নীলফামারী জেলা
নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা (দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট)। এটি রংপুর বিভাগের (বাংলাদেশের আটটি বিভাগের একটি যা ২০০৮ সালে সপ্তম বিভাগ হিসাবে গঠিত হয়) আটটি জেলার একটি অন্যতম সীমান্তঘেষা জেলা। এ জেলার সদর বা রাজধানীর নামও নীলফামারী। নীলফামারী জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা এবং অন্য দিকে লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত।
নীলফামারী | |
---|---|
জেলা | |
![]() বাংলাদেশে নীলফামারী জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫৭′ উত্তর ৮৮°৫৭′ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
আয়তন | |
• মোট | ১৬৪৩.৪ কিমি২ (৬৩৪.৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১৯,০৭,৪৯৭ |
• জনঘনত্ব | ১২০০/কিমি২ (৩০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৯.৬৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৭৩ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
নীলফামারী জেলাকে নীলের দেশ বলা হয়। এই জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভূ-সংস্থান বেশ সমৃদ্ধ যা অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। জেলার উত্তর দিক উচু ও খরা পিরিত অঞ্চল, পূর্ব দিক তিস্তার বালুকাময় এলাকা, এই উচু ও বালুময় ভূমি ধীরে ধীরে দক্ষিণপশ্চিম দিকে উর্বর কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। নীলফামারী অতীত ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করে। এ জেলায় সত্যপীরের গান, হাঁস খেলা, মাছ খেলাসহ অনেক উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়।
নীলফামারী একটি কৃষি প্রধান জেলা। এ জেলার ৬৮.৫% মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানকার প্রধান শিল্প বয়ন, চাল, বাশবেত প্রভৃতি। দারোয়ানী বস্ত্র কল এ জেলার সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া উত্তরা ইপিজেড ও সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর মত শিল্প পার্ক।
নামকরণ
দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়।
সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হতো এখানকার উর্বর মাটির গুণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে। গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল স্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি।ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।
ভৌগোলিক অবস্থান
রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ দুরে ১৫৮০.৮৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নীলফামারী জেলার অবস্থান, যা কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে, ২৫°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এ জেলার পূর্বে রংপুর জেলা ও লালমনিরহাট জেলা, দক্ষিণে রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলা,পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলা এবং উত্তরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি
নীলফামারী-০১ | নীলফামারী-০২ | নীলফামারী-০৩ | নীলফামারী-০৪ | |
---|---|---|---|---|
জনাব মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার, মাননীয় সংসদ সদস্য, ডিমলা, নীলফামারী | জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান নূর, মাননীয় সংসদ সদস্য,নীলফামারী সদর | জনাব মেজর মোঃ সোহেল রানা, মাননীয় সংসদ সদস্য, জলঢাকা , নীলফামারী | মোঃ আদেলুর রহমান, মাননীয় সংসদ সদস্য, সৈয়দপুর-কিশোরগণ্জ, নীলফামারী |
স্থানীয় সরকার
১৮৭৫ সালে মহকুমা ও পরে ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়।প্রথম নির্বাচিত এবং বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন।
উপজেলা পরিষদ
মোট ৬ টি উপজেলা নিয়ে নীলফামারী জেলা।
ইউনিয়ন পরিষদ
নীলফামারী জেলায় মোট ৬০ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
শিক্ষা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- নীলফামারী মেডিকেল কলেজ
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর
- নীলফামারী সরকারি কলেজ, নীলফামারী
- নীলফামারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, নীলফামারী
- নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজ,
- মশিঊর রহমান ডিগ্রী কলেজ, নীলফামারী
- ডোমার সরকারি কলেজ,
- চিলাহাটি সরকারি কলেজ
- সৈয়দপুর সরকারি কলেজ
- সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়
- ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজ
- ছোটখাতা বহুমুখী ফাজিল মাদরাসা, ডিমলা, নীলফামারী।
- কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজ
- সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল
- ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দপুর
- নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- জলঢাকা কলেজ
- টেংগনমারী ডিগ্রী কলেজ, জলঢাকা, নীলফামারী
- সোনারায় সংগলশী উচ্চ বিদ্যালয়।
- ডিমলা রাণী বৃন্দা রাণী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়
- কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
- কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, নীলফামারী
অর্থনীতি
নীলফামারী মূলগতভাবে একটি কৃষি নির্ভর জেলা। জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা, ও মরিচ। জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় প্রচুর ভুট্টার চাষ হয়। ডোমার, ডিমলায় মরিচের চাষ হয়। এছাড়া আলু, ধান, গম, সরিষা, পাট, তামাক প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।[2]
শিল্প
চিত্তাকর্ষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান
.jpg)
নীলসাগর, ধর্মপালের গড়,তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প, কুন্দুপুকুর মাজার, হযরত শাহ কলন্দর মাজার, হরিশচন্দ্রের পাঠ, ময়নামতির দূর্গ, ভীমের মায়ের চুলা,চীনা মসজিদ, সৈয়দপুর চার্চ, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, দারোয়ানী টেক্সটাইল মিল, উত্তরা ইপিজেড, সৈয়দপুর বিমানবন্দর, ডিমলা রাজবাড়ী, বালাপাড়া গণকবর ইত্যাদি।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
- শাহ কলন্দর ইসলামী ব্যক্তিত্ব,
- কাজী কাদের, সাবেক মন্ত্রী (পাকিস্তান আমল);
- মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) (জিয়াউর রহমান সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন);
- শহীদ জননী জাহানারা ইমাম;
- খয়রাত হোসেন, সাবেক মন্ত্রী;
- বিচারপতি মোস্তফা কামাল, সাবেক প্রধান বিচারপতি;
- শফিকুল গনি স্বপন, সাবেক মন্ত্রী;
- মহেশ চন্দ্র রায়, উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী।
- হরলাল রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
- রথীন্দ্রনাথ রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
- আসাদুজ্জামান নূর, নাট্য ব্যক্তিত্ব; বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ; নীলফামারী-২
- আনিসুল হক, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক;
- বেবি নাজনিন, কন্ঠশিল্পী।
- বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন,উপজেলা চেয়ারম্যান, নীলফামারী সদর উপজেলা;
- আশনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী ও মডেল
আরোও দেখুন
সম্প্রতি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় পুরনো মন্দির আবিস্কৃত হয়।
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নীলফামারী"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪।
- উত্তর বাংলা.কম
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিভ্রমণে নীলফামারী জেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে নীলফামারী জেলা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |