শ্রাবণ মেঘের দিন
শ্রাবণ মেঘের দিন ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র[1]। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। এবং তারই লেখা শ্রাবণ মেঘের দিন উপন্যাস অবলম্বনে নূহাশ চলচ্চিত্রের ব্যানারে ছবিটি নির্মাণ করা হয়।[2] এর আগে ১৯৯৪ সালে তিনি আগুনের পরশমণি এবং পরে ২০০০ সালে দুই দুয়ারী নির্মাণ করেন। ছবির গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিদ হাসান, শাওন, মাহফুজ আহমেদ, আনোয়ারা, মুক্তি, গোলাম মোস্তফা,সালেহ আহমেদ ও ডাঃ এজাজ।
শ্রাবণ মেঘের দিন | |
---|---|
![]() ভিসিডি প্রচ্ছদ | |
পরিচালক | হুমায়ুন আহমেদ |
প্রযোজক | নূহাশ চলচ্চিত্র |
রচয়িতা | হুমায়ুন আহমেদ (উপন্যাস) |
চিত্রনাট্যকার | হুমায়ুন আহমেদ |
কাহিনীকার | হুমায়ুন আহমেদ |
উৎস | শ্রাবণ মেঘের দিন (উপন্যাস) |
শ্রেষ্ঠাংশে | জাহিদ হাসান শাওন মাহফুজ আহমেদ আনোয়ারা মুক্তি গোলাম মোস্তফা সালেহ আহমেদ ডাঃ এজাজ শামীমা নাজনীন |
সুরকার | মকসুদ জামিল মিন্টু |
চিত্রগ্রাহক | মাহফুজুর রহমান খান |
সম্পাদক | আতিকুর রহান মল্লিক |
প্রযোজনা কোম্পানি | নূহাশ চলচ্চিত্র |
পরিবেশক | নূহাশ চলচ্চিত্র |
মুক্তি | ১৯৯৯ |
দৈর্ঘ্য | ১৫০ মিনিট |
দেশ | ![]() |
ভাষা | বাংলা ভাষা |
শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে নৌকা বাইচ, গায়কদের গানের আসর, গায়ে হলুদের গান ইত্যাদির মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন।[2]
কাহিনী সংক্ষেপ
“মতি” (জাহিদ হাসান) একজন গাতক (গায়ক)। তাকে মনে মনে ভালবাসে ঐ গ্রামেরই একটি মেয়ে “কুসুম” (শাওন)। তার গানের গলাও খুব ভাল, সে সবসময় ভাবে মতি মিয়াকে নিয়ে একটা গানের দল করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা ঐ গ্রামের জমিদার (গোলাম মোস্তফা) নাতনি “শাহানা”কে (মুক্তি) ভালবাসে মতি, তবে জানেনা শাহানা তাকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে মুল্যায়ন করে মাত্র। এদিকে কুসুমের বাবা উজান থেকে একটি ছেলে “সুরুজ”কে (মাহফুজ আহমেদ) নিয়ে আসে কুসুমের সথে বিয়ে দেয়ার জন্য। ঐ গ্রামের বাসিন্দা “পরান” (এজাজুল ইসলাম) এর স্ত্রী প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল। জমিদারের নাতনি শাহানা একজন ডাক্তার, এই ভেবে মতি মিয়া তাকে ডেকে আনে। শাহানা এসে বুঝতে পারে উনার পেটের বাচ্চা উল্টে আছে। সে বইতে পড়েছে এর চিকিৎসার ব্যাপারে কিন্তু বাস্তবে কখনো করেনি, তবুও কোন উপায় না দেখে সাহস করে সেই সন্তান স্বাভাবিক ভাবে ডেলিভারি করাতে সক্ষম হয়। এবং যে জমিদারকে এলাকার সবাই ঘৃনার চোখে দেখত তারা সবাই এখন তাকে সম্মান করে। একদিকে কুসুমের বিয়ের আয়োজন চলছে অন্যদিকে জমিদারের নাতনিরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে জমিদার সহ। জমিদার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারীদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেছিল, তাই গ্রামের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তার জমিদার বাড়ি একটি হাসপাতালের জন্য দান করে বিদায় নেয়, আর তাই গ্রামের প্রাই সবাই চলে আসে তাদের বিদায় জানাতে। কুসুম বাড়িতে একা মতিকে না পাওয়ার কষ্টে সে বিষ পান করে, কুসুমের মা টের পেয়ে সবাইকে ডাকে এবং তাকে নিয়ে মতি আর সুরুজ নৌকায় ছোটে ডাক্তার শাহানাকে ধরতে, কিন্তু মাঝপথেই সোয়া চান পাখি চিরনিদ্রায় শায়ীত হয়।
--আর মতি গাতক গেয়ে উঠে শুয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি...।
শ্রেষ্ঠাংশে
- জাহিদ হাসান - মতি (গাতক)
- শাওন - কুসুম
- মাহফুজ আহমেদ - সুরুজ
- আনোয়ারা -
- মুক্তি - শাহানা
- গোলাম মোস্তফা - (জমিদার)
- সালেহ আহমেদ -
- ডাঃ এজাজ - পরাণ, পরাণের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে ডাঃ এজাজ চাকুরী হতে সাস্পেন্ড হয়েছিলেন।[3]
- শামীমা নাজনীন -
- নাজমুল হুদা বাচ্চু -
- বিলকিস বারী -
- রায়না - মিতু
- নীরা - পুষ্প
- দিহান
সংগীত
শ্রাবণ মেঘের দিন ছবির সংগীত পরিচালনা করেন মকসুদ জামিল মিন্টু। হুমায়ূন আহমেদ এই ছবিতে ময়মনসিংহের লোককবি ও গায়ক উকিল মুন্সীর কয়েকটি গান ব্যবহার করেন। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী।[2] এ ছবিতেই গীতিকার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।[4]
সাউন্ড ট্র্যাক
ট্র্যাক | গান | কণ্ঠশিল্পী | গীতিকার | নোট |
---|---|---|---|---|
১ | পুবালী বাতাসে | বারী সিদ্দিকী | উকিল মুন্সী | |
২ | কেহ গরিব অর্থের জন্যে | বারী সিদ্দিকী | উকিল মুন্সী | আংশিক |
৩ | আমার গায়ে যত দুঃখ সয় | বারী সিদ্দিকী | উকিল মুন্সী | |
৪ | ও..লো ভাবীজান নাউ বাওয়া | বারী সিদ্দিকী | হূমায়ুন আহমেদ | নৌকা বাইচের গান |
৫ | মানুষ ধরো মানুষ ভঁজো | বারী সিদ্দিকী | রশিদ উদ্দিন আহমেদ | |
৬ | একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরন কেশ | সুবীর নন্দী | হূমায়ুন আহমেদ | |
৭ | কাইল আমরার কুসুম রানীর বিবাহ হইবো | আকলিমা বেগম | হূমায়ুন আহমেদ | 'গায়ে হলুদ' অনুষ্ঠানের গান |
৮ | আমার ভাঙ্গা ঘরে... | মেহের আফরোজ শাওন, সাবিনা ইয়াসমিন | হূমায়ুন আহমেদ | |
৯ | শুয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি | বারী সিদ্দিকী | উকিল মুন্সী |
পুরষ্কার
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি ২৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে সাতটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।[4][5]
পুরষ্কারের ধরন | পুরস্কারের নাম | বিজয়ী | নোট | |
---|---|---|---|---|
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার
(১৯৯৯) |
মেধা পুরষ্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | জাহিদ হাসান[6] | |
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা | গোলাম মোস্তফা | |||
শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক | মাকসুদ জামিল মিন্টু | |||
শ্রেষ্ঠ গীতিকার | রশিদ উদ্দিন আহমেদ | |||
শ্রেষ্ঠ পুরুষ সঙ্গীতশিল্পী | সুবীর নন্দী | |||
কারিগরী পুরষ্কার | শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক | মাহফুজুর রহমান খান | ||
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক | মফিজুল হক |
আরও দেখুন
- দুই দুয়ারী
- চন্দ্রকথা
- শ্যামল ছায়া
- আমার আছে জল
- ঘেটু পুত্র কমলা
- সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রসমূহ
তথ্যসূত্র
- হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ
- মারিয়া, শান্তা; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "'শ্রাবণ মেঘের দিন': দর্শককে হলে ফেরানোর সিনেমা"। bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৬।
- "'শ্রাবণ মেঘের দিন' করতে গিয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলাম: ডা. এজাজ"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৯-০৭-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৬।
- "বার বার ফিরে আসুক শ্রাবণ মেঘের দিন"। মুখ ও মুখোশ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৬।
- "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তদের নামের তালিকা (১৯৭৫-২০১২)"। fdc.gov.bd। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮।
- শিল্পী মাহালনবিশ (২০০৩-১২-৩১)। "The year that was! The joy of achievement and agony of loss: Zahid Hassan"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৫, ২০১৫।
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে শ্রাবণ মেঘের দিন
(ইংরেজি) - এ - শ্রাবণ মেঘের দিন - রোটন টমেটোস - এ