আসাদুজ্জামান নূর

আসাদুজ্জামান নূর (জন্ম ৩১ অক্টোবর ১৯৪৬[1]) হলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ। তিনি সাবেক বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।[2] এবং নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য।[3][4]

আসাদুজ্জামান নূর
২০১৪ সালে নূর, গোয়াংঝু, কোরিয়া
জন্ম (1946-10-31) ৩১ অক্টোবর ১৯৪৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
যেখানের শিক্ষার্থী
পেশা
  • আভিনেতা
  • উপস্থাপক
  • রাজনীতিবিদ
কার্যকাল১৯৮০-এর দশক–বর্তমান
আদি নিবাসনীলফামারী
দাম্পত্য সঙ্গীশাহীন আখতার
সন্তান
  • সুদীপ্ত (পুত্র)
  • সুপ্রভা তাসনীম (কন্যা)
পিতা-মাতা
  • আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী (পিতা)
  • আমিনা বেগম। (মাতা)
পুরস্কার
মাননীয় মন্ত্রী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)
কাজের মেয়াদ
৫ জানুয়ারি ২০১৩  ২০১৮
রাষ্ট্রপতিআব্দুল হামিদ
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
ব্যক্তিগত বিবরণ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

১৯৭২ সালে তার অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চদল "নাগরিক" নাট্য সম্প্রদায়ের সাথে। এই নাট্যদলের ১৫টি নাটকে তিনি ৬০০ বারের বেশি অভিনয় করেছেন। এই দলের দুটি নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যার মধ্যে দেওয়ান গাজীর কিসসা বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নূর ১১০টিরও বেশি টেলিভিশন চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫), অয়োময় (১৯৮৮), কোথাও কেউ নেই (১৯৯০), আজ রবিবার (১৯৯৯) ও সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৯৯)। রেডিওতে প্রচারিত তার নাটকের সংখ্যা ৫০ এরও অধিক। টেলিভিশনের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) ও আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)।

সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।[5]

জীবনী

প্রাথমিক জীবন

নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[6] তার পিতা আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও মাতা আমিনা বেগম। নূর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

কর্মজীবন

১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে কাজ করার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন । ১৯৭৩ সালে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অধীনে একটি ছাপাখানায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত দূতাবাসের (বর্তমানে রাশিয়া) প্রেস রিলেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড এ (বর্তমানে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি) সাধারণ ব্যবস্থাপক পদে কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাষ্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ রাশিয়া মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দেশটিভিতে প্রচারিত “কে হতে চায় কোটিপতি” অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।কোটিপতি গ্রাম

অভিনয় জীবন

১৯৭২ সাল থেকে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত হন। তিনি এই দলের ১৫টি নাটকে ৬০০ বারেরও বেশি অভিনয় করেছেন। তিনি এই দলের দুটি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে দেওয়ান গাজীর কিসসা প্রায় তিন শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়ে সর্বোচ্চ প্রদর্শিত মঞ্চ নাটকের রেকর্ড গড়েছে। তিনি মঞ্চের জন্য ব্রেখটেরে নাটকের বাংলা অনুবাদ, রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাসের টিভি নাট্যরুপ এবং টিভির জন্য একটি মৌলিক নাটক রচনা করেছেন। এ মোর অহংকারদেওয়ান গাজীর কিসসা তার পুস্তাকাকারে প্রকাশিত নাটক। নিজস্ব পরিচালনায় তিনি ৫০টিরও বেশী বিজ্ঞাপনচিত্র ও ভিডিও ছবি নির্মাণ করেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৬৫ সালে তিনি নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরর দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি পর্যায়ে তিনি আবারও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবার পর ১২ই জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রীসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[7]

ব্যক্তিগত জীবন

নূর ডা. শাহীন আখতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শাহীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। পুত্র সুদীপ্ত ও কন্যা সুপ্রভা তাসনীম। পুত্র সুদীপ্ত বাংলাদেশী কূটনীতিক এম আমিনুল ইসলামের কন্যা কাজলি শেহরিন ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[8] কন্যা সুপ্রভা ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর টিমথি স্টিফেন গ্রিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[9] নূরের বোন কাওসার আফসানা ব্র্যাক, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিভাগের পরিচালক।[10]

চলচ্চিত্র তালিকা

চলচ্চিত্র

বছর চলচ্চিত্র ভূমিকা পরিচালক টীকা সূত্র
১৯৮৪ হুলিয়া তানভীর মোকাম্মেল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
১৯৮৬ দহন সুমিত শেখ নিয়ামত আলী
১৯৯২ শঙ্খনীল কারাগার খোকা মোস্তাফিজুর রহমান
১৯৯৪ আগুনের পরশমণি বদিউল আলম "বদি" হুমায়ূন আহমেদ
২০০৩ চন্দ্রকথা সরকার হুমায়ূন আহমেদ
২০০৭ দারুচিনি দ্বীপ মনসুর আলী তৌকির আহমেদ
নয় নম্বর বিপদ সংকেত হিন্দু কামার হুমায়ূন আহমেদ
২০১২ ঘেটুপুত্র কমলা বর্ণনাকারী হুমায়ূন আহমেদ
২০১৫ সুতপার ঠিকানা বর্ণনাকারী প্রসূন রহমান

টেলিভিশন

বছর চলচ্চিত্র ভূমিকা চ্যানেল টীকা সূত্র
১৯৮৫ এইসব দিনরাত্রি রফিক বিটিভি টেলিভিশন ধারাবাহিক
১৯৮৮ বহুব্রীহি আনিস বিটিভি টেলিভিশন ধারাবাহিক
অয়োময় ছোট মির্জা বিটিভি টেলিভিশন ধারাবাহিক
১৯৯০ কোথাও কেউ নেই বাকের ভাই বিটিভি টেলিভিশন ধারাবাহিক
১৯৯২ প্রিয় পদরেখা রঞ্জু বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
আজ আমাদের ছুটি ফরিদ বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
১৯৯৪ হিমু মোবিন / হিমু বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
১৯৯৭ নিমফুল মনা ডাকাত বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
ঘটনা সামান্য দুলাভাই বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
১৯৯৯ সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড জনাব রফিক বিটিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র
আজ রবিবার ফরহাদ বিটিভি টেলিভিশন ধারাবাহিক
২০১০ বিশ্বাস বর্ণনাকারী বিটিভি বিবিসি প্রযোজিত টেলিভিশন ধারাবাহিক
২০১৭ হোটেল অ্যালবাট্রস কিবরিয়া কবির গাজী টিভি টেলিভিশন চলচ্চিত্র

সম্মাননা

  • শহীদ মুনির চৌধুরী পুরস্কার (২০০৬)[11]
  • নরেন বিশ্বাস পদক (২০১0)
  • শহীদ বদরউদ্দিন হোসেন স্মৃতি পুরস্কার (২০১৫)[12]
  • বিশ্ব মঞ্চ দিবস পুরস্কার (২০১৫)[13]
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮)

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "আজ আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৩১ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  2. "মাননীয় মন্ত্রী"। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  3. "Asaduzzaman Noor's 72nd birthday today"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১০-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৪
  4. "Asaduzzaman Noor"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৪
  5. "আরও দুজন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৮
  6. "আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন আজ"দৈনিক ভোরের কাগজ। সাবের হোসেন চৌধুরী। ৩১ অক্টোবর ২০১৭। ৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  7. "নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর জয়ী"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  8. "Asaduzzaman Noor, MP,Managing Director, Desh TV"দেশ নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  9. "Shuprova Tasneem Ties the Knot!"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  10. Haque, Minam (৬ আগস্ট ২০১৬)। "The Monologue of a Maestro"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  11. Kamol, Ershad (২৯ নভেম্বর ২০০৬)। "Asaduzzaman Noor and Faiz Zahir bag awards"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৫
  12. "Momtazuddin Ahmed and Asaduzzaman Noor honoured"ঢাকা কুরিয়ার (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭
  13. "World Theatre Day observed in Dhaka, Ctg"নিউ এজ (ইংরেজি ভাষায়)। Dhaka। ২৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৭

বহিঃসংযোগ

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.