মিজু আহমেদ
মিজানুর রহমান (১৭ নভেম্বর, ১৯৫৩ - ২৭ মার্চ, ২০১৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি মিজু আহমেদ নামে সর্বাধিক পরিচিত।[1] তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৭৮ সালে তৃষ্ণা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।[2][3] এছাড়াও তিনি একজন প্রযোজক হিসেবেও ঢালিউড পাড়ায় পরিচিত। মূলত, আহমেদ তার খলনায়ক চরিত্রের সুবাদে বাংলা চলচ্চিত্রে সুপরিচিত।[4]
মিজু আহমেদ | |
---|---|
জন্ম | মিজানুর রহমান ১৭ নভেম্বর ১৯৫৩ |
মৃত্যু | ২৭ মার্চ ২০১৭ ৬৩) | (বয়স
জাতীয়তা | ![]() ![]() |
পেশা | অভিনেতা, প্রযোজক |
কার্যকাল | ১৯৭৮–২০১৭ |
প্রতিষ্ঠান | ফ্রেন্ডস মুভিজ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ত্রাস ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না |
দাম্পত্য সঙ্গী | পারভীন আহমেদ |
সন্তান | তাসনিম আহমেদ (মেয়ে) আফিয়া আহমেদ (মেয়ে) হারসাত আহমেদ(ছেলে) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২ বার) |
আশির দশকে তিনি নাট্যধর্মী মহানগর (১৯৮১), সঙ্গীত-নাট্যধর্মী নয়নের আলো (১৯৮৪), অপরাধ-নাট্যধর্মী সারেন্ডার (১৯৮৭), ও নাট্যধর্মী সত্য মিথ্যা (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নব্বইয়ের দশকে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল অপরাধধর্মী দাঙ্গা (১৯৯১), ত্রাস (১৯৯২), ত্যাগ (১৯৯৩), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪), খলনায়ক (১৯৯৬), মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭), অপরাধধর্মী আম্মাজান (১৯৯৯)। ১৯৯২ সালে ত্রাস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[5] এছাড়া ২০১০ সালে ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[6]
প্রাথমিক জীবন
আহমেদ ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম নাম হচ্ছে মিজানুর রহমান।[7] শৈশবকাল থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তী তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সাথে অন্তর্ভূক্ত হন। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে থেকে তিনি বিএসসি বিভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হন।
চলচ্চিত্র কর্মজীবন
১৯৭৮ সালে তৃষ্ণা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।[8] কয়েক বছর পরে তিনি ঢালিউড চলচ্চিত্র শিল্পে অন্যতম সেরা একজন খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তিনি তার নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজ এর ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন[1]
পারিবারিক জীবন
মিজু আহমেদ পারভীন আহমেদকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন সন্তান। দুই মেয়ে তাসনিম আহমেদ ও আফিয়া আহমেদ এবং ছেলে হারসাত আহমেদ।[1][9]
চলচ্চিত্রের তালিকা
- তৃষ্ণা (১৯৭৮)
- মাটির ঘর (১৯৭৯)
- মহানগর (১৯৮১)
- নয়নের আলো (১৯৮৪)
- অশান্তি (১৯৮৬)
- সারেন্ডার (১৯৮৭)
- সত্য মিথ্যা (১৯৮৯)
- বোনের মত বোন (১৯৮৯)
- স্ত্রীর পাওনা (১৯৯১)
- দাঙ্গা (১৯৯১)
- পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১)
- চাকর (১৯৯২)
- বন্ধু আমার (১৯৯২)
- সোলেমান ডাঙ্গা (১৯৯২)
- ত্রাস (১৯৯২)
- ত্যাগ (১৯৯৩)
- দেশপ্রেমিক (১৯৯৪)
- খলনায়ক (১৯৯৬)
- বশিরা (১৯৯৬)
- আজকের সন্ত্রাসী (১৯৯৬)
- হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭)
- অন্ধ ভালোবাসা (১৯৯৭)
- কুলি (১৯৯৭)
- আম্মাজান (১৯৯৯)
- লাঠি (১৯৯৯)
- লাল বাদশা (১৯৯৯)
- গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০)
- ঝড় (২০০০)
- কষ্ট (২০০০)
- বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০)
- যোদ্ধা (২০০০)
- ওদের ধর (২০০২)
- ইতিহাস (২০০২)
- লাল দরিয়া (২০০২)
- ভাইয়া (২০০২)
- কারাগার (২০০৩)
- হিংসা প্রতিহিংসা (২০০৩)
- বিগ বস (২০০৩)
- আজকের সমাজ (২০০৪)
- মহিলা হোস্টেল (২০০৪)
- হীরা আমার নাম (২০০৫)
- ভন্ড ওঝা (২০০৬)
- সিস্টেম (২০০৬)
- ঝন্টু মন্টু দুই ভাই (২০০৭)
- মেশিনম্যান (২০০৭)
- আমি বাঁচতে চাই (২০০৭)
- বাবার জন্য যুদ্ধ (২০০৮)
- বাবা আমার বাবা (২০০৮)
- মায়ের স্বপ্ন (২০০৮)
- রাজধানীর রাজা (২০০৮)
- কোটি টাকার ফকির (২০০৮)
- বিয়ে বাড়ী (২০০৯)
- কাজের মানুষ (২০০৯)
- ঠেকাও আন্দোলন (২০০৯)
- সবাইতো ভালোবাসা চায় (২০০৯)
- চিরদিনই আমি তোমার (২০০৯)
- ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না (২০১০)
- চাচ্চু আমার চাচ্চু (২০১০)
- মায়ের চোখ (২০১০)
- হায় প্রেম হায় ভালোবাসা (২০১০)
- আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০)
- রিকসাওয়ালার ছেলে (২০১০)
- এক জবান (২০১০)
- বস্তির ছেলে কোটিপতি (২০১০)
- কে আপন কে পর (২০১১)
- মনের জ্বালা (২০১১)
- দারোয়ানের ছেলে (২০১১)
- ভালোবাসার রঙ (২০১২)
- শিউলমনী (২০১২)
- স্বামী ভাগ্য (২০১২)
- বাজারের কুলি (২০১২)
- তুমি আসবে বলে (২০১২)
- মানিক রতন দুই ভাই (২০১২)
- এইতো ভালোবাসা (২০১৩)
- তবুও ভালোবাসি (২০১৩)
- ইভটিজিং (২০১৩)
- কঠিন প্রতিশোধ (২০১৪)
- আগে যদি জানতাম তুই হবি পর (২০১৪)
- দুই পৃথিবী (২০১৫)
- ভালোবাসা সীমাহীন (২০১৫)
- অ্যাকশন জেসমিন (২০১৫)
- বসগিরি (২০১৬)
- পুড়ে যায় মন (২০১৬)
- এক জবানের জমিদার হেরে গেলেন এইবার (২০১৬)
- আড়াল (২০১৬)
- ক্রাইম রোড (২০১৭)
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
বছর | পুরষ্কারের নাম | বিভাগ | চলচ্চিত্র | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
১৯৯২ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা | ত্রাস | বিজয়ী |
২০১০ | শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা | ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না | বিজয়ী |
মৃত্যু
তিনি ২৭ মার্চ ২০১৭ তারিখ ঢাকা থেকে ট্রেনে করে মানুষ কেন অমানুষ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে দিনাজপুর যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।[10]
তথ্যসূত্র
- "পর্দায় যেমন দেখাতেন তেমন ছিলেন না"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৪।
- মাজিদ, আলাউদ্দীন (১৯ নভেম্বর ২০১৪)। "বড় পর্দার খলনায়করা"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "খলনায়ক সংকটে ঢালিউড"। যায়যায়দিন। মে ১৪, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "ফরীদি ভাই আমাকে দীলিপ কুমার বলে ডাকতেন : মিজু আহম্মেদ"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "অভিনেতা মিজু আহমেদ আর নেই"। দৈনিক যুগান্তর। ২৭ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে সেরারা পুরস্কৃত"। দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "অভিনেতা মিজু আহমেদ আর নেই"। দৈনিক সমকাল। ২৭ মার্চ ২০১৭। ২৭ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "আলাপ-এর অতিথি মিজু আহমেদ"। সাতদিন। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- মিলু, কামরুজ্জামান (৭ জুলাই ২০১৬)। "পর্দার মন্দ মানুষেরা বাস্তবে যেমন"। দৈনিক মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
- "চলে গেলেন মিজু আহমেদ"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মিজু আহমেদ (ইংরেজি)