কোথাও কেউ নেই

কোথাও কেউ নেই, বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নির্দেশক বরকত উল্লাহ নির্দেশিত জনপ্রিয়তম ধারাবাহিক। একই নামে লেখকের একটি বইও আছে। ধারাবাহিকটির আবহ সংগীতের কাজ করেন সংগীতকার মকসুদ জামিল মিন্টু

কোথাও কেউ নেই
কোথাও কেউ নেই
ধরণহাস্যরসাত্মক, নাট্যধর্মী
রচনাহুমায়ূন আহমেদ
পরিচালকবরকত উল্লাহ
অভিনয়েসুবর্ণা মোস্তফা, আসাদুজ্জামান নূর, আবদুল কাদের, মাহফুজ আহমেদ, আফসানা মিমি, হুমায়ুন ফরীদি, মোজাম্মেল হোসেন, সালেহ আহমেদ, আবুল খায়ের, নাজমা আনোয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম
রচয়িতামকসুদ জামিল মিন্টু
প্রস্তুতকারক দেশবাংলাদেশ
মূল ভাষাবাংলা
সম্প্রচার
মূল চ্যানেলবিটিভি
প্রথম প্রদর্শন১৯৯২-১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ

কাহিনী সংক্ষেপ

ধারাবাহিকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল "বাকের ভাই"। বাকের ভাই গুন্ডা প্রকৃতির লোক এবং তার সঙ্গী ছিল "বদি" আর "মজনু", তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো। অধিকাংশ সময় মোটর সাইকেল চালাতো মজনু, বদি বসতো পিছনে, বাকের ভাই বসতো মাঝে। বাকের ভাইয়ের একটা মুদ্রাদোষ ছিল, সে একটা চেইন হাতের তর্জনিতে অনবরত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাতো, আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচ খুলে আবার প্যাঁচাতো। সক্রিয় ডায়লগ না থাকলে প্রায়ই তাকে এরকম করতে দেখা যেত। বাকের ভাইকে পছন্দ করতো "মুনা"। মুনা এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সে চাকরি করে, এবং তার মামাতো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে। বাকের ভাই এলাকার মাস্তান হলেও অধিকাংশ মানুষ তাকে ভালোবাসতো, কারণ সে ছিল সত্যের পূজারী নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে যেমন কুন্ঠিত হতো না, তেমনি সমাজের অন্যায়কেও মুখ বুজে মেনে নিত না, নিজের গুন্ডাদের দিয়ে তা কঠোর হস্তে দমন করতো। ঘটনাপ্রবাহে বাকের ভাই রেবেকা হক নামের এলাকার প্রভাবশালী এক নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ঐ নারী তার বাড়িতে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, বাকের ভাই তা জানতে পেরে প্রতিবাদ করে। এই প্রভাবশালী নারী তার বাড়িতে কুকুর পালন করতেন বলে বাকের ভাই তাকে কুত্তাওয়ালী বলেন। এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে "কুত্তাওয়ালীর" দারোয়ান তার বাড়িতে খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালী'র সাজানো সাক্ষী এলাকার নব্য ছিনতাইকারী মতি। যদিও পদে পদে মতির মিথ্যা সাক্ষ্য বাকের ভাইয়ের উকিল ধরিয়ে দিচ্ছিলেন আদালতের কাছে, কিন্তু এদিকে বাকের ভাইকে ফাঁসানোর জন্য কুত্তাওয়ালী লোভ দেখিয়ে বাকের ভাইয়েরই সাগরেদ বদিকে হাত করে নেয়। বদি, নিরুপায় হয়ে আদালতে শপথ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বাকের ভাইকে পাকাপোক্তভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। আদালত, ঐ খুনের দায়ে নির্দোষ বাকের ভাইকে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকের ভাইয়ের পক্ষে উকিল হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হোন উকিল। আদালতের এই সিদ্ধান্তে যেন মরে যায় মুনার মন। এদিকে মুনার ঘরের সবাইও বিভিন্ন জায়গায় পাড়ি জমান। এই একাকিত্বের দিনে এক ভোরে, আদো-অন্ধকারে, চারদিকে যখন ফযরের আযান হচ্ছিল, জেল গেট দিয়ে বাকের ভাইয়ের লাশ বের করে দেয়া হয়। কেউ ছিল না সেই লাশ গ্রহণ করার জন্য মুনা ছাড়া। সৎকার করার পর, মুনা বড় একা হয়ে যায়। তার যেন আর কেউ রইলো না কোথাও। নাটকের নামকে সার্থক করে মুনা ধারাবাহিকের শেষ দৃশ্যে ভোরের আলো-অন্ধকারে ছায়া হয়ে একা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকে। নাটক টি অনেক ভালো ছিলো ও কালজয়ী বাংলা নাটকের একটি

কুশিলব

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন:

দর্শক জনপ্রিয়তা

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত এই টিভি ধারাবাহিক এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, ধারাবাহিকটির প্রতিটা পর্ব, দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করতেন। ধারাবাহিকের অগ্রগতির সাথে সাথে দর্শকরা বাকের ভাইকে পছন্দ করে ফেলেন এবং তার পক্ষে জনমত গড়ে উঠে। একপর্যায়ে যখন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠে, উকিল হুমায়ূন ফরিদি শত চেষ্টাসত্ত্বেয় খেই হারিয়ে ফেলছেন এই কেসে, তখন দর্শকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে; চলতে থাকে মিছিল, দেয়াল লিখন, সমাবেশ।[1] ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে:

কিংবা,

এসকল খবর, সমসাময়িক পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হয় বেশ গুরুত্বের সাথে। তখন স্বভাবতই মনে হয়েছিল, হয়তো লেখক, জনমতের ভিত্তিতে ধারাবাহিকের গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তা না করে ধারাবাহিকটিকে তার যথাবিহীত পরিণতি দেন, এবং বাকের ভাইয়ের পক্ষে দর্শকদের তুমুল আবেগ এবং সমর্থন সত্ত্বেও ধারাবাহিকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়।

ধারাবাহিকটির তুমুল জনপ্রিয়তার ছায়া পড়ে বাকের ভাই চরিত্রের অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের জীবনেও। তিনি এর পর থেকে বাকের ভাই হিসেবে সমাদৃত হোন। এমনকি তিনি যেবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, তখন তাকে বাকের ভাইয়ের নাম ধরেই নীলফামারীতে ভোট চাওয়া হয়েছিল।[1]

এছাড়া ধারাবাহিকটির আবহ সংগীত, দর্শক মহলে বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় এবং আলাদা করে ক্যাসেটে এর আবহ সংগীত বিক্রয় হয়।

দর্শক জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনায় ধারাবাহিকটি বিটিভিতে পূণ:প্রচারের [2] উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নাটকটির ক্যাসেট খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটি প্রচার করা যায়নি। ২০১৩ সালে বিটিভির মহাপরিচালক ম. হামিদের উদ্যোগে হারিয়ে যাওয়া সেই ইউম্যাটিক ক্যাসেট খুঁজে বের করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল সোমবার থেকে বিটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে নব্বইয়ের দশকের এই জনপ্রিয় ধারাবাহিকটি।

বাকের ভাইয়ের ফেরা

নাটকটির তুমুল জনপ্রিয়তায় অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাতা রেদোয়ান রনি নির্মাণ করেন সাত পর্বের একটি মিনি-ধারাবাহিক। ধারাবাহিকটির কাহিনী কোথাও কেউ নেই-এর পর থেকেই শুরু বলা যায়, এখানে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমু মুনাকে কথা দেয় সে বাকের ভাইকে খুঁজে বের করবে। ঘটনাপ্রবাহে একদিন সত্যি সত্যি বাকের ভাইয়ের সাথে দেখা হয় হিমুর। বাকের ভাই তখন তার সব কষ্ট উজাড় করে দেন। এই ধারাবাহিকে হিমু চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা মোশাররফ করিম ও মুনা ও বাকের ভাই চরিত্রে স্বভাবতই যথাক্রমে সুবর্ণা মোস্তফা এবং আসাদুজ্জামান নূর। ধারাবাহিকটি প্রচারিত হয় দেশ টিভিতে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ঈদে।[3]

তথ্যসূত্র

  1. বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে : এই ইতিহাসের জনক হুমায়ূন আহমেদ, মোঃ শাহ পরান ছিদ্দিকী (তারেক), VNewsBD.com। প্রকাশকাল: জুলাই ২২, ২০১২ খ্রিস্টাব্দ। সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  2. বিনোদন: বিটিভিতে আবার ‘বাকের ভাই’ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে, বিনোদন প্রতিবেদক, আমাদের বরিশাল, AmaderBarisal.com। প্রকাশকাল: এপ্রিল ৭, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  3. বিনোদন: বাকের ভাই-হিমু মুখোমুখি, বিনোদন প্রতিবেদক, দৈনিক প্রথম আলো। প্রকাশকাল: ৩০ জুলাই ২০১০ খ্রিস্টাব্দ। সংগ্রহের তারিখ: ২৫ জুলাই ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.