চট্টগ্রামে পর্তুগিজ উপনিবেশ
পোর্তো গ্র্যান্ডে ডি বেঙ্গলা বা ইংরেজিতে গ্র্যান্ড পোর্ট অফ বেঙ্গল হয়ে পোর্তো গ্র্যান্ডে যা মুলত ১৬'শ এবং ১৭'শ শতকের সময়ে চট্টগ্রামে পর্তুগিজ উপনিবেশ (ইংরেজি: Portuguese settlement in Chittagong) অর্থাৎ চট্টগ্রামে পর্তুগিজ বনিক এবং নৌ উপনিবেশকে নির্দেশ করে । বঙ্গোপসাগরের এই অন্যতম বাণিজ্যিক অঞ্চলটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির উপনিবেশ ছিল।
১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিক ও পর্যটক ভাস্কো ডা গামার ভারত আগমনের পর ১৫১১ সালে পর্তুগিজরা মালাকা দখল করে নেয় এসময় বাংলার বিভিন্ন সমুদ্র পথে তাদের যাতায়াত বেড়ে যায় । ১৫২৮ সালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পর্তুগিজরা একটি কারখানা ও কাস্টমস ঘর স্থাপন করে যা খুব দ্রুত প্রায় ৫হাজার পর্তুগিজ বা ইউরেশীয় সম্প্রদায়ের বিস্তার ঘটায় যারা পর্বরতিতে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড় এবং পাশ্ববর্তি দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । এসময় পর্তুগিজরা চট্টগ্রামের অদূরে দেয়াঙ এলাকায় বিশাল নৌ এবং সামরিক দুর্গ স্থাপন করে । তৎকালীন সময়ে পোর্তো গ্র্যান্ডে বাংলা সালতানাতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হত । যদিও এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য করায়ত্ত করার জন্য পর্তুগিজ বণিকগণ আরাকান রাজা ও মগ জলদস্যুদের সাথে মিত্রতা গড়ে তোলে । কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ১৬০৭ সালে পর্তুগিজদের সাথে বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কের দরূন দেয়াঙে আরকান রাজা কয়েকশ পর্তুগিজ বণিক ও তাদের পরিবারের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায় । পরবর্তিতে ১৬৬৮ সালে মোগল নৌ বাহিনী আরকানদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর উদ্ধার করে এবং পর্তুগিজদের এ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে ।[1][2]
তবুও পর্তুগিজদের বংশধরদের এখনও চট্টগ্রামে দেখা যায় এবং তারা ‘কালা ফিরিঙ্গি’ বা ‘মাটিয়া ফিরিঙ্গি’ নামে পরিচিত। এরা বাংলার প্রাচীনতম রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় । এবং কথিত আছে, ফিরিঙ্গি বাজার নামে পরিচিত নগরীর একটি এলাকা তাদের নামেই নামকরণ করা হয়েছে । পর্তুগিজ উপনিবেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে বাংলা ভাষায় এমন বহু পর্তুগিজ শব্দের সংযোজন যেগুলি এখনও দৈনন্দিন কাজে প্রচলিত আছে। এসব শব্দের মধ্যে রয়েছে আনারস, পেঁপে, পাদ্রি, ফিতা, আলপিন, বোতাম, চাবি ইত্যাদি ।[3]
তথ্যসূত্র
- "HPIP"। HPIP। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৪।
- "The Portuguese on the Bay of Bengal"। Colonialvoyage.com। ১৫ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৪।
- শিরীন হাসান ওসমানী (জানুয়ারি ২০০৩)। "চট্টগ্রাম নগরী"। সিরাজুল ইসলাম। চট্টগ্রাম নগরী। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ। আইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৪।