কল্কি
কল্কি (দেবনাগরী লিপি: कल्कि) হিন্দুধর্মের একজন অবতার যিনি কলিযুগে মানব সমাজের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। কল্কি হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণুর সর্বশেষ রূপ। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পুরাণ থেকে জানা যায় কল্কি অবতার সাদা ঘোড়ার পিঠে খোলা তরবারী হাতে আবির্ভূত হবেন। কল্কি অবতার কলি যুগের অবসান ঘটিয়ে সত্য যুগ শুরু করবেন।
কল্কি | |
---|---|
সীমাহীন মহাবিশ্বের দেবতা | |
কল্কি দেবতার প্রস্তর মূর্তি | |
দেবনাগরী | कल्कि |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | कल्कि |
অন্তর্ভুক্তি | বিষ্ণু অবতার |
গ্রহ | পৃথিবী |
অস্ত্র | নন্দক নামক তলোয়ার বা অসি (অশুভ প্রাণীকে ধ্বংস করার পরব্রহ্ম অস্ত্র) |
বাহন | দুই পক্ষযুক্ত শ্বেত অশ্ব |
কল্কি শব্দটি সময়ের রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির উৎসমূল সংস্কৃত শব্দে খুঁজে পাওয়া যায়, কলকা অর্থ অশুভ। বর্তমানে কল্কি শব্দের অনুবাদ করা হয় অশুভ ধ্বংসকারী, অজ্ঞতা ধ্বংসকারী অথবা অন্ধকার দূরকারী হিসেবে।[1] সংস্কৃতে কল্কি শব্দের আরেকটি অর্থ সাদা ঘোড়া।[2]
বৌদ্ধ কালচক্র ঐতিহ্যে , শামবালা রাজ্যের ২৫ জন শাসকের নাম ছিলো কল্কি, কুলিকা অথবা কল্কি রাজ।[3] বৈশাখের শুল্ক পক্ষের প্রথম ১৫ দিন ১৫ জন দেবতার পূজা করা হয়। একেকদিন একেক দেবতার পূজা হয়। ১২ তম দিন বৈশাখী দ্বাদশী। দিনটি মাধবের(কল্কির আরেক নাম) জন্য নির্দিষ্ট।
মহা অবতার
পুরাণ
“অতঃপর দুইযুগের(কলিযুগ এবং সত্যযুগের) সন্ধিক্ষণে ভগবান কল্কি অবতার রুপে বিষ্ণুযশ নামক ব্যক্তির পুত্র হিসেবে জন্ম গ্রহণ করবেন। ঐ সময় পৃথিবীর প্রায় সমস্ত শাসক অধঃপতিত হয়ে লুটেরা ও ডাকাতের পর্যায়ে নেমে যাবে।”- ভাগবতপুরাণ-১/৩/২৫
এর অর্থ হল ভগবান এই কলিযুগের শেষের দিকে কল্কি অবতার হিসেবে আবির্ভুত হবেন। তিনি অসাধু লোকদের বিনাশ করে দায়িত্ব শেষ করার পর খুব কম সংখ্যক লোক বেঁচে থাকবে, যারা সৎ এবং ধার্মিক। কল্কি অবতারের পর এই পৃথিবীতে আবার সত্যযুগ শুরু হবে। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী কলি যুগের সময়কাল হল ৪,৩২,০০০ বছর, যা পন্ডিতদের গবেষণা অনুযায়ী খৃষ্টপূর্ব ৩,১০২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এখন কেবল ৫,০০০ বছর চলছে। সেই হিসাব অনুযায়ী, কল্কি অবতারের জন্ম গ্রহণ করতে এখনও অনেক দেরি| আবার পন্ডিত শ্রী যুক্তেশ্বর গিরি দাবি করেন যে, এই দীর্ঘ ৪,৩২,০০০ বছর সময়ের মাঝেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়কালের চক্র বিদ্যমান রয়েছে|
জন্ম এবং আগমণ সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী

কল্কিপুরাণের লেখা অনুসারে:
অনুবাদ:'
शम्भल ग्राममुख्यस्य ब्राह्मणस्य महात्मनः।
भवने विष्णुयशसः कल्किः प्रादुर्भविष्यति।।
শ্রীমদ্ভগবত মহা পুরাণ – ১২:২:১৮
शम्भल ग्राम मुख्यस्य ब्राह्मणस्य महात्मनः।
शम्भु শম্ভু (শিব শম্ভু ভোলা) + ल বা ले (এর) + ग्राम গ্রাম (সম্প্রদায়/গ্রাম) + मुख्यस्य মূখ্যাশয় (প্রধানত) + ब्राह्मणस्य ব্রক্ষ্মাশয় (ব্রাহ্মণদের) + महात्मनः মহা আত্মা (মহান আত্মা) মহা আত্মা ব্রাহ্মণ প্রধানত শিব দুর্গা পূজা সম্প্রদায়द्वादश्यां शुक्ल-पक्षस्य माधवे मासि माधवम्।
जातं ददृशतुः पुत्रं पितरौ हृष्ट-मानसौ।। (১:২:১৫ কল্কি পুরাণ)
জ্যোতিষশাস্ত্র
কল্কি পুরাণে তার জন্মের সময়ের বর্ণনা:
शम्भल ग्राम मुख्यस्य ब्राह्मणस्य महात्मनः
भवने विष्णुयशसः कल्किः प्रादुर्भविष्यति
भवने विष्णुयशसः कल्किः प्रादुर्भविष्यति
द्वादश्यां शुक्ल-पक्षस्य माधवे मासि माधवम्
जातं ददृशतुः पुत्रं पितरौ हृष्ट-मानसौ— কল্কি পুরাণ, ১.২.১৫
পদ্মা
কল্কি পুরাণ অনুসারে ভগবান কল্কি বৃহদ্রথ রাজকন্যা পদ্মাকে বিবাহ করবেন ।
কল্কি পুরাণ:
मत्तो विद्यां शिवाद् अस्त्रं लब्ध्वा वेद-मयं शुकम्।
सिंहले च प्रियां पद्मां धर्मान् संस्थापयिष्यसि।। ১:৩:৯ ततो दिग्-विजये भूपान् धर्म-हीनान् कलि-प्रियान्।
निगृह्य बौद्धान् देवापिं मरुञ् च स्थापयिष्यसि।। ১:৩:১০ श्रुत्वेति वचनं कल्किः शुकेन सहितो मुदा।
जगाम त्वरितो ऽश्वेन शिव-दत्तेन तन्मनाः।। ২:১:৩৯ समुद्र-पारम् अमलं सिंहलं जलसंकुलम्। («=सिंहलद्वीप»)
नाना-विमान-बहुलं भास्वरं मणि-काञ्चनैः।। ২:১:৪০ प्रासादसदनाग्रेषु पताका-तोरणाकुलम्।
श्रेणी-सभा-पणाट्ताल-पुर-गोपुर-मण्दितम्।। ২:১:৪১
শিখ ধর্মমতে কল্কি অবতার

শিখ ধর্মগুরু গোবিন্দ শিং শ্রী দশম গ্রন্থে কল্কি অবতারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি তরবারী হস্তে ঘোড়ায় চড়ে আগমণ করবেন বলে শিখ ধর্মবিশ্বাসীগণ বিশ্বাস করেন।
যে সকল ব্যক্তিগণকে কল্কি অবতার হিসেবে দাবী করা হয়

- বাহাউল্লাহ[4][5][6]
- মির্যা গোলাম আহমেদ[7]
- জ্যঁ-চার্লস-বৌরকুইন, ফরাসী পিয়ানোবাদক এবং নিজেকে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা দাবীকারী।[8]
- মুহাম্মদ - আহমাদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়-এর কিছু সদস্য মুহাম্মাদকে কল্কি বলে বিশ্বাস করেন।[7] এছাড়াও, ১৯৬৯ সালে হিন্দু পন্ডিত "বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়" কল্কি অবতার ও মুহাম্মদ সাহেব নামক বইতে কল্কি অবতার বিষয়ক ভবিষ্যতবাণীর সাথে ইসলামিক নবী মুহাম্মাদের সাদৃশ্যে দেখিয়ে মুহাম্মদকে কল্কি অবতার হিসেবে দাবি করেন[9][10]।[11]
তথ্যসূত্র
- "The Kalki Purana"। Ismaili.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-২০।
- "Appearance of Kalki Avatar"। yoga-philosophy.com। ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৫।
- "Kalachakra History"। International Kalachakra Network। ২০০৬-০৭-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৫।
- Momen, Moojan (১৯৯০)। "Hindu Prophecies"। Hinduism and the Bahá'í Faith। Oxford: George Ronald। আইএসবিএন 0-85398-299-6।
- Buck, Christopher (২০০৪)। "The eschatology of Globalization: The multiple-messiahship of Bahā'u'llāh revisited"। Sharon, Moshe। Studies in Modern Religions, Religious Movements and the Bābī-Bahā'ī Faiths। Boston: Brill। পৃষ্ঠা 143–178। আইএসবিএন 90-04-13904-4।
- The Baha'i Faith in India: A Developmental Stage Approach by William Garlington, Occasional Papers in Shaykhi, Babi and Baha'i Studies, No. 2 (June, 1997)
- Juergensmeyer, Mark (২০০৬)। Oxford Handbook of Global Religions। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 520। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫১৩৭৯৮-৯, ISBN (Ten digit): 0195137981।
- http://www.youtube.com/watch?v=eJMT5HkBhZc
- "OUR DIALOGUE * Kaliki Avtar"। Islamic Voice। নভেম্বর ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- "Muhammad in Hindu scriptures"। Milli Gazette। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৬।
- Book: "Kalki Avatar aur Muhammad Sahab" - Dr. Ved Prakash Upadhyay
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে কল্কি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- ভারতীয় পুরাণ ১-এ কল্কি
- ভারতীয় পুরাণ ২-এ কল্কি
- হিন্দু ভবিষ্যদ্বানী: কল্কি পুরাণ থেকে অনুবাদ
- কল্কি পুরাণের উপর আলোচনা
- শ্রী দশম গ্রন্থ সাহিব