মেলান্দহ উপজেলা
মেলান্দহ বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
মেলান্দহ | |
---|---|
উপজেলা | |
মেলান্দহ | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৮′১৬″ উত্তর ৮৯°৫০′১০″ পূর্ব | |
দেশ | |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৫৩.০৩ কিমি২ (৯৭.৭০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৯২,৩৪৭ |
• জনঘনত্ব | ১২০০/কিমি২ (৩০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ২৬.৬১% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৯ ৬১ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
মেলান্দহ উপজেলা ২৪°৫১´ থেকে ২৫°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪২´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা, দক্ষিণে মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জামালপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা। আয়তন ২৩৯.৬৫ বর্গকিলোমিটার।
প্রশাসনিক এলাকা
মেলান্দহ উপজেলা দুইটি পৌরসভা ও এগারোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
পৌরসভা
- মেলান্দহ পৌরসভা
- হাজরাবাড়ি পৌরসভা
- ইউনিয়ন পরিষদ
- কুলিয়া ইউনিয়ন
- দুরমুঠ ইউনিয়ন
- মাহমুদপুর ইউনিয়ন, মেলান্দহ
- নাংলা ইউনিয়ন
- নয়ানগর ইউনিয়ন
- শ্যামপুর ইউনিয়ন, মেলান্দহ
- আদ্রা ইউনিয়ন, মেলান্দহ
- চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন
- ফুলকোচা ইউনিয়ন
- ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন
- ঝাউগড়া ইউনিয়ন
ইতিহাস
প্রাচীন ইতিহাস ইতিবৃত্ত : নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। গঙ্গানদী এবং ব্রহ্মপুত্রনদ বিধৌত পলিমাটিতে গড়া এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ভূমি। এ বৃহৎ ব-দ্বীপ সাগর থেকে জেগে ওঠা পলিজ এ বেলাভূমি। মাটি পেয়ে মানুষের গড়ে তোলার স্বপ্ন গ্রাম জনপদ। জীবনের কাছাকাছি হতে থাকে জীবন ঘনিষ্ট সভ্যতা।
এই ব-দ্বীপের যমুনা-ব্রহ্মপুত্র- ঝিনাই নদীর ত্রি -মোহনী বালুকা বেলায় গড়ে উঠতে থাকে প্রায় সাত শত বৎসরের পুরাতন এই জনপদ। এই জনপদই অনেক ইতিহাসের তথা সংস্কৃতি-ঐতিয্যের মধ্যদিয়ে অতিক্রান্ত হয়ে আজকের এই উপজেলা মেলান্দহ।
এই উপজেলার নামকরণ নিয়ে যেটুকু শোনা যায় সেটা হচ্ছে : এর পূর্ব নাম মিলন দহ। আবার কেউ কেউ বলেন যে মেলা দহের মিলনে এই জনপদ। তাই এর নাম মেলা দহ । তবে মেলান্দহে প্রাচীণ একটি গ্রন্থাগার ছিল তার নাম ছিল মিলন মন্দির । মিলন মন্দিরটি ছিল বর্তমান মেলান্দহ বাজার সংলগ্ন কেন্দ্রীয়ঁ শ্রী শ্রী কালী মাতার মন্দির প্রাঙ্গনে অর্থাৎ মেলান্দহ কেন্দ্রীয় মসজিদ -এর দক্ষিণ পার্শে অবস্থিত ছিল বৃটিশ শাসনপূর্ব সময়কাল থেকেই। আবার বৃটিশ শাসন আমলের শেষ সময়ে অর্থৎ চারদশকের মাঝামাঝি সময়েই ধংশ হয়ে গেছে বৃটিশ নিপিড়ণ অত্যাচারে।
বহু (মেলা/অনেক) দহ/বিলের মিলনে চর জেগে ওঠা এই স্থল ভূমি। তাই এর নাম মিলনদহ। জনশ্রুতিতে মিলন দহ :মেলা দহ তারপর মেলান্দহ -তে এসে ঠেকেছে। একটি দুটি বাড়ী তারপর গ্রাম। গ্রাম থেকে গ্রামের বিস্তার। তারপর থানা। থানা থেকে উপজেলা। বর্তমানের মেলান্দহ উপজেলা। এর পেছনে রয়েছে জানা নাজানা অনেক কথা কতো কিংবদন্তী কথকতার ইতিহাস। মেলান্দহ এখন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এই উপজেলার উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা,পশ্চিম-দক্ষিণে মাদার গঞ্জ উপজেলা,পূর্বে জামালপুর সদর উপজেলা,উত্তর-পূর্বে শেরপুর জেলা। এই উপজেলাতে দুটি রেলওয়ে স্টেশন আছে একটি স্টেশনের নাম মেলান্দহ বাজার । স্বধীনতা পূর্বে বৃটিশ এবং পাকিস্তান শাসন আমলে দাগী নাম ছিল এই স্টেশনের, দ্বিতীয়টির নাম দুরমুঠ রেলওয়ে স্টেশন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জে অপারেশন চালায়। এ সময় উপজেলার পয়লা ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়।মেলান্দহ থানা গঠিত হয় ২১ মে ১৯২৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
মোট জনসংখ্যা ২,৯২,৩৪৭ জন । পুরুষ ১,৪৯,৭০৮ জন, মহিলা ১,৪২,৬৩৯ জন।
অর্থনীতি
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, আলু, চীনাবাদাম, ছোলা, মাষকলাই, তামাক, মরিচ, পান, সুপারি, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ভূট্টা, তিল, কাউন, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩, হাঁস-মুরগি ১১, হ্যাচারি ৬।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৫০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০২%, শিল্প ০.৪৪%, ব্যবসা ১০.৩৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৫৮%, চাকরি ৪%, নির্মাণ ১.০০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৭.৭৩%।
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- মির্জা আজম (সাবেক চীফ হুইপ এবং বর্তমান পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী)
- হাসান মাহমুদ রাজা (বিশিষ্ট শিল্পপতি ইউনাইটেড গ্রুপ এর অন্যতম ব্যক্তিত্ব )
- মৃত শাহ্ মোহাম্মদ খায়রুল বাশার চিশতি (জনপ্রিয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী)
- ডা. ধ্রুব জোতি ঘোষ মুকুল
( ক্রীডা ব্যক্তিত্ব)
- হাজী ময়ছেন আলী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
- শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজ
- মেলান্দহ সরকারি কলেজ
- জাহানারা লতিফ মহিলা কলেজ
- আলেয়া আজম কলেজ
- উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
- টনকী জোবায়দা জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়
- কলাবাধা উচ্চ বিদ্যালয়
- মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়
- ভাবকী জি এম উচ্চ বিদ্যালয়
- ঝাউগড়া উচ্চ বিদ্যালয়
- বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঝাউগড়া
- মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- মির্জা আজম উচ্চ বিদ্যালয়
- পয়লা বানিয়া বাড়ি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা
- মেলান্দহ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- আদ্রা আব্দুল মান্নান উচ্চ বিদ্যালয়
- হাজরাবাড়ী সিরাজুল হক অনার্স কলেজ
- হাজরাবাড়ী বালক উচ্চ বিদ্যালয়
- হাজরাবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- মির্জা আজম নার্সিং ইনস্টিটিউট এন্ড মেডিকেল টেকনোলজি,কুঠের বাজার।
- কে.জি.এস.মহর,সোবহান,মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।
- ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়
ঐতিহ্য
দুরমুঠ শাহ্ কামালের দরগা ও মাজার শরীফ
চতুর্দশ শতকে দুরমুঠ পীর আউলিয়া শাহ্ কামালের পবিত্র দরগা মাজার শরীফ মেলান্দহ উপজেলার দর্শনীয় স্থান। বৈশাখে উরস শরীফের সময় দূর দূরান্ত থেকে পুন্যার্থীরা পহেলা বৈশাখ থেকে বৈশাখের শেষ দিন পর্যন্ত সর্বধর্ম নির্বিশেষে পুণ্যার্থীরা এই অঙ্গনে মেলায় আসেন।
গান্ধী আশ্রম
জামালপুর গান্ধী আশ্রম এবং মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর(নিমার্ণাধীন)
কাপাসহাটিয়া, ডাকঘর-হাজীপুর
উপজেলা -মেলান্দহ,জেলা-জামালপুর
কাপাশ হাটিয়ার গান্ধী আশ্রম। মহাত্মা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর মতাদর্শ এবং জনকল্যাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
টুপকার চরের বাঁধ ও জলসিঁড়ি বাড়ী
টুপকার চরের বেরী বাঁধ থেকে নৈসর্গিক মেঘালয় পাহাড়ের দৃশ্য, সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় উপভোগ করা যায়। বাঁধ ঘেঁষেই সনামধন্য নাট্যকার, লেখক, অভিনেতা এবং সমাজ সেবক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক আসাদুল্ল্যাহ ফারাজীর বসতভিটা রয়েছে। তার লেখা নাটকগুলো হল হীরা, মানুষ অমানুষ, রাক্ষসের পাঁচালী, বীরঙ্গনা বিমলা, সী-মোরগ, সোহাগী বাইদ্যানী । স্বনামধন্য পর্বতারোহী, ক্রিকেটার, হোমিও চিকিৎসক, সমাজসেবক, কবি, শিল্পী 'ছন্দে ঝিনাইু' এর সম্পাদক এবং আমি সূর্যকে ভালবাসি, প্রেম ঝিনাই, বৃত্তকলা, নিরুদ্দেশ যাত্রা, শ্যামলী মায়ের সুবর্ণ সন্তান, মেঘে বৈদিক মহাকাব্যের ছবি, কুমায়ুন হিমালয়ে গৌরী গঙ্গা নদীর উৎস সন্ধানে পর্বত অভিযান -এর লেখক ধ্রুবজ্যেতি ঘোষের অবকাশ জলসিঁড়ি বাসা বাড়ী নিমার্নাধীন রয়েছে। এগুলো সবই সান রাইজ এ্যান্ড সে্টস স্পট এবং নৌকায় বিহারের কাব্যিক নিসর্গ। দূর দিগন্ত ছুঁয়ে গারো পাহাড়ের নীল পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
ডাঙ্গার বিল:বোটিং স্পট
ফুলকোঁচা ডাংগার বিল নয়নাভিরাম বিলের জল তরঙ্গ। পর্যটন ও পিকনিক স্পট। চাঁদনী আলোতে নৌকা ভ্রমণ খুব আনন্দের।
পয়লা ব্রীজ
পয়লা ব্রীজ থেকে নদী দৃশ্য ও দূর দিগন্ত ছুঁয়ে মেঘালয় পাহাড় দর্শন:আর্টি ফিসিয়াল ক্লাইম্বিং টেকনিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য।
মেলান্দহ সদর থেকে ৩ কিঃমিঃ দূরত্বে পয়লা ব্রীজ। ব্রীজের ওপর থেকে মেঘালয় পাহাড়ের দৃশ্য দর্শন পর্যটনকে আকর্ষণ করবে আনন্দে। কিশোরদের জন্য শৈলারোহণ প্রশিক্ষা প্রদানের জন্য নদীর সুউচ্চ বাঁ ঢালে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য সম্ভাব্য স্থান। বনায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে মেলান্দহ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৬ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই, ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)