নওগাঁ জেলা

নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। নওগাঁ জেলা বরেন্দ্রীয় অংশ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমভাগে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমারেখা সংলগ্ন যে ভূখণ্ডটি ১৯৮৪-র পহেলা মার্চের পূর্ব পর্যন্ত নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হত, তা-ই হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা।

নওগাঁ
জেলা
বাংলাদেশে নওগাঁ জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৪′ উত্তর ৮৮°৪৫′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
আয়তন
  মোট৩৪৩৫.৬৭ কিমি (১৩২৬.৫২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2011)[1]
  মোট২৬,০০,১৫৮
  জনঘনত্ব৭৬০/কিমি (২০০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট62.52
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ৬৪
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট
নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র ব্রীজের মোড়ে অবস্থিত “স্বাধীনতা” ভাষ্কর্য
“স্বাধীনতা” ভাষ্কর্যের বেদীর ছবি, যাতে পর্যাক্রমে চিত্রিত হয়েছে ১৯৭১ সালে পাক আগ্রাসন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ আর সবশেষে কাঙ্খিত বিজয়
নওগাঁ জেলার মানচিত্র

ভৌগোলিক সীমানা

এর উত্তরে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণে বাংলাদেশের নাটোররাজশাহী জেলা, পূর্বে জয়পুরহাটবগুড়া জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের মালদহ ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

উপজেলা

নওগাঁ জেলার মোট ১১টি উপজেলা রয়েছে:[2]

পৌরসভা

নওগাঁ জেলায় তিনটি পৌরসভা রয়েছেঃ

  • নওগাঁ পৌরসভা
  • নজিপুর পৌরসভা
  • ধামইরহাট পৌরসভা

শিক্ষা

১। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৭৯৪ টি

০২। রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৪৮২ টি

০৩। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ঃ ৪ টি

০৪। বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৩৭৫ টি

০৫। বেসরকারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৭৫ টি

০৬। সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ঃ ০১ টি

০৭। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজঃ ১ টি

০৮। সরকারী মহাবিদ্যালয়ঃ ৬ টি

০৯। বেসরকারী মহাবিদ্যালয়ঃ ৭৪ টি

১০। বেসরকারী কৃষি কলেজঃ ২টি

১১। কামিল মাদ্রাসাঃ ২ টি

১২। ফাজিল মাদ্রাসাঃ ৩৩ টি

১৩। আলিম মাদ্রাসাঃ ৪০ টি

১৪। দাখিল মাদ্রাসাঃ ২০২ টি

১৫। সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজঃ ১টি

১৬। এস,এস,সি (ভোকেশনাল) স্কুলঃ ৩৮ টি

১৭। এইচ,এস,সি ( বি,এম ) কলেজঃ ৪৪ টি

১৮। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পি,টি,আই)ঃ ১টি

১৯। পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটঃ ১টি ২০) একটি মেডিকেল কলেজ &হাসপাতাল শিক্ষার হারঃ গড় - ৪৪.৫২% ( পুরুষ- ৪৬.৪৭% এবং মহিলা- ৪৩.৬০%)

নদনদী

নওগাঁ জেলার পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা, মধ্যবর্তী আত্রাই এবং পূর্বভাগে যমুনা এই জেলার প্রধান নদী। যমুনাও মূলত তিস্তা নদীরই একটি শাখা।[3]

মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁ

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ

বিজয় মুক্তযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ। ৭১ ফুট উঁচু এই স্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে নির্মিত।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই নওগাঁয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে নওগাঁ কে.ডি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। এখানে বসেই সব ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হত। নওগাঁ ছিল ইপিআর ৭নং উইং এর হেড কোয়ার্টার। ১৮ মার্চ পর্যন্ত এর কমান্ডিং অফিসার ছিল পাঞ্জাবি মেজর আকরাম বেগ। ২জন ক্যাপ্টেনের একজন ছিলেন পাঞ্জাবি নাভেদ আফজাল,অন্যজন বাঙালি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগেই মেজর আকরাম বেগ এর জায়গায় বাঙালি মেজর নজমুল হক নওগাঁয় ইপিআর এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। অবশ্য দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থির দিকে লক্ষ্য রেখে মেজর বেগ তাকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মত হন। ফলে মেজর নজমুল হক মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ এর তরুণ নেতা মো: আব্দুল জলিল এর সাথে পরামর্শ করেন এবং পরামর্শক্রমে বাঙালি ইপিআরদের সহায়তায় ২৪ মার্চ মেজর আকরাম বেগ ও ক্যাপ্টেন নাভেদ আফজাল কে গ্রেফতার করেন।পাশাপাশি নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক নিসারুল হামিদকেও গ্রেফতার করা হয় (ইনিও অবাঙালি ছিলেন)।ফলে নওগাঁ মহকুমা সদ্য ঘোষিত স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত এলাকায় পরিণত হয়। এ সময় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ নওগাঁর প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আওয়ামী লীগএর বয়তুল্লাহ এম এন এ (ইনি বাংলাদেশর প্রথম ডেপুটি স্পিকার ছিলেন,৯ মার্চ ১৯৮৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।), মো: আব্দুল জলিল, মোজাফফর ন্যাপের এম, এ, রকীব , ভাষানী ন্যাপের মোজাহারুল হক এ্যাডভোকেট, এ,কে,এম, মোরশেদ এবং আরও কয়েক জন স্থানীয় নেতা।

২৩ মার্চ নওগাঁয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর অধ্যাপক খন্দকার মকবুল হোসেন রচিত ‘রক্ত শপথ’ নামে একটি নটক মঞ্চস্থ হয়। এ নাটকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভবিষ্যৎ রূপরেখা সম্পর্কে আভাস দেয়া হয়েছিল। নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন মো: আব্দুল জলিল, নির্দেশনায় ছিলেন মমিন-উল-হক ভুটি। মঞ্চস্থ হয় নওগাঁ বি.এম.সি. কলেজ প্রাঙ্গনে। পরবর্তীকালে এ নাটকটি ভারতের বালুরঘাট, মালদহ ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন স্থানে মঞ্চস্থ হয়। ভারতের মাটিতে এটি যৌথভাব মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশের শরণার্থী শিল্পী-সাহিত্যিক গোষ্ঠী ও বাংলাদেশ শিল্পী-সাহিত্যিক সংঘ। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকবাহিনী রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গনহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চেই নওগাঁর সকল থানায় এ খবর পৌঁছে যায় এবং সেই দিনই নওগাঁ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার শপথ নেয়।

পাকহানাদার বহিনীর নওগাঁ দখল

২১ এপ্রিল নাটোর থেকে অগ্রসরমান পাকহানাদার বাহিনী নওগাঁ অধিকার করার আগে সান্তাহার রেল জংশনের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ নগর’ নামকরন করে। এখানে ২৬ মার্চের পর বিহারি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে সংঘঠিত সহিংস ঘটনায় বহু বিহারি প্রাণ হারায়। ২১ এপ্রিল দুপুর ১২টায় বিনা বাধায় হানাদার বহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। ২২ এপ্রিল পাকবাহিনীর অপর একটি কনভয় ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় রাজশাহী থেকে সড়ক পথে নওগাঁয় প্রবেশ করে। তাদের নির্দেশমতো ঐ দিন রাতে পাকিস্তান রক্ষার লক্ষ্যে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকভাবে পিছু হটে ভারতের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়।

মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ

২৪ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট, বাঙালিপুর,টিয়রপাড়া ও মধুপুরে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এ সমস্ত ক্যাম্পে দেড় মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য মালদা জেলার গৌড়বাগানে পাঠানো হত। উচ্চতর ট্রেনিং শেষ হবার পর মুক্তিযোদ্ধাদের শিলিগুড়ি ও পানিঘাটায় আর্মস ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হত। এখানে ৩ মাস অস্ত্রের কোর্স মাত্র ২১ দিনে শেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের পরে তরঙ্গপুর হেডকোয়ার্টার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হত।

ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধনায়ক জেনারেল ওসমানী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১ টি সামরিক সেক্টরে বিভক্ত করেন। ৭নং সেক্টরের অধীনে ছিল নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও হিলি অঞ্চল। মেজর নূরুজ্জামান ছিলেন এ সেক্টরের অধিনায়ক। তার অধীনে ছিলেন মেজর নজমুল হক, ক্যাপ্টেন গিয়াস সহ আরও অনেকে। মে মাসের প্রথমে মোকলসুর রহমান রাজার নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় দল নওগাঁয় প্রবেশ করে।

সম্মুখ সমরে মুক্তিবাহিনী

১৯ মে এবং জুন মাসের প্রথম দিকে ধামইরহাট থানায় পৃথক পৃথক ২টি অপারেশন চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ১জন পাক অফিসার সহ তাদের বেশ কয়েক জন সহযোগীকে হত্যা করে। এ অভিযানে ১জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত এবং ২জন আহত হন। এ অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ১টি জিপ সহ প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম হস্তগত করেন।

১৩ জুন নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা চকের ব্রিজ,আত্রাই থানার সাহাগোলা রেল ব্রিজ ও বগুড়া জেলার আদমদিঘী রেল ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ফলে পাকহানাদার বাহিনীর রেল চলাচলে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এছাড়া পত্নীতলা থানায় ক্যাম্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী একদল পাকসৈনিকের উপর নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চলিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র অধিকার করে। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল। প্রতিশোধপরায়ন পাকহানাদার বাহিনী এরপর নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন শুরু করলে স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও বেগবান হয়। সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মুক্তি বাহিনীকে সহযেগীতা শুরু করে। তারা শত্রুপক্ষের সংবাদ ও অবস্থানের কথা গোপনে মুক্তি বাহিনীকে পৌঁছে দিত,গাইড হিসেবে পথ চিনিয়ে দিত। ১০ জুলাই মধইল নামক স্থানে মকাই চৌধুরীর নেতৃত্ব পাক বাহিনীর উপর হামলা চলিয়ে তাদের ৬ জনকে হত্যা করে। ১৬ জুলাই পাক বাহিনীর নদী পথে রাণীনগর থানার তিলাবুদু গ্রামে প্রবেশের সংবাদ পেয়ে ওহিদুর রহমান ও আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এতে পাক বাহিনীর ২টি নৌকা ডুবে যায় এবং ৪জন পাকসৈনিকের মৃত্যু হয়। ১৪ আগষ্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে মহাদেবপুর থানার হাপানিয়া মহাসড়কে মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা একটি শক্তিশালী বোমার আঘাতে ১টি জিপ ধ্বংস হলে ৫ হানাদার সৈন্য নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে ১৫ আগষ্ট পাক বাহিনী আশেপাশের গ্রামে নির্মম গণহত্যা চালায়। ১৯ সেপ্টেম্বর আত্রাই থানার বান্দাইখাড়া গ্রামে পাক বাহিনী ১৯টি নৌকযোগে হামলা চালায়। এই সংবাদ পেয়ে ওহিদুর রহমান ও আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী তারানগর ঘাউল্যা নামক স্থানে পাক বাহিনীর নৌকাতে হামলা চালায়। প্রচন্ড যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৯টি নৌকাই ডুবে যায় এবং এই সাথে অসংখ্য রাজাকার ও পাকসেনার সলিল সমাধি হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানদার মুক্ত হয়।

ইতিহাস

নওগাঁ শব্দর উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’ (নতুন -ফরাসী শব্দ ) ও‘ গাঁ’ (গ্রাম ) শব্দ দু’টি হতে । এই শব্দ দু’টির অর্থ হলো নতুন গ্রাম । অসংখ্য ছোট ছোট নদীর লীলাক্ষেত্র এ অঞ্চল । আত্রাই নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী বন্দর এলাকা ঘিরে নতুন যে গ্রাম গড়ে উঠে , কালক্রমে তা-ই নওগাঁ শহর এবং সর্বশেষ নওগাঁ জেলায় রুপান্তরিত হয়। নওগাঁ শহর ছিল রাজশাহী জেলার অন্তর্গত । কালক্রমে এ এলাকাটি গ্রাম থেকে থানা এবং থানা থেকে মহকুমায় রুপ নেয় । ১৯৮৪ এর ১ মার্চ- এ নওগাঁ মহকুমা ১১টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয় । বাংলাদেশ উত্তর -পশ্চিমভাগ বাংলাদেশ - ভারত আন্তর্জাতিক সীমা রেখা সংলগ্ন যে ভূখন্ডটি ১৯৮৪ খ্রিঃ এর ১ মার্চের পূর্ব পর্যমত্ম অবিভক্ত রাজশাহী জেলার অধীন নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হ-তো, তা - ই এখন হয়েছে বাংশাদেশরে কন্ঠশোভা নওগাঁ জেলা । নওগাঁ প্রাচীন পৌন্ড্রবর্ধন ভূক্ত অঞ্চল ছিল। অন্য দিকে এটি আবার বরেন্দ্র ভূমিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । নওগাঁর অধিবাসীরা ছিল প্রাচীন পুন্ড্র জাতির বংশধর । নৃতাত্বিকদের মতে , পুন্ড্ররা বিশ্বামিত্র বংশধর এবং বৈদিক যুগের মানুষ । মহাভারত পুন্ড্রদের অন্ধ ঋষি দীর্ঘতমার ঔরষজাত বলি রাজার বংশধর বলে উলে­খ করা হয়েছে । আবার কারো মতে, বাংলার আদিম পাদদর বংশধর রুপে পুন্ড্রদের বলা হয়েছে । এদিক দিয়ে বিচার করলে নওগাঁ যে প্রাচীন জনগোষ্ঠির আবাসস্থল ছিল তা সহজেই বলা যায় ।

নওগাঁ জেলা আদিকাল হতেই বৈচিত্র ভরপুর । ছোট ছোট নদী বহুল এ জেলা প্রাচীনকাল হ- তেই কৃষি কাজের জন্য প্রসদ্ধি । কৃষি কাজের জন্য অত্যমত্ম উপযোগী এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে উঠে । এ জমিদার গোষ্ঠীর আশ্রয়েই কৃষি কাজ সহযোগী হিসেবে খ্যাত সাঁওতাল গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে শুরু করে এ অঞ্চল । সাঁওতাল গোষ্ঠীর মতে এ জেলায় বসবাসরত অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে মাল পাহাড়িয়া, কুর্মি,মহালী ও মুন্ডা বিশেষভাবে খ্যাত । নানা জাতি ও নানা ধর্মর মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা মানব বৈচিত্র্য ভরপুর । অসংখ্য পুরাতন মসজিদ , মন্দির,গীর্জা ও জমিদার বাড়ি প্রমাণ কর নওগাঁ জেলা সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরাতন ।

অর্থনীতি

নওগাঁ জেলার অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় মাঝে অবস্থিত এই জেলার আয়তন ৩,৪৩৫.৬৭ বর্গকিলোমিটার। এর প্রায় ৮০ শতাংশই আবাদী জমি। এই অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর যা দোঁআশ নামে পরিচিত।

প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের এই জেলার অধিকাংশই কৃষক। এই জেলায় উত্‍পাদিত প্রধান ফসলসমূহের মধ্যে রয়েছে: ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, ভুট্টা, আলু, বেগুন, রসুন, তেল বীজ এবং পেঁয়াজ। এছাড়াও নানা ধরনের মৌসুমি ফল ও ফসল উত্‍পাদন হয় এই জেলায়। ২০০৯-২০১০ এ জেলায় মোট ধান ও গমের উত্‍পাদন ছিল ১৩,৫৮,৪৩২ মেট্রিক টন। সাথে আরও ৮,২৬,৮৩৫ মেট্রিক টন উদ্ধৃত্ত। ধান উত্‍পাদনে নওগাঁ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ জেলা। বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে নওগাঁতেই সর্বাধিক ধান প্রক্রিয়াজাতকরণ কল রয়েছে।

জনসংখ্যা

ইসলাম
 
৮৯.৭৩%
হিন্দু
 
৮.২৭%
খ্রীস্টান
 
১%
বৌদ্ধ
 
০.৬৫৬%
অন্যান্য
 
০.৩৪৪%

নওগাঁ জেলায় প্রায় ৩৮৬৪টি মসজিদ, ১০১৮টি মন্দির, ৯৬টি চার্চ এবং ৫১টি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। কুসুম্বা মসজিদ ও রঘুনাথ মন্দির-ঠাকুরমান্দা নওগাঁ জেলার বিখ্যাত মসজিদ ও মন্দির যা মান্দা উপজেলায় অবস্থিত।

কৃতি ব্যক্তিত্ব

  • মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ - বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম ডেপুটি স্পীকার;
  • তালিম হোসেন (১৯১৮ - ১৯৯৯) কবি ও গবেষক;
  • শিশির নাগ (১৯৩৬ - ৭ জুলাই ১৯৬০) - সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক এবং বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী।
  • জেমস - সঙ্গীত শিল্পী;
  • আব্দুল জলিল - রাজনীতিবিদ;
  • আখতার হামিদ সিদ্দিকী - বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার।
  • মোকসেদ আলি - বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক
  • এনামুল মাকসুদ - বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক
  • সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী - বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সচিব
  • সাধন চন্দ্র মজুমদার - মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী
  • মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক - সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী
  • মতিন রহমান - চলচ্চিত্র পরিচালক

আদিবাসী

আদিবাস নাম থানা অনুসারে অবস্থান
সাঁওতাল ধামইরহাট, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা
মু্ডা মহাদেবপুর, ধামইরহাট, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর, পোরশা
ওঁরাও মহাদেবপুর, পত্নীতলা, পোরশা, বদলগাছি
মাহালী পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, বদলগাছি
বাঁশফোঁড় পত্নীতলা, নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর, সাপাহার, ধামইরহাট,
কুর্মি পত্নীতলা, মহাদেবপুর, ধামইরহাট, বদলগাছি
মাল পাহাড়ী পত্নীতলা, মহাদেবপুর, পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর,

দর্শনীয় স্থান

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Population Census 2011" (PDF)। Bangladesh Bureau of Statistics। সংগ্রহের তারিখ 21 Jun, 2014 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. উপজেলা পরিষদ সমূহ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ অক্টোবর ২০১০ তারিখে
  3. "ভৌগোলিক প্রোফাইল"। ২৭ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.