কলমাকান্দা উপজেলা
কলমাকান্দা উপজেলা বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার একটি উপজেলা।
কলমাকান্দা | |
---|---|
উপজেলা | |
কলমাকান্দা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫′২″ উত্তর ৯০°৫৩′৩৭″ পূর্ব | |
দেশ | |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | নেত্রকোনা জেলা |
আসন | নেত্রকোনা-১ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | মানু মজুমদার (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ৩৭৬.২২ কিমি২ (১৪৫.২৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৭১,৯১২ |
• জনঘনত্ব | ৭২০/কিমি২ (১৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২৪০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৭২ ৪০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান
নেত্রকোনা জেলার সবচেয়ে উত্তরে ভারতের সীমান্ত লাগোয়া থানার নাম কলমাকান্দা। আয়তন ৩৭৬.২২ বর্গকিলোমিটার।[2] উপজেলা শহরটি ২ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ৮. ৩৭ বর্গকিলোমিটার। এই উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে নেত্রকোনা সদর উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিম দিকে দুর্গাপুর উপজেলা। এই উপজেলায় আছে অনেক দর্শনীয় স্থান, আছে নানা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ।
নামকরণ
কলমাকান্দার নামকরণে জনশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরকমই এক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানির সঙ্গে পলিমাটি এসে এ অঞ্চল ভরাট ভূমিতে রুপান্তরিত হয়। এ ভরাট ভূমির স্থানীয় নাম কান্দা। কান্দায় জন্মানো কলমি গাছ (জলজ উদ্ভিদ) মাটি আটকে ধরে এ ভরাট ভূমিতে আরো মাটি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। সে কারণেই প্রথমে স্থানটি কলমিকান্দা নামে পরিচিত হয় ও পরে মানুষের মুখের ভাষায় কলমাকান্দা নামে পরিণত হয়। আরেক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, গারো পাহাড়ে উৎপন্ন প্রচুর কমলা এ স্থানে সমতলবাসী ও পাহাড়ি গারোদের মাঝে ক্রয়-বিক্রয় হতো। এ কারণে এ কান্দা অঞ্চলটি কমলাকান্দা নামে পরিচিতি লাভ করে। কালের পরিক্রমায় কমলাকান্দা অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে থাকলে তারা কমলাকান্দাকে কলমাকান্দা নামে আখ্যায়িত করে। এখন পর্যন্ত অনেকেই কলমাকান্দাকে কমলাকান্দা নামেই ডাকে। তবে অনেকের ধারণা, কলমাকান্দা শব্দের ধ্বনি বিপর্যয়ের ফলে কমলাকান্দা শব্দের উৎপত্তি।
উপজেলা প্রশাসন
সুসং ও সিংধা মৈন পরগণাভুক্ত কলমাকান্দার প্রথম প্রশাসনিক কাজ শুরু হয় বৃটিশ শাসনামলে। প্রথমে এ উপজেলার প্রশাসনিক কাজ দুর্গাপুর থেকে পরিচলিত হত। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে কলমাকান্দা উপজেলার দক্ষিণাংশ পরিচালিত হয় বারহাট্টা থেকে। ইস্ট বেঙ্গল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এর Notification no. 8909. P Dated 23 Rd July 1917 মূলে ১৯১৯ সালে দুর্গাপুর থানার একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় কলমাকান্দায়। সে সময় বারহাট্টা থানারও কিছু অংশ এ ফাঁড়ি অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে ছিল। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর কলমাকান্দা ফাঁড়ি থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোনা মহকুমার অন্যান্য থানাগুলোর মত কলমাকান্দায়ও প্রশাসনিক কর্মের সঙ্গে সার্কেল উন্নয়ন ও রাজস্ব অফিস স্থাপিত হয়। ১৯৮৩ সনের ২৪ মার্চ কলমাকান্দা থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৪৫.৭২ বর্গমাইল আয়তনের কলমাকান্দা উপজেলায় বর্তমানে ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। কলমাকান্দা বরাবরই নেত্রকোনা-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে সংসদীয় আসন ১৫৭।
৮ টি ইউনিয়ন হচ্ছে:
- কলমাকান্দা সদর
- নাজিরপুর
- লেঙ্গুরা
- রংছাতী
- কৈলাটি
- খারনৈ
- পোগলা
- বরখাপন
ইতিহাস
১৯৭১ সালের ২৫ শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ, প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে কলমাকান্দা থানার লেংগুরা ইউনিয়নস্থ নাজিরপুর বাজারে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি গ্রুপ বাজারের চারপাশের বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান নেয়। সারা রাত অপেক্ষা করেও হানাদার বাহিনী না আসায় পরদিন, অর্থাৎ ২৬শে জুলাই তারা এমবুশ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পে ফেরার সময় নাজিরপুর তফসিল অফিসের সামনে আসতেই দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে কলমাকান্দা ক্যাম্প হতে নদীপথে আসা হানাদার বাহিনীরা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধে শহিদ হন বাংলার সাত দামাল সন্তান। তারা হলেন- আব্দুল আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, নুরুজ্জামান, দ্বীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামাল উদ্দিন। এছাড়া এই দিন মর্টারের গুলিতে গৌরীপুর গ্রামে আরও ৩ জন শহীদ হন। শহিদ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ২৭শে জুলাই লেংগুরার ফুলবাড়ি নামকগ্রামে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে (১১৭২নং পিলার সংলগ্ন) বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত ও দাহ করা হয় যা পরবর্তীতে সাত শহীদের মাজার বা সপ্তশিখা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ২৬শে জুলাই সেখানে শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক নাজিরপুর দিবস।
ঐতিহ্য
কলমাকান্দা নামকরণের পূর্বে এ অঞ্চলে হিন্দু ধর্মালম্বী বা পৌত্তলিক জনগোষ্ঠীর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। কলমাকান্দা উপজেলার মহিষাসুর, মহাদেও, গণেশ্বরী, সংগেশ্বরী, মহেশ্বরী প্রভৃতি স্থান ও নদীর নাম এককালে এ অঞ্চলে হিন্দুদের আধিপত্যের সাক্ষ্যই বহন করে। চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গা এ অঞ্চলে ডুবেছিল, এ পৌরাণিক কাহিনীকে এ অঞ্চলবাসী সত্য বলেই মনে করে। তাদের বিশ্বাস ডুবে যাওয়া চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গার মাস্তুল গারো পাহাড়ের শিলাস্তরে অঙ্কিত হয়ে পূর্বের স্মৃতি বহন করছে। চন্দ্রডিঙ্গা নামক গ্রামটি সেই স্মৃতি চিহ্নের একটি।
ভাষা ও সংস্কৃতি
যৌথ সাংস্কৃতিক ধারা প্রবাহিত কলমাকান্দায়। লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর ও রংছাতি ইউনিয়নে গারো, হাজং ও বানাই জনজাতির বসবাস প্রাচীনকাল থেকে। ফলে বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনধারা সমান্তরালে বহমান সেই প্রাচীনকাল থেকে।
প্রধান নদনদী
- গুমাই
- সোমেশ্বরী
- মহাদেও
- বাকলা
- মঙ্গস্বরী
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী কলমাকান্দা উপজেলার জনসংখ্যা ২,৭১,৯১২ জন।
শিক্ষা
কলমাকান্দা উপজেলার শিক্ষার হার ৬৭.৮৯%।
কলমাকান্দা উপজেলায় রয়েছে
- একটি টেকনিক্যাল স্কুল;
- চারটি কলেজ।
চিকিৎসাব্যবস্থা
কলমাকান্দা সদরে রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানেই সিংহভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই বড় রকমের চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসে। এছাড়া সদরে রয়েছে কিছু প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্র।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
নেত্রকোনা জেলা থেকে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস ও মিনি বাস। এছাড়া ঢাকা ও ময়মনসিংহের সাথে যোগাযোগের জন্য রয়েছে অল্প সংখ্যক বিআরটিসি বাস। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য রয়েছে অটোরিক্সা ও সাধারণ রিক্সা। মোটরসাইকেল যাতায়াতের অন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্ষাকালে উত্তর-পশ্চিমের কয়েকটি এলাকা ছাড়া প্রায় সব এলাকাতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে যাতায়াত করা যায়।
অর্থনীতি
গ্রাম এবং হাওরপ্রধান এলাকা বিধায় অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। উত্তরের পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পলি মাটি এখানকার মাটিকে করেছে খুবই উর্বর, যে কারণে এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান ফলে। এছাড়া এই এলাকায় রয়েছে চোখে পড়ার মতো গবাদি পশু ও হাঁসের খামার। ক্ষুদ্র এলাকা হিসেবে এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন হয়। কলমাকান্দার হাওর এবং নদীগুলোতে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাছ। মহাশোল (মাশুল) নামক অতি সুস্বাদু মাছও পাওয়া যায় এই এলাকায়। নানা জাতের মৌসুমি ফসল, তরকারী, ফলমূল ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এই এলাকায় প্রচুর মিষ্টি আলুর চাষ হয়।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
- রংছাতি, খারনৈ এবং লেঙ্গুরা এলাকার পাহাড়;
- লেঙ্গুরার শুটিং স্পট;
- খারনৈ ইউনিয়নের চেংনি মেলা;
- টেংগার মেলা;
- রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁওর চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়।
- সাত শহীদের মাজার
চিত্রশালা
কৃতি ব্যক্তিত্ব
- যাদুমনি হাজং - টঙ্ক আন্দোলন সক্রিয় কর্মী।
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কলমাকান্দা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।
- http://kalmakanda.netrokona.gov.bd/site/page/04821088-1e86-11e7-8f57-286ed488c766