হরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)

হরে কৃষ্ণ মন্ত্র (মহামন্ত্র নামেও ভক্তিসহযোগে উল্লিখিত) হল ১৬ শব্দের একটি বৈষ্ণব মন্ত্র যা কলি-সন্তরণ উপনিষদে বর্ণিত, এবং যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষণের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই মন্ত্রের রচয়িতা রঘুনাথ ভট্টাচার্য ( ভট্ট ) যিনি ষড়গোঁসাইদের অন্যতম । মন্ত্রটি পরম সত্ত্বার তিনটি সংস্কৃত নাম দ্বারা রচিত; "হরে," "কৃষ্ণ," এবং "রাম।"[1][2]

হরে কৃষ্ণ (মহামন্ত্র) "বাংলা" হরফে

গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ববিদ্যা অনুসারে, একজনের মৌলিক চেতনা এবং জীবনের লক্ষ্য হল ভগবানের (শ্রীকৃষ্ণ) প্রতি বিশুদ্ধ প্রেম।[3]

১৯৬০-এর দশক থেকে, মন্ত্রটি অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ দ্বারা ভারতের বাইরেও সুপরিচিতি লাভ করে (সাধারণত "দ্য হরে কৃষ্ণাস্" নামে খ্যাত)।[4]

মন্ত্র

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম,
রাম রাম হরে হরে"

'হরে কৃষ্ণ' মন্ত্রটি সম্বোধন পদ একবচনে "হরে", "কৃষ্ণ", এবং "রাম" সংস্কৃত শব্দত্রয় দ্বারা রচিত। এটি একটি অনুষ্টুপ ছন্দের (আট অক্ষর দ্বারা গঠিত চার পংক্তির (পদ) শ্লোক) কবিতার স্তবক।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

বৈষ্ণব নাম-ব্যুৎপত্তি অনুসারে, "হরে" শব্দটিকে ভগবান বিষ্ণুর অপর নাম "হরি"-র সম্বোধনসূচক পদ হিসাবে ব্যক্ত করা যায়, যার অর্থ "যিনি জাগতিক মোহ মুক্ত করেন"। অন্য মতে, ‘হরে’ শব্দটি ‘হরা’ (অর্থাৎ, যা হরণ করে) শব্দটির দ্যোতক। এটির মূর্তিরূপ হলেন পরম সত্ত্বা শ্রীকৃষ্ণের শাশ্বত সঙ্গী বা তার দিব্যলীলার শক্তি (‘নাদশক্তি’) রাধা। কলি-সন্তরণ মন্ত্রে রাধার নাম আটবার উচ্চারিত হয়েছে। এটি দিব্যপ্রেমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ভগবানের অপর দুই রূপ "কৃষ্ণ" (যিনি সবাইকে আকর্ষণ করেন) ও "রাম"-এর (যিনি সকল আনন্দের কারণ) নাম চারবার করে উচ্চারিত হয়েছে।[5][6][7][8][9]

"হরে রাম" শব্দদুটির "রাম" নামটিকে কখনো কখনো কৃষ্ণের আরেক নাম 'রাধারমণ' (যিনি রাধার প্রিয়তম) হিসাবেও ব্যক্ত করা হয়। তবে সাধারণভাবে এটিকে, কৃষ্ণের আগের অবতার, রামায়ণের রাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে, কৃষ্ণের অগ্রজ ভ্রাতা বলরাম-এর খণ্ডনাম হিসাবেও এর অনুবাদ করা হয়।[10]

হরে কৃষ্ণ (মহামন্ত্র) "দেবনাগরী" হরফে

ইতিহাস

এই মন্ত্রটি সর্বপ্রথম ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে রচিত কলি-সন্তরণ উপনিষদ্-এ (kalisaṇṭāraṇopaniṣad) উল্লিখিত এই উপনিষদের সঙ্গে বেদের কোন সম্পর্ক নেই । এই গ্রন্থের মতে, এই মন্ত্রটি জোরে জোরে উচ্চারণ করলে কলিযুগের সকল কুপ্রভাব দূরীভূত হয়।

হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে এই মন্ত্রটি বিশেষ জনপ্রিয়। খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের নেতা চৈতন্য মহাপ্রভু সারা ভারতে বিশেষত বাংলাউড়িষ্যায় "প্রতি নগরে ও গ্রামে" ভ্রমণ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে এই "মহামন্ত্র"টি জনপ্রিয় করে তোলেন।[11] গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে, মন্ত্রটি উচ্চৈঃস্বরে বারংবার সংগীতবাদ্য সহযোগে ভজন, দলবদ্ধভাবে কীর্তন বা একান্তভাবে মনে মনে জপ করা হয়। কারণ, এই সম্প্রদায়ের অনুগামীরা মনে করেন, মন্ত্রের শব্দ উচ্চারণকারী ও শ্রোতাকে মুক্তি দান করবে।[12]

১৯৬০-এর দশক থেকে, মন্ত্রটিকে শ্রীকৃষ্ণ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর ঐকান্তিক ভক্ত অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ তার গুরুর (শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর) নির্দেশে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর (১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে) থেকে শুরু করে জীবনের শেষ এগারো বছর ধরে মোট চৌদ্দবার বিশ্ব পরিক্রমা করে গোটা পশ্চিমী বিশ্বে একটি সুপরিচিত শব্দসমাহারে পরিণত করেন।[13]

The Hare Krishna Tree, an American Elm in Tompkins Square Park, New York City, under which Bhaktivedanta Swami Prabhupada began the first recorded public chanting of the Hare Krishna mantra outside of India.[14]

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. "Hare Krishna mantra"Krishna
  2. "Chant and be happy"iskcon। ২০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৭
  3. Caitanya Caritamrta Ml.20.340 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ মার্চ ২০০৭ তারিখে.
  4. "Religion Encyclopedia - Hare Krishna (ISKCON)"। ১ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৭
  5. Meditations on the Hare Krishna Mahamantra "[Hare] = O Hari!...." & "Because she steals Krishna's mind and because she is the embodiment of Krishna's divine joy, Sri Radha is known as Harā. Hare is the vocative form of that name".
  6. Rosen, S. (২০০৬)। Essential Hinduism। Praeger Publishers। আইএসবিএন 0-275-99006-0।P.4: It was preserved in the confidential sampradayas, or esoteric lineages, that were guardian to these truths from the beginning. p.244: In a more esoteric sense, the word "Hare" is a vocative form of "Harā," which refers to Mother Harā, or Sri Radha.
  7. "The word Harā is a form of addressing the energy of the Lord, and the words Krishna and Rama (which mean "the highest pleasure eternal") are forms of addressing the Lord Himself." - A. C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada. See Krishna.com article.
  8. Gaudiya.com - Practice "Rama is another name for Him [Krishna], meaning the one who brings delight to Radha".
  9. T. V. Gopal (২০০০)। Hrishikesa: Krishna - A Natural Evolution। Parkland, Fla: Universal Publishers। পৃষ্ঠা 101। আইএসবিএন 1-58112-732-4।
  10. Chaitanya Charitamrita Adi-5.132 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে "if someone says that the "Rama" in "Hare Rama" is Lord Ramacandra and someone else says that the "Rama" in "Hare Rama" is Sri Balarama, both are correct".
  11. gaudiya.com.
  12. For the original text, see this Krishna.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ অক্টোবর ২০০৫ তারিখে article.
  13. Biography of Srila Prabhupada ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মার্চ ২০০৭ তারিখে.
  14. Hare Krishna Tree.

তথ্যসূত্র

  • Translated by K. Narayanasvami Aiyar, Copyright © 2002-2008 Celextel Enterprises Pvt. Ltd.- Vedanta Spiritual Library। "English translation of the Kali Santarana Upanishad"। www.celextel.org। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-০৬
  • Klostermaier, Klaus K. (২০০০)। Hinduism: A Short History। Oxford: Oneworld Publications। আইএসবিএন 1-85168-213-9।

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Vaishnava philosophy

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.