বিঠোবা
বিঠোবা হলেন একজন হিন্দু দেবতা। তিনি বিট্ঠল ও পাণ্ডুরঙ্গ নামেও পরিচিত। প্রধানত ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে তার পূজা প্রচলিত। বিঠোবাকে সাধারণভাবে হিন্দু দেবতা বিষ্ণু অথবা তার অবতার কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ মনে করা হয়। বিঠোবার মূর্তিতে তাকে এক কৃষ্ণবর্ণ বালক রূপে দেখা যায়। তিনি তার দুই হাত কোমরে রেখে কনুই দু-টি বাইরের দিকে বাঁকিয়ে একটি ইটের উপর দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনও কোনও মূর্তিতে তার পাশে তার প্রধানা মহিষী রুখমাইকেও (রুক্মিণী) দেখা যায়।
বিঠোবা বিট্ঠল পাণ্ডুরঙ্গ | |
---|---|
![]() পণ্ঢরপুর বিট্ঠল মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ | |
দেবনাগরী | विठोबा विठ्ठल पांडुरंग |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Viṭhobā Viṭṭhala Paṇḍuraṇga |
অন্তর্ভুক্তি | বিষ্ণু বা কৃষ্ণের রূপভেদ |
আবাস | পণ্ঢরপুর |
বাহন | গরুড় (বিষ্ণুর রূপভেদ হিসেবে পূজিত হলে) |
মহারাষ্ট্রের একেশ্বরবাদী, আচারানুষ্ঠান-বিরোধী ভক্তিবাদী বারকরী [1][2] ও কর্ণাটকের হরিদাসীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান উপাস্য দেবতা হলেন বিঠোবা। পণ্ঢরপুর বিট্ঠল মন্দির হল বিঠোবার প্রধান মন্দির। বিঠোবা-কেন্দ্রিক কিংবদন্তিগুলির প্রধান চরিত্র হলেন তার ভক্ত পুন্ডলিক। কথিত আছে, তিনিই বিঠোবাকে পণ্ঢরপুরে নিয়ে আসেন এবং তারই জন্য বিঠোবা বারকরী ধর্মের সন্ত-কবিদের রক্ষাকর্তার ভূমিকা গ্রহণ করেন। বারকরী সন্ত-কবিরা অভঙ্গ নামে এক প্রকার স্বতন্ত্র ভক্তিমূলক গীতিকবিতার রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। মারাঠি ভাষায় রচিত এই গীতিকবিতাগুলিতে বিঠোবার মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে। হরিদাসের স্তোত্রাবলি ও সামগ্রিকভাবে ব্যবহার্য আরাত্রিক ভজনগুলির মারাঠি সংস্করণও বিঠোবা-কেন্দ্রিক ভক্তিসাহিত্যের অঙ্গ। বিঠোবার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলি হল আষাঢ় মাসের শয়নী একাদশী ও কার্তিক মাসের প্রবোধিনী একাদশী।
বিঠোবা ও তার ধর্মানুষ্ঠানের ইতিহাস-রচনার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কিত। এমনকি তার নামটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। একাধিক ভারততত্ত্ববিদের ধারণা, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বিঠোবার পূজা প্রচলিত রয়েছে। অতীতে তাকে বীরশিলা অথবা গ্রামদেবতা অথবা শিবের বিশেষ এক রূপ অথবা জৈন সন্ত রূপে পূজা করা হয়েছে। এমনও হতে পারে, বিভিন্ন শ্রেণির ভক্তেরা বিভিন্ন সময়ে এই সব ক-টি রূপেই তাকে পূজা করেছিলেন। তার কাল্ট ও তার প্রধান মন্দিরটিও একই রকম বিতর্কিত। তবে খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী থেকেই যে দু-টির অস্তিত্ব ছিল, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
নাম-ব্যুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম

বিঠোবা (মারাঠি: विठोबा, Viṭhobā) বিট্ঠল, পাণ্ডুরঙ্গ, পণ্ঢরীনাথ, হরি, নারায়ণ ইত্যাদি একাধিক নামে পরিচিত।
এই নামগুলির ব্যুৎপত্তি ও অর্থ সম্বন্ধে একাধিক তত্ত্ব প্রচলিত। বারকরী মতে, বিট্ঠল (বানানান্তরে বিট্ঠল্, বিঠ্ঠল, বিট্টল ও বিঠল; মারাঠি: विठ्ठल, মারাঠি: विठ्ठल, Viṭṭhala; কন্নড়: ವಿಠ್ಠಲ, তেলুগু: విఠ్ఠల ও তামিল: விட்டல்; Viṭhala) শব্দটি সংস্কৃত-মারাঠি বিট (অর্থাৎ 'ইট') ও ঠল (অর্থাৎ 'দণ্ডায়মান'; এই শব্দটি সংস্কৃত স্থল শব্দটি থেকে উৎসারিত) শব্দ দু-টি নিয়ে গঠিত। এইভাবে ধরলে বিট্ঠল শব্দটির অর্থ 'যিনি ইটের উপর দণ্ডায়মান'।[3] প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম ক্রুক এই ব্যাখ্যাটিকে সমর্থন করেছেন।[4] বিঠোবার মূর্তিতে দেখা যায়, তিনি দুই হাত কোমরে রেখে একটি ইটের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। এই দণ্ডায়মান ভঙ্গিমাটির সঙ্গে তার ভক্ত পুণ্ডলিকের কিংবদন্তির একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
বারকরী সন্তকবি তুকারাম অবশ্য এই নামটির অন্য একটি অর্থ করেছেন। তার মতে বিট্ঠল নামটি বিট্ঠ (অজ্ঞতা) ও ল (যিনি গ্রহণ করেন) শব্দ দু-টির সহযোগে গঠিত। অর্থাৎ বিট্ঠল শব্দের অর্থ 'যিনি জ্ঞানালোক-বঞ্চিত নিষ্পাপ মানুষদের গ্রহণ করেন'।[5] ইতিহাসবিদ রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর আরেকটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তার মতে, কন্নড় ভাষায় ‘বিষ্ণু’ শব্দটির বিকৃত রূপ ‘বিট্ঠু’ মারাঠি ভাষায় গৃহীত হয়। সেই সঙ্গে –‘ল’ বা –‘ব’ (মারাঠি ভাষায় যার অর্থ ‘পিতা’) শব্দটি সম্মানার্থে যুক্ত করা হয়। এইভাবেই ‘বিট্ঠল’ বা ‘বিঠোবা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়।[6] উল্লেখ্য, খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দী থেকেই মারাঠি ও কন্নড় জাতির মধ্যে সংস্কৃত ‘ষ্ণ’ (ṣṇ (/ʃn/) যুক্তাক্ষরটির বিকৃত রূপ ‘ট্ঠ’ (ṭṭh (/ʈʈʰ/) যুক্তাক্ষরটির ব্যবহার প্রচলিত ছিল। সেই কারণে ‘বিষ্ণু’ শব্দটি হয়ে যায় ‘বিট্ঠু’।[7]
ডেকান কলেজের বিশেষজ্ঞ গবেষক এম. এস. মেটের অনুমান, পুণ্ডলিক ছিলেন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। মেট মনে করেন, হৈসল রাজা বিষ্ণুবর্ধনকে রাজি করিয়ে পণ্ঢরপুরের বিষ্ণুমন্দিরটি নির্মাণ করানোর ব্যাপারে পুণ্ডলিকই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বিষ্ণুবর্ধনের অপর নাম ছিল বিট্টিদেব। প্রতিষ্ঠাতা-রাজা বিট্টিদেবের নামানুসারেই পরবর্তীকালে এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতার নামকরণ করা হয় বিট্ঠল।[8] এই নামটির অন্যান্য রূপগুলি হল বিঠুরায়া (রাজা বিট্ঠল) ও বিঠায়ী (বিট্ঠল মাতা)। গুজরাতের অধিবাসীরা এর সঙ্গে –‘নাথ’ (‘প্রভু’) উপসর্গটি যুক্ত করে ‘বিট্ঠলনাথ’ কথাটির প্রচলন ঘটিয়েছেন।[9] এর সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে সম্মানসূচক –‘জি’ অনুসর্গটিও যুক্ত করে বিঠোবাকে বিট্ঠলনাথজি বলা হয়। এই নামটি সাধারণত পুষ্টিমার্গ সম্প্রদায়ে প্রচলিত।
পাণ্ডুরঙ্গ (মারাঠি: पांडुरंग, কন্নড়: ಪಾಂಡುರಂಗ, তেলুগু: పాండురంగ; সকল ক্ষেত্রেই টেমপ্লেট:IAST3) হল বিঠোবার একটি জনপ্রিয় নাম। এই নামটি পাণ্ডুরং ও পাণ্ডরং বানানেও লেখা হয়। সংস্কৃত ভাষায় নামটির অর্থ 'শ্বেতবর্ণ দেবতা'। জৈন সন্ত-গ্রন্থকার হেমচন্দ্রের (১০৮৯-১১৭২) বলেছেন, এই নামটি রুদ্র-শিবের বৈশিষ্ট্যসূচক নাম হিসেবেও ব্যবহৃত হত। উল্লেখ্য, বিঠোবার গায়ের রং কালো বলে বর্ণিত হলেও তাকে "শ্বেতবর্ণ দেবতা" বলা হত। ভাণ্ডারকর এই স্ববিরোধী ধারণার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, পাণ্ডুরঙ্গ সম্ভবত পণ্ঢরপুরে পূজিত শিবের একটি নাম। এই শিবমন্দিরটি এখনও পণ্ঢরপুরে রয়েছে। পরবর্তীকালে বিঠোবা কাল্টের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে পাণ্ডুরঙ্গ নামটি বিঠোবার নামে পরিণত হয়।[10] অন্য একটি তত্ত্ব অনুসারে, বিঠোবা সম্ভবত প্রথম দিকে এক শৈব দেবতা ছিলেন। পরবর্তীকালে তাকে বিষ্ণুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এইভাবেই পাণ্ডুরঙ্গ শব্দটি বিঠোবার নাম হিসেবে প্রচলিত হয়।[11] যদিও ক্রুকের মতে, পাণ্ডুরঙ্গ নামটি পান্ডরাগ (অর্থাৎ পণ্ডরগের অধিবাসী) শব্দটির সংস্কৃতায়িত রূপ। এটি পণ্ঢরপুরের পুরনো নামটির প্রেক্ষিতে এসেছে।[4] বিঠোবার পণ্ঢরীনাথ নামটির অর্থ ‘পণ্ঢরীর (পণ্ঢরপুরের অপর নাম) প্রভু’।
সর্বশেষে, বিঠোবাকে বৈষ্ণবধর্মে প্রচলিত বিষ্ণুর অন্যান্য নাম হরি ও নারায়ণ ইত্যাদির মাধ্যমেও চিহ্নিত করা হয়।[12]
উৎস ও বিকাশ
বিঠোবা উপাসনার ঐতিহাসিক বিকাশলাভের পুনর্নির্মাণের বিষয়টি অত্যন্ত বিতর্কিত। বিশেষত, প্রথম যুগের বিঠোবা উপাসনা বিষয়ে একাধিক তত্ত্ব উত্থাপিত হয়েছে। কোন সময় তিনি এক স্বতন্ত্র দেবতা রূপে পূজিত হতে শুরু করেন, সেই বিষয়ে একাধিক মতামত রয়েছে। পাণ্ডুরঙ্গাষ্টকম্ স্তোত্র নামে একটি স্তোত্র লিখিত হয়েছিল। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দীতে আদি শঙ্কর এই স্তোত্রটি রচনা করেন। এই স্তোত্র থেকে অনুমান করা হয়, প্রাচীন কালেও বিঠোবা উপাসনা প্রচলিত ছিল।[13]
আ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ দ্য ডেকান গ্রন্থের রচয়িতা রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল এটনের মতে,[11] আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বিঠোবা এক গ্রামদেবতা রূপে প্রথম পূজিত হন। বিঠোবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাটি বিহারের আহিরদের গবাদি পশুর দেবতা বীর কুয়ারের অনুরূপ। বর্তমানে বীর কুয়ারকে কৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।[14] সম্ভবত পরবর্তীকালে বিঠোবাকে শৈব দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং অন্যান্য গ্রামদেবতার মতো তাকে শিব রূপে চিহ্নিত করা হয়। পণ্ঢরপুরের বিঠোবা মন্দিরটি শিব মন্দির দ্বারা পরিবৃত। বিশেষত বিঠোবার ভক্ত পুন্ডলিকের মন্দিরটিও শিবের মন্দির। বিঠোবার মূর্তিতে শিবের প্রতীক লিঙ্গাকৃতি মুকুট দেখা যায়। উক্ত তত্ত্বটির সমর্থনে এই সব প্রমাণ দাখিল করা হয়। যদিও খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীর পর থেকে নামদেব, একনাথ ও তুকারাম প্রমুখ সন্তকবিরা বিঠোবাকে বিষ্ণু হিসেবে চিহ্নিত করেন।[11]
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের ক্রিস্টিয়ান লি নোভেজক বলেছেন, খ্রিস্টীয় ১০০০ অব্দের আগে কর্ণাটক থেকে বিঠোবা উপাসনার প্রথা পণ্ঢরপুরে প্রবেশ করেছিল। পণ্ঢরপুর আগে ছিল শৈব শহর। কিন্তু পরবর্তীকালে সম্ভবত কৃষ্ণ-উপাসক মহানুভব সম্প্রদায়ের প্রভাবে এই শহরটি বৈষ্ণব তীর্থস্থানে পরিণত হয়। পণ্ঢরপুর শহরে শৈব সম্প্রদায়ের বিক্ষিপ্ত নিদর্শনগুলিকে এই তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়।[15]

শ্রীবিট্ঠল: এক মহাসমন্বয় গ্রন্থের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী ধর্মীয় ইতিহাসবিদ আর. সি. ধেরে এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, বিঠোবা উপাসনা সম্ভবত প্রাচীনতর—“বৈদিক বা প্রাক-বৈদিক” এবং সেই অর্থে কৃষ্ণ উপাসনার প্রথা অপেক্ষাও প্রাচীন।[16] এই তত্ত্ব অনুসারে, বিঠোবা গবাদি পশু রক্ষাকারী বিভিন্ন স্থানীয় বীরপুরুষের সংমিশ্রিত রূপ। এই সব বীরপুরুষেরা সকলেই ঐতিহাসিক চরিত্র। মহারাষ্ট্রের গবাদি পশুর মালিকশ্রেণি ধাঙ্গরেরা প্রথম বিঠোবার পূজার প্রচলন ঘটান। সম্ভবত যাদব রাজবংশের উত্থানের ফলে বিঠোবাকে কৃষ্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে মহিমান্বিত করা হয়। উল্লেখ্য, যাদব রাজবংশের পূর্বপুরুষরা ছিলেন পশুপালক এবং কৃষ্ণকেও প্রায়শই গোপালক হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই বৈষ্ণবকরণের ফলে শৈব পুন্ডলিক মন্দিরটিকে ভক্ত পুন্ডলিকের বৈষ্ণব মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, পুন্ডলিকই বিঠোবাকে পণ্ঢরপুরে নিয়ে এসেছিলেন।[17] বিঠোবাকে বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টাও সম্ভবত করা হয়েছিল। বর্তমানে হিন্দুধর্মে বিঠোবা ও গৌতম বুদ্ধ উভয়কেই বিষ্ণুর রূপ মনে করা হয়।[18]
বিঠোবাকে বৈষ্ণবধর্মের কৃষ্ণ-বিষ্ণুর সঙ্গে যুক্ত করা হলেও, কৃষ্ণের চরিত্রে গোপীদের সঙ্গে লীলার যে আদিরসাত্মক ঘটনাগুলি যুক্ত করা হয়, বিঠোবার মধ্যে সেগুলি অনুপস্থিত। বিঠোবা চরিত্রে দেখা যায় “ভক্তদের প্রতি তাঁর স্নেহ, এক অনন্ত ভালোবাসা ও কোমলতা। এই প্রীতি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার সমতুল্য... গাভী যেমন তাঁর দূরবর্তী বৎসের জন্য আকুলভাবে প্রতীক্ষা করে, বিঠোবাও তেমনই তাঁর ভক্তদের জন্য আকুল প্রতীক্ষায় থাকেন।”[19]
দ্য কাল্ট অফ বিঠোবা গ্রন্থের রচয়িতা জি. এ. ডেলেউরির মতে, বিঠোবার মূর্তিটি একটি ‘বীরগল’ (বীরপ্রস্তর) পরবর্তীকালে এটি বিষ্ণুর কৃষ্ণ রূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পুন্ডলিক পৌরাণিক ও আনুষ্ঠানিক পূজা উপাসনাকে একটি অধিকতর আদর্শায়িত ভক্তি উপাসনায় রূপান্তরিত করেন। তিনি এই ভক্তি উপাসনার “কেন্দ্র থেকে বর্ণভেদ প্রথা ও আনুষ্ঠানিক পৌরহিত্য প্রথাকে বাদ দেন।”[20] ভারততত্ত্ববিদ ড. তিলকের মতে, বিঠোবার উদ্ভব হয়েছিল ধ্রুপদি অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদী দেবদেবীর “বিদ্যমান দেবমণ্ডলীর এক বিকল্প” হিসেবে। বিঠোবার উদ্ভবের সঙ্গে বারকরী বা “নতুন ধরনের গৃহী ভক্তে”র উদ্ভব আনুষঙ্গিক ঘটনা। বিষ্ণু ও শিব উভয়েই ব্রাহ্মণ (পুরোহিত শ্রেণির) নিয়ন্ত্রণাধীন জটিল আনুষ্ঠানিক পূজার দ্বারা সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে বিঠোবা হলেন “নিম্নবর্গের [এমন এক] দেবতা, যিনি ক্রমান্বয়ে মানুষে পরিণত হয়েছেন।”[21] স্টিভেনসনের (১৮৪৩) মতে, বিঠোবা সম্ভবত ছিলেন এক জৈন সন্ত। কারণ, বিঠোবার মূর্তিগুলি জৈন মূর্তিগুলির অনুরূপ। [22]
পণ্ঢরপুর মন্দির ও উৎকীর্ণ লিপি

বিঠোবার ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা প্রায়শই পণ্ঢরপুরে বিঠোবার প্রধান মন্দিরটির কাল নিরুপণকে গুরুত্ব দেন। এই মন্দিরটিকেই বিঠোবার প্রাচীনতম মন্দির মনে করা হয়।[23] এই মন্দিরের সবচেয়ে পুরনো অংশটি খ্রিস্টীয় ১২শ ও ১৩শ শতাব্দীতে নির্মিত। মন্দিরের অধিকাংশ অংশ নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ১৭শ শতাব্দীতে। উল্লেখ্য, মন্দিরটি এর মধ্যে কখনই বিলুপ্ত হয়নি।[24] ভাণ্ডারকরের মতে, এই মন্দির প্রথম কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার তারিখটি অস্পষ্ট। তবে তিনি মনে করেন, খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে এই মন্দিরটির অস্তিত্ব ছিল।[6] এস. জি. তুলপুলের মতে, ১১৮৯ সালেও এই মন্দিরটির অস্তিত্ব ছিল।[24] মন্দিরের বর্তমান স্থানে একটি ছোটো বিঠোবা মন্দিরের প্রতিষ্ঠার কথা ১১৮৯ সালের একটি স্মারকে উৎকীর্ণ রয়েছে। এর থেকেই তুলপুলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বিঠোবা উপাসনা ১১৮৯ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববর্তী।[25]
বর্তমান বিঠোবা মন্দিরের একটি কড়িকাঠে প্রাপ্ত ১২৩৭ সালের একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, হোয়সল রাজা সোমেশ্বর বিট্ঠলের ভোগের ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি গ্রাম দান করেছিলেন।[9][26] ১২৪৯ সালের একটি তাম্রলিপি থেকে জানা যায়, যাদব রাজা কৃষ্ণ বিষ্ণুর উপস্থিতিতে ভীমরথী নদীর তীরে পুণ্ডরীকক্ষেত্র গ্রামটি তার এক সেনাপতিকে দান করেন।[6] আরেকটি শিলালিপিতে পাণ্ডুরঙ্গপুরে এক যজ্ঞের বিবরণ পাওয়া যায়। এই যজ্ঞের ফলে “জনসাধারণ ও দেবতাদের সঙ্গে বিট্ঠল তুষ্ট হন।”[10] অর্থাৎ, খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী থেকে এই শহরটি পাণ্ডুরঙ্গের শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। মন্দিরের মধ্যে একটি শিলালিপি থেকে ১২৭২ থেকে ১২৭৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দাতার থেকে প্রাপ্ত উপহারের তালিকা পাওয়া যায়। এই দাতাদের মধ্যে যাদব রাজা রামচন্দ্রের মন্ত্রী হেমাদ্রি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[9]
রাণাডে মনে করেন যে, অলন্দিতে প্রাপ্ত উৎকীর্ণ লিপিটিই বিঠোবা ও রুখমাই সংক্রান্ত প্রাচীনতম উৎকীর্ণ লিপি। তিনি বলেছেন, এই লিপিটি ১২০৯ সালে উৎকীর্ণ হয়।[27] যদিও পাণ্ডরঙ্গ নামটি একটি রাষ্ট্রকূট তাম্রলিপিতেও পাওয়া যায়। সেই লিপিটি খ্রিস্টীয় ৫১৬ অব্দের। এই লিপিটির কথা উল্লেখ করে পাণ্ডে বলেছেন যে, বিঠোবার কাল্ট খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল।[28]
কেন্দ্রীয় বিগ্রহ

পণ্ঢরপুর মন্দিরে বিঠোবার কেন্দ্রীয় মূর্তির দৈহিক বৈশিষ্ট্য এবং সেই সম্পর্কে বিভিন্ন পুথিগত সূত্র থেকে বিঠোবা উপাসনা সম্পর্কে একাধিক তত্ত্ব জন্ম নিয়েছে। স্কন্দপুরাণে উল্লিখিত পুন্ডলিকের কিংবদন্তিটির একটি পাঠ (নিচে কিংবদন্তি দেখুন) থেকে স্যান্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, পণ্ঢরপুরে দুটি পৃথক মূর্তি নিশ্চয় ছিল। এই দুটির এক-একটি যথাক্রমে ‘তীর্থ’ ও ‘ক্ষেত্র’ প্রকৃতির। প্রথম মূর্তিটি ছিল ‘তীর্থ মূর্তি’। এটিকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে একটি পবিত্র জলাশয়ের (‘তীর্থ’) কাছে স্থাপন করা হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে মূর্তিটি ছিল পশ্চিমাস্য। এটি পুন্ডলিকের মন্দিরের কাছে ভীমা নদীর দিকে মুখ করে রাখা ছিল। স্যান্ডের মতে, দ্বিতীয় মূর্তিটি ছিল ‘ক্ষেত্র মূর্তি’। এটি একটি পবিত্র শক্তিস্থলে (‘ক্ষেত্র’) স্থাপিত ছিল। এই ক্ষেত্রে মূর্তিটি ছিল পূর্বাস্য। ১১৮৯ সাল থেকে বর্তমান মন্দিরটি যে পাহাড়ে অবস্থিত সেখানেই এই মূর্তিটি স্থাপিত ছিল। স্যান্ডের মতে, বিঠোবার উপাসনা তার মন্দির প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী সময় থেকেই প্রচলিত ছিল।[29]
ডেলেউরির মতে, মন্দিরটির হেমাদপন্থী স্থাপত্যশৈলী থেকে বোঝা যায় এটি খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে নির্মিত। তবে বিঠোবার মূর্তিটি আরও প্রাচীনতর শৈলীর। তাই সম্ভবত এটি আরও আগে পণ্ঢরপুরের কোনো প্রাচীনতর ও ক্ষুদ্রতর মন্দিরের জন্য খোদিত হয়েছিল। এই মন্দিরের ভাস্কর্যশৈলী যাদব (১১৭৫-১৩১৮), আনহিবাদ চালুক্য (৯৪৩-১২১০) এবং আজমের চৌহান (৬৮৫-১১৯৩) যুগেরও পূর্ববর্তী। পণ্ঢরপুরের বিঠোবার মূর্তিটির মতো মূর্তি অন্য কোনো স্থায়ী বিষ্ণু মন্দিরে না থাকলেও ডেলেউরি পণ্ঢরপুরের মূর্তিটি এবং খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীতে নির্মিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উদয়গিরি গুহাসমূহের কোমরে হাত দেওয়া ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো বিষ্ণুমূর্তিগুলির মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তবে তার মতে, এই দুটি দুই ভিন্ন ধারার ভাস্কর্য।[9]
পুন্ডলিক
ভক্ত পুন্ডলিক হলেন বিঠোবার কিংবদন্তিগুলির এক প্রধান চরিত্র। তিনিই বিঠোবার ইঁটটি ছুঁড়েছিলেন (নিচে কিংবদন্তি দেখুন)। সাধারণভাবে তাকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এবং বিঠোবা-কেন্দ্রিক বারকরী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত মনে করা হয়।[30] রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর মনে করেন, পুন্ডলিক ছিলেন বারকরী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিই মারাঠা দেশে এই সম্প্রদায়কে প্রসারিত করেছিলেন।[31] স্টিভেনসন (১৮৪৩) আরও একধাপ উঠে বলেছেন, তিনি সম্ভবত জৈন বা বৌদ্ধ ছিলেন। কারণ বারকরী প্রথায় জৈন ও বৌদ্ধ নীতিবাদের সমন্বয় দেখা যায়। এছাড়া বিঠোবাকে বুদ্ধ-রূপী বিষ্ণু মনে করা হয়।[32] ফ্রেজার, এডওয়ার্ডস ও পি. আর. ভাণ্ডারকর (১৯২২) মনে করেন, পুন্ডলিক শিব ও বিষ্ণুকে এক করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের মতে, পুন্ডলিকের সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল কর্ণাটকে।[33] রাণাডে (১৯৫৩) বলেছেন যে, পুন্ডলিক ছিলেন এক কন্নড় কবি। তিনি শুধুমাত্র বারকরী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, বরং বিঠোবার প্রথম উল্লেখযোগ্য ভক্ত বা পণ্ঢরপুর মন্দিরের প্রথম প্রধান পুরোহিতও ছিলেন।[34] উপাধ্যায়ও মনে করেন যে, পুন্ডলিক পণ্ঢরপুর মন্দিরের প্রথম প্রধান পুরোহিত ছিলেন। কিন্তু তিনি পুন্ডলিকের কন্নড় উৎসের তত্ত্বটি স্বীকার করেন না।[33] এম. এস. মেটের মতে, পুন্ডলিক হোয়সল রাজা বিষ্ণুবর্ধনকে পণ্ঢরপুরের বিষ্ণু মন্দিরটি নির্মাণে রাজি করানোর কাজে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সেই হিসেবে তিনি নিজে ছিলেন খ্রিস্টীয় ১২শ শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব।[8] রিসিড (১৯৬৫), ধনপালবর (১৯৭২) ও ভডেভিল (১৯৭৪) পুন্ডরিকের ঐতিহাসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা তাকে পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে খারিজ করে দিয়েছেন।[35]
চিহ্নিতকরণ
প্রথম দিকে বিষ্ণু, কৃষ্ণ ও শিব – এই তিন হিন্দু দেবতা বিঠোবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হিন্দুরা বুদ্ধকে বিষ্ণুর নবম অবতার মনে করেন। সেই সূত্রে বুদ্ধও বিঠোবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও বারকরী সম্প্রদায় মনে করে বিঠোবাই হলেন ‘স্বরূপ’ (মূল দেবতা)[36] বিষ্ণু বা স্বয়ং বিষ্ণু। তিনি কৃষ্ণের মতো বিষ্ণুর অবতার নন।[37] অবশ্য বিঠোবার কিংবদন্তি ও স্ত্রীগণ তাকে কৃষ্ণের সঙ্গেই যুক্ত করেছে। খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে উদ্ভুত কৃষ্ণ-উপাসক মহানুভব সম্প্রদায়ও বিঠোবাকে কৃষ্ণ হিসেবে স্বীকার করেনি। বরং প্রায়শই বিঠোবার নিন্দাও করেছে।[38]
কোনও কোনও সম্প্রদায়ে বিঠোবাকে শিবের রূপভেদ হিসেবেও পূজা করা হয়। ধাঙ্গরেরা এখনও বিঠোবাকে বীরোবা নামে এক দেবতার ভ্রাতা এবং এক শৈব দেবতা মনে করে। তারা বিঠোবাকে বৈষ্ণব দেবতা মনে করে না।[39] আন্ডারহিলের মতে, পণ্ঢরপুরের মন্দিরটি বিষ্ণু-শিব উপাসক ভাগবত সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করা বিষ্ণু-শিব যুগলের মন্দির। ভাগবত সম্প্রদায়ের কাছে ‘ভাগবত’ বলতে বিষ্ণু-শিব রূপী ঈশ্বরকেই বোঝায়।[40] যদিও পণ্ঢরপুর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বডবা পরিবারভুক্ত ব্রাহ্মণদের মতে, “বিঠোবা বিষ্ণুও নন, শিবও নন। বিঠোবা হলেন বিঠোবা।”[41] তবে মন্দিরের কয়েকজন পুরোহিতের মতে, বিঠোবার মূর্তির বক্ষস্থলে অঙ্কিত চিহ্নগুলি থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কৃষ্ণরূপী বিষ্ণু।[9]
মহারাষ্ট্রের কোনও কোনও মন্দির ভাস্কর্যে ও হিন্দু জ্যোতিষ পঞ্জিকায় বিষ্ণুর নবম অবতারের ক্ষেত্রে বুদ্ধের পরিবর্তে বিঠোবাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। খ্রিস্টীয় ১৭শ শতাব্দীতে মারাঠা শিল্পীরা বিষ্ণুর অবতারগণের চিত্র সংবলিত একটি প্যানেলে বুদ্ধের স্থানে পণ্ঢরপুরের বিঠোবার মূর্তি খোদাই করেন। শিবনেরি গুহাসমূহেও একই ছবি দেখা যায়।[42] স্টিভেনসন বলেছেন যে, ‘বিঠোবা-ভক্তে’রা হলেন ‘বৌদ্ধ-বৈষ্ণব’। কারণ তারা বিঠোবাকে বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধ মনে করেন।[43] কোনও কোনও সন্তকবিও বিঠোবাকে বুদ্ধের একটি রূপ হিসেবে স্তুতি করেছেন।[44] ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত দলিত বৌদ্ধ নেতা বি. আর. আম্বেডকর মনে করতেন যে, পণ্ঢরপুরের বিঠোবা বিগ্রহটি প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধের মূর্তি।[45]
মূর্তিতত্ত্ব
সকল বিঠোবা মূর্তিই পণ্ঢরপুরের কেন্দ্রীয় বিগ্রহটির আদলে গঠিত। পণ্ঢরপুরের কেন্দ্রীয় বিগ্রহটি কালো ব্যাসাল্ট পাথরে নির্মিত। এটির উচ্চতা ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.১৪ মি)। বিঠোবাকে এক কৃষ্ণবর্ত তরুণ বালকের রূপে চিত্রিত করা হয়। সন্তকবিরা তাকে ‘কৃষ্ণবর্ণ পরব্রহ্ম’ বলে উল্লেখ করেন।[46] তার মস্তকে থাকে একটি শাঙ্কবাকার উষ্ণীষ বা মুকুট। এটিকে শিবের প্রতীক লিঙ্গ রূপে ব্যাখ্যা করা হয়। এই জন্য জেলিয়ট বলেছেন যে, বিঠোবা শিব ও বিষ্ণু উভয়েরই প্রতিনিধিত্ব করেন।[47] প্রথম বারকরী সন্তকবি ধ্যানেশ্বর (খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী) বলেছেন যে, বিঠোবা (বিষ্ণু) বৈষ্ণবধর্ম মতে বিষ্ণির প্রথম ও প্রধান ভক্ত শিবকে মস্তকে ধারণ করেন।[48]
ভক্ত পুন্ডলিক যে ইঁট ছুড়েছিলেন, বিঠোবা তারই উপর কোমরে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি তুলসী কাঠের মালা গলায় ধারণ করেন। এই মালায় কিংবদন্তির কৌস্তভ মণি গ্রথিত থাকে। বিঠোবার কানে থাকে ‘মকরকুণ্ডল’ (মৎস্যাকৃতি কানের দুল)। এই দুলটিকে সন্তকবি তুকারাম বিষ্ণুর মূর্তিতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। পণ্ঢরপুরের বিঠোবা বিগ্রহের বাঁ হাতে থাকে একটি শঙ্খ (শাঁখ) ও ডান হাতে থাকে একটি চক্র বা পদ্মফুল। এই সবই প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে বিষ্ণুর সঙ্গে যুক্ত। বিঠোবার কোনও কোনও মূর্তিতে দেখা যায় বিঠোবার ডান হাতটি একটি মুদ্রার ভঙ্গিতে ন্যস্ত। এই মুদ্রাটিকে প্রথাগতভাবে বরদা মুদ্রা বলে ভুল করা হয়। কারণ, পণ্ঢরপুরের মূর্তিতে বরদা মুদ্রা দেখা যায় না।[4][9] সাধারণত বিঠোবার দ্বিভূজ মূর্তিই বেশি দেখা য্যা। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চতুর্ভূজ মূর্তিও দেখা যায়।[49]
পণ্ঢরপুরের বিগ্রহটিকে যখন কার্যনির্বাহী পুরোহিত ভক্তদের দর্শনের জন্য বস্ত্রাবৃত অবস্থায় রাখেন না, তখন সম্পূর্ণ ভাস্কর্যে ফুটে ওঠা তার শরীরের বিস্তারিত পুরুষোচিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়। যদিও খুব ভালো করে দেখলেই এই প্রস্তরবিগ্রহে একটি কটিবস্ত্রের রেখা দেখা যায়। সেটির উপর খুব সরু ও হালকা ভাবে খোদিত একটি কোমরবন্ধও চোখে পড়ে।[4][9] বিঠোবার অন্যান্য মূর্তি ও ছবিতে তাকে বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এই বস্ত্রটি ‘পীতাম্বর’ বা হলুদ কাপড়। সেই সঙ্গে তার গায়ে সোনার গয়নাও থাকে। এই সাজেই নিত্যপূজার সময় পুরোহিতরা বিঠোবাকে সজ্জিত করেন।
পণ্ঢরপুরের বিগ্রহটির বুকের বাঁ দিকে ‘শ্রীবৎসলাঞ্ছন’ নামে একটি চিহ্ন আছে। কথিত আছে এটি একটি সাদা চুলের কুণ্ডলী। সাধারণত এই চিহ্ন বিষ্ণু বা কৃষ্ণের মূর্তিতে দেখা যায়।[50] মূর্তির বুকের ডান দিকে ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি অঙ্গুরীয়াকার চিহ্ন, ‘মেখলা’ (তিনটি তারবিশিষ্ট একটি কটিবন্ধ), দুই পায়ের ফাঁকে মাটিতে গাঁথা একটি দীর্ঘ লাঠি (‘কাঠি’) এবং কনুইতে জোড়া আঙটি ও একটি মুক্তোর বাজুবন্ধ থাকে।[9]
পত্নীগণ
বিঠোবার মূর্তিতে সাধারণত তার বাঁ পাশে তার প্রধান মহিষী রাখুমাইকে দেখা যায়। ‘রাখুমাই’ (বা ‘রাখামাই’) শব্দটির অর্থ ‘মা রুক্মিণী’। প্রথাগতভাবে রুক্মিণীকে কৃষ্ণের স্ত্রী মনে করা হয়। হিন্দুরা সাধারণত কৃষ্ণকে বিষ্ণুর একটি রূপ মনে করে। সেই ক্ষেত্রে কৃষ্ণের স্ত্রী হলেন বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মীর একটি রূপ। রাখুমাইকে কোমরে হাত দিয়ে ইঁটের উপর দণ্ডায়মান উস্থায় দেখা যায়। পণ্ঢরপুর মন্দির চত্বরে রাখুমাইয়ের একটি পৃথক কক্ষ রয়েছে। ঘুর্যে র মতে, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলে রুক্মিণী নামে এক রাজকুমারী ছিলেন। উক্ত অঞ্চলের সঙ্গে তার সংযোগের প্রেক্ষিতে তাকেই রাধার স্থলে বিঠোবার প্রধান মহিষীর মর্যাদা দেওয়া হয়।[51] ভাঙ্গর সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুসারে, রুখুমাই (রাখুমাই) হলেন সম্প্রদায় এবং বিশেষত গবাদি পশুর রক্ষয়িত্রী। এই সম্প্রদায়ে তিনি পদ্মাবতী বা পদুবাই নামে পরিচিত।[11] বিঠোবা ও পদুবাইকে পৃথক মন্দিরে পূজা করা হয়। ধাঙ্গর লোককথায় এর কারণ ব্যাখ্যাত হয়েছে। বিঠোবা তার স্ত্রীকে একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও সংসার থেকে দূরে থাকতেন।[52] রাখুমাই ছাড়া বিঠোবার আরও দুই পত্নীর পূজা প্রচলিত আছে। এঁরা হলেন সত্যভামা ও রাহি (‘রাধা’ শব্দ থেকে উৎপন্ন)। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এঁরা সকলেই কৃষ্ণের স্ত্রী বা প্রেমিকা।[51]
পূজা
বৈষ্ণব ধর্ম |
---|
নিবন্ধসমূহ |
![]() |
|
সম্প্রদায়
|
আচার্য
|
সম্পর্কিত প্রথা
|
![]() |
মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বিঠোবা একজন জনপ্রিয় দেবতা। তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল ও গুজরাতেও বিঠোবার ভক্তেরা রয়েছেন। তবে সম সংখ্যায় নয়।[18] অধিকাংশ মারাঠিই বিঠোবাকে পূজা ও সম্মান করেন। তবে কূলদেবতা (পারিবারিক দেবতা) হিসেবে তিনি জনপ্রিয় নন।[53] বিঠোবার প্রধান মন্দির এবং তার স্ত্রী রাখুমাইয়ের একটি স্বতন্ত্র ও অতিরিক্ত মন্দির পণ্ঢরপুরে অবস্থিত। সেই সূত্রে ভক্তেরা পণ্ঢরপুরকে ‘ভূ-বৈকুণ্ঠ’ (পৃথিবীর যে স্থানে বিষ্ণু অবস্থান করেন) বলেন।[54] ধ্যানেশ্বরের সময়কাল (খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দী) মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও তেলঙ্গানার ভক্তেরা পণ্ঢরপুরে বিঠোবার প্রধান মন্দিরে তীর্থযাত্রায় আসেন।[13]
মহারাষ্ট্রে বিঠোবার পূজার দুটি পৃথক ধারা রয়েছে। প্রথমটি হল বাডব পরিবারের ব্রাহ্মণ পুরোহিত দ্বারা মন্দিরে আনুষ্ঠানিক পূজা এবং দ্বিতীয়টি হল বারকরীদের আধ্যাত্মিক পূজা।[55] আনুষ্ঠানিক পূজায় দিয়ে পাঁচটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। প্রথমটি ভোর তিনটের সময় দেবতার জাগরণের আরতি অনুষ্ঠান। এটিকে বলা হয় ‘কাকডারতি’। এরপর ‘পঞ্চামৃতপূজা’। এই অনুষ্ঠানে ‘পঞ্চামৃত’ নামে পরিচিত পাঁচটি মিষ্ট দ্রব্য দিয়ে পূজা করা হয়। এরপর সকালে ভক্তদের দর্শন দানের জন্য দেবতাকে সাজানো হয়। দুপুর বেলা তৃতীয় অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। এই সময় বিগ্রহকে পুনরায় বস্ত্র পরানো হয় এবং মধ্যাহ্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের নাম ‘মধ্যাহ্নপূজা’। সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় শীতল ভোগ নিবেদনের পর পুনরায় দেবতাকে ভক্তরা ভক্তি নিবেদন করেন। এটিকে ‘অপরাহ্নপূজা’ বলা হয়। শেষ অনুষ্ঠানটি হল ‘শেরারতি’। এটি দেবতাকে শয়ান দেওয়ার আরতি।[56] পণ্ঢরপুরের প্রধান মন্দিরের অনুষ্ঠানগুলির সঙ্গে সঙ্গে কর্ণাটকে বিট্ঠল-কেন্দ্রিক হরিদাস সম্প্রদায়ের প্রথাগুলিও বিকশিত হয়েছে।
বারকরী সম্প্রদায়
বারকরী পন্থ (তীর্থযাত্রী পন্থা) বা বারকরী সম্প্রদায় (তীর্থযাত্রী প্রথা) হল ভারতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈষ্ণব সম্প্রদায়।[57] এটি একটি একেশ্বরবাদী ও ভক্তিবাদী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের মূল হল বিঠোবা উপসনা। প্রথাগত ভাগবত ধর্ম এই সম্প্রদায়ের ভিত্তি।[41] এই সম্প্রদায়টি হল একটি “শৈব-বৈষ্ণব সংমিশ্রণ” এবং “নামমাত্র বৈষ্ণব সম্প্রদায়। এতে অন্যান্য ধর্ম থেকে মুক্তভাবে আদর্শ মিশ্রিত হয়েছে।”[15] মনে করা হয়, এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি কর্ণাটকে। সেখান থেকে এটি মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করে। প্রথম সন্তকবি ধ্যানেশ্বরের সাহিত্যকর্মে বিঠোবাকে ‘কন্নড়’ (কর্ণাটকের অধিবাসী) বলা হয়েছে। সেই থেকেই উক্ত তত্ত্বের উৎপত্তি। যদিও এই শব্দটির অপর একটি ব্যাখ্যা হল “দুর্জ্ঞেয় বা যাঁকে বোঝা দুরূহ”।[46] বারকরী মতের অনুগামী ও গবেষকরা মনে করেন, পুন্ডলিক একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্য এবং তিনিই বিঠোবা কাল্টের প্রতিষ্ঠাতা। শাস্ত্রে উল্লিখিত একটি বাক্য এই তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়। বাক্যটি হল, “পুন্ডলিকবরদা হরি বিট্ঠল!” এটির অর্থ, “হে হরি বিট্ঠল (বিঠোবা), যিনি পুন্ডলিককে একটি বর দিয়েছিলেন।”[58] যদিও জেলিয়টের মতে, এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ধ্যানেশ্বর (অপর বানান জ্ঞানেশ্বর)। তিনি ছিলেন এক ব্রাহ্মণ কবি ও দার্শনিক। খ্রিস্টীয় ১২৭৫-১২৯৬ অব্দের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে তিনি খ্যাতিমান হন।[59] বারকরীরাও একটি উক্তির মাধ্যমে তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এটি হল “দন্যদেব রচিল পায়া”। অর্থাৎ, “ধ্যানেশ্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।”[60]

শূদ্র দরজি নামদেব (খ্রিস্টীয় ১২৭০-১৩৫০ অব্দ) বিঠোবার স্তুতি করে ছোটো ছোটো মারাঠি ভক্তিমূলক কবিতা রচনা করেছিলেন। এগুলিকে ‘অভঙ্গ’ (অর্থাৎ, ‘যা ভগ্ন হয়নি’) বলা হয়। এগুলি তিনি কীর্তনের আকারে বিঠোবার উদ্দেশ্যে গাইতেন। সর্বসমক্ষে ভক্তিমূলক সংগীতের অনুষ্ঠান বিঠোবা ধর্মের প্রসারে সাহায্য করে। এই ধর্মে নারী, শূদ্র ও নিম্নবর্ণের অস্পৃশ্যদেরও গ্রহণ করা হয়েছিল। এঁরা ধ্রুপদী ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মে কিছুটা উপেক্ষিত ছিলেন। মুসলমান শাসনকালে এই ধর্ম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। যদিও বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পর যখন দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধ বাধে, তখন মুসলমান শাসকেরা জনসমর্থন লাভের আশায় মহারাষ্ট্রের ধর্মগুলিকে স্বীকার করে নেন। এই সময় একনাথ (খ্রিস্টীয় ১৫৩৩-৯৯ অব্দ) বারকরী সম্প্রদায়ের পুনরুজ্জীবন ঘটান। শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তুকারাম (খ্রিস্টীয় ১৫৬৮-১৬৫০ অব্দ) নামে এক শূদ্র মুদি বিঠোবা-কেন্দ্রিক প্রথাকে সারা মহারাষ্ট্র অঞ্চলে ছড়িয়ে দেন।[61]
এই সকল সন্তকবি এবং নামদেবের পরিচারিকা জানাবাই প্রমুখ অন্যান্যরা বিঠোবার উদ্দেশ্যে কবিতা রচনা করেছিলেন। মারাঠি কবিতায় শুদ্ধা ভক্তির প্রচার দেখা যায়। এখানে বিঠোবাকে প্রধানত পিতা রূপে দর্শানো হয়। জানাবাই প্রমুখ মহিলা সন্তরা তাকে মাতৃরূপে (বিঠাবাই) দেখেছেন।[62] জানাবাইয়ের মতো মহিলারাই শুধু নয়, বিভিন্ন বর্ণ ও পেশার মানুষেরা বিঠোবার বন্দনা করে অভঙ্গ রচনা করেছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিসোবা খেচর (যিনি ছিলেন গোঁড়া শৈব ও নামদেবের শিক্ষক), নাপিত সেনা নহবি, স্বর্ণকার নরহরি সোনার, মালী সবত মালী, কুম্ভকার গোরা কুম্ভার, নর্তকী কাহ্নোপত্রা, অস্পৃশ্য মহর চোখামেল এবং মুসলমান শেখ মহম্মদ (১৫৬০-১৬৫০)।[63][64] শৈব বা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী যে কোনও ব্যক্তি যদি বিঠোবাকে ‘মায়া-বাপ’ (মাতা-পিতা) হিসেবে এবং পণ্ঢরপুরকে তার ‘মাহের’ (কনের বাপের বাড়ি) হিসেবে গ্রহণ করে তাকেই বর্ণনির্বিশেষে বারকরী হিসেবে গ্রহণ করা হয়।[58] বারকরীরা প্রায়শই বিঠোবা জপ অনুশীলন করেন এবং প্রত্যেক মাসের একাদশীতে উপবাস করেন।[65]
হরিদাস সম্প্রদায়

‘হরিদাস’ শব্দের অর্থ ‘বিষ্ণুর (হরি) দাস’। হরিদাস মতানুসারে, ‘হরিদাসকূট’ বা হরিদাস সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অচলানন্দ বিট্ঠল (খ্রিস্টীয় ৮৮৮ অব্দ)। এটি বৈষ্ণবধর্মের একটি স্বতন্ত্র শাখা। এই সম্প্রদায়ের কেন্দ্র হলেন বিট্ঠল (বিঠোবার হরিদাস-কন্নড় নাম)।[66]
বারকরী সম্প্রদায় যেমন মহারাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত, হরিদাস সম্প্রদায় তেমনই কর্ণাটকের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষজ্ঞ শর্মার মতে, বিঠোবা উপাসনার উৎপত্তি কর্ণাটকে। পরে তা মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল। তার যুক্তি, উপরে ‘বারকরী সম্প্রদায়’ অংশে উল্লিখিত ধ্যানেশ্বরের বিবরণে দ্রষ্টব্য।[67] লুটগেন্ডোর্ফ বলেছেন, বিঠোবা আন্দোলন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজা কৃষ্ণদেবরায়ের রাজগুরু ব্যাসতীর্থের (১৪৭৮-১৫৩৯) প্রভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সেই যুগে বিঠোবা রাজ-পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। কৃষ্ণদেবরায় তার রাজধানী বিজয়নগরে (আধুনিক (হাম্পি) বিট্ঠল মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন।[68]
হরিদাস সম্প্রদায় পণ্ঢরপুর ও হাম্পি উভয় মন্দিরকেই পবিত্র মনে করে। তারা বিট্ঠলকে কৃষ্ণের অন্যান্য রূপের সঙ্গে পূজা করে।[69] হরিদাস সাহিত্য মূলত বিট্ঠল ও কৃষ্ণের বন্দনামূলক সাহিত্য। হরিদাস কবি বিজয় বিট্ঠল, গোপাল বিট্ঠল, জগন্নাথ বিট্ঠল, বেণুগোপাল বিট্ঠল ও মোহন বিট্ঠল ভক্তি প্রদর্শনার্থে ‘বিট্ঠল’ শব্দটি নিজেদের ছদ্মনামের অন্তে যুক্ত করতেন।[70] হরিদাস কবি পুরন্দর দাস বা পুরন্দর বিট্ঠল (১৪৮৪-২৫৬৪) ‘কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সংগীতের পিতা’ হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রায়শই তার কন্নড় গীতিগুলি বিট্ঠলকে প্রণাম করে শেষ করতেন।[71][72]
পুষ্টিমার্গ সম্প্রদায়
মনে করা হয়, পুষ্টিমার্গ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা বল্লভাচার্য (১৪৭৯-১৫৩১) অন্তত দুইবার পণ্ঢরপুরে এসেছিলেন। কথিত আছে, বিঠোবা (যিনি পুষ্টিমার্গ সম্প্রদায়ে বিট্ঠলনাথ বা বিট্ঠলনাথজি নামে পরিচিত) তাকে বিবাহ করে সন্তান উৎপাদনের আদেশ দেন, যাতে বিঠোবা তার পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। পরবর্তীকালে বল্লভাচার্য বিবাহ করেছিলেন। তার দ্বিতীয় পুত্র তথা উত্তরাধিকারীকে বিঠোবার অবতার রূপে চিহ্নিত করা হয়। তার নাম ছিল বিট্ঠলনাথ। তিনি গুসাইঁজি নামে পরিচিত ছিলেন।[73][74][75]
উৎসব

বিঠোবার সঙ্গে যুক্ত উৎসবগুলি প্রধানত বারকরীদের দ্বিবার্ষিক ‘যাত্রার’ (তীর্থযাত্রা) সঙ্গে যুক্ত। অলন্দি ও ডেহু শহর থেকে পণ্ঢরপুর পর্যন্ত তীর্থযাত্রা যথাক্রমে সন্তকবি ধ্যানেশ্বর ও তুকারামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। সমস্ত পথে তারা বিঠোবার প্রতি উৎসর্গিত ‘অভঙ্গ’ গান করতে করতে এবং বিঠোবার নাম জপ করতে করতে চলে। সেই সঙ্গে তারা সন্তকবিদের ‘পালখি’ (পালকি) বহন করে। বারকরীরা আনুষ্ঠানিক পূজা করে না। তারা শুধু দর্শনের মাধ্যমে দেবতাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পুরোহিত কর্তৃক আনুষ্ঠানিক পূজা শুধু আষাঢ় (জুন-জুলাই) ও কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসের একাদশী তিথির আগে ও পরের পাঁচ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই সময় বহু সংখ্যক বারকরী যাত্রায় অংশ নেন। মাঘ ও চৈত্র মাসের একাদশীতেও অল্প সংখ্যায় বারকরীরা মন্দিরে যাত্রা করেন।[55]
৮ লক্ষেরও বেশি[76] বারকরী তীর্থযাত্রী আষাঢ় মাসে শয়নী একাদশী উপলক্ষ্যে পণ্ঢরপুরে তীর্থযাত্রা করেন।[77][78] শয়নী একাদশী ও প্রবোধিনী একাদশী হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর সঙ্গে যুক্ত। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বিষ্ণু ক্ষীরসমুদ্রে শেষনাগের শয্যায় নিদ্রা যান। তার নিদ্রা শুরু হয় শয়নী একাদশী তিথিতে। চার মাস পর প্রবোধিনী একাদশী থেকে তিনি নিদ্রা থেকে উত্থিত হন। আষাঢ় ও কার্তিক মাসের উৎসব দুই মাসের পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত চলে। তারপর মশাল সহকারে শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসব সমাপ্ত হয়।[9][56] খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীর উৎকীর্ণ লিপিতেও পণ্ঢরপুরের তীর্থযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়।[23] শয়নী একাদশী ও প্রবোধিনী একাদশী তিথিতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনো মন্ত্রী মহারাষ্ট্র সরকারের তরফ থেকে পূজার আনুষ্ঠানিক কার্যে অংশ নেই। পূজার এই অংশটি ‘সরকারি-মহাপূজা’ নামে পরিচিত।[9]
চারটি একাদশী ছাড়াও দশেরার রাতে পণ্ঢরপুরে মেলা বসে। এই দিন বিঠোবার সামনে ‘রঙ্গশিলা’ নামে একটি বড়ো পাথরের উপর ভক্তেরা নৃত্য করেন। সেই সঙ্গে মশাল সহকারে শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়।[40] পণ্ঢরপুর মন্দিরের অন্যান্য উৎসবগুলি হল রঙ্গপঞ্চমী ও জন্মাষ্টমী। রঙ্গপঞ্চমীর দিন দেবতার পায়ে গুলাল (লাল আবির) ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষ্যে ভক্তেরা বিঠোবার সামনে নয় দিন ধরে নৃত্যগীতের অনুষ্ঠান করেন।[79] এছাড়া বৈষ্ণবধর্ম মতে পবিত্র বুধবার, শনিবার ও অন্যান্য সকল একাদশী এই মন্দিরে উদযাপিত হয়।[4]
ভক্তিমূলক সাহিত্য

বিঠোবার প্রতি উৎসর্গিত ভক্তিমূলক সাহিত্যকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথম দুটি হল বারকরী ধারা ও ব্রাহ্মণ্য ধারা। তৃতীয়টিকে রিসিড ‘তৃতীয় ধারা’ নামে চিহ্নিত করেছেন। এই ধারায় বারকরী ও ব্রাহ্মণ্য উভয় উপাদানই বিদ্যমান। বারকরী রচনাগুলি মারাঠি ভাষায়, ব্রাহ্মণ্য রচনাগুলি সংস্কৃতে এবং ‘তৃতীয় ধারা’র রচনাগুলি ব্রাহ্মণদের দ্বারা মারাঠি ভাষায় রচিত।
বারকরী রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহীপতিরভক্তলীলামৃত ও ভক্তবিজয়, বহিনাবাইয়েরপুন্ডলিক-মাহাত্ম্য এবং নামদেব রচিত একটি দীর্ঘ ‘অভঙ্গ’। এই সকল রচনায় পুন্ডলিকের কিংবদন্তিটি বর্ণিত হয়েছে। ব্রাহ্মণ্য রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্কন্দপুরাণ থেকে গৃহীত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য (৯০০টি শ্লোকে), পদ্মপুরাণ থেকে গৃহীত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য (১,২০০টি শ্লোকে), পদ্মপুরাণ থেকে গৃহীত ভীমা-মাহাত্ম্য এবং বিষ্ণুপুরাণ থেকে গৃহীত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য।[80][81][82] ‘তৃতীয় ধারা’য় দুটি রচনা পাওয়া যায়। এদুটি হল ব্রাহ্মণ শ্রীধর রচিত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য (৭৫০টি শ্লোকে) এবং প্রহ্লাদ মহারাজ রচিত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য (১৮১টি শ্লোকে)।[83][84]
উপরিউক্ত রচনাগুলি ছাড়াও বারকরীদের দ্বারা রচিত ‘অভঙ্গ’ নামে পরিচিত অনেক ক্ষুদ্রাকার মারাঠি ভক্তিমূলক কবিতা এবং অনেক স্তুতি (বন্দনাগীতি) স্তোত্র রয়েছে। স্তুতি ও স্তোত্রগুলির কয়েকটি হরিদাস সম্প্রদায় থেকে উৎসারিত। স্তোত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত "পাণ্ডুরঙ্গাষ্টক" বা "পাণ্ডুরঙ্গস্তোত্র"। এটি আদি শঙ্করের রচনা মনে করা হয়। তবে তিনিই এই স্তোত্রের রচয়িতা কিনা সেই বিষয়ে সংশয় রয়েছে।[80] "তীর্থাবলি-গাথা" নামে একটি গ্রন্থ রয়েছে। এটিকে নামদেব বা ধ্যানেশ্বরের রচনা মনে করা হয়। তবে এটি সম্ভবত অনেক সন্তকবির রচনা থেকে সংকলিত। এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য বারকরী মতাদর্শ ও বিঠোবা উপাসনার প্রসার।[19][85] অন্যান্য ভক্তিমূলক রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযগ্য "এই ও বিট্ঠল মাজে মৌলি রে" এবং নামদেব রচিত "যুগে অট্ঠাবিসা নিতেবরি উভা" ইত্যাদি আরাত্রিক ভজনগুলি। এই আরাত্রিক ভজনগুলিতে পীতাম্বরধারী (বিষ্ণুর একটি বৈশিষ্ট্য) ও গরুড় (বিষ্ণুর বাহন) ও হনুমান (বিষ্ণুর অবতার রামের ভক্ত ও সেবক) দ্বারা সেবিত বিঠোবার স্তুতি করা হয়েছে। শেষত, তেলুগু কবি তেনালি রামকৃষ্ণ (খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দী) তাঁর "পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্যমু" কবিতায় বিঠোবাকে পাণ্ডুরঙ্গ নামে স্তুতি করে লিখেছিলেন, “(হে পার্বতী, পুণ্ডরীক ও ক্ষেত্রপালের (কাল-ভৈরব) সেবা গ্রহণ করে, ভক্তদের জন্য সূক্ষ্মদেহ ধারণ করে কল্পতরু হয়ে, তাদের ইচ্ছা পূরণ করে, পাণ্ডুরঙ্গ দেব সেই মন্দিরে বাস করেন।”[46]
মন্দির

মহারাষ্ট্রে বিঠোবার অনেকগুলি মন্দির আছে।[86] কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যেও কয়েকটি মন্দির আছে। তবে বিঠোবা উপাসনার প্রধান কেন্দ্রটি হল পণ্ঢরপুরের মন্দিরটি। এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে ধ্যানেশ্বরের সময়কাল থেকেই এই মন্দিরটির অস্তিত্ব আছে। বিঠোবা ও তাঁর পত্নী রুক্মিনী, সত্যভামা ও রাধার সঙ্গে অন্যান্য বৈষ্ণব দেবদেবীর পূজাও করা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন: বিষ্ণুর একটি রূপ বেঙ্কটেশ্বর, বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মীর একটি রূপ মহালক্ষ্মী, গরুড় ও হনুমান (আগের অনুচ্ছেদ দেখুন)। কয়েকজন শৈব দেবদেবীর পূজাও করা হয়। এঁরা হলেন: বুদ্ধি ও কার্যারম্ভের দেবতা গণেশ, শিবের একটি রূপ খাণ্ডোবা ও শিবপত্নী পার্বতীর একটি রূপ অন্নপূর্ণা। নামদেব, চোখামেলা ও জানাবাই প্রমুখ সন্ত এবং পুন্ডলিক ও কাহ্নোপাত্র প্রমুখ ভক্তের সমাধিও মন্দিরের অভ্যন্তরে ও চারপাশে দেখা যায়।[87][88] মহারাষ্ট্রে বিঠোবার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলি হল: তুকারামের জন্মস্থান ডেহুর মন্দির, যেখানে বছরের প্রত্যেকটি একাদশী তিথিতে ভক্তেরা তীর্থযাত্রা করেন; সাতারা জেলার কোলেতে ঘাডগে বোবার স্মারক মন্দির, যেখানে মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে মেলা আয়োজিত হয়; কোলহাপুর ও রাজাপুর, যেখানে শয়নী একাদশী ও প্রবোধিনী একাদশীতে মেলা আয়োজিত হয়;[89][90] মাধে, যেখানে মুসলমান আক্রমণের সময় পণ্ঢরপুরের মূর্তিটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল;[49] এবং শাহাদের বিড়লা মন্দির।
গোয়াতেও কয়েকটি মন্দির রয়েছে। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত মন্দিরগুলি হল স্যানকুইলিম, স্যাঙ্গুয়েম ও গোকর্ণ মঠের মন্দিরগুলি। মারগাও[91] ও পোন্ডার মন্দিরের উৎসবগুলিতে অংশ নিতে বহু তীর্থযাত্রী আসেন। রাজস্থানের নাথদ্বারায় ‘বিট্ঠলনাথ’ নামে বিঠোবাকে পূজা করা হয়।[73]

বিজয়নগর ও মারাঠা শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে বিঠোবার পূজা প্রচলিত হয়।[92] দক্ষিণ ভারতে তিনি সাধারণত বিট্ঠল নামে পরিচিত। হাম্পি মন্দিরটি (উপরে উল্লিখিত) একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিই মহারাষ্ট্রের বাইরে বিট্ঠলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এই মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ১৫শ শতাব্দীতে নির্মিত। মনে করা হয়, এই মন্দিরে কিছু সময়ের জন্য পণ্ঢরপুরের কেন্দ্রীয় মূর্তিটি এনে রাখা হয়েছিল। একটি মতে, বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেবরায় “নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য” এই মূর্তিটি এনে রেখেছিলেন।[93] অপর মতে, মুসলমান আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই মূর্তিটিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।[94] সন্তকবি একনাথের প্রপিতামহ ভানুদাস (১৪৪৮-১৫১৩) এই মূর্তিটি আবার পণ্ঢরপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে এই মন্দিরে কোনো কেন্দ্রীয় মূর্তি নেই। [93][94] যদিও ১৫১৬ থেকে ১৫৬৫ সালের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনগুলি বিট্ঠলের কেন্দ্রীয় মূর্তির সামনেই হত। যা তার আগে হত মূল রাষ্ট্রীয় দেবতা বিরুপাক্ষের (শিবের একটি রূপ) সামনে।[95] মধ্বের আটটি মঠের মধ্যে তিনটি মঠে বিট্ঠল হলেন প্রধান দেবতা। এগুলি হল কর্ণাটকের শিরুর, পেজাবর ও পুট্টিজ।[96][97] কর্ণাটকের মুলবাগালে একটি ‘বিট্ঠলেশ্বর মন্দির’ রয়েছে। তামিলনাড়ুতে বিট্ঠল মন্দির রয়েছে শ্রীরঙ্গম, তিরুপোরুরের কাছে বিট্ঠলপুরম, তিরুনেলভেলি জেলা, তেন্নঙ্গুর, কুম্বকোনামের কাছে গোবিন্দপুরমে।। কাঞ্চীতেও বিঠোবার ভাস্কর্য পাওয়া যায়।[92][98]
কিংবদন্তি

বিঠোবা সংক্রান্ত কিংবদন্তিগুলির কেন্দ্রবিন্দু তাঁর ভক্ত পুন্ডলিক। কথিত আছে, তিনিই বিঠোবাকে পণ্ঢরপুরে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়াও মনে করা হয়, বারকরী সম্প্রদায়ের সন্তকবিদের রক্ষাকর্তা হিসেবেও বিঠোবার কিংবদন্তিগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উপরে ভক্তিমূলক সাহিত্য অংশে আলোচিত অংশে যেমন বলা হয়েছে, পুন্ডলিকের কিংবদন্তিটি স্কন্দপুরাণ ও পদ্মপুরাণের মতো সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। মারাঠি ধর্মগ্রন্থেও এই কিংবদন্তি লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই সব মারাঠি গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীধর নামে এক ব্রাহ্মণের রচিত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য, প্রহ্লাদ মহারাজ রচিত পাণ্ডুরঙ্গ-মাহাত্ম্য এবং বিভিন্ন সন্তকবিদের দ্বারা রচিত ‘অভঙ্গ’ কবিতাগুলি।
পুন্ডলিক কিংবদন্তির তিনটি পাঠ পাওয়া যায়। দুটি কিংবদন্তি স্কন্দপুরাণের পুথিগত পাঠান্তরের সঙ্গে যুক্ত (১। ৩৪-৬৭)। প্রথম কিংবদন্তি অনুসারে, সন্ন্যাসী পুণ্ডরীক (পুন্ডলিক) হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর ভক্ত এবং তিনি নিজের পিতামাতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বিষ্ণুর এক রূপ গোপাল-কৃষ্ণ রাখাল বালকের বেশে তাঁর পোষ্য গোরুর পালের সঙ্গে গোবর্ধন পর্বত থেকে পুণ্ডরীকের সঙ্গে দেখা করতে নেমে আসেন। কৃষ্ণ ছিলেন দিগম্বর বা নগ্ন। তাঁকে কানে ছিল ‘মকরকুণ্ডল’ এবং বুকে ছিল ‘শ্রীবৎস’ চিহ্ন (উপরে আলোচিত)[50] তাঁর মাথায় ছিল ময়ূরপুচ্ছের উষ্ণীষ। তিনি কোমরে হাত দিয়ে তাঁর গোরু চরানোর দণ্ডটি দুটি উরুর ফাঁকে রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুণ্ডরীক কৃষ্ণকে সেই রূপেই ভীমা নদীর তীরে অবস্থান করতে বলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, কৃষ্ণের উপস্থিত সেই স্থানটিকে একটি ‘তীর্থ’ ও ‘’ক্ষেত্রে’ পরিণত করবে।[99] এই স্থানটিকে অধুনা পণ্ঢরপুর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পণ্ঢরপুর ভীমা নদীর তীরে অবস্থিত। কৃষ্ণের বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলি পণ্ঢরপুরের বিঠোবার অনুরূপ।[100]
দ্বিতীয় কিংবদন্তি অনুসারে, কৃষ্ণ পুন্ডলিকের সামনে পঞ্চবর্ষীয় গোপালের বেশে উপস্থিত হন। এই কিংবদন্তিটি উভয় পুরাণের পাণ্ডুলিপিতে, প্রহ্লাদ মহারা, ও সন্তকবিদের (বিশেষত তুকারামের) রচনায় পাওয়া যায়।[101] পুন্ডলিকের তৃতীয় কিংবদন্তিটি শ্রীধরের রচনায় এবং পদ্মপুরাণের একটি পাঠান্তরে পাওয়া যায়। পুন্ডলিক ছিলেন এক ব্রাহ্মণ। তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুব ভালবাসতেন। স্ত্রীর প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই বেশি ছিল যে, তিনি তাঁর বৃদ্ধ পিতামাতাকে উপেক্ষা করতেন। পরবর্তীকালে কুক্কুট ঋষির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। পুন্ডলিকের জীবনে পরিবর্তন আসে। তিনি নিজের পিতামাতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন। এদিকে কৃষ্ণের গোপী প্রেমিকা রাধা কৃষ্ণের রাজ্য দ্বারকায় আসেন এবং কৃষ্ণের কোলে বসেন। রাধা কৃষ্ণের প্রধানা মহিষী রুক্মিণীকে সম্মান প্রদর্শন করেন না। কৃষ্ণও রাধার আচরণে দোষাবহ কিছু দেখেন না। বিরক্ত হয়ে রুক্মিণী কৃষ্ণকে পরিত্যাগ করে পণ্ঢরপুরের কাছে দণ্ডীবনে চলে আসেন। রুক্মিণীর বিরহে দুঃখিত কৃষ্ণ তাঁর মহিষীকে খুঁজতে খুঁজতে শেষে তাঁকে দণ্ডীবনে পুন্ডলিকের বাড়ির কাছে খুঁজে পান। কিছু মিষ্ট বাক্যালাপের পর রুক্মিণী শান্ত হন। এরপর কৃষ্ণ পুন্ডলিকের কাছে আসেন। তিনি দেখেন পুন্ডলিক নিজের পিতামাতার সেবা করছেন। কৃষ্ণ বিশ্রাম করবেন বলে পুন্ডলিক একটি ইঁট বাইরে ছুঁড়ে দেন। কৃষ্ণ ইঁটটির উপর দাঁড়িয়ে পুন্ডলিকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পিতামাতার সেবা শেষ করে পুন্ডলিক কৃষ্ণকে অনুরোধ করেন বিঠোবার মূর্তিতে সেই ইঁটের উপরেই অবস্থান করতে এবং রুক্মিণীকে অনুরোধ করেন রাখুমাইয়ের মূর্তিতে তাঁর পাশে অবস্থান করতে এবং চিরকাল ভক্তদের আশীর্বাদ করতে।[13][31][84][99]
বিঠোবা সংক্রান্ত অন্যান্য কিংবদন্তিগুলিতে দেখা যায়, তিনি সাধারণ মানুষের বেশে, নিম্নবর্ণীয় মাহার, সমাজে অস্পৃশ্য বা ব্রাহ্মণ ভিক্ষুকের বেশে এসে ভক্তদের উদ্ধার করছেন।[102] মহীপতি তাঁর পাণ্ডুরঙ্গস্তোত্র-এ বর্ণনা করেছেন, কীভাবে বিঠোবা জানাবাই প্রমুখ মহিলা সন্তদের ঝাড়ু দেওয়া বা ধান ভানার দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতেন।[103] তিনি বর্ণনা করেছেন, কীভাবে বিঠোবা সেনা নামে এক নাপিতকে সাহায্য করেন। বিদরের রাজা সেনাকে গ্রেফতার করার আদেশ দিয়েছিলেন। কারণ, সেনা রাজাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়িতে আসেননি। সেনা বিঠোবার কাছে প্রার্থনা করতেই, বিঠোবা সেনার মূর্তি ধরে রাজার কাছে যান এবং সেনা বেঁচে যান।[104] আরেকটি কাহিনিতে দেখা যায়, সন্ত দামাজি ছিলেন রাজ শস্যাগারের রক্ষক। তিনি দুর্ভিক্ষ্যের সময় প্রজাদের শস্য বিতরণ করেছিলেন। বিঠোবা এক নিম্নবর্ণীয়ের বেশে এসে এক থলি সোনার বিনিময়ে শস্য প্রার্থনা করেন।[105] আরেকটি কাহিনিতে দেখা যায়, গোরা কুম্বারা নামে এক কুমোর যখন বিঠোবার নামগান করতে করতে নিজের শিশুপুত্রকে মাটি চাপা দিয়ে ফেলেন, তখন বিঠোবা সেই শিশুটিকে রক্ষা করেন।[106]
তথ্যসূত্র
- Zelliot and Berntsen (1988) p. xviii "Varkari cult is rural and non-Brahman in character"; অনুবাদ: "বারকরী কাল্টের বৈশিষ্ট্য হল এই মতবাদ গ্রামীণ প্রকৃতির এবং ব্রাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী।"
- Sand (1990), p. 33 "According to Raeside the Varkari tradition is essentially monotheistic and without ritual, and, for this tradition, Vithoba represents Hari Krsna, while for the badavas or hereditary priests "Vithoba is neither Visnu nor Siva. Vithoba is Vithoba (...)"; p. 34 "the more or less anti-ritualistic and anti-brahmanical attitudes of Varkari sampradaya."; অনুবাদ: "রিসাইডের মতে, বারকরী সম্প্রদায় মূলত একেশ্বরবাদী ও আচারানুষ্ঠান-বিহীন এবং এই সম্প্রদায়ের কাছে বিঠোবা হরি কৃষ্ণের প্রতীক। অন্যদিকে বাদবদের অর্থাৎ বংশানুক্রমিক পুরোহিতদের কাছে "বিঠোবা বিষ্ণুও নন, শিবও নন। বিঠোবা হলেন বিঠোবা (...)"; পৃ. ৩৪ "বারকরী সম্প্রদায়ের মতবিশ্বাস কমবেশি আচারানুষ্ঠান-বিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী।"
- Novetzke (2005) pp. 115–16
- Crooke (2003) pp. 607–08
- Pande (2008) p. 449
- Bhandarkar (1995) p. 124
- Tagare in Mahipati: Abbott, Godbole (1988) p. xxxvi
- Sand (1990) p. 38
- Pathak, Arunchandra S. (২০০৬)। "Pandharpur"। The Gazetteers Dept, Government of Maharashtra (first published: 1977)। মার্চ ১৬, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-১৪।
- Bhandarkar (1995) p. 125
- Eaton (2005) pp. 139–40
- Zelliot (1988) p. 170
- Pande (2008) p. 508
- For Bir Kuar, Tagare in Mahipati: Abbott, Godbole (1988) p. xxxiv
- Novetzke (2005) p. 116
- Dhere p. 62
- Sand (1990) p. 40
- Kelkar (2001) p. 4179
- Vaudeville (1987) pp. 223–24
- Deleury as quoted in Sand (1990) p. 38
- Tilak (2006) pp. 243–46
- Stevenson (1843) pp. 5–6 "The want of suitable costume in the images (of Vithoba and Rakhumai) as originally carved, in this agreeing exactly with images the Jains at present worship."
- Karve (1968) pp. 188–89
- Zelliot, Eleanor in Mokashi (1987) p. 35
- Shima (1988) p. 184
- Gokhale (1985) pp. 42–52
- Ranade (1933) p. 183
- Pande (2008) pp. 449, 508
- Sand (1990) pp. 43, 58
- Sand (1990) p. 35
- Bhandarkar (1995) pp. 125–26
- Stevenson (1843) p. 66
- Sand (1990) p. 37
- Ranade (1933) pp. 183–84
- Sand (1990) pp. 39–40
- Williams, Monier। mw1276-svadharman। sanskrit-lexicon.uni-koeln.de (2008 সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 1276।
- Zelliot, Eleanor in Mokashi (1987) p. 37
- Novetzke p. 117
- Zelliot (1988) p. 114
- Underhill (1991) p. 171
- Raeside, I. M. P. (1965) p. 82. Cited in Sand (1990) p. 33
- Pathak, Dr. Arunchandra S. (২০০৬)। "Junnar"। The Gazetteers Dept, Government of Maharashtra (first published: 1885)। ২০০৯-১০-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৩।
- Stevenson (1843) p. 64
- Tagare in Mahipati: Abbott, Godbole (1988) p. xxxiv
- Keer (2005) p. 482
- Pande (2008) p. 448
- Zelliot, Eleanor in Mokashi (1987) pp. 35–36
- Ranade (1933) p. 41
- Dhere, R C (২০০৯)। "Chapter 6: In search of the original idol of Viththal."। Shri Viththal ek mahasamanvaya (official site of author)। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১০।
- Monier-Williams (২০০৮)। "Cologne Scan"। sanskrit-lexicon.uni-koeln.de। পৃষ্ঠা 1110।
- Pillai (1997) pp. 366–67
- Pande (2008) p. 447
- Karve (1968) p. 183
- Tagare in Mahipati: Abbott, Godbole (1987) p. xxxv
- Engblom, Philip C. in Mokashi (1987) pp. 7–10, 15
- Shima (1988) p. 188
- Flood (1996) p. 135
- anon. (1987) pp. 966–68
- Zelliot, Eleanor in Mokashi (1990) p. 38
- Pawar p. 350
- Shima (1988) pp. 184–86
- Flood (1996) pp. 142–44
- Zelliot, Eleanor in Mokashi (1987) p. 40
- see Pawar pp. 350–62 for a review of Varkari literature
- Tagare in Mahipati: Abbott, Godbole (1988) p. xxxvii
- Flood (2003) pp. 252–53
- Sharma (2000) pp. 514–16
- Lutgendorf (2007) pp. 69, 70, 72
- Rao (1966) pp. 7–8
- Rao (1966) p. 28
- Iyer (2006) p. 93
- Kiehnle (1997) p. 39
- "The Artists of Nathadwar — Part 4"। The Sampradaya Sun। মে ২৯, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-০৩।
- Dwyer, Rachel (২০০১)। The poetics of devotion। Routledge। পৃষ্ঠা 23। আইএসবিএন 978-0-7007-1233-5।
- "Vithalnath"। Nathdwara Temple Board। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৪।
- Press Trust of India (PTI) (জুলাই ১১, ২০১১)। "Devotees pour in to temple town Pandharpur, Maharashtra"। CNN IBN। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১১।
- Each of the 12 Hindu months—such as Ashadha, Chaitra, Magha, and Kartik—is divided into two fortnights of 15 days each. The moon waxes over the bright fortnight (Shukla Paksha), from day 1 to day 15 (full moon day); and it wanes over the following dark fortnight (Krishna Paksha) until new moon day.
- Engblom, Philip C. in Mokashi (1987) p. 2
- Shima (1988) p. 189
- Sand (1990) p. 56
- Sand (1990) p. 33
- For the complete English translation of Bhaktavijaya, which narrates the legend of Pundalik and also tells stories of reported interactions between the saints and Vithoba, see Stories of Indian Saints (1988) by Mahīpati, Justin Edwards Abbott, and Narhar R. Godbole.
- Sand (1990) p. 34
- For a complete Marathi text and English translation of Panduranga-Mahatmya by Sridhara see Raeside (1965) pp. 81–100
- Novetzke (2005) p. 120
- Singh (2004) p. 13
- Shima (1988) pp. 189–96
- Pande (2008) pp. 445–48
- Underhill (1991) pp. 165–66, 172
- Pathak, Dr. Arunchandra S. (২০০৬)। "Kole"। The Gazetteers Dept, Government of Maharashtra (first published: 1963)। ২০০৮-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-০২।
- Robert W. Bradnock, , Roma Bradnock (২০০০)। Goa handbook 2, illustrated। Footprint Handbooks। আইএসবিএন 978-1-900949-45-3।
- T. Padmaja (2002) pp. 92, 108, 121–22, fig 87
- Eleanor Zelliot in Mokashi (1987) p. 42
- Ranade (1933) p. 213
- Eaton (2005) p. 83
- Sharma (2000) p. 612
- Rao (2002) pp. 54–55
- M R Venkatesh (১০ জুলাই ২০১১)। "New abode for Vittala in TN"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১১।
- Sand (1990) pp. 41–42
- Bakker (1990) p. 78
- Sand (1990) p. 50
- Eleanor Zelliot in Mokashi (1987) p. 35
- Tilak (2006) p. 247
- For complete tale, see Mahipati pp. 22–27
- For complete story, see Mahipati pp. 85–99
- For the complete legend, see Mahipati pp. 286–289
গ্রন্থপঞ্জি
- টেমপ্লেট:Citeencyclopedia
- Bakker, Hans (১৯৯০)। The History of Sacred Places in India as Reflected in Traditional Literature। BRILL। আইএসবিএন 90-04-09318-4। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Bhandarkar, Ramakrishna Gopal (১৯৯৫) [1913]। Vaiṣṇavism, Śaivism, and Minor Religious Systems। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 124–27। আইএসবিএন 81-206-0122-X।
- Crooke, W. (২০০৩) [1935]। "Pandharpur"। Hastings, James। Encyclopedia of Religion and Ethics। 18। Kessinger Publishing। পৃষ্ঠা 607–8। আইএসবিএন 0-7661-3695-7। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Dhere, R.C. (১৯৮৪)। Sri Vitthal: Ek Mahasamanvaya (Marathi ভাষায়)। Pune: Shrividya Prakashan।
- Translated into English: Feldhaus, Anne (২০১১)। Rise of a Folk God: Vitthal of Pandharpur। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-977759-4।
- Eaton, Richard Maxwell (২০০৫)। A Social History of the Deccan, 1300–1761: Eight Indian Lives। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 139–40। আইএসবিএন 0-521-25484-1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Flood, Gavin D. (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 135, 142–4। আইএসবিএন 0-521-43878-0।
- Flood, Gavin D. (২০০৩)। The Blackwell Companion to Hinduism। Blackwell Publishing। পৃষ্ঠা 252–53। আইএসবিএন 978-0-631-21535-6। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Gokhale, Shobana (১৯৮৫)। "The Pandharpur Stone inscription of the Yadava king Mahadeva Sake 1192"। Deo, Shantaram Bhalchandra; Dhavalikar, Madhukar Keshav। Studies in Indian Archaeology (238 pages সংস্করণ)। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 42–52। আইএসবিএন 978-0-86132-088-2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Iyer, Panchapakesa A.S. (২০০৬) [2006]। Karnataka Sangeeta Sastra। Chennai: Zion Printers।
- Karve, Irawati (১৯৬৮)। "Ch.7: Religion and Gods of Maharashtra"। Maharashtra – Land and Its People (PDF)। Maharashtra State Gazetteer। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Keer, Dhanajay (২০০৫) [1954]। Dr. Ambedkar: Life and Mission। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 482। আইএসবিএন 81-7154-237-9। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Kelkar, Ashok R. (২০০১) [1992]। "Sri-Vitthal: Ek Mahasamanvay (Marathi) by R.C. Dhere"। Encyclopaedia of Indian literature। 5। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 4179। আইএসবিএন 978-81-260-1221-3। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Kiehnle, Catharina (১৯৯৭)। Songs on Yoga: Texts and Teachings of the Mahārāṣṭrian Nāths। Franz Steiner Verlag। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 3-515-06922-4। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Lutgendorf, Philip (২০০৭)। Hanuman's Tale: The Messages of a Divine Monkey। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা 69, 70, 72। আইএসবিএন 978-0-19-530921-8। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Mahīpati; Abbott, Justin Edwards; Godbole, Narhar R. (১৯৮৮)। Stories of Indian Saints: An English Translation of Mahipati's Marathi Bhaktavijaya। 2। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 81-208-0469-4।
- Mokashi, Digambar Balkrishna; Engblom, Philip C. (১৯৮৭)। Palkhi: a pilgrimage to Pandharpur — translated from the Marathi book Pālakhī। Albany: State University of New York Press। পৃষ্ঠা 34–50 and 263–278। আইএসবিএন 0-88706-461-2।
- Monier-Williams, Monier (২০০৮)। Sanskrit-English Dictionary। Universität zu Köln। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Novetzke, Christian Lee; Beck, Guy L. (২০০৫)। "A Family Affair: Krishna comes to Pandharpur and makes Himself at Home"। Alternative Krishnas: Regional and Vernacular Variations on a Hindu Deity। SUNY Press। পৃষ্ঠা 113–138। আইএসবিএন 0-7914-6415-6।
- Pande, Dr Suruchi (আগস্ট ২০০৮)। "The Vithoba of Pandharpur" (PDF)। Prabuddha Bharata। Advaita Ashrama: the Ramakrishna Order started by Swami Vivekananda। 113 (8): 444–9। আইএসএসএন 0032-6178। ২০০৮-১২-২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৯।
- Pande, Dr Suruchi (সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "The Vithoba of Pandharpur" (PDF)। Prabuddha Bharata। Advaita Ashrama: the Ramakrishna Order started by Swami Vivekananda। 113 (9): 504–8। আইএসএসএন 0032-6178। ২০০৮-১২-২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৯।
- Pande, Dr Suruchi (অক্টোবর ২০০৮)। "The Vithoba of Pandharpur" (PDF)। Prabuddha Bharata। Advaita Ashrama: the Ramakrishna Order started by Swami Vivekananda। 113 (10): 553–8। আইএসএসএন 0032-6178। ২০০৮-১১-২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৯।
- Pawar, G. M. (১৯৯৭)। "Medieval Marathi Literature"। Panicker K. Ayyappa। Medieval Indian Literature: An Anthology। 1। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 81-260-0365-0। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৭।
- Pillai, S. Devadas (১৯৯৭)। Indian Sociology Through Ghurye, a Dictionary। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 366–7। আইএসবিএন 81-7154-807-5। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Raeside, I. M. P. (১৯৬৫)। "The "Pāṇḍuranga-Māhātmya" of Śrīdhar"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies। Cambridge University Press on behalf of School of Oriental and African Studies, University of London। 28 (1): 81–100। doi:10.1017/S0041977X00056779। আইএসএসএন 0041-977X। জেস্টোর 611710।
- Ranade, Ramchandra Dattatraya (১৯৩৩)। Indian Mysticism: Mysticism in Maharashtra (PDF)। History of Indian Philosophy। 7। Aryabhushan Press।
- Rao, Mysore Venkata Krishna (১৯৬৬)। Purandara and the Haridasa Movement। Karnatak University।
- Rao, Vasudeva (২০০২)। Living Traditions in Contemporary Contexts: The Madhva Matha of Udupi। Orient Longman। পৃষ্ঠা 54–5। আইএসবিএন 978-81-250-2297-8। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Sand, Erick Reenberg (১৯৯০)। "The Legend of Puṇḍarīka: The Founder of Pandharpur"। Bakker, Hans। The History of Sacred Places in India as Reflected in Traditional Literature। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 33–61। আইএসবিএন 90-04-09318-4।
- Sharma, B.N.K. (২০০০)। History of the Dvaita School of Vedanta and Its Literature। Blackwell Publishing। পৃষ্ঠা 514–16। আইএসবিএন 978-81-208-1575-9। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Shima Iwao (জুন–সেপ্টেম্বর ১৯৮৮)। "The Vithoba Faith of Maharashtra: The Vithoba Temple of Pandharpur and Its Mythological Structure" (PDF)। Japanese Journal of Religious Studies। Nanzan Institute for Religion and Culture। 15 (2–3): 183–197। আইএসএসএন 0304-1042। ২০০৯-০৩-২৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২১।
- Singh, Kumar Suresh; Mehta, B.V. (২০০৪)। People of India: Maharashtra। Anthropological Survey of India। পৃষ্ঠা 11–3। আইএসবিএন 978-81-7991-100-6।
- Stevenson, Rev. J (১৮৪৩)। "On the Intermixture of Buddhism with Brahmanism in the religion of the Hindus of the Dekhan"। The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। London: periodical Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। 7 (13): 1–8। doi:10.1017/s0035869x00155625। আইএসএসএন 1356-1863। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪।
- Stevenson, Rev. J (১৮৪৩)। "An Account of Bauddho-Vaishnavas of Vithal-Bhaktas of Dakhan"। The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। London: periodical Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। 7 (13): 64–73। doi:10.1017/s0035869x00155674। আইএসএসএন 1356-1863। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪।
- Tilak, Dr. Shrinivas (২০০৬)। "Emergence of Vitthala:divine advocate of the subaltern"। Understanding Karma: In Light of Paul Ricoeur's Philosophical Anthropology। International Centre for Cultural Studies। আইএসবিএন 978-81-87420-20-0।
- T. Padmaja (২০০২)। Temples of Kr̥ṣṇa in South India: History, Art, and Traditions in Tamilnāḍu। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 92, 108, 121–22, fig 87। আইএসবিএন 978-81-7017-398-4। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Underhill, M.M. (১৯৯১) [1921]। The Hindu Religious Year (Originally published: Calcutta: Association Press সংস্করণ)। Asian Educational Services। আইএসবিএন 81-206-0523-3।
- Vaudeville, Charlotte (১৯৮৭)। Schomer, Karine; McLeod, W. H., সম্পাদক। The Sants: Studies in a Devotional Tradition of India। Motilal Banarsidass Publ। পৃষ্ঠা 223–24। আইএসবিএন 81-208-0277-2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
- Zelliot, Eleanor; Berntsen, Maxine (১৯৮৮)। The Experience of Hinduism: Essays on Religion in Maharashtra। SUNY Press। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 0-88706-662-3। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০।
আরও পড়ুন
- Deleury, G. A. (১৯৬০)। The cult of Vithoba (Pune: Deccan College, Postgraduate and Research Institute (Original from the University of Michigan) সংস্করণ)। Magis Books।
- Dhond, M. V. (২০০১)। Aisa vitevara deva kothe! (Marathi ভাষায়)। Rajhans Prakashan।
- Tulpule, S. G. (১৯৭৯)। Classical Marathi Literature: A History of Indian Literature। 9। Wiesbaden: Otto Harrassowitz।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে বিঠোবা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- শ্রী বিট্ঠল রুক্মিণী মন্দির, পণ্ঢরপুর-এর প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট
- পণ্ঢরপুরের বিঠোবার "মহা-পুজা"-এর ভিডিও, মহারাষ্ট্র টাইমস
- পণ্ঢরপুর মন্দিরের ওপর নিবন্ধ
- হরিদাস আন্দোলন
- Sane, Prajkta (মার্চ ২০০৭)। "The 'Palkhi' of Alandi to Pandharpur" (PDF)। University of New South Wales। ২০০৯-০৩-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
- আর সি ধেরে দ্বারা তার ওয়েবসাইটে বিথ্থল এঁক মহাসমানভায়-এর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ