সিরাজুল ইসলাম

সিরাজুল ইসলাম (জন্ম: ১৫ মে, ১৯৩৮ - মৃত্যু: ২৪ মার্চ, ২০১৫) [2] একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, বেতার ও মঞ্চ অভিনেতা ও পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘রাজা এলো শহরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে প্রায় তিনশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। [3] টিভি নাটকেও এক সময় নিয়মিত অভিনয় করতেন। ১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চন্দ্রনাথ’ অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এক সময় করাচির ইস্টার্ন ফিল্ম পত্রিকায় ঢাকাস্থ চলচ্চিত্র প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। [4] অভিনয়ের বাইরে পেশাজীবনে তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।

সিরাজুল ইসলাম
জন্ম(১৯৩৮-০৫-১৫)১৫ মে ১৯৩৮
হুগলি জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান ভারত)
মৃত্যু২৪ মার্চ ২০১৫(2015-03-24) (বয়স ৭৬)
সমাধিবনানী কবরস্থান, ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
অন্যান্য নামসিরাজ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশাঅভিনেতা
কার্যকাল১৯৬৪ - ২০১৪
দাম্পত্য সঙ্গীসৈয়দা মারুফা ইসলাম (১৯৬৫-২০১৫)
সন্তানমোবাশ্বেরুল ইসলাম শাহী (ছেলে)
ফাহমিদা ইসলাম (মেয়ে)
নাহিদা ইসলাম (মেয়ে)
আত্মীয়আবুল হায়াত (ভগ্নিপতি) [1]
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৮৪)

প্রথম জীবন

সিরাজুল ইসলাম ১৯৩৮ সালের ১৫ই মে ব্রিটিশ ভারতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। [5] তার বাবা আবদুল হক ও মা আরিফান্নেসা। [6] তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবি। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পরে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন ও ঢাকার বাংলাবাজারে বসবাস শুরু করেন। [7] তখন তিনি ছিলেন নবম শ্রেণীর ছাত্র। ঢাকায় এসে কিশোরী লাল জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন ও এখান থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর কায়দে আজম কলেজ (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ) পড়াশোনা করেন।

কর্ম জীবন

অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনা

ঢাকায় তিনি প্রথম মঞ্চ অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন, অভিনয় করার মাঝে বেতার শিল্পী রণেন কুশারীর সাথে পরিচয় হয়। তিনি তাকে বেতারে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। বেতারে রূপালি চাঁদ নাটকে একজন স্কুলশিক্ষকের চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর নিয়মিত মঞ্চে ও বেতারে অভিনয় করেন। বৃষ্টি নামের একটি বেতার নাটকের প্রযোজনার মাধ্যমে তিনি প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এটি একটি ইংরেজি গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল ও এটা অভিনয় করেন খান আতাউর রহমান, ডা. সাঈদুন্নেসা হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন।

১৯৬৩ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত রাজা এলো শহরে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সিরাজুল ইসলামের অভিষেক ঘটে। এ ছবিতে তিনি একজন অধ্যাপকের চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় তিনশত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে নাচঘর, অনেক দিনের চেনা, শীত বিকেল, বন্ধন, ভাইয়া, রূপবান, উজালা, ১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন, নয়নতারা, আলীবাবা, চাওয়া পাওয়া, গাজী কালু চম্পাবতী, নিশি হলো ভোর, সপ্তডিঙ্গা, মোমের আলো, ময়নামতি, যে আগুনে পুড়ি, দর্পচূর্ণ, জাহা বাজে শাহনাই, বিনিময়, ডুমুরের ফুল ইত্যাদি।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সিরাজুল ইসলাম "অবসর" নামে একটি নাটকের দল ছিল। এ নাটকে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জন। অবসর নাট্য দলের ব্যানারে ফাঁস, কেনাবেচার পালা, গরুর গাড়ির হেডলাইট সহ প্রায় দশটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।

২০১০ সালে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে অবসর নেন। [8] এরপর ২০১২ সালে জিয়াউল হক অতিথি টেলিভিশন নাটকে [9] ও সর্বশেষ ২০১৪ সালে চৌধুরী সহিউল সাকী পরিচালিত একটি অসমাপ্ত কবিতার গল্প নাটকে অভিনয় করেন। [10][11]

চলচ্চিত্রের তালিকা

অভিনীত চলচ্চিত্র

বছর

চলচ্চিত্র পরিচালক সহশিল্পী চরিত্র মুক্তির তারিখ নোট
১৯৬৩ নাচঘর আবদুল জব্বার খান গোলাম মুস্তাফা, শবনম, নাসিমা খান ১ নভেম্বর ১৯৬৩ উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র
১৯৬৩ ধারাপাত সালাউদ্দিন
১৯৬৪ রাজা এলো শহরে মহিউদ্দিন চিত্রা সিনহা, আনোয়ার হোসেন, সাদেক, ফতেহ লোহানী ২৮ আগস্ট ১৯৬৪
১৯৬৪ অনেক দিনের চেনা খান আতাউর রহমান
১৯৬৪ শীত বিকেল মহিউদ্দিন
১৯৬৪ দুই দিগন্ত ওবায়দুল হক
১৯৬৫ রূপবান সালাউদ্দিন সুজাতা, মনসুর, তন্দ্রা ইসলাম ৫ নভেম্বর ১৯৬৫
১৯৬৫ বন্ধন কাজী জহির
১৯৬৫ উজালা কামাল আহমেদ
১৯৬৬ ভাইয়া কাজী জহির
১৯৬৬ ১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন বশীর আহমেদ
১৯৬৭ চাওয়া পাওয়া নারায়ণ ঘোষ মিতা
১৯৬৭ আলীবাবা নজরুল ইসলাম আশীষ কুমার লৌহ, সুমিতা দেবী ১৯ অক্টোবর ১৯৬৭
১৯৬৭ হীরামন শিবলী সাদিক
১৯৬৭ নয়নতারা
১৯৬৭ উলঝন রোজী আফসারী, খলিল উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র
১৯৬৭ কাঞ্চন মালা
১৯৬৮ যাহা বাজে শেহনাই রহমান
১৯৬৮ নিশি হলো ভোর
১৯৬৮ ভাগ্যচক্র
১৯৬৮ মোমের আলো
১৯৬৮ সপ্তডিঙ্গা
১৯৬৯ ময়নামতি কাজী জহির
১৯৬৯ গাজী কালু চম্পাবতী মহিউদ্দিন
১৯৬৯ জিনা ভি মুশকিল উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র
১৯৭০ যে আগুনে পুড়ি আমীর হোসেন
১৯৭০ দর্পচূর্ণ
১৯৭০ বিনিময় সুভাষ দত্ত
ডুমুরের ফুল
১৯৮৪ চন্দ্রনাথ চাষী নজরুল ইসলাম রাজ্জাক, সুচন্দা, দোয়েল, শ্যামলী ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৪

পরিচালিত চলচ্চিত্র

বছর

চলচ্চিত্র পরিচালক সহশিল্পী মুক্তির তারিখ নোট
১৯৭৯ সোনার হরিণ সিরাজুল ইসলাম শাবানা, কবরী, ববিতা, সুচরিতা, রাজ্জাক,

বুলবুল আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, আনোয়ার হোসেন

অভিনীত নাটক

বছর নাটক পরিচালক সহশিল্পী চরিত্র নোট
রূপালি চাঁদ
বৃদ্ধ দম্পত্তি তারিকুল ইসলাম [9]
২০১২ অতিথি জিয়াউল হক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক [9]
২০১৪ একটি অসমাপ্ত কবিতার গল্প চৌধুরী সহিউল সাকী দিলারা জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ মোহনী মোহন অভিনীত সর্বশেষ নাটক [12]

পুরস্কার ও সম্মাননা

১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত চন্দ্রনাথ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[13]

ব্যক্তিগত জীবন

সিরাজুল ইসলাম ১৯৬৫ সালে অভিনেতা আবুল হায়াতের ফুফাতো বোন সৈয়দা মারুফা ইসলামকে বিয়ে করেন।[2] তাদের পরিবারে এক ছেলে মোবাশ্বেরুল ইসলাম শাহী এবং দুই মেয়ে ফাহমিদা ইসলাম ও নাহিদা ইসলাম।[14]

মৃত্যু

সিরাজুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারনে ও মস্তিস্কের রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায় ঢাকার নিকেতনে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।[8] তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। [15]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম যোগ্য সম্মান পাননি: আবুল হায়াত"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. "এক শক্তিমান অভিনেতার বিদায়"দৈনিক মানবজমিন। ২৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫
  3. "Actor Sirajul Islam Passes away"। ডেইলি নিউ এইজ। ২৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  4. "অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম আর নেই"দৈনিক প্রথম আলো। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  5. "Actor Sirajul Islam dies"। ঢাকা ট্রিবিউন। ২৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  6. "চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  7. "Veteran actor Sirajul Islam no more"। ডেইলি অবজারভার। ২৫ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  8. "অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম মারা গেছেন"। বিডিনিউজ২৪.কম। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  9. "Veteran Sirajul Islam returns to media"। প্রিয়.কম। ২৯ আগস্ট ২০১২। ৩০ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  10. "Sirajul Islam returns to acting"। ডেইলি নিউ নেশন। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  11. "সিরাজুল ইসলাম আর নেই"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৪ মার্চ ২০১৫। ২৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  12. "অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম আর নেই"দৈনিক আমাদের সময়। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫
  13. "চলে গেলেন প্রিয় অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম"। প্রিয়.কম। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  14. "না ফেরার দেশে চলে গেলেন সিরাজুল ইসলাম"। রাইজিং বিডি.কম। ২৪ মার্চ ২০১৫। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫
  15. "অভিনেতা সিরাজুল ইসলাম আর নেই"। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.