নোয়াখালী জেলা
নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
নোয়াখালী | |
---|---|
জেলা | |
![]() | |
![]() বাংলাদেশে নোয়াখালী জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৯′৪৮″ উত্তর ৯১°৬′০″ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮২১ |
আয়তন | |
• মোট | ৪২০২.৭০ কিমি২ (১৬২২.৬৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩৩,৭০,২৫১ |
• জনঘনত্ব | ৮০০/কিমি২ (২১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৯.৫০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৮০০ ![]() |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ৭৫ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
আয়তন ও অবস্থান
নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন ৪২০২.৭০ বর্গ কিলোমিটার।[2][3] বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°০৭' থেকে ২৩°০৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৩' থেকে ৯১°২৭' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে নোয়াখালী জেলার অবস্থান।[2] রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৭১ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার। এ জেলার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা ও ফেনী জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলা ও ভোলা জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠাকাল
বর্তমান নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল, যা এখনও বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত।
নোয়াখালী জেলার মর্যাদা পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক এদেশে জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থেকেই। ১৭৭২ সালে কোম্পানীর গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এদেশে প্রথম আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা নেন। তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯টি জেলায় বিভক্ত করে প্রতি জেলায় একজন করে কালেক্টর নিয়োগ করেন। এ ১৯টি জেলার একটি ছিল কলিন্দা। এ জেলাটি গঠিত হয়েছিল মূলতঃ নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে। কিন্ত ১৭৭৩ সালে জেলা প্রথা প্রত্যাহার করা হয় এবং প্রদেশ প্রথা প্রবর্তন করে জেলাগুলোকে করা হয় প্রদেশের অধীনস্থ অফিস। ১৭৮৭ সালে পুনরায় জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং এবার সমগ্র বাংলাদেশকে ১৪টি জেলায় ভাগ করা হয়। এ ১৪টির মধ্যেও ভুলুয়া নামে নোয়াখালী অঞ্চলে একটি জেলা ছিল। পরে ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা নামে একটি নতুন জেলা সৃষ্টি করে ভুলুয়াকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৎকালে শাহবাজপুর, হাতিয়া, নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে ছিল ভুলুয়া পরগনা। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়।
নামকরণ
নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় নোয়া (নতুন) খাল বলা হত, এর ফলে অঞ্চলটি একসময়ে লোকের মুখেমুখে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালী হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে।[4]
সাধারণ ইতিহাস
নোয়াখালীর ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০ সালে নোয়াখালীর জনগণের জিহাদ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯২০ সালের খিলাফত আন্দোলন। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে নোয়াখালীর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর মর্মান্তিক নিপীড়িন, গণহত্যা শুরু হয়, যা নোয়াখালী গণহত্যা নামে পরিচিত। এই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করতে মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলা ভ্রমণ করেন। বর্তমানে সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ নামক স্থানে গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম রয়েছে, যা গান্ধী আশ্রম নামে পরিচিত।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী মহকুমা নিয়ে নোয়াখালী জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত একটি বিশাল জেলা হিসেবে পরিচালনা হয়ে আসছিল। ১৯৮৪ সালে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হলে লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা আলাদা হয়ে যায়। শুধুমাত্র নোয়াখালী মহকুমা নিয়ে নোয়াখালী জেলা পুনর্গঠিত হয়। তখন এ জেলায় উপজেলা ছিল ছয়টি। পরবর্তীতে আরো তিনটি উপজেলার সৃষ্টি করা হয়। হাতিয়া উপজেলার কিছু অংশ জেলার মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত থাকলেও বৃহত্তর অংশ (মূল হাতিয়া) এর চতুর্দিকে মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা।[4]
নোয়াখালীর শহর
নোয়াখালী বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যার নিজ নামে কোন শহর নেই। নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী নামে পরিচিত। ১৯৪৮ সালে যখন উপজেলা সদর দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তা ৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। ব্রিটিশদের পরিকল্পনায় নতুন করে এ শহরের পত্তন হয়। নোয়াখালী শহর যখন ভেঙ্গে যাচ্ছিল তখন মাইজদী মৌজায় ধান ক্ষেত আর খোলা প্রান্তরে পুরাতন শহরের ভাঙ্গা অফিস আদালত গুলো এখানে এনে স্থাপন করা হয় এবং ১৯৫৩ সালে শহরের পুরনো এলাকা কালিতারা, সোনাপুর ও মাইজদীসহ কাদির হানিফ ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ষোল একর জুড়ে কাটা হয় এক বিশাল দীঘি। লোক মুখে প্রচলিত হয় বড় দীঘি নামে। সে দীঘির চতুর্দিকে চক্রাকারে বানানো হয় ইট সুরকীর রাস্তা। সে রাস্তাকে ঘিরে বাংলো আকৃতিতে তৈরী হয় সরকারি সব দপ্তর। এই দীঘিটি ব্যবহৃত হত মূলতঃ শহরের জলাধার হিসেবে, দীঘিতে পাম্প লাগিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালত এবং আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হত। মাইজদী শহর স্থানান্তর করলেও সুদীর্ঘ প্রায় একযুগ পর্যন্ত মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার সদরদপ্তর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত অবস্থায় ছিল। অবশেষে ১৯৬২ সালে মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার স্থায়ী সদর দপ্তর হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
চৌমুহনী নোয়াখালীর আরেকটি ব্যস্ত শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্র, যা একসময়ে মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি
১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকবাহিনী নোয়াখালী সদর উপজেলায় প্রবেশ করে। ১১ মে পাকবাহিনী হাতিয়া শহর আক্রমণ করে। তারা এ উপজেলার আফাজিয়া বাজারে ৬ জনকে এবং ওছখালি বাজারে ২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ১৫ জুন জেলার সোনাপুর আহমদিয়া মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৮ জুন পাকবাহিনী সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকার শ্রীপুর গ্রামে ৭০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াহাট বাজারে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করে। ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাঞ্ছারাম রোডের স্লুইসগেটের পূর্বপাশে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াইয়ে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরবর্তীতে এ উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি খণ্ড লড়াইয়ে সদর বিএলএফ কমান্ডার অহিদুর রহমান অদুদসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা কবিরহাট উপজেলার রাজাকার জলিলের বাড়িতে হামলা করলে জলিলসহ তার কয়েকজন সহযোগী নিহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সেনবাগ উপজেলার ডোমনাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। উক্ত লড়াইয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।[2] নোয়াখালী জেলা স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর।
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
- গণকবর: ১টি (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১৪নং স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকা)
- স্মৃতিস্তম্ভ: ৩টি (বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী, সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাপুর এবং নোয়াখালী জেলা সদরের পিটিআই প্রাঙ্গণ)
- বধ্যভূমি: ১টি (কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের ডোবা)[2]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
নোয়াখালী জেলা ৯টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৯৩টি ইউনিয়ন, ৮৮২টি মৌজা, ৯৬৭টি গ্রাম ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।[5]
উপজেলাসমূহ
নোয়াখালী জেলায় মোট ৯টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:[6]
সংসদীয় আসন
জনসংখ্যা
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নোয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৩,৭০,২৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৬,১০,৪৪৪ জন এবং মহিলা ১৭,৫৯,৮০৭ জন।[1] মোট জনসংখ্যার ৯৫.৪২% মুসলিম, ৪.৫২% হিন্দু এবং ০.০৬% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।[2]
শিক্ষা ব্যবস্থা
নোয়াখালী জেলার সাক্ষরতার হার ৬৯.৫০%।[2] এ জেলায় রয়েছে:[1]
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : ১টি
- মেডিকেল কলেজ : ১টি (সরকারি)
- টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ : ১টি (সরকারি)
- কলেজ : ৩৫টি (৮টি সরকারি)
- মাদ্রাসা : ১৬১টি
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ২৮৯টি (১২টি সরকারি)
- কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ৫টি
- কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : ২টি
- প্রাথমিক বিদ্যালয় : ১২৪৩টি
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
অর্থনীতি
নোয়াখালী জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। আঞ্চলিক জিডিপির প্রায় ৪০% কৃষি খাত থেকে আসে এবং জেলার ৮০ ভাগ লোক এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট। কৃষির মধ্যে মূলত মৎস্য চাষ ও মৎস্য আহরণের সাথে সবচেয়ে বেশি মানুষ জড়িত। বছরজুড়ে নৌকা তৈরি ও মেরামত, মাছ ধরা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, শুটকি উৎপাদন, জাল মেরামত এর সাথে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ শ্রমজীবী জড়িত থাকে। নিম্নভূমি অঞ্চল হওয়াতে এই জেলায় প্রচুর মৎস্য চাষ হয়ে থাকে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। ফসল উৎপাদন মূলত বছরে একবারই হয়। শীত মৌসুমে জেলার সর্বত্র বিশেষ করে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে রকমারি ফসলের চাষ হয়। এছাড়াও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ও দ্বীপগুলোতে গরু, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়া পালন ব্যাপকতা লাভ করেছে।
নোয়াখালী জেলায় শিল্প কারখানা তেমনভাবে গড়ে উঠেনি, কিন্তু নোয়াখালী জেলার অনেক ব্যক্তি দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন। নোয়াখালীর মানুষ মূলত কাজের জন্য দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে গমন করেন। জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স পাঠানো জেলাগুলোর মধ্যে নোয়াখালী জেলা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে।
জেলার মোট আয়ের অন্যান্য খাতে আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে অ-কৃষি শ্রম ৩.৪৩%, শিল্প ০.৮৪%, বাণিজ্য ১৪.৭৪%, পরিবহন খাত ৩.৮৩%, চাকুরি ১৬.১১%, নির্মাণখাত ১.৪৯%, রেমিট্যান্স ৭.৯৭% এবং অন্যান্য ১০.৫৮% অবদান রাখছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
নোয়াখালী জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-নোয়াখালী মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া এ জেলায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে।[13]
ধর্মীয় উপাসনালয়
নোয়াখালী জেলায় ৪১৫৯টি মসজিদ, ৪৯৭টি ঈদগাহ, ২৩৯টি মন্দির, ২টি বিহার এবং ১টি ক্যাথলিক খ্রিস্টান গির্জা রয়েছে।
নদ-নদী
নোয়াখালী জেলার প্রধান নদী মেঘনা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে ডাকাতিয়া ও ছোট ফেনী নদী অন্যতম।[14]
জলবায়ু
বছরব্যাপী সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ৩৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ১৪.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বছরে গড় বৃষ্টিপাত ৩৩০২ মিলিমিটার।[3]
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
১৭৯০ সালের পর থেকে নোয়াখালী জেলা বহুবার ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে নোয়াখালী জেলার অনেকে ছিলেন।
দর্শনীয় স্থান
- কল্যান্দি জমিদার বাড়ি
- অরুণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
- এয়াকুব আলী ব্যাপারী জামে মসজিদ, সোনাপুর
- কমলা রাণীর দীঘি
- কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির
- গান্ধি আশ্রম
- নিঝুম দ্বীপ
- নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান
- নোয়াখালী জিলা স্কুল
- নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ
- নোয়াখালী পাবলিক লাইব্রেরী, মাইজদী[15]
- নোয়াখালী সরকারি কলেজ
- নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, নোয়াখালী
- ফকির ছাড়ু মিজি (রহ.) সাহেবের দরগাহ, মাইজদী[15]
- বজরা শাহী মসজিদ
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, সোনাইমুড়ি
- বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর
- মাইজদী কোর্ট বিল্ডিং দীঘি
- মোহাম্মদপুর রামেন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
- ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চর জব্বর
- রমজান মিয়া জামে মসজিদ
- শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম
- সপ্তগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
- স্বর্ণ দ্বীপ
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- আতাউর রহমান –– টিভি অভিনেতা।
- আনিসুল হক –– রাজনীতিবিদ।
- আবদুল মালেক উকিল –– আইনজীবি এবং রাজনীতিবিদ।
- আবদুল হাকিম –– মধ্যযুগীয় কবি।
- আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক –– প্রাক্তন সেনাপ্রধান।
- আবুল কালাম আজাদ –– বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- আর্জুমান্দ বানু –– রাজনীতিবিদ।
- আয়েশা ফেরদাউস –– রাজনীতিবিদ।
- এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী –– স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত চিকিৎসক।
- এ এস এম শাহজাহান –– প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা।
- এ টি এম শামসুজ্জামান –– অভিনেতা।
- এইচ এম ইব্রাহিম –– রাজনীতিবিদ।
- ওবায়দুল কাদের –– রাজনীতিবিদ।
- কবীর চৌধুরী –– শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক।
- চিত্তরঞ্জন সাহা –– প্রকাশক এবং বাংলা একাডেমী বই মেলার উদ্যোক্তা।
- জহুরুল হক –– আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম শহীদ।
- তবারক হুসাইন –– কূটনীতিবিদ।
- প্রণব ভট্ট –– গীতিকার এবং ঔপন্যাসিক।
- ফারাহ মাহবুব –– বিচারপতি।
- ফেরদৌসী মজুমদার –– টিভি অভিনেত্রী।
- বদরুল হায়দার চৌধুরী –– আইনবিদ এবং প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।
- মঈন উদ্দিন আহমেদ –– প্রাক্তন সেনাপ্রধান।
- মওদুদ আহমেদ –– রাজনীতিবিদ।
- মামুনুর রশীদ কিরন –– রাজনীতিবিদ।
- মাহফুজ উল্লাহ –– লেখক, সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং পরিবেশবিদ।
- মাহবুবুর রহমান –– রাজনীতিবিদ।
- মুনীর চৌধুরী –– শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- মোতাহের হোসেন চৌধুরী –– শিক্ষাবিদ এবং লেখক।
- মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী –– শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী –– চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য নির্মাতা।
- মোরশেদ আলম –– রাজনীতিবিদ।
- মোহাম্মদ আবুল বাশার –– বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী –– রাজনীতিবিদ।
- মোহাম্মদ রুহুল আমিন –– বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- মোহাম্মদ শরীফ –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ মুন্সী –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী –- কবি।
- রাজেন্দ্র লাল রায় চৌধুরী –– নোয়াখালী বার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, যিনি ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় নির্মমভাবে নিহত হন।
- শবনম বুবলি –– চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
- শাহাদাত হোসেন চৌধুরী –– অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার।
- শিরীন শারমিন চৌধুরী –– দেশের প্রথম নারী স্পিকার।
- সা’দত হুসেন –– বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- সিরাজুর রহমান –– ব্রিটিশ সাংবাদিক।
- সিরাজুল আলম খান –– রাজনীতিবিদ।
- হেমপ্রভা মজুমদার –– ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব।
তথ্যসূত্র
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45ba0521-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%8F%E0%A6%95%20%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%87%20%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
- "নোয়াখালী জেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org।
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45b9d86e-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%AD%E0%A7%8C%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BF
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45c4da24-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AA%E0%A6%9F%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45ba0521-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%8F%E0%A6%95%20%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%87%20%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BEl
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/9fff8795-2c32-4372-b02e-25ce46757bea/%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
- "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45b9dbf5-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%20%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/45b9dafc-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%A8%E0%A6%A6-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80
- http://www.noakhali.gov.bd/site/page/5a0fb717-2144-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%90%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A7%8D%E0%A6%AF
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে নোয়াখালী জেলা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
![]() |
উইকিভ্রমণে নোয়াখালী জেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |