আব্দুল্লাহ আল মামুন

আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৩ জুলাই ১৯৪২[1] - ২১ আগস্ট ২০০৮[2]) একজন প্রসিদ্ধ বাংলাদেশী অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক, চলচ্চিত্র পরিচালক।[3]

আবদুল্লাহ আল মামুন
জন্ম(১৯৪২-০৭-১৩)১৩ জুলাই ১৯৪২
মৃত্যুআগস্ট ২১, ২০০৮(2008-08-21) (বয়স ৬৬)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাস্নাতকোত্তর (ইতিহাস)
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং নাট্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীফরিদা খাতুন (মৃত্যু: ১৯৮৪)
পুরস্কার

প্রাথমিক জীবন

আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৯৪২ সালের ১৩ই জুলাই জামালপুরে আমলা পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস এবং মাতা ফাতেমা খাতুন। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এম এ পাস করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পেশাগত জীবন শুরু করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে। পরবর্তীকালে পরিচালক, ফিল্ম ও ভিডিও ইউনিট (১৯৬৬-১৯৯১), মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমী (২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[4]

কর্ম জীবন

অসংখ্য নাটক রচনায় যেমন নিজের প্রতিভা আর শক্তির পরিচয় দিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন, তেমনি নিজের অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন তার নির্দেশনায় ও অভিনয়েও৷ তার রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে 'সুবচন নির্বাসনে', 'এখন দুঃসময়', 'সেনাপতি', 'এখনও ক্রীতদাস', 'কোকিলারা', 'দ্যাশের মানুষ', 'মেরাজ ফকিরের মা', 'মেহেরজান আরেকবার' ইত্যাদি৷ নাট্যসংগঠন থিয়েটার-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। নাটকের সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল। শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস 'সংশপ্তক' নিয়ে ধারাবাহিক নাটকের পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে তিনি পান প্রবাদপ্রতিম খ্যাতি। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'সারেং বৌ' (১৯৭৮), 'শখী তুমি কার', 'এখনই সময়', 'জোয়ারভাটা', 'শেষ বিকেলের মেয়ে। তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুই বেয়াইয়ের কীর্তি[5]

সাহিত্য কর্ম

নাটক

আবদুল্লাহ আল মামুন যুদ্ধবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘শপথ’ নামে নাটক রচনা করেন ১৯৬৪ সালে। তিনি এ নাটকটি রচনা করেন মূলত বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের জন্য।[6] প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, মামুন ‘শপথ’ রচনার আগে ‘নিয়তির পরিহাস’, ‘বিন্দু বিন্দু রং’ শীর্ষক দুটো মৌলিক নাটক ছাড়া ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ডক্টর ফস্টাস’ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।[7] এছাড়াও তিনি নাট্যনিরীক্ষা করতে গিয়ে ‘ঋতুরাজ’ শীর্ষক এক কাব্যনাটক রচনা করেছিলেন।[8]

  • সুবচন নির্বাসনে (১৯৭৪)
  • এখনও দুঃসময় (১৯৭৫)
  • এবার ধরা দাও (১৯৭৭)
  • সেনাপতি (১৯৮০)
  • অরক্ষিত মতিঝিল (১৯৮০)
  • ক্রসরোড ক্রস ফায়ার (১৯৮১)
  • আয়নায় বন্ধুর মুখ (১৯৮৩)
  • এখনও ক্রীতদাস (১৯৮৩)
  • শাহজাদীর কালো নেকাব (১৯৮৩)
  • চারদিকে যুদধ (১৯৮৩)
  • এখনও ক্রীতদাস (১৯৮৪)
  • তোমরাই (১৯৮৮)
  • দূরপাল্লা (১৯৮৮)
  • আমাদের সন্তানেরা (১৯৮৮)
  • তৃতীয় পুরুষ (১৯৮৮)
  • কোকিলারা (১৯৯০)
  • বিবিসাব (১৯৯১)
  • উজান পবন (১৯৯১)
  • কুরসী (১৯৯১)
  • দ্যাশের মানুষ (১৯৯৩)
  • একা (১৯৯৫)
  • স্পর্ধা (১৯৯৬)
  • মাইক মাস্টার (১৯৯৭)
  • মেরাজ ফকিরের মা (১৯৯৭)
  • মেহেরজান আরেকবার (১৯৯৮)

নাটকের রচনাকাল ও মঞ্চায়ন

নাটকের নামপ্রকাশকালপ্রথম মঞ্চায়ন[6]
সুবচন নির্বাসনে১৯৭৪১৯৭৪
এখন দুঃসময়১৯৭৫১৯৭৪
এবার ধরা দাও১৯৭৭১৯৭৭
সেনাপতি১৯৮০১৯৭৯
অরক্ষিত মতিঝিল১৯৮০১৯৮২
চারিদিকে যুদ্ধ১৯৮৩১৯৭৬
এখনও ক্রীতদাস১৯৮৪১৯৮৩
দূরপাল্লা১৯৮৮১৯৮৮
কোকিলারা১৯৯০১৯৮৯
বিবিসাব১৯৯১১৯৮৬
মাইক মাস্টার১৯৯৭১৯৯৯
মেহেরজান আরেকবার১৯৯৮১৯৯৭

উপন্যাস

তাঁর লিখিত উপন্যাস গুলো হচ্ছে -

  • মানব তোমার সারা জীবন (১৯৮৮),
  • হায় পার্বতী (১৯৯১),
  • খলনায়ক (১৯৯৭)।[9]

পুরস্কার ও সম্মাননা

আব্দুল্লাহ আল মামুন শিল্প ও সাহিত্যে অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে

বছরপুরস্কারবিভাগটীকা
১৯৭৮প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কারটিভি নির্মাতানাটক - সংশপ্তক
বাচসাস পুরস্কারশ্রেষ্ঠ পরিচালকচলচ্চিত্র - সারেং বৌ
১৯৭৯বাংলা একাডেমী পুরস্কারসাহিত্য
১৯৮০জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারশ্রেষ্ঠ পরিচালকচলচ্চিত্র - এখনই সময়
১৯৮২অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কারসাহিত্য
১৯৮৮জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারশ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারচলচ্চিত্র - দুই জীবন
১৯৯১মুনীর চৌধুরী সন্মাননাসাহিত্য
২০০০একুশে পদকসাহিত্য

মৃত্যু

দীর্ঘ রোগভোগের পর ২১শে আগস্ট, ২০০৮ তারিখে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন নাট্যামোদী মানুষের প্রিয় এই ব্যক্তি। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।[10]

তথ্যসূত্র

  1. "আজ থেকে 'আবদুল্লাহ আল-মামুন জন্মোৎসব'"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৩ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  2. "আবদুল্লাহ আল মামুন যে নাটকটি বানাতে চেয়েছিলেন"বাংলা নিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  3. "নাট্যজন আবদুল্লাহ আল-মামুনের জন্মবার্ষিকীতে নানা আয়োজন"দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  4. "আবদুল্লাহ আল মামুন - অভিনেতা,নাট্যকার,লেখক,পরিচালক,চলচ্চিত্র নির্মাতা"। গুণীজন। ২২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  5. পাভেল রহমান (৭ আগস্ট ২০১৫)। "আবদুল্লাহ আল মামুনের জন্মবার্ষিকীর আয়োজন"দ্য রিপোর্ট। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  6. বুলবুল, বোরহান (২০১৪)। বাংলাদেশের নাটকে নিম্নবর্গ (১৯৭১-২০০০) (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৫৮। আইএসবিএন 984-07-5180-8।
  7. কবীর, সোলায়মান (২০১৪)। আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাটক : বিষয় ও পরিচর্যা। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৬। আইএসবিএন 984-07-5357-6।
  8. কবীর, সোলায়মান (২০১৪)। আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাটক : বিষয় ও পরিচর্যা (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৯১। আইএসবিএন 984-07-5357-6।
  9. পাভেল রহমান (১২ জুলাই ২০১৪)। "জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রিয় আবদুল্লাহ আল মামুন"রাইজিং বিডি। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  10. মারুফ কবির (১২ জুলাই ২০১২)। "স্মরণের আবরণে আবদুল্লাহ আল-মামুন"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.