রামভক্ত পক্ষী সীতার অপহরণ দেখতে পেয়ে সীতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে রাবণের হাতে গুরুতর আহত এবং ভূপাতিত হল। রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নামক বনে নজরবন্দী করে একদল চেড়ীর (রাক্ষসী) তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু রামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণা সীতা সেই কুপ্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন।[3] এদিকে রাম ও লক্ষ্মণ মৃত্যুপথযাত্রী জটায়ুর কাছে সীতাহরণের সংবাদ পেলেন এবং অবিলম্বে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য যাত্রা করলেন।[4] যাত্রাপথে শবরী নামে এক বৃদ্ধা তপস্বিনী তাদের সুগ্রীব ও হনুমানের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিলেন।[5][6]
তথ্যসূত্র
- Goldman 1990, p.9
- William Buck ও Van Nooten 2000, p.166-168
- Keshavadas 1988, pp.112-115
- Keshavadas 1988, pp.121-123
- William Buck ও Van Nooten 2000, p.183-184