ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) প্রথম ক্যাডেট কলেজ।[1] ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের পূর্বনাম ছিল 'ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ'। জাতীয় পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি এখানে ক্যাডেটদের শারীরিক, মানসিক,বুদ্ধিবৃত্তিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতিক ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা সম্পূরক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং জাতীয় ক্ষেত্রে এই ক্যাডেট কলেজের ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ | |
---|---|
![]() | |
![]() একাডেমিক ভবন | |
অবস্থান | |
উপজেলা: সীতাকুন্ড জেলা: চট্টগ্রাম বাংলাদেশ | |
স্থানাঙ্ক | ২২.৪০০৬° উত্তর ৯১.৭৬২১° পূর্ব |
তথ্য | |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৮ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় |
কার্যক্রম শুরু | ১৯৫৮ |
প্রথম প্রধান শিক্ষক | উইলিয়াম মরিস ব্রাউন |
আয়তন | ১৮৫ একর (০.৭৫ কিমি২) |
রঙ | নীল |
বিশেষণ | ফৌজিয়ান |
হাউজ | ৪ |
অবস্থান ও প্রতিবেশ
কলেজটি চট্টগ্রাম শহরের অদূরে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এই কলেজ থেকে ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। কলেজের অদূরেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর।
ইতিহাস
১৯৫৮ সালের ২৮ এপ্রিল নিউজিল্যান্ডের নাগরিক উইলিয়াম মরিস ব্রাউনের হাত ধরে এ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এটি 'ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ' নামে পরিচিত ছিল। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর জন্য যোগ্য কর্মকর্তা তৈরি করাই ছিল এ কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।
পরিচ্ছদ
সকল শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে মিলিটারি একাডেমীর ক্যাডেটদের মত খাকি ইউনিফর্ম পরিধান করে, সকালে পিটি এবং বিকেলে খেলাধুলার সময় নেভী ব্লু হাফপ্যান্ট ও সবার জন্য নির্দিষ্ট টি-শার্ট পরে এবং রাতে পড়াশুনার সময় সাদা ফুলশার্ট, কালো ফুলপ্যান্ট এবং সবার জন্যে নির্দিষ্ট করা একটি টাই পড়ে। ঋতুভেদে ইউনিফর্মের প্যাটার্ন বদলানো হয়। যেমন শীতকালে খাকি ইউনিফর্মের সাথে খাকি সোয়েটার এবং রাতে পড়াশুনার সময় কলেজ মনোগ্রাম সংবলিত ব্লেজার ব্যবহার করা হয়। গ্রীষ্মকালে খাকি ইউনিফর্মের পরিবর্তে জলপাই রংয়ের হাফ শার্ট ও কালো ফুল প্যান্ট পরিধান করে।শিক্ষিকা ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দও দায়িত্বকালীন সময়ে নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করেন।
অবকাঠামো
জাদুঘর
কলেজ অডিটোরিয়ামের পেছনে কলেজ মিউজিয়ামটির অবস্থান। জাদুঘরের অন্যান্য জিনিসের মধ্যে প্রাক্তন ক্যাডেটদের ছবি ও তাদের নামের তালিকা উল্লেখযোগ্য।
ডাইনিং হল
ডাইনিং হলটির নামকরণ করা হয়েছে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের নামানুসারে "কর্নেল ব্রাউন হল"। এখানে প্রতিদিন পাঁচবার খাবার পরিবেশন করা হয়। ডাইনিং হলে খাবার গ্রহণের সময় ক্যাডেটরা বিশেষ শিষ্টাচার মেনে চলে।
পাঠাগার
কলেজ পাঠাগারটি রেফারেন্স ও আর্কাইভের দিক থেকে দেশের অন্যতম একটি পাঠাগার। এখানে ১০০০০ এরও অধিক সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। পাঠাগারটি "রউফ পাঠাগার" নামে পরিচিত। এর নামকরণ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের নামে।
হাউজসমূহ
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের চারটি হাউজ। প্রতি হাউজের নিজস্ব রং, প্রতীক এবং মূলনীতি রয়েছে।
রবীন্দ্র হাউস
প্রাক্তন বাবর হাউস, বর্তমান রবীন্দ্র হাউস। হাউস রঙ হলুদ এবং হাউস প্রতীক সিংহ। হাউস মূলনীতি "লড়বো মোরা ছাড়বো না" ।
নজরুল হাউস
প্রাক্তন শাহজাহান হাউস, বর্তমান নজরুল হাউস। হাউস রঙ নীল এবং হাউস প্রতীক জাগুয়ার। হাউস মূলনীতি "মোরা নির্ভীক চির দুর্জয়"।
ফজলুল হক হাউস
প্রাক্তন আইয়ুব হাউস, বর্তমান ফজলুল হক হাউস। হাউস রঙ সবুজ এবং হাউস প্রতীক প্যানথার। হাউস মূলনীতি "মরার আগে মরব না"।
শহীদুল্লাহ হাউস
প্রাক্তন আকবর হাউস, বর্তমান শহীদুল্লাহ হাউস। হাউস রঙ লাল এবং হাউস প্রতীক বাঘ। হাউস মূলনীতি "মোরা অক্ষয় মোরা অব্যয়"।
কৃতি শিক্ষার্থী
- আতাউল করিম
- ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সেনাপ্রধান,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী(জুন ২৫ ২০১২-বর্তমান)[2]
- আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, ৫ম ব্যাচ(ক্যাডেট ব্যাচ), সেনাপ্রধান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (এপ্রিল ১৯৯৪-মে ১৯৯৬)
মুক্তিযুদ্ধে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের নিম্নোক্ত প্রাক্তন ক্যাডেটরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন :
- মেজর আবদুল খালেক, ১ম ব্যাচ
- ক্যাপ্টেন এ. কে. এম নুরুল আবসার, ২য় ব্যাচ
- মো. মোশাররফ হোসেন, ৩য় ব্যাচ
- ল্যাফটেন্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন, বীর উত্তম, ৭ম ব্যাচ
- বদিউল আলম, বীর বিক্রম, ৭ম ব্যাচ
- ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা, ৭ম ব্যাচ
- মুফতি মুহাম্মদ কাসেদ, ৮ম ব্যাচ
- সে. লে. রফিক আহমেদ সরকার, ১০ম ব্যাচ
এছাড়া ফৌজদারহাটের নিম্নোক্ত ক্যাডেটরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যাদের অনেকেই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা :
- উইং কমোডর (অব.) এম. ওয়ালি উল্লাহ, ১ম ব্যাচ
- মো. আবদুর রব, ২য় ব্যাচ
- কর্ণেল (অব.) আবু তাহের সালাউদ্দিন, ৪র্থ ব্যাচ
- ড. এম মুজিবুর রহমান, পি এইচ.ডি, ৪র্থ ব্যাচ
- লে. জেনারেল (অব.) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, ৫ম ব্যাচ
- মেজর মো. রওশন ইয়াজদানি ভূঁইয়া, মৃত, ৬ষ্ঠ ব্যাচ
- মেজর জেনারেল মো. আশরাফ হোসেইন, মৃত, ৬ষ্ঠ ব্যাচ
- কামরুল হক, বীর বিক্রম, ৭ম ব্যাচ
- কাজী মুহাম্মদ আলী আনোয়ার, ৮ম ব্যাচ
- এস. এম ইকবাল রশিদ, ৮ম ব্যাচ
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সৈয়দ আহমেদ, বীর প্রতিক, ৮ম ব্যাচ
- মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবারাহিম, ৯ম ব্যাচ

- লে. কর্ণেল (অব.) মীর মুখলেসুর রহমান, ৯ম ব্যাচ
- সৈয়দ আবদুর রাশেদ, ৯ম ব্যাচ
- ড. আজাদুল ইসলাম, পি এইচ.ডি, ১০ম ব্যাচ
- ড. কায়সার এম হামিদুল হক, পি এইচ.ডি, ১০ম ব্যাচ
- ক্যাপ্টেন (অব.) হুমায়ুন কবির, বীর প্রতিক, ১০ম ব্যাচ
- মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান, বীর বিক্রম, ১০ম ব্যাচ
- ইশরাক আহমেদ, ১০ম ব্যাচ
- মেজর (অব.) হাশমি মুস্তফা কামাল, ১০ম ব্যাচ
- লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ এ জহির, বীর প্রতিক, ১০ম ব্যাচ
- এ এফ এম এ হারিস, ১১তম ব্যাচ
- মেজর (অব.) সৈয়দ মুনিবুর রহমান, ১১তম ব্যাচ
- মেজর (অব.) দিদার আতোয়ার হুসেইন, ১১তম ব্যাচ
- মেজর (অব.) সৈয়দ মিজানুর রহমান, ১১তম ব্যাচ
- ড. শাহরিয়ার হুদা, পি এইচ.ডি, ১১তম ব্যাচ
- ক্যাপ্টেন (অব.) আহসান আজিজ শেলী, ১২তম ব্যাচ
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, ১২তম ব্যাচ
- এম ইবরাহিম আদিল খান, ১২তম ব্যাচ
- আনিস কাদেরী, ১৩তম ব্যাচ
- নজরুল কামাল, ১৩তম ব্যাচ
- এ কে এম শওকত আমিন, ১৩তম ব্যাচ
- বেলাল উদ্দিন, ১৩তম ব্যাচ
- মুহাম্মদ আবদুর রহিম, ১৪তম ব্যাচ
- কর্ণেল (অব.) মাহমুদ রহমান চৌধুরী, ১৫তম ব্যাচ
- লে. জেনারেল মোল্লাহ ফজলে আকবর, ১৫তম ব্যাচ
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১১।
- http://www.newstoday.com.bd/index.php?option=details&news_id=2314807&date=2012-06-10#.T9Tt72pdynQ.facebook