নীলফামারী
নীলফামারী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি শহর। এটি বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে ৫৫ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত। এটি নীলফামারী জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১৯.২৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ৪৫,৩৮৬ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট নীলফামারী শহর ক শ্রেণীর পৌরসভা (ক,খ,গ তিন শ্রেণীর পৌরসভা বিদ্যমান) দ্বারা শাসিত। এটি একইনামের জেলা ও উপজেলার (নীলফামারী জেলা ও নীলফামারী সদর উপজেলা) প্রশাসনিক সদরদপ্তর। শহরে রেলপথের সংযোগ থাকলেও সড়কপথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। সৈয়দপুর বিমানবন্দর এ শহরের নিকটবর্তী আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। নীলফামারী টাউন কমিটি ১৯৬৪ সালে গঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে নীলফামারী নীলকরদের রাজধানী ছিল। শহরটি সমুদ্র সমতল থেকে ৫৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।[1] এখানে ক্রান্তীয় গরম ও আদ্র জলবায়ু বিরাজমান। শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষই সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি বা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। এখানে একটি মেডিকেল কলেজ, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নীলফামারী | |
---|---|
শহর | |
স্থানাঙ্ক: | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | নীলফামারী জেলা |
উপজেলা | নীলফামারী সদর উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | নীলফামারী পৌরসভা |
• মেয়র | দেওয়ান কামাল আহমেদ |
আয়তন | |
• মোট | ১৯.২৮ কিমি২ (৭.৪৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৪৫,৩৮৬ |
• জনঘনত্ব | ২৪০০/কিমি২ (৬১০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+৬) |
নামকরণ
দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। শহরের পুরাতন রেল স্টেশনের কাছে ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি। স্থানীয় কৃষকদের মুখে নীল খামার রূপান্তরিত হয় নীল খামারী-তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।
ভূগোল
নীলফামারী ২৫°৫৬'৩০" উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°৫০'৪৮" পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[2] এ শহরের পূর্ব দিক দিয়ে বামনডাঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৫৩ মিটার। নীলফামারী শহরের আয়তন ১৯.২৮ বর্গকিলোমিটার, যার সম্পুর্ণটিই পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে নীলফামারীর দুরত্ব ৩৫৯ কিলোমিটার এবং বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে ৫৫ কিলোমিটার।[3] বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে নীলফামারী শহরটি তিস্তা প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। এর ভূসংস্থান সমভূমি হলেও উত্তর দক্ষিণে কিছুটা ঢালু। নীলফামারীর বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২১৬৬ মিলিমিটার। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নীলফামারীতেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস, যার তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হল সবচেয়ে শীতলতম মাস, তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নীলফামারীর জনসংখ্যা ছিল ৪৫,৩৮৬ জন।[4] যার মধ্যে ২৩,২৮৬ জন পুরুষ এবং ২২,১০০ জন নারী। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০০:১০৫, যেখানে জাতীয় লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০.৩ এবং জাতীয় শহুরে লিঙ্গ অনুপাত হল ১০৯.৩। ২০১১ সালে তথ্য অনুযায়ী স্বাক্ষরতার হার ৬৪.১%, যেখানে জাতীয় শহুরে স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৪% ও জেলার স্বাক্ষতার হার ৪৪.৪%। শহরে ৯,৪৪৮টি পরিবার রয়েছে।
নীলফামারীর জনসংখ্যার শতকরা ৮৯.৬৫% মুসলমান, ১০.০৯% হিন্দু, ০.১৭% খ্রিস্টান, ০.০১% বৌদ্ধ ও ০.০৮% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। উপজাতিদের মধ্যে সাঁওতাল ও মেথর বসবাস করে।
তথ্যসূত্র
- "Geographic coordinates of Nilphamari, Bangladesh. Latitude, longitude, and elevation above sea level of Nilphamari"। dateandtime.info। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-৩০।
- "25.934870, 88.855904 Latitude longitude Map"। www.latlong.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০১।
- "Distance Matrix" (PDF)। www.rhd.gov.bd/। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯।
- "Nilphamari Town"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (PDF) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ২৬৮। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯।