হেমেন্দ্রমোহন বসু

হেমেন্দ্রমোহন বসু (জন্ম: ১৮৬৬ - মৃত্যু: ২৮ আগস্ট ১৯১৬) একজন বাঙালি ব্যবসায়ী। তিনি মূলত সুগন্ধীদ্রব্য, সাইকেল, মোটর গাড়ি, রেকর্ড, টর্চ লাইট এবং ছাপাখানার ব্যবসা করেছিলেন। তিনি শিল্পে বাঙালির কর্মক্ষেত্র তৈরি করেন এবং বহু বিষয়ে নিজস্ব ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিস্ময়কর যান্ত্রিক প্রগতির বিভিন্ন নিদর্শনকে এদেশ প্রবর্তন করেন।

হেমেন্দ্রমোহন বসু
জন্ম১৮৬৪
মৃত্যু২৮ আগস্ট ১৯১৬ (৫২ বছর)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত
পেশাব্যাবসায়ী
সন্তাননিতিন বোস, কার্তিক বোস, মালতী ঘোষাল
পিতা-মাতাহারামোহন বসু

পরিবার

হেমেন্দ্রমোহন বসুর জন্ম হয় বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। তাদের পরিবারের আদিনিবাস ছিল ময়মনসিংহের জয়সিদ্ধি। তার পিতার নাম হরমোহন। তার কাকা হলেন বিখ্যাত ব্রাহ্ম সমাজ নেতা আনন্দমোহন বসু। তার স্ত্রী মৃণালিনী হলেন প্রবাদপ্রতিম শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটবোন। হেমেন্দ্রমোহনের ১০ পুত্রকন্যাদের ভিতরে চিত্রপরিচলক নীতীন বসু, ক্রিকেটার কার্তিক বসু এবং সঙ্গীত শিল্পী মালতী ঘোষাল খ্যাতিলাভ করেছিলেন।

কর্মজীবন

হেমেন্দ্রমোহন আই এ পাস করার পর মেডিকেল কলেজে পড়তে থাকেন। সেই সময় তার চোখে অ্যাসিড ছিটকে পড়ায় কিছুদিন অসুস্থ থাকেন। এরপর পড়া ছেড়ে ১৮৯০-৯১ খ্রিষ্টাব্দে কুন্তলীন কেশ তৈল নিয়ে ব্যবসায় অবতীর্ণ হন। এইচ. বোস পারফিউমার কারখানা থেকে তৈরি হতে থাকে কুন্তলীন, দেলখোস, ল্যাভেণ্ডার ওয়াটার, ও-ডি কোলন, মিল্ক অফ রোজ প্রভৃতি সুগন্ধি দ্রব্য।

বাঙালিদের মধ্যে তিনিই প্রথম কলকাতার হ্যারিসন রোডে সাইকেলের দোকান খোলেন। তিনি নিজে সাইকেল চড়তেন এবং বন্ধু বান্ধবদের চড়তে শেখাতেন। সেই সময়ে বিদেশ থেকে শুধু মোটর গাড়ি নয় তার চালকও আনতে হত। সেই সময়ে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে হেমেন্দ্রমোহন তার টু-সিটার ড্যাকার গাড়িটি নিজে চালাতেন। তিনি গ্রেট ইষ্টার্ন মোটর কোম্পানি স্থাপন করেন। পার্ক স্ট্রীটে গ্রেট ইষ্টার্ন মোটর ওয়ার্কস নামে তার একটি মেরামতির কারখানাও ছিল।

হেমেন্দ্রকুমার এদেশে প্রথম রেকর্ড তৈরির কারখানা খুলেছিলেন। এই রেকর্ড ছিল ফনোগ্রামের সিলিন্ডার। ধর্মতলার মার্বেল হাউসে দ্য টকিং মেশিন হল নামে এই কারখানা তিনি খোলেন। পরে বৌবাজার স্ট্রীটের দেলখোস হাউসে এই কারখানা স্থানন্তরিত হয়। ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হবার পরেই এইচ. বোসেস রেকর্ডের আত্মপ্রকাশ এবং বন্দেমাতরম গান সহ শুধু দেশাত্মবোধক গানই এতে প্রচার করা হয়েছিল। স্বদেশী গান প্রচারের জন্য তিনি তার প্রধান শিল্পী হিসাবে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে। তার তৈরি রেকর্ডে লালচাঁদ বড়াল বহু গান দিয়েছিলেন। দ্য টকিং মেশিন হল - এ মেরামতি বিভাগও চালু করেছিলেন। প্যাথে ডিস্কে এইচ. বোসেস রেকর্ডসের প্রথম চালান কলকাতায় আসে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে।

হেমেন্দ্রকুমার প্রতিষ্ঠিত কুন্তলীন প্রেসেরও খুব সুনাম ছিল। তিনি নিজে দক্ষ আলোকচিত্রী ছিলেন। রঙিন আলোকচিত্র গ্রহণে তিনি এদেশে পথিকৃৎ। তার তোলা কয়েকটি অটোক্রোম স্লাইড পাওয়া যায়।

অন্যান্য অবদান

হেমেন্দ্রমোহন কুন্তলীনদেলখোসের প্রচার এবং সাহিত্যসৃষ্টিকে উৎসাহ দেবার জন্য ১৩০৩ বঙ্গাব্দে কুন্তলীন পুরস্কার প্রবর্তন করেন এবং অনেক সাহিত্যিককে নিজের প্রতিভা বিকাশে সুযোগ দেন। গল্প লিখে প্রথম বছরের পুরস্কার পেয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম মুদ্রিত গল্প 'মন্দির' কুন্তলীন পুরস্কার বিজয়ী।

হেমেন্দ্রমোহন খেলাধুলাতেও উৎসাহী ছিলেন। স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার ৫২ নং আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে বহু জ্ঞানীগুনীর আসাযাওয়া ছিল।

তথ্যসূত্র

  • সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.