নান্দাইল উপজেলা

নান্দাইল উপজেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

নান্দাইল
উপজেলা
নান্দাইল
বাংলাদেশে নান্দাইল উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৩′৫৩″ উত্তর ৯০°৪০′৫৯″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলাময়মনসিংহ জেলা
প্রতিষ্ঠিত২ জানুয়ারি ১৯১২ (থানা)
১৫ ডিসেম্বর ১৯৮২ (উপজেলা)
সংসদীয় আসনময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল)
সরকার
  সংসদ সদস্যআনোয়ারুল আবেদীন খান (তুহিন) (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
  উপজেলা চেয়ারম্যানহাসান মাহমুদ জুয়েল
আয়তন
  মোট৩২৬.১৩ কিমি (১২৫.৯২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৪,০২,৭১৭
  জনঘনত্ব১২০০/কিমি (৩২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২২৯০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৬১ ৭২
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ইতিহাস

নামকরণ

এক সময়ে নন্দদুলাল নামের এক জমিদার ছিলেন। জমিদারি সীমানা তিনি নির্ধারণ করেছিলেন আইলের মাধ্যমে। মোগল আমলে এ এলাকার জনগণের নিকট থেকে জমির খাজনা আদায় করা খুবই দুরূহ ছিল। নন্দলাল প্রজাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি করে খাজনা আদায়ে সাফল্য লাভ করেন। তখন থেকেই এ এলাকার নাম তার নামানুসারে নান্দাইল রাখা হয়। নন্দ দুলালের "নন্দ"। এর সঙ্গে আইল অপভ্রংশ যুক্ত হয়ে নান্দাইল নামকরণ হয়।

কিংবদন্তি

লোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গে নান্দাইলের গৌরবময় সম্পৃক্ততা রয়েছে। ময়মনসিংহ গীতিকায় নান্দাইলের আড়ালিয়া বিলের কুড়া শিকারী প্রসঙ্গ এসেছে। মৈমনসিংহ গীতিকার 'মলুয়া পালার' পটভূমি এই নান্দাইল উপজেলা। এছাড়াও মনসা মঙ্গলের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কানাহরির অধিবাস ছিল এই নান্দাইলে। পূর্ব ময়মনসিংহের নান্দাইলেই কানাহরির সাকিন (গ্রাম) ছিলো বলে ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দাবি করা হয়। যদিও এ সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে।

মধ্যযুগ ও ইংরেজ শাসনামল

সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে মুয়াজ্জামাবাদ (বর্তমানে মোয়াজ্জেমপুর) পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। তখন থেকে ময়মনসিংহ জেলার একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল নান্দাইল। আঠারো শতকে নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজার (রাজবাড়ী বাজার) এলাকায় নীলকরদের কুঠি স্থাপনের পর ‘নীল আন্দোলন’ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নান্দাইলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী রাজগাতি, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ও কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৭ নভেম্বর নান্দাইলে পাকবাহিনীর সঙ্গে এক যুদ্ধে ইলিয়াস উদ্দিন ভূঞা, শামসুল হক, জিল্লুল বাকি, শাহনেওয়াজ ভূঞাসহ ২৭ জন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উক্ত দিনটি "নান্দাইল শহীদ দিবস" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১১ ডিসেম্বর নান্দাইলে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং উক্ত দিনটি "নান্দাইল মুক্ত দিবস" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রশাসনিক ইতিহাস

১৯১২ সালের ২ জানুয়ারি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে নান্দাইল থানার গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯১২ সালের ১৮ জানুয়ারি নান্দাইল থানা সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর নান্দাইল উপজেলা সৃষ্টি হয়।[2]

ভূগোল

নান্দাইল উপজেলার অবস্থান হলো ২৪.৫৬৬৭° উত্তর ৯০.৬৮৩৩° পূর্ব / 24.5667; 90.6833। ৩২৬.১৩ কিমি আয়তনবিশিষ্ট উপজেলায় প্রায় ৬২,৫৩৩টি গৃহস্থালি রয়েছে। এই উপজেলার উত্তরে ঈশ্বরগঞ্জ, উত্তর-পূর্বে কেন্দুয়া, পূর্বে তাড়াইল, দক্ষিণে হোসেনপুরগফরগাঁও এবং পশ্চিমে ত্রিশাল উপজেলা অবস্থিত। উপজেলার প্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রনরসুন্দা নদী। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে তালার কুর, জিলা বিল, হামাই বিল, আড়ালিয়া বিল, বলদা বিল, বাপাইল বিল ও টঙ্গী বিল।

প্রশাসনিক এলাকা

এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছে -

  1. আচারগাঁও
  2. খারুয়া
  3. গাঙ্গাইল
  4. চন্ডীপাশা
  5. জাহাঙ্গীরপুর
  6. নান্দাইল
  7. বেতাগৈর
  8. মুশুলি
  9. মোয়াজ্জেমপুর
  10. রাজগাঁতি
  11. শেরপুর
  12. সিংরাইল
  13. চরবেতাগৈর

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ বাংলাদেশ আদমশুমারি অনুসারে নান্দাইলের জনসংখ্যা প্রায় ৪,০২,৭২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৯.২১% এবং নারী ৫০.৭৯%। মোট জনসংখ্যার ৯৮.০৪% মুসলমান, ১.৮৭% হিন্দু এবং ০.০৯% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। সাত বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিক্ষার হার ৪০.৩৮%।[3]

১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নান্দাইলের জনসংখ্যা ছিল ৩,২৮,৮৪৭ জন। মোট জনসংখ্যার ৫০.৮২% ছিল পুরুষ ও ৪৯.১৮% ছিল নারী। প্রায় ১,৫৫,৯৩০ জনের বয়স আঠারো বছর বা তার বেশি। নান্দাইল উপজেলায় শিক্ষার হার ছিল ২২.৩% (৭+ বছর), যেখানে জাতীয় শিক্ষার হার ছিল ৩২.৪%।[4]

শিক্ষা ব্যবস্থা

  • আব্দুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়

নদীসমূহ

নান্দাইল উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, বাথাইল নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, নরসুন্দা নদী ও মঘা নদী।

বিলসমুহঃ

আড়ালিয়া, হামাই, বান্না, বলদা, কালাইধর, টঙ্গী ও বাউলার বিল উল্লেখযোগ্য।[5][6]

কৃতী ব্যক্তিত্ব

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ

  • মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ (১৪৯৩-১৫১৯), জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে তাপস জাহাঙ্গীর শাহের মাজার ও খানকা।
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন: গণকবর: বারুইগ্রাম; বধ্যভূমি: শুভখিলা কালীগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজ এলাকা।

বিবিধ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নান্দাইল"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (এপ্রিল ২০১৮)। "নান্দাইল উপজেলার পটভূমি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৮
  3. "Bangladesh Population and Housing Census 2011: Zila Report – Mymensingh" (PDF)Table P01 : Household and Population by Sex and Residence, Table P05 : Population by Religion, Age group and Residence, Table P09 : Literacy of Population 7 Years & Above by Religion, Sex and Residence। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮
  4. "Population Census Wing, BBS."|আর্কাইভের-ইউআরএল= এর |আর্কাইভের-তারিখ= প্রয়োজন (সাহায্য) তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০০৬ অজানা প্যারামিটার |আর্রকাইভের-তারিখ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
  6. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.