মৎস্য
মৎস্য (সংস্কৃত: मत्स्य, অর্থাৎ মাছ) হল হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মাছরূপী অবতার, যা কূর্ম-এর পূর্ববর্তী অবতার। সাধারণতঃ এই অবতারটিকে বিষ্ণুর প্রথম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, মৎস্য পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিরাট বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। মৎস্য একটি বৃহদায়তন মাছ, অথবা তাঁর শরীরের উর্ধাংশ পুরুষ মানুষের ও নিম্নাংশ মাছের।
- এই নিবন্ধটি বিষ্ণুর অবতার সম্পর্কিত। মৎস্য নামের প্রাচীন রাজ্য সম্পর্কে জানতে হলে দেখুন মৎস্য রাজ্য। মৎস্য নামের জলচর জীবটি সম্পর্কে জানতে হলে দেখুন মাছ।
মৎস্য | |
---|---|
![]() বিষ্ণুর মৎস্য অবতার | |
দেবনাগরী | मत्स्य |
অন্তর্ভুক্তি | বিষ্ণুর অবতার |
অস্ত্র | সুদর্শন চক্র ও গদা |
প্রাচীন কালে, মৎস্যকে ব্রহ্মার অবতার হিসেবে গণ্য করা হলেও, পরবর্তী কালে একে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে মানা হয়। মৎস্য মনুকে বিধ্বংসী বন্যা সম্পর্কে পূর্বসতর্ক করে এবং তাকে পৃথিবীর সমস্ত শস্য ও জীবসমূহকে একটি নৌকায় জড়ো করতে বলে। বন্যার ক্ষণ উপস্থিত হলে মৎস্য মনু, সপ্তর্ষি ও জিনিসপত্র সমেত নৌকাটিকে টেনে নিয়ে রক্ষা করে। কিন্তু কাহিনীর পরবর্তী সংস্করণে দেখানো হয়েছে, পবিত্র বেদগুলি একটি অসুর চুরি করে এবং মৎস্য ঐ অসুরকে বধ করে বেদগুলি উদ্ধার করেন।
কাহিনী
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি,[1] বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।
প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।

পাদটীকা
- Asiatic Soc. Res, Sir William Jones, Vol.i.230ff