কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২২ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। একসময় কক্সবাজার পানোয়া নামেও পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি

কক্সবাজার
শহর এবং পর্যটন রাজধানী
কক্সবাজার
স্থানাঙ্ক: ২১°৩৫′০″ উত্তর ৯২°০১′০″ পূর্ব
দেশবাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাকক্সবাজার জেলা
আয়তন
  মোট২৪.৪৫ কিমি (৯.৪৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১[1])
  মোট২,২৩,৫২২
  জনঘনত্ব৯১০০/কিমি (২৪০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)

ইতিহাস

নবম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত কক্সবাজার-সহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ী রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার যাত্রাবহরের প্রায় একহাজার পালঙ্কী কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা নামের স্থানে অবস্থান নেয়। ডুলহাজারা অর্থ হাজার পালঙ্কী। মুঘলদের পরে ত্রিপুরা এবং আরকান তার পর পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের আগের নাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরের পুরোনো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই মারা (১৭৯৯) যান। তার পুনর্বাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার। কক্সবাজার থানা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।

অবস্থান

কক্সবাজার চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক এবং আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অবধি রেললাইন স্থাপনের প্রকল্প চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

পর্যটন আকর্ষণ

কক্সবাজার বিমানবন্দর

পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত অনেক হোটেল, বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্র নির্মিত মোটেল ছাড়াও সৈকতের নিকটেই বিশটি পাঁচতারা হোটেল রয়েছে। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার (পূর্ব নাম - বার্মা), থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে বার্মিজ মার্কেট।এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র ফিস একুরিয়াম । আরো রয়েছে প্যারাসেলিং,ওয়াটার বাইকিং,বিচ বাইকিং,কক্স কার্নিভাল সার্কাস শো,দরিয়া নগর ইকোপার্ক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিমির্ত অসংখ্য স্থাপত্য, ফিউচার পার্ক,শিশুপার্ক,এবং অসংখ্য ফোটোসুট স্পট।এখানে আরো আছে টেকনাফ জিওলজিক্যাল পার্ক।এখানে উপভোগের জন্য রয়েছে নাইট বিচ কনসার্ট ।সমুদ্র সৈকতকে লাইটিং এর মাধ্যমে আলোকিত করার ফলে এখানে রাতের বেলায় সমুদ্র উপভোগের সুযোগও রয়েছে।এখানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিমির্ত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সী-একুরিয়্যাম। ক্যাবল কার এবং ডিজনি ল্যান্ড।

কক্সবাজারে বিভিন্ন উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বাস করে যা শহরটিকে করেছে আরো বৈচিত্র্যময়। এইসব উপজাতিদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় প্রধান। কক্সবাজার শহর ও এর অদূরে অবস্থিত রামুতে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে বৌদ্ধ মন্দির। কক্সবাজার শহরে যে মন্দিরটি রয়েছে তাতে বেশ কিছু দুর্লভ বৌদ্ধ মূর্তি আছে। এই মন্দির ও মূর্তিগুলো পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণই বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবে বিখ্যাত।

লাবণী পয়েন্ট

কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আছে ছোট বড় অনেক দোকান যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

হিমছড়ি

হিমছড়ি কক্সবাজারের ১২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ভঙ্গুর পাহাড় আর ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার সময়ে হিমছড়ির ঝর্ণাকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত বলে মনে হয়। হিমছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্ট আছে যেখান থেকে সাগরের দৃশ্য অপার্থিব মনে হয়।অর্থাৎ এখান থেকে সম্পূর্ণ সমুদ্র এক নজরে দেখা যায়। হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিসমাস ট্রি। সম্প্রতি হিমছড়িতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট।

ইনানী সমুদ্র সৈকত

দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৮ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।

শিক্ষা

এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলোঃ

  • কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  • কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ
  • কক্সবাজার সরকারি কলেজ
  • কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ
  • কক্সবাজার সিটি কলেজ
  • কক্সবাজার ডিসি কলেজ
  • কক্সবাজার কমার্স কলেজ
  • কক্সবাজার হার্ভাড কলেজ
  • কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
  • কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়
  • বায়তুশ-শরফ জাব্বারিয়া একাডেমি
  • কক্সবাজার কেজি অ্যান্ড মডেল হাইস্কুল
  • কক্সবাজার বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল
  • কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. "Urban Centers in Bangladesh"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (PDF) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৫: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ১৯১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.