নাটোর
নাটোর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা শহর । প্রশাসনিকভাবে এটি রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার নাটোর সদর উপজেলার সদর দপ্তর। এর আয়তন ১৫.৮৪ বর্গকিলোমিটার ও জনসংখ্যা ১,২০,৬৫৫ জন মাত্র। এটি ক শ্রেণির পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয় (বাংলাদেশে ক,খ,গ তিন শ্রেণীর পৌরসভা বিদ্যমান)। নাটোর জেলায় ছোট-বড় মোট ৮টি শহর রয়েছে।যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যম শুধু মাত্র রেল ও সড়ক পথ।এ শহরে কোন বিমানবন্দর নেই।নৌ পথে যোগাযোগ এক সময় থাকলেও,কালের বিবর্তনে তা এখন আর নেই। নাটোর কাচাগোল্লা, বনলতা আর অর্ধ বঙ্গেশ্বরী রানী ভবানীর জন্য বিখ্যাত। রানী ভবানী একসময় নাটোর বসে অর্ধেক বাংলার রাজত্ব করেন। নাটোরে এখনো রয়েছে রানী ভবানীর রাজবাড়ী ( বঙ্গজল রাজবাড়ী/রাণীমহল ) , দীঘাপতিয়া রাজবাড়ী ( উত্তরা গণভবন ) এবং পুরনো আমনের বিল্ডিং এবং মন্দির।কিন্তু শহর ও নগরায়নের ফলে অনেক পুরোন নিদর্শন আজ বিলুপ্তির পথে।নাটোর শহরের ভেতর দিয়ে নারদ নদ প্রবাহিত হয়েছে।বর্তমানে এই পৌর এলাকার পয় নিষ্কাশন,ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য এই নদকে দূষিত করে ফেলেছে।এখন এই নদের পানি কালো ও নোংড়া।বিভিন্ন পুরান আমলের দর্শনীয় স্থানের কারনে নাটোর শহর বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের নামকরা ও পরিচিত শহর।রানীভবানীর শাসন আমল নাটোরকে এক সমৃদ্ধ এলাকায় পরিণত করেছিল।১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভায় পরিণত করা হয়।১৯৮৪ সালে এই শহরকে নাটোর জেলার সদর হিসেবে গণ্য করা হয়।
নাটোর | |
---|---|
![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নাটোর জেলা |
উপজেলা | নাটোর সদর উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | নাটোর পৌরসভা |
• মেয়র | উমা চৌধুরী |
আয়তন | |
• মোট | ১৫.৮৪ কিমি২ (৬.১২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ১,২০,৬৫৫ |
• জনঘনত্ব | ৭৬০০/কিমি২ (২০০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+৬) |
ইতিহাস
অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে। ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ভূগোল
নাটোর রাজশাহী থেকে পূর্বে এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পশ্চিমে, ২৪৹২৪'৫১" উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮৹৫৯'৯" দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[1] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২৩ মিটার এবং এর মোট আয়তন ১৪.৮৪ বর্গকিলোমিটার। ভূসংস্থান অনুসারে এটি সমতলভূমিতে অবস্থিত হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে কিছুটা ঢালু। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। গড়ে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী হল সবচেয়ে শীতলতম মাস। নাটোরের গড় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫৫৬ মিলিমিটার।
- শহরের কিছু এলাকার নাম
- আলাইপুর (জেলা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ অফিস)
- হরিশপুর ( জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল)
- কান্দিভিটুয়া
- কানাইখালী
- মল্লিকহাটি
- বড়গাছা (রেলওয়ে স্টেশন,নাটোর)
- হাজীপাড়া
- পটুয়াপাড়া (জেলা স্টেডিয়াম)
- হুগোলবাড়ীয়া (ডিস্টিলারি শিল্প)
- গাড়ীখানা (কেন্দ্রীয় কবরস্থান)
- তেবাড়িয়া (হাট)
- মীরপাড়া (জেলা পশু হাসপাতাল)
- পালপাড়া
- ঘোষপাড়া
- বঙ্গজল (রাণীভবানি রাজ প্রাসাদ)
- ঝাউতলা
- চৌকিড়পাড়
- নীচাবাজার (কেন্দ্রীয় বাজার)
- উপড়বাজার (ব্যবসায়ী এলাকা)
- শুকলপট্টি
- জেলেপাড়া
- পিলখানা
- সায়েদবাড়ি
- লালবাজার
- রথবাড়ী
- কাপুড়িয়াপট্টি
- মাদ্রাসামোড় (জিরো পয়েন্ট)
- বনবেলঘড়িয়া (পশ্চিম বাইপাস)
- সুগারমিল এলাকা (নাটোর সুগারমিল নিমিটেড)
- চৌধুরী বড়গাছা
- উপশহর (আবাসিক এলাকা)
- বলাড়ীপাড়া (আবাসিক এলাকা)
- চকরামপুর
- রামাইগাছি (টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট)
- পিটি আই মোড় (জেলা টিচার্স ট্রেনিং কেন্দ্র,রাজলংকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র )
- পুলিশ লাইন (জেলা কেন্দ্রীয় জেলখানা)
- ডোমপাড়া
- সাঁওতালপাড়া(তেবাড়িয়া)
- চ্যাঁইপাড়া
- ফুলবাগান (টেলিভিশন ভবন ,উপজেলা পরিষদ)
- গুড়পট্টি
- চামড়াপট্টি (জেলা পরিষদ)
- দীঘাপতিয়া (উত্তরা গণভবন)
- দত্তপাড়া (বিসিক এলাকা)
প্রশাসন ও রাজনীতি
পাকিস্তান শাসনামলে বেসিক ডেমোক্রেটিক অর্ড্যার, ১৯৫৯ অনুযায়ী ১৯৬০ সালে নাটোর টাউন কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ লোকাল কাউন্সিল অ্যান্ড মিউনিসিপাল কমিটি (অ্যামেমেন্ট) অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী নাটোর টাউন কমিটিকে নাটোর শহর কমিটিতে রুপান্তর করা হয়। ১৮৬৯ সালে একে পৌরসভায় পরিনত করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় এর আয়তন ছিল মাত্র ৪.৪৫ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালে নাটোরকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
নাটোর পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৩৩টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর থাকেন। পৌরসভার প্রধান হলেন মেয়র।
তথ্যসূত্র
- "24.414291, 88.986085 Latitude longitude Map"। www.latlong.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৩।