ময়মনসিংহ জেলা
ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এই জেলার আকার সময় সময় পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহে জেলা থেকে টাঙ্গাইল মহুকুমাকে পৃথক করে একটি জেলা উন্নীত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন মহুকুমা যথা জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনাকে পৃথক পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এছাড়া জামালপুরের অন্তর্গত শেরপুরকেও একটি পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহ জেলার কিছু কিছু অংশ সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অঙ্গীভূত করা হয়েছিল। এই ভাবে ময়মনসিংহ জেলা যা কিনা ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ জেলা ছিল তার আকার ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসে।
ময়মনসিংহ | |
---|---|
জেলা | |
![]() ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী: ময়মনসিংহের মক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, গাঙিনাপাড়, মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ব্রহ্মপুত্র নদের দৃশ্য, বড় মসজিদ। | |
![]() বাংলাদেশে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৮′৩″ উত্তর ৯০°১৬′৪″ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
আয়তন | |
• মোট | ৪৩৬৩.৪৮ কিমি২ (১৬৮৪.৭৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৫৩,৩০,২৭২ |
• জনঘনত্ব | ১২০০/কিমি২ (৩২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৩.৫০ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬১ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
ময়মনসিংহ জেলা মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা, চন্দ্রাবতী, কবিকঙ্ক, দীনেশচন্দ্র সেন এবং মুক্তাগাছার মণ্ডার জন্য বিখ্যাত।
ভৌগোলিক সীমানা

ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

ময়মনসিংহ জেলা ১৩টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত; এগুলো হলঃ
নামকরণ
মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানীর পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে মোঘল সেনাপতি মনমোহন সিংহ ঈসা খা কে দমন করতে যাওয়ার পথে এখানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেছিলেন এজন্য এখানকার নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ। [2]
ইতিহাস
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো জেলা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।
নদীসমূহ
ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াইন নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী, সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী, মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী, কংস নদী, খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী, ভোগাই নদী, বান্দসা নদী, মালিজি নদী, ধলাই নদী, কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।[3]
শিক্ষা

এখানে ২টি বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়), ২টি মেডিক্যাল কলেজ (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ), ১টি প্রকৌশল কলেজ (ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ১টি ক্যাডেট কলেজ (ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ), ১টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ(ময়মনসিংহ সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ) আছে বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন কলেজ ও প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল), এছাড়াও আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দর্শনীয় স্থান
- ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
- আলেকজান্ডার ক্যাসল
- শশী লজ
- ময়মনসিংহ জাদুঘর
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী
- সার্কিট হাউজ
- সিলভার ক্যাসেল
- বিপিন পার্ক
- রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
- কাদিগড় জাতীয় উদ্যান, ভালুকা
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- ময়মনসিংহ টাউন হল
- দুর্গাবাড়ী
- গৌরীপুর লজ
- কেল্লা তাজপুর
- আলাদিনস পার্ক
- তেপান্তর সুটিং স্পট
- কুমির খামার
- গারো পাহাড়
- চীনা মাটির টিলা
- কালুশাহকালশার দিঘী
- নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র
- শহীদ আব্দুল জব্বার জাদুঘর
- রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস
- গৌরীপুর জমিদার বাড়ি
- আঠার বাড়ি জমিদার বাড়ি, ঈশ্বরগঞ্জ
- রাজিবপুর জমিদার বাড়ি, ঈশ্বরগঞ্জ
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- কানাহরি দত্ত (১২ - ১৩ শতক) - মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি;
- করম শাহ (? - ১৮১৩) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-বিরোধী আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব;
- হেমেন্দ্রমোহন বসু (১৮৬৬ - ২৮ আগস্ট ১৯১৬) - প্রখ্যাত বাঙালি ব্যবসায়ী;
- কেদারনাথ মজুমদার(১৮৭০ - ১৯২৬)- বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক;
- হেমেন্দ্রকিশোর আচার্য চৌধুরী (২৮ মে ১৮৮১ - জুন ১৯৩৮) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- ক্ষীরোদাসুন্দরী চৌধুরী (১৮৮৩ - ?) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা।
- মুজিবুর রহমান খান ফুলপুরী (১৮৮৯ - ৫ জানুয়ারি ১৯৬৯) - সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী;
- চন্দ্রকুমার দে (১৮৮৯ - ১৯৪৬) - লেখক এবং ময়মনসিংহে প্রচলিত লোকগীতির সুবিখ্যাত সংগ্রাহক;
- আনন্দকিশোর মজুমদার (১৮৯২ - ১৯৪০) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ (২২ এপ্রিল ১৮৯৩ - ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- শ্রী নরেন্দ্রচন্দ্র ধর (১৮৯৬ - ১৯৭৮) - পণ্ডিত সন্ন্যাসী;
- আবুল কালাম শামসুদ্দীন (৩ নভেম্বর ১৮৯৭ - ১৯৭৮) - সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং ভাষাবিদ;
- আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮ - ১৮ মার্চ ১৯৭৯) - সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক;
- জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা-জন্ম ১০ জুলাই ১৯২০, মৃত্যু ২৭মার্চ ১৯৭১। শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের আবাসিক ভবনে থাকাকালে গুলিবিদ্ধ হন এবং ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
- নরেশ রায় (? - ২২ এপ্রিল ১৯৩০) - ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব এবং চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে জড়িত বিপ্লবী;
- হরুবালা রায় ( ? - ৪ মে ১৯৪৪) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- মতিলাল পুরকায়স্থ (বিশ শতক) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী এবং রাজনীতিবিদ;
- মৌলভী মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার পাহলোয়ান (অবিভক্ত বাংলার আইনসভার সদস্য ১৯২১-১৯৩৯)
- ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় (বিশ শতক) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- প্রতুল ভট্টাচার্য (১৬ জানুয়ারি ১৯০০ - ২৯ আগস্ট ১৯৭৮) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- হরসুন্দর চক্রবর্তী (১৯০৫ - ২১ মে ১৯৭৩) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- রাজা জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরী -জন্ম ১২৬৯, মৃত্যু ২২ চৈত্র ১৩৪৫। মুক্তাগাছার জমিদার। তার দানশীলতা কিংবদন্তীতুল্য।
- বিনোদচন্দ্র চক্রবর্তী (১৯০৯ - ২৫ এপ্রিল ১৯৭৩) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- আশুতোষ ভট্টাচার্য (১৯০৯ – ১৯ মার্চ, ১৯৮৪) একজন বিশিষ্ট বাংলা সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি গবেষক ও অধ্যাপক।
- জয়নুল আবেদীন (২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪ - ২৮ মে ১৯৭৬) - বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী;
- আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী (১৯১৫ - ৩০ আগস্ট ২০০১) - বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি;
- আবদুল জব্বার (১৯১৯ - ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) - ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বীর শহীদ;
- কানাইলাল নিয়োগী (১৯২৪ - ১৯ মে ১৯৬১) - ১৯৬১ সালে ভারতের বরাক উপত্যাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিত্ব;
- রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া (২৫ জানুয়ারি ১৯২৮ -২৩ মার্চ ১৯৯৬) প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ;
- বিলায়েত খাঁ (৮ই আগস্ট, ১৯২৮ - ১৩ই মার্চ, ২০০৪) বিখ্যাত বাঙালি সেতারবাদক;
- এ.কে.এম. মোশারফ হোসেন (জন্ম: ২১ অক্টোবর , ১৯৩৪ - সাবেক শিল্প ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (জন্মঃ ২ নভেম্বর ১৯৩৫) প্রখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক;
- শুভ্রাংশুকান্ত আচার্য- (জন্ম:২৭ নভেম্বর ,১৯৪০) জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সাবেক মহাপরিচালক।
- মাহফুজ আনাম - (জন্মঃ জুন ১৮, ১৯৫০) সম্পাদক ,দি ডেইলি স্টার পত্রিকা
- শামীম আজাদ (জন্মঃ ১১ নভেম্বর ১৯৫২) - ব্রিটেন-প্রবাসী বাংলাদেশী কবি ও সাহিত্যিক;
- তসলিমা নাসরিন (জন্ম : ২৫ আগস্ট , ১৯৬২ ) বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক।
- মিতালী মুখার্জী একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
- আরিফিন শুভ - (জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২) মডেল, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা
- আব্দুল কাইয়ুম - (জন্ম: ২৬ মে, ১৯৮৫) সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
- মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (জন্ম: ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬) - বাংলাদেশী ক্রিকেটার
- সানিয়া সুলতানা লিজা - (জন্ম:২২ ডিসেম্বর ১৯৯৩) একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী
- মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত - (জন্ম: ১০ ডিসেম্বর, ১৯৯৫) ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় দল।
গণমাধ্যম
জাহান, বাংলার জমিন, ইনসাফ, আজকের স্মৃতি, শিপা, স্বদেশ সংবাদ; সাপ্তাহিক: ময়মনসিংহ বার্তা, আজকের মুক্তাগাছা। অবলুপ্ত: কুমার, বিজ্ঞাপনী (১৮৬৬), বাঙালী (১৮৭৪), সুহূদ (১৮৭৫), প্রমোদী (১৮৭৫), ভারত মিহির (১৮৭৫), সঞ্জীবনী (১৮৭৮), বাসনা (১৮৯৯), আবৃতি (১৯০১), স্বদেশ সম্পদ (১৯০৫), শিক্ষা সৌরভ (১৯১২), হাফেজ শক্তি (১৯২৪), গণঅভিযান (১৯৩৮), সাপ্তাহিক চারুমিহির (১৯৩৯), উত্তর আকাশ (১৯৫৯), অনির্বাণ (১৯৬৩), জাগ্রত বাংলা (১৯৭১)।[4]
ভাষা
স্থানীয় বাংলা
ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ‘টান-টোন’ উচ্চারণ এবং এক্সেন্ট অথবা সংলাপ প্রক্ষেপণ। ভাটি অঞ্চলের ভাষার ক্ষেত্রে কাগজে হয়তো শব্দগুলো বানান করে লেখা যেতে পারে কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বরের যে কারুকাজ তা কেবল কানে শুনেই উপলব্ধি করা সম্ভব, পড়ে বুঝে নেয়া কঠিন। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংকেতিক ভাষার প্রচলন থাকলেও সে সব ভাষার শব্দাবলী মূল ভাষায় একীভূত হয়ে যাওয়া সহজ নয়, সে সুযোগও খুবই ক্ষীণ; কিন্তু ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার বহু শব্দই ইতোমধ্যে মূল ভাষার অংশ হয়ে উঠেছে এবং প্রমিত বাংলায় জায়গা করে নিয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার শব্দ মূল ভাষায় জায়গা করে নেয়াই ভাষার একমাত্র শক্তি নয়, আঞ্চলিক কোনো শব্দে চমৎকৃত হওয়ায়-ও ভাষার সৌন্দর্য নিহিত নয়; ভাষার শক্তি তার সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডারে আর ভাষার সৌন্দর্য তার চলৎশক্তিতে- তার বোধগম্যতায় এবং নিজস্ব প্রক্ষেপণ স্বাতন্ত্র্যে।
অন্যান্য
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার উপস্থিতি যেমন আছে তেমনি আছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পৃথক সাংকেতিক ভাষাও। ময়মনসিংহের গারো জাতির 'মান্দি' ভাষা, কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা অথবা কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চল অষ্টগ্রামের স্থানীয় ভাষা, যার নাম তারা দিয়েছে ‘সুকুন’, ‘সুঅন’ বা ‘ছুহুম'।
সংস্কৃতি
লোক সংস্কৃতি,লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়ে ময়মনসিংহ হলো তীর্থস্থান। ময়মনসিংহে একটি সংস্কৃতি ঐতিহ্য রয়েছে যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন সংগৃহীত ও সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকা ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। এই গীতিকায় মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা ইত্যাদি পালার কথা কে না শুনেছে। এছাড়াও রয়েছে মলুয়া, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ইত্যাদি পালা। কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো : জেঠ মাসের ছোট রাইত ঘুমের আরি না মিটে।কদমতলায় শুইয়া বিনোদ দিনের দুপুর কাটে॥এছাড়াও রয়েছে ইরাধরের বাড়ীৎ সাধু ধান না কিনিয়া। আলাল দুলালে কিম্মত দিল দাম ধরিয়া॥ তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা ময়মনসিংহের ঐতিহ্য। ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, ঢপযাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলীগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান, আদিবাসীদের গান ইত্যাদি ।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

এ জেলায় বসবাসরত বাঙালি, গারো, হাজং, কোচসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ জেলার আদিবাসীরাও বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদযাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।
ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ময়মনসিংহ সদর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।
- এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুলাই ২০১৪ তারিখে,দৈনিক ময়মনসিংহ বার্তা।
- ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯-৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- "ময়মনসিংহ জেলা"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯।