চিত্তরঞ্জন সাহা

চিত্তরঞ্জন সাহা (জানুয়ারি ১, ১৯২৭ - ডিসেম্বর ২৬, ২০০৭) বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন পথিকৃৎ। তিনি বাংলা একাডেমী বইমেলার উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুঁথিঘর এবং মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মূদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

চিত্তরঞ্জন সাহা
জন্ম
চিত্তরঞ্জন সাহা

১ জানুয়ারি, ১৯২৭
লতিফপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী, বৃটিশ ভারত
মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর, ২০০৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাপ্রকাশক
পরিচিতির কারণপুঁথিঘর ও মুক্তধারা প্রতিষ্ঠাতা

প্রারম্ভিক জীবন

চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯২৭ সালে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার লতিফপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম কৈলাশ চন্দ্র সাহা এবং মায়ের নাম তীর্থবাসী সাহা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে চিত্তরঞ্জন ছিলেন দ্বিতীয়। ঐতিহ্যগতভাবে তাদের পরিবারে ছিল কাপড়ের ব্যবসা এবং তারা পুরনো ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন । তিনি ১৯৪৩ সালে মোহাম্মদপুর রামেন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে চৌমুহনী কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষা পাশ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ব্যবসায়ের পারিবারিক ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে চৌমুহনীতে বইয়ের দোকান পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুরু করেন পুস্তক ব্যবসায়। ঐ দোকানে প্রধানত স্কুলপাঠ্য বই ও নোট বই বিক্রি হতো। কিছুকাল পরে বাসন্তী প্রেস নামে একটি ছাপাখানা ক্রয় করেন। তিনি এর নাম বদলে রাখেন ছাপাঘর । পাশাপাশি বাঁধাই ঘর নামে একটি পুস্তক বাঁধাই প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন। এখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা প্রেস নামে একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। আরো প্রতিষ্ঠা করেন ‘গ্রন্থঘর’ নামে একটি বইয়ের দোকান। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন পাঠ্যপুস্তক ও নোটবইয়ের প্রকাশনা সংস্থা পুঁথিঘর লিমিটেড

প্রকাশনা শিল্পে অবদান

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ বাঙালিদের গণহত্যা শুরু করলে চিত্তরঞ্জন সাহা সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর পরামর্শে আগরতলা হয়ে কলকাতায় চলে যান।[1] পূর্ব পাকিস্তান থেকে তখন প্রচুর শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল। কলকাতায় আশ্রিত বাঙালি সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে তিনি উদ্যোগ নিলেন বাংলাদেশের লেখকদের সৃজনশীল বই প্রকাশের। সূচনা হল স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ মুক্তধারা । এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম দুটি প্রকাশনা ছিল বাংলাদেশ কথা কয় এবং রক্তাক্ত বাংলা নামে দুটি সংকলন গ্রন্থ। চিত্রনির্মাতা ও সাহিত্যিক জহির রায়হান, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি-ঔপন্যাসিক আহমদ ছফা-সহ অনেক লেখক-সাংবাদিক কবি যুক্ত হয়েছিলেন চিত্তবাবুর প্রচেষ্টার সঙ্গে। কলকাতার মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের ৩২টি বই । ঐ ৩২টি বই ছিল বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অভিব্যক্তি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউসের সামনে বটতলায় একটুকরো চটের উপর[2] কলকাতা থেকে আনা সেই ৩২ টি বই সাজিয়ে তিনি বই মেলার সূচনা করেন । ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত একাই তিনি বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে মেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে তার সাথে অন্যরা অনুপ্রাণিত হন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর মহা পরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সাথে সরাসরি সংযুক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি । এ সংস্থাটিও সংগঠিত করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

পরবর্তী জীবন

পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের সামরিক সরকারের আমলে চিত্তরঞ্জন সাহাকে তার ফরাশগঞ্জ দফতর থেকে জীপে করে তুলে নিয়ে যায়; পরবর্তীতে তাকে ফরাশগঞ্জে একইভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।[3] ২০০৫ সালে চিত্তরঞ্জন সাহা একুশে পদকে ভূষিত হন। প্রকাশনা শিল্পে আবদানের জন্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাকে সংবর্ধনা জানায়। ডিসেম্বর ২৬ ২০০৭ তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা লোকান্তরিত হন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ বই প্রকাশনার কেন্দ্রবিন্দু বাংলাবাজারে আনা হয়। সেদিন তার প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাবাজার, নর্থব্রুক হল রোড এবং প্যারিদাস রোডের সব প্রকাশনা সংস্থা ও বই বিক্রির দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন সাহার জন্মস্থানেই তার শেষকৃত্য করা করা হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "চিত্তরঞ্জন সাহা : মরণে যাঁর কর্মময় জীবনের বিশ্রাম - arts.bdnews24.com"bdnews24.com। ৩ জানুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৯
  2. "Chittaranjan Shaha of Muktadhara sat on a piece of cloth with the books he published, in middle of a barren field in front of Bardhaman House, three decades ago, and made one plea." by Mahfuz Sadique From: http://www.newagebd.com/2007/mar/02/liti.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে
  3. "চিত্তশক্তির সাধক বাবু চিত্তরঞ্জন সাহা, মফিদুল হক"। সাহিত্য সাময়িকী, দৈনিক প্রথম আলোজানুয়ারি ৪, ২০০৮ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.