নেত্রকোনা সদর উপজেলা

নেত্রকোণা সদর উপজেলা বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

নেত্রকোণা সদর
উপজেলা
নেত্রকোণা সদর
বাংলাদেশে নেত্রকোনা সদর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′২৪″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৭″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলানেত্রকোনা জেলা
আয়তন
  মোট৩৪০.৩৫ কিমি (১৩১.৪১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০০১)[1]
  মোট৩,২৯,৫৪০
  জনঘনত্ব৯৭০/কিমি (২৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৪৪.০৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৭২ ৭৪
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

এই উপজেলার উত্তরে দুর্গাপুর উপজেলাকলমাকান্দা উপজেলা, দক্ষিণে কেন্দুয়া উপজেলাগৌরীপুর উপজেলা, পূর্বে বারহাট্টা উপজেলাআটপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে পূর্বধলা উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছে -

  1. মৌগাতি।
  2. মেদনি।
  3. ঠাকুরকোনা।
  4. রৌহা।
  5. চল্লিশা।
  6. আমতলা।
  7. কাইলাঠি।
  8. লক্ষীগঞ্জ।
  9. বিশিউরা।
  10. মদনপুর।
  11. কেগাতি।
  12. বাংলা।

ইতিহাস

নেত্রকোনা সদর উপজেলা বড়ওয়ারিতে কংস নদী

১৭৬৪ সনে শুরু হয় ঐতিহাসিক ফকির বিদ্রোহ। এই ফকির বিদ্রোহের ঢেউ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে নেত্রকোণা অঞ্চলে। নেত্রকোণায় ফকির বিদ্রোহ পরিশেষে টিপু শাহ পাগলের নামানুসারে পাগলপন্থী বিদ্রোহরূপে খ্যাত হয়ে উঠে। পাগলপন্থী পীর করম শাহ পাগলের অসংখ্য শিষ্য ছিল গারো-হাজং জনগোষ্ঠীর লোক। তার স্ত্রী ব্রাহ্মনকন্যা সন্ধি দেবী ইসলাম ধর্ম গ্রহণপূর্বক সন্ধি বিবি নাম ধারণ করে করম শাহ পাগলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সন্তান টিপু পাগল। ফকির বিদ্রোহ-পাগল বিদ্রোহের এক মহান ক্ষেত্র ছিল নেত্রকোণা। সপ্তদশ শতকের শেষভাগে নাটোরকোণায় বিদ্রোহ দমনকল্পে জমিদারদের সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত স্থাপিত হয় একটি পুলিশ ফাঁড়ি বা চৌকি। কথিত আছে পাগলপন্থী বিদ্রোহীরা এই ফাঁড়িটি লন্ঠণ করে নিয়ে গেলে ফাঁড়ির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ আত্ম রক্ষার্থে চলে আসে বর্তমান নেত্রকোণা সদর থানা কার্যালয় ভবনে। কিন্তু বর্তমান নেত্রকোণা ছিল আদিকালে সাতপাই মৌজাস্থ কালীমন্দির কেন্দ্রীক কালীগঞ্জ বাজার নামক স্থানে। পুলিশ ফাঁড়িটি কালীগঞ্জ বাজারে স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও কাগজে-কলমে থেকে যায় নাটোরকোণা, ইংরেজদের সাহেবী উচ্চারণে হয়ে যায় নেত্রকোণা। পরবর্তীতে এই নেত্রকোণা নামানুসারে ১৮৮২ সনে নেত্রকোণা মহকুমা এবং ১৯৮৪ সনে নেত্রকোণা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বন-জঙ্গলের জনপদ ছিল সমগ্র নেত্রকোণা। লোক সাহিত্য সংগ্রাহক ও গবেষকদের মতে পূর্ব ময়মনসিংহ হলো লোক ও সাহিত্য সংস্কৃতির এক তীর্থ ভূমি। নেত্রকোণার সন্তান চন্দ্র কুমার দে সংগৃহীত এবং ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সম্পাদিত বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশের পর থেকে পূর্ব ময়মনসিংহকে অনেক গবেষক মৈমনসিংহ গীতিকা অঞ্চল বলেও চিহ্নিত করে থাকেন। এই মৈমনসিংহ গীতিকা অঞ্চলের সীমানা চিহ্নিত করা হয়-উত্তরে গারো পাহাড়, দক্ষিণে মেঘনা, যমুনা সঙ্গমস্থল, পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং পূর্বে সুরমা কুশিয়ারা নদী। এই মৈমনসিংহ গীতিকা অঞ্চলের লোক সাহিত্য সংস্কৃতি, ভোগলিক ও ঐতিহাসিক বিচার-বিশ্নেষণের কেন্দ্র বিন্দু হলো নেত্রকোণা সদর থানা। ১৯৩৮ সনে নেত্রকোণা পূর্ণাঙ্গ থানা হিসেবে গঠিত হয়েছিল। কাগজে-কলমে নাটেরকোণা ইংরেজদের সাহেবী উচ্চারণে হয়ে যায় নেত্রকোণা। রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়কপথে ১৬০ কিঃমিঃ দূরে দেশের উত্তর পূর্ব কোণে অবস্থিত নেত্রকোণা সদর উপজেলা। ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ৪০ কিঃমিঃ দূরে নেত্রকোণা শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা কমপ্লেক্স অবস্থিত।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি

  • ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ নেত্রকোণা সদরের মেথরপট্টি মাঠে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এক জনসভায় বক্তৃতা করেন।
  • ১৯৪৫ সালের ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল নেত্রকোণা পাড়ার মাঠে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
  • ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল পাকবাহিনী সদরের ৪ জনকে ধরে নিয়ে পূর্বধলা সড়কের ত্রিমোহনী ব্রিজে গুলি করে হত্যা করে। ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণা সদরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ উপজেলার কৃষিফার্মে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীদের লড়াইয়ে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

জনসংখ্যার উপাত্ত

শিক্ষা

  • সার্বিক শিক্ষার হার-৪৪.০৪%
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় -
    • সরকারী - ৯৪টি
    • বেসরকারি - ৮৩টি
    • নন রেজিঃ বেসরকারী - ২টি
    • এবতেদায়ী মাদ্রাসা - ৩৭টি
    • কিন্ডার গার্টেন - ১২টি
  • মাদরাসা - ১৭টি
  • নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ১২টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৩২টি
  • টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ - ৪টি
  • কলেজ - ৫টি
  • পাঠাগার - ১৭টি
  • বইয়ের দোকান - ১৬টি
  • কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র - ৫টি
  • পিটিআই - ১টি

অর্থনীতি

কৃতী ব্যক্তিত্ব

  • হাজী মোহাম্মদ আবু আব্বাছ ; মৌজেবালী, নেত্রকোণা সদর। রাজনীতিবিদ, শিক্ষবনুরাগীও বিশিষ্ট সমাজসেবক।
  • রশিদ উদ্দিন (১৮৮৯ -১৯৬৪);বাহিরচাপড়া, নেত্রকোণা সদর। প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ও সাধক পুরুষ।
  • মুজীবুর রহমান খাঁ (১৯১০ -১৯৮৪); উলুয়াটি, নেত্রকোণা। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
  • আয়শা খানম (১৯৪৭- বর্তমান); গাবরাগাতি, নেত্রকোণা। বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা।
  • এলাহী নেওয়াজ খান (১৮৭৫-১৯২৬); কাটলী, নেত্রকোণা। বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও নেত্রকোণা পৌরসভার প্রথম মুসলমান চেয়ারম্যান।

ঐতিহ্য

নেত্রকোণা জেলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের নাম বালিশ মিষ্টি; যা নেত্রকোণার প্রায় সকল মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়।

বিশেষ করে বারহাট্টা রোডের গয়নাথ মিষ্টান্নভান্ডারই এই মিষ্টির জন্মস্থান।

দর্শনীয় স্থান

  • অধ্যাত্মিক পুরুষ হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রঃ) এর মাজার।
  • আলী হোসেন শাহ্‌ এর মাজার।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নেত্রকোণা সদর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই, ২০১৫ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

হুমায়ূন আহমেদ, নির্মলেন্দু গুন, যতীন সরকার, বারী সিদ্দিকী, কমরেড মণি সিংহ, ভিরাইম্যা, হেলাল হাফিজ, মুহাম্মদ রিংকন মন্ডল রিংকু

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.