শিবরাত্রি

মহাশিবরাত্রি বা শিবরাত্রি হচ্ছে হিন্দু শৈব সম্প্রদায়ের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই মহাশিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। অগণিত ভক্ত এইদিন শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করে থাকে। 

Maha Shivaratri
Meditating Shiva with lingam on Maha-Shivaratri
ধরনHindu
তাৎপর্যself study, yoga, Shiva drank the poison created during samudra manthan[1]
পালনউপবাস, yoga, all night vigil, worship of Lingam[1]
তারিখFebruary/March
সংঘটনAnnual
rightমহাদেব ভাস্কর্য,নাগেশ্বর মন্দির

ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব

সব ব্রতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল এই মহাশিবরাত্রি। ব্রতের আগের দিন ভক্তগণ নিরামিষ আহার করে। রাতে বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শোয়া হয়। ব্রতের দিন তারা উপবাসী থাকে। তারপর রাত্রিবেলা চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। আর  ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এই মহামন্ত্র জপ করা হয় । সেদিন রাত্রি জাগরণ করা হয় ও শিবের ব্রতকথা, মন্ত্র আরাধণা করা হয়। ভারতবর্ষের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ তথা সমস্ত শিবমন্দিরে এই পূজা চলে, তান্ত্রিকেরাও এইদিন সিদ্ধিলাভের জন্য বিশেষ সাধনা করে। মহাশিবরাত্রি সাধারণত ইংরাজী মাসের ফেব্রুয়ারী বা মার্চ এ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিবমহাপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন । আবার এইরাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল । এর নিগুঢ় অর্থ হল শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদিশক্তি বা পরাপ্রকৃতির মিলন। এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপনাশ ও মুক্তির পথ দিয়েছিলেন।

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা

শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে প্রচুর জীবহত্যা করত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরী হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হীংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় । কোনো শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকে । সেই গাছটি ছিল বেলগাছ । আর সেই বেলগাছের নীচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ী ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।

এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত যেই জন, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।

জ্যোতির্লিঙ্গ পূজা

মহাশিবরাত্রি অনুষ্ঠানে ভারতবর্ষের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ তথা সোমনাথ, মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঁকারেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমশঙ্কর, বিশ্বেশ্বর, ত্র্যয়ম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বর ও ঘুশ্মেশ্বর এ বহু মানুষের সমাগম হয় ও সবার হাতে এই জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা ও পবিত্র স্পর্শলাভ ঘটে।

নিয়ম

শিবপূজায় শিবলিঙ্গ স্নানার্থে প্রধাণত গঙ্গাজল বা গঙ্গাজল মিশ্রিত জল ব্যবহার করা হয় । আর বেলপাতা দেওয়া হয় তিনটি পাতাযুক্ত একটি যৌগিক পত্রকে । তবে বিশেষ লক্ষ্যণীয়, শিবের পূজার বেলপাতার প্রতিটি যৌগিক পত্রের বৃন্ত বা বোঁটার নীচের একটু মোটা অংশ অবশ্যই ভেঙ্গে বাদ দিয়ে তবে সেই বেলপাতা অর্পণ করা উচিত।

তথ্যসুত্র

  1. J. Gordon Melton (২০১১)। Religious Celebrations: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorations। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 541–542। আইএসবিএন 978-1-59884-206-7।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.