গিরিশচন্দ্র ঘোষ

গিরিশচন্দ্র ঘোষ (২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ - ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তারই অবদান।[1][2][3]

গিরিশচন্দ্র ঘোষ
গিরিশ ঘোষের মূর্তি
জন্ম২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪
মৃত্যু৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পরিচিতির কারণপ্রবন্ধকার এবং লেখক

১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। গিরিশচন্দ্র প্রায় চল্লিশটি নাটক রচনা করেছেন এবং ততোধিক সংখ্যক নাটক পরিচালনা করেছেন।[4] জীবনের পরবর্তী ভাগে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের এক বিশিষ্ট শিষ্য হয়েছিলেন।[5]

জন্ম ও শিক্ষা

গিরিশচন্দ্র ঘোষ, স্বামী অদ্ভুতানন্দ, মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যান্য শিষ্য ও ভক্তদের মাঝে

১৮৪৪ সালে কলকাতার বাগবাজারে গিরিশচন্দ্রের জন্ম। তিনি ছিলেন তার পিতামাতার অষ্টম সন্তান। প্রথমে হেয়ার স্কুল ও পরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন।[6] পবর্তীকালে ইংরেজী ও হিন্দু পুরাণে জ্ঞান আর্জন করেন।

কর্মজীবন

১৮৬৭ সালে শর্মিষ্ঠা নাটকের গীতিকার হিসাবে নাট্যজগৎতে প্রথম যুক্ত। দু'বছর পরে সধবার একাদশিতে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করে ছিলেন। কলকাতায় ন্যাশানাল থিয়েটার নামে তার একটি নাট্য কোম্পানি ছিল। ১৮৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নটী বিনোদিনীকে নিয়ে তিনি স্টার থিয়েটার, কলকাতা চৈতন্যলীলা নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস এই নাটক দেখতে এসেছিলেন। এরপর উভয়েই তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

গিরিশচন্দ্র ছিলেন কুখ্যাত মদ্যপ ও স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম অন্তরঙ্গ শিষ্যে পরিণত হন। "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত" গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, কিভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর গিরিশচন্দ্রের নৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি তার ঘনিষ্ঠতম শিষ্যদের একজন হয়ে ওঠেন।[7]

চলচ্চিত্র

কাজী নজরুল ইসলাম গিরিশচন্দ্রের ভক্ত ধ্রুব উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িত করেন। ১৯৫৬ সালে মধু বসুর পরিচালনায় গিরিশচন্দ্রের অবলম্বনে নির্মিত মহাকবি গিরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[8]

নাটক

তিনি অনেক নাটক রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো-

পৌরানিক নাটক

  • রাবণবধ
  • অভিমন্যুবধ
  • সীতার বনবাস
  • লক্ষ্ণণ বর্জন
  • সীতাহরণ
  • পান্ডবের অজ্ঞাতবাস
  • জনা[9]

চরিত্র নাটক

  • চৈতন্যলীলা
  • বিল্বমঙ্গল ঠাকুর
  • শঙ্করাচার্য[9]

রোমান্টিক নাটক

  • মুকুলমুঞ্জরা
  • আবু হোসেন[9]

সামাজিক নাটক

  • প্রফুল্ল
  • মায়াবসান
  • বলিদান[9]

ঐতিহাসিক নাটক

  • সিরাজদ্দৌলা
  • মীর কাসিম
  • ছত্রপতি শিবাজী[9]

উপাধি

১৮৭৭ সালে মেঘনাদবধ কাব্যে রামচন্দ্র ও মেঘনাদ উভয় ক্ষেত্রে অভিনয় জন্য সাধারণী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার তাকে 'বঙ্গের গ্যারিক' আখ্যায় ভূষিত করেন।

মৃত্যু

১৯১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই মহান অভিনেতা ও নাট্যকার কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র

  1. Drama 1900 -1926 Handbook of twentieth-century literatures of India, by Nalini Natarajan, Emmanuel Sampath Nelson. Published by Greenwood Publishing Group, 1996. আইএসবিএন ০-৩১৩-২৮৭৭৮-৩. Page 48.
  2. Kundu, Pranay K. Development of Stage and Theatre Music in Bengal. Published in Banerjee, Jayasri (ed.), The Music of Bengal. Baroda: Indian Musicological Society, 1987.
  3. A Girish Chandra Ghosh History of Indian Literature: 1800-1910 : Western Impact, Indian Response, by Sisir Kumar Das, Sahitya Akademi, Published by Sahitya Akademi. 1991. আইএসবিএন ৮১-৭২০১-০০৬-০. Page 283.
  4. Girish Chandra Ghosh Britannica.com.
  5. Some Great Devotees Ramakrishna and his disciples, by Christopher Isherwood, Ramakrishna Vedanta Centre. Published by Vedanta Press, 1980. আইএসবিএন ০-৮৭৪৮১-০৩৭-X. Page 247.
  6. Girish Chandra Ghosh
  7. Girish Chandra Ghosh - Profile "The Gospel of Sri Ramakrishna".
  8. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Mahakavi Girish Chandra (ইংরেজি)
  9. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; দ্বিতীয় সংস্করণ: ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা: ১৪৫, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.