গোলাম মুস্তাফা
গোলাম মুস্তাফা (২ মার্চ ১৯৩৪ - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩) ছিলেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার। ১৯৬০ সালে ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে জমিদারের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন। মূলতঃ প্রথম ছবি থেকেই তিনি খলনায়ক চরিত্রের একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এছাড়া তিনি অনেক ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গোলাম মুস্তাফা প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
গোলাম মুস্তাফা | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ৬৮) | (বয়স
পেশা | অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, নাট্যকার |
কার্যকাল | ১৯৬০–২০০৩ |
সন্তান | সুবর্ণা মুস্তাফা |
প্রারম্ভিক জীবন
গোলাম মুস্তাফা ২ মার্চ ১৯৩৪ সালে বরিশালের দপদপিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। স্কুলজীবন শুরু হয় পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ম্যাট্রিক পাস করেন খুলনা জিলা স্কুল থেকে। স্কুল-কলেজ জীবনে নাটকে অভিনয় করা তার শখ ছিল। ঢাকায় আসেন পঞ্চাশের দশকের মধ্য সময়ে। সেই থেকে তিনি ঢাকায় স্থায়ী হয়ে গেলেন।
অভিনয় জীবন
গোলাম মুস্তাফা বাংলা ও উর্দু মিলে প্রায় তিনশত চলচ্চিত্রে নায়ক, সহনায়ক, খলনায়কসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য উর্দু চলচ্চিত্র হচ্ছে 'পীরিত না জানে রীত', 'কাজল', 'চোখাই', 'চান্দা', 'তালাশ'। বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'আলিবাবার চল্লিশ চোর', 'রাজধানীর বুকে', 'নিজেকে হারায়ে খুজি', 'রক্তাক্ত বাংলা', 'রূপালী সৈকতে', 'সীমানা পেরিয়ে', 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'সূর্যসংগ্রাম', 'পদ্মা নদীর মাঝি', 'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী', 'শুভদা', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'ধীরে বহে মেঘনা', 'চন্দ্রনাথ', 'দেবদাস' ইত্যাদি।
গোলাম মুস্তাফা অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেন। তার অভিনয় জীবনে খলনায়ক হিসেবেই বেশি সফল হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হারানো দিন’ ছবিতে মদ্যপ জমিদারের ভূমিকায় তার অভিনয় সে সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মঞ্চনাটক
১৯৪৫ সালে বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল মঞ্চে বি.ডি হাবিবুল্লাহ রচিত পল্লীমঙ্গল নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এটাই তার অভিনিত প্রথম মঞ্চ নাটক। পরিণত বয়েসে ষাটের দশকের শুরুতে গোলাম মুস্তাফা নাট্যাভিনয় শুরু করেন। সিনেমা ও নাটক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন।
টিভি নাটক
গোলাম মুস্তাফা ঢাকা টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমদিকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ছিলেন।
তার অভিনিত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হলো:
- গুপ্তধন
- অর্পিতা
- হিতঙ্কর
- পাথরে ফুটাবো ফুল
- যুবরাজ
- অস্তরাগে
ব্যাক্তিগত জীবন
গোলাম মুস্তাফা ঢাকা টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমদিকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ছিলেন। তিনি তার সহ কর্মী বেতারের অভিনেত্রী হোসনে আরার প্রেমে পরে যান।[1] ১৯৫৮ সালে হোসনে আরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রী। সাবেক জামাতা হুমায়ুন ফরীদিও ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা।
মৃত্যু
গোলাম মুস্তাফা ২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।[2]
পুরস্কার
গোলাম মুস্তাফা ১৯৮০ সালে এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্র অভিনেতা, এবং ১৯৮৬ সালে শুভদা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা এবং ছুটির ফাঁদে (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক সম্মানে ভূষিত হন। তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ
বছর | চলচ্চিত্র | ভূমিকা | পরিচালক | সহশিল্পী | নোট |
---|---|---|---|---|---|
১৯৬০ | রাজধানীর বুকে | জমিদার-খলনায়ক | রহমান, চিত্রা সিনহা | প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র | |
১৯৬১ | হারানো দিন | ||||
১৯৬২ | চাকা | ||||
১৯৬৩- | নাচঘর | নায়ক হিসেবে প্রথম ছবি | |||
১৯৬৪ | কাজল | শবনম | উর্দু চলচ্চিত্র | ||
১৯৬৪ | বন্ধন | চিত্রা সিনহা | নায়ক হিসেবে দ্বিতীয় ছবি | ||
১৯৬৬ | ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো | দ্বৈত চরিত্রে | উর্দু চলচ্চিত্র | ||
১৯৬৬ | বেগানা | উর্দু চলচ্চিত্র | |||
১৯৬৭ | চাওয়া পাওয়া | সুচন্দা | |||
১৯৬৮ | দাসী | ||||
১৯৬৮ | সোহানা সফর | রওশন আরা | উর্দু চলচ্চিত্র- মুক্তি পায়নি | ||
দুই রাজকুমার | |||||
বলাকা মন | |||||
হিসাব নিকাশ | |||||
শুভদা | |||||
এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী | |||||
পীরিত না জানে রীত | |||||
চোখাই | |||||
তালাশ | উর্দু চলচ্চিত্র | ||||
আলিবাবার চল্লিশ চোর | |||||
নিজেকে হারায়ে খুজি | |||||
রক্তাক্ত বাংলা | |||||
তিতাস একটি নদীর নাম | |||||
সূর্যসংগ্রাম | |||||
দোষী | |||||
শ্লোগান | আতাউর খান | ||||
অন্যায় অবিচার | |||||
ব্যথার দান | বাদল খন্দকার | ||||
১৯৭৭ | সুরুজ মিয়া | ||||
১৯৭৭ | সীমানা পেড়িয়ে | ||||
১৯৭৮ | সারেং বউ | মন্টু চাচা | আব্দুল্লাহ আল মামুন | ফারুক , কবরী | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি |
পদ্মা নদীর মাঝি | |||||
চন্দ্রনাথ | |||||
দেবদাস | |||||
১৯৯৫ | আশা ভালোবাসা | সালমান শাহ , শাহ্নাজ | |||
১৯৯৬ | জীবন সংসার | সালমান শাহ, শাবনুর , ববিতা | |||
দীপু নাম্বার টু | অতিথি চরিত্রে | ||||
১৯৯৯ | শ্রাবণ মেঘের দিন | জমিদার | হুমায়ুন আহমেদ | জাহিদ হাসান, শাওন, মাহফুজ আহমেদ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার |
তথ্যসূত্র
- "গোলাম মুস্তাফা এবং এক কিংবদন্তী"। দৈনিক ডেস্টিনি। সংগ্রহের তারিখ ২৭-০৪-২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "গোলাম মুস্তাফা এবং একুশের প্রথম প্রহর"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৭-০৪-২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)