নেত্রকোনা জেলা

নেত্রকোনা জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। এই জেলাটি এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে রয়েছে পাহাড়ি জলপ্রপাত, চীনা মাটির পাহাড়, নদী, খাল, বিল, পুকুর ভড়া মাছ, গোয়াল ভড়া গরু, হাঁস-মুরগির খামার, সোনালী ধানে ভরপুর সবুজ মাঠ সাথে কৃষকের মিষ্টি মুখের সোনালী হাঁসি, ভিবিন্ন ধরনের পাখির কিচিরমিচির, কোকিলের সুমধুর কণ্ঠের গান, হরেক রকম প্রাকৃতিক গাছ এবং ভিবিন্ন ধরনের বন্য পশু-পাখিতে পরিপূর্ণ বন-জঙ্গল, কবি, লেখক, কণ্ঠশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী আরও অনেককিছু রয়েছে যাহয়ত বলে বোঝানো সমম্বব নয়, কিন্তু দেখলে এবং সে সম্পর্কে জানলে মন জুড়িয়ে যাবে। যেমনঃ গ্রামীণ সরল মনের মানুষের মিষ্টি মুখের মিষ্টি সরল হাঁসি, স্নেহময়ি মায়ের মমতা মাখানো মুখের হাঁসি, রান্নাকরা সুস্বাদু হরেক রকমের খাবার, পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত গুছগ্রাম এবং সেখানে বসবাসকৃত পাহাড়ি মানুষের জীবনযাত্রা। এই জেলা সম্পর্কে ভিবিন্ন সময় ভিবিন্ন কবি সাহিত্যিক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে লিখেছেন, এটি একটি মায়া-মমতায় পরিপূর্ণ এবং চির সবুজে গেঁড়া এলাকা। প্রকৃতির এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা স্বশরীরে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না, এটি ঠিক তেমনি একটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গা।

নেত্রকোণা
জেলা
বাংলাদেশে নেত্রকোনা জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′৪৮″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
আয়তন
  মোট২৮১০.২৮ কিমি (১০৮৫.০৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট২২,২৯,৪৬৪
  জনঘনত্ব৭৯০/কিমি (২১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৩৪.৯৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৭২
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা

ইতিহাস

খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল গুপ্ত সম্রাটগণের অধীন ছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুপ্তযুগে সমুদ্রগুপ্তের অধীনস্থ এ অঞ্চলসহ পশ্চিম ময়মনসিংহ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ময়মনসিংহের উত্তরাংশে পাহার মুল্লুকে বৈশ্যগারো ও দুর্গাগারো তাদের মনগড়া রাজত্ব পরিচালনা করতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জনৈক মুসলিম শাসক পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল আক্রমণ করে অল্প কিছুদিনের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে জিতারা নামক একজন সন্ন্যাসী কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী অঞ্চল আক্রমণ ও দখল করেন। সে সময় পর্যন্তও মুসলিম শাসক ও অধিবাসী স্থায়ীভাবে অত্রাঞ্চলে অবস্থান ও শাসন করতে পারেনি। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুসলিম রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র পুত্র নসরৎ শাহ’র শাসনামলে (১৫১৯-১৫৩২) দু'একবার বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও বিদ্রোহীরা সফল হয়নি। সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চলেই নসরৎ শাহ’র শাসন বলবৎ ছিল। নসরৎ শাহ-র উত্তরাধিকারীরা (১৫৩৩-১৮৩৮) কিংবা তার পরবর্তী লক্ষ্মণাবতীর অন্য শাসকেরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। ময়মনসিংহের উত্তরাংশ কোচদের পুনরাধীন হয়ে পড়ে। বাকী অংশ দিল্লীর পাঠান সুলতান শেরশাহ-র (১৫৩৯-১৫৪৫) শাসনভুক্ত হয়েছিল। তৎপুত্র সেলিম শাহ’র শাসনের সময়টি (১৫৪৫-১৫৫৩) ছিল বিদ্রোহ ও অস্থিরতায় পূর্ণ। রাজধানী দিল্লী থেকে অনেক দূরে ও কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে প্রধান রাজস্ব সচিব দেওয়ান সুলায়মান খাঁ (যিনি পূর্বে কালিদাস গজদানী নামে পরিচিত ছিলেন) সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এতে করে দেশী ও বিদেশী রাজ্যলিপ্সুরা এতদঞ্চল দখলের প্রয়াস পায়। এর মধ্যে ভাটী অঞ্চল (পূর্ব-উত্তরাংশ) সোলায়মান খাঁ-র দখলভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের প্রেরিত সৈন্যদের হাতে সোলায়মান খাঁ নিহত হলেও তার দু’পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশা খাঁ খিজিরপুর থেকে ভাটী অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর তৎপুত্র মুসা খাঁ ও আফগান সেনা খাজা উসমান খাঁ কর্তৃক অত্রাঞ্চল শাসিত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।[2][3]

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে হওয়া নেত্রকোনা মহকুমাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলা করা হয়।

প্রশাসনিক বিন্যাস

নেত্রকোণা জেলা ১০টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত; এগুলো হলোঃ

শিক্ষা

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৯%; পুরুষ ৩৭.৯%, মহিলা ৩১.৯%। নেত্রকোনা জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ১ টি, মেডিকেল কলেজ ১ টি, কলেজ ২৮ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩৬ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৮৩ টি, মাদ্রাসা ১৬০টি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়

  • নাম: "শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়"
দেশের ৪২ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
  • অবস্থান: নেত্রকোনা জেলা পৌর শহরের রাজুর বাজার (বারহাট্টা রোড) এলাকায়।
  • আয়তন: ৫০০ একর (নির্মানাধীন)
  • বর্তমান ক্যাম্পাস (অস্থায়ী): নেত্রকোনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি), রাজুর বাজার, নেত্রকোনা। মূল ক্যাম্পাস নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই ক্লাস চলবে।
  • বিষয়:

(১) বাংলা (২) ইংরেজী (৩) কম্পিউটার সাইন্স (৪) ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স বর্তমানে উপরিউক্ত বিষয়গুলো নিয়েই চালু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে।

  1. আসন সংখ্যা: ২০০ (আনুমানিক)

কলেজসমূহ

মেডিকেল কলেজ

  • "নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ"

অন্যান্য

নেত্রকোণা সরকারী মহিলা কলেজ
  • নেত্রকোণা সরকারি কলেজ,
  • নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজ,
  • মদন সরকারি কলেজ
  • কেন্দুয়া সরকারি কলেজ
  • সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান কলেজ,
  • আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজ,
  • হেনা ইসলাম কলেজ,
  • নেত্রকোনা সিটি কলেজ,
  • মোহনগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ,
  • পূর্বধলা সরকারি কলেজ।
  • কলমাকান্দা সরকারি ডিগ্রি কলেজ,
  • সুসং সরকারি কলেজ।
  • চন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজ
  • তেলিগাতী সরকারী কলেজ
  • সরকারী কৃষ্ণপুর হাজী আলী আকবর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

স্কুলসমূহ

  • ইচুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  • ভূগী জাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়,
  • তেলিগাতী বি এন এইচ কে একাডেমি
  • জাহাঙ্গীরপুর টি. অামিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,
  • পদ্মশ্রী এ.ইউ. খান উচ্চ বিদ্যালয়,
  • কেন্দুয়া জয়হরি পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৩২),
  • পূর্বধলা জেএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৭),
  • দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়(১৮৮৯),
  • নেত্রকোনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭),
  • আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪),
  • মোহনগঞ্জ সরকারি পাইলট হাইস্কুল (১৯৩১),
  • কলমাকান্দা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২),
  • বরুয়াকোনা সাধু ফ্রেডারিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০),
  • দুর্গাপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
  • এম কে সি এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুর।
  • নেত্রকোনা কালেক্টরেট স্কুল,
  • জি এম এস মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুর।
  • আব্বাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

শাহ আব্দুল মোত্তালিব বাম রাজনীতিবিদ, জেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

চিত্তাকর্ষক স্থান

চিত্রশালা

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নেত্রকোণা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৩ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬
  2. নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস’ (পৃষ্ঠা-১৬৮, খন্ড-৫)
  3. বাংলাপিডিয়া
  4. "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  5. "ফিরছেন বারী সিদ্দিকী"দৈনিক মানবজমিন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৫
  6. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ২৯৬।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.